Daffodil International University

Entertainment & Discussions => Sports Zone => Football => Topic started by: maruppharm on May 31, 2014, 10:42:16 AM

Title: সুযোগ পেলে আগেই জন্মাতে চাইতাম
Post by: maruppharm on May 31, 2014, 10:42:16 AM
তাঁকে নিয়ে সব গল্পই আসলে বলা হয়ে গেছে। ব্রাজিলকে শোকস্তব্ধ করে দেওয়া ১৯৫০ বিশ্বকাপে উরুগুয়ের কাছে সেই পরাজয়ের গল্পেরই যা একটু বাকি ছিল । ফিফা ডট কমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফুটবলসম্রাট পেলে ফিরে গেলেন ৬৪ বছর আগের সেই দিনে।
l ৬৪ বছর পর আবার ব্রাজিলে বিশ্বকাপ। ১৯৫০ সালের সেই বিশ্বকাপের কোন স্মৃতিটা আপনার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে?
পেলে: ফুটবল নিয়ে আমার কত স্মৃতিই তো আছে। কিন্তু ব্রাজিলের সেই পরাজয় আমার প্রথম। সেই হারের পর প্রথমবারের মতো বাবাকে আমি কাঁদতে দেখেছিলাম। আমার বয়স তখন ৯ কি ১০। আমার মনে আছে, রেডিওর পাশে বসে তিনি কাঁদছিলেন। জানতে চাইলাম, ‘তুমি কাঁদছ কেন, বাবা?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘ব্রাজিল যে বিশ্বকাপে হেরে গেছে!’ ১৯৫০ সালের সেই দৃশ্যটা এখনো আমার চোখে ভাসে। ঈশ্বর আমার ওপর অবশ্য খুবই সদয় ছিলেন। আট বছর পর আমি সুইডেনে গিয়ে শিরোপা জিতি। আমি চারটি বিশ্বকাপে খেলেছি, তিনটিতে জিতেছি। সর্বশেষটি ১৯৭০ সালে। আমি এখন বলতে পারি ঈশ্বর আমাকে দুহাত ভরে দিয়েছেন।
l আপনি বলেছিলেন বাবার সেই কান্না আপনার ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলেছিল। এটা নিয়ে আর কিছু বলার আছে?
পেলে: আমার বাবাও ছিলেন একজন ফুটবলার। সেদিন আমি তিন-চারজন বন্ধুর সঙ্গে ছিলাম। ওরা সবাই বাবার সতীর্থদেরই সন্তান। তখন কোনো টিভি ছিল না। রেডিওতে ম্যাচটা শোনার জন্য তিনি ওদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমরা ছোটরা সবাই রাস্তায় খেলছিলাম। আমার মনে আছে, চারপাশে অনেক মানুষ, অনেক কিছুই হচ্ছিল। কিন্তু বিকেলে হঠাৎ করে চারদিক কবরের মতো নিস্তব্ধ হয়ে গেল। আমরা কী হচ্ছে সেটা জানার জন্য বাড়িতে ঢুকলাম। বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘আমরা হেরে গেছি।’ আমার মনে আছে আমি দুষ্টুমি করে বলছিলাম, ‘কেঁদো না বাবা। আমি তোমার জন্য বিশ্বকাপ নিয়ে আসব।’ মাথায় যেটা এসেছিল সেটাই বলেছিলাম। কী বলতে হবে সেটা আসলে বুঝতে পারছিলাম না। আট বছর পর জাতীয় দলের হয়ে আমি শিরোপা জিতি।
l উরুগুয়ের কাছে সেই পরাজয় দেশকে কতটা নাড়া দিয়েছিল?
পেলে: আমি তখন বালক। এর আগে এত লোককে একসঙ্গে কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। অনেকেই কাঁদছিল। এমনকি দু-তিনজন লোক হৃদ্রোগে মারা গেছে, এ রকমও শুনেছিলাম। বয়স কম হলেও আমি সেই বিশাল হতাশা বুঝতে পেরেছিলাম। এটা কখনোই ভোলার নয়।
l আপনি যদি আরও আগে জন্মাতেন আর সেই বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেতেন, ‘মারাকানাজো’ কি কখনো ঘটত?
পেলে: ভালো প্রশ্ন (হাসি)। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, আপনি দেশের মানুষ ও পরিবারের জন্য সবচেয়ে ভালোটাই করতে চাইবেন। কিন্তু আমাকে সুযোগ দেওয়া হলে এটা ঘটতে না দেওয়ার জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে আগে জন্মাতে চাইতাম৷
l আলসিডেস ঘিগিয়ার গোলটা যাঁর হাত গলে হয়েছিল, সেই মোয়াসির বারবোসাকে অনেক সমালোচনা সইতে হয়েছিল। আপনার কি সেটা মনে আছে?
পেলে: আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, মানুষ পারলে ওই গোলের জন্য তাঁকে শূলে চড়াত। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি দেশের হয়ে অনেক ম্যাচ খেলেছি, ফাইনালে তুলেছি। সেই পথে অনেক সেভও করেছি। অথচ মানুষ আমাকে একটা গোলের জন্যই দোষে।’ এসবের জন্য আমার খারাপ লাগে, কিন্তু এটাই জীবন। দুর্ভাগ্যবশত, সমর্থকেরা খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। সবাই জয়ই চায়। কখনো কখনো হারলে আপনাকে সমালোচনা সইতেই হবে। ব্যাপারটা এ রকমই।
l আপনার বাবাকে যিনি কাঁদিয়েছিলেন, সেই ঘিগিয়া তো ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের ড্রতে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
পেলে: ড্রয়ের আগে দু-তিনবার তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। অবশ্যই ওই ম্যাচটা নিয়ে, গল্পগুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। তিনি আমাকে এও বলেছিলেন ব্রাজিলকে যে হারিয়েছেন, সেটা তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। ব্রাজিল ছিল সেরা, নিজেদের সব ম্যাচই তারা খুব সহজেই জিতেছিল। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমাদের কাছে ওটা ছিল অলৌকিক ঘটনা। আমরা এটা আশাই করিনি।’ আর সত্যি বলতে কি, ব্রাজিলিয়ানরাও এটা আশা করেনি।
l আট বছর পর আপনার নিজের বিশ্বকাপ জয়ের স্মৃতিটা কেমন?
পেলে: এটা ছিল আরেকটা বিস্ময়। সান্তোস ও ভাস্কো দা গামার খেলোয়াড়েরা মিলে আমরা রিওতে একটা টুর্নামেন্ট খেলেছিলাম৷ মারাকানায় কয়েকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার পর আমি মনোনীত হলাম। আমি সেটা একদমই আশা করিনি। সবার কাছেই সেটা ছিল বিস্ময়, শুধু আমার কাছেই নয়।
l ১৯৫৮-এর প্রথম বিশ্বকাপ ও ১৯৭০-এর শেষ বিশ্বকাপের মধ্যে কীভাবে তুলনা করবেন?
পেলে: চারটি বিশ্বকাপ খেলে আমরা তিনটিই জিতেছিলাম, এটা সৌভাগ্যের। সবাই আমার কাছে জানতে চায় ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপে খেলা কতটা কঠিন। আমি এটুকুই বলতে পারি, আমি শুধু বিশ্বকাপের দলে থাকতে চেয়েছিলাম। ১৯৭০ সালে আমি নিজের চূড়ায় ছিলাম। আমাদের দারুণ একটা দল ছিল, আমার শেষ বিশ্বকাপ। কিন্তু আমি যদি এটাকে প্রথমটার সঙ্গে তুলনা করতে চাই (যখন আমার কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না), আমাকে বলতে হবে মেক্সিকো ছিল বেশি কঠিন। আমাদের দলটা দুর্দান্ত ছিল, সবাই আশা করেছিল আমরা জিতব। ওটাই ভয়ের কারণ। আমি চাপটা টের পাচ্ছিলাম, কিছুটা স্নায়ুচাপেও ভুগছিলাম। অনেকেই ভুলে গেছে, ব্রাজিলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন ভালো ছিল না। আমরা শুধু জানতাম, আমাদের জিততে হবে। ওটাই ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমরা সেটা করতে পেরেছিলাম।