Daffodil International University
Entertainment & Discussions => Sports Zone => Football => Topic started by: maruppharm on May 31, 2014, 10:45:29 AM
-
জিওফ হার্স্ট দুর্দান্ত সেন্টার ফরোয়ার্ড ছিলেন৷ নিজেকে নিয়ে সাবেক ইংল্যান্ড স্ট্রাইকারের বিচক্ষণ বিশ্লেষণ, ‘কমফর্টেবল ইন ওয়ার্ল্ড-ক্লাস কোম্পানি’! ফুটবল ইতিহাসে তাঁর চেয়ে ভালো স্ট্রাইকার অবশ্য গন্ডা গন্ডা আছে৷ কিন্তু বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করার কীর্তি একমাত্র তাঁরই!
বিশ্বকাপ কারও কাছে ধরা দিয়েছে অপার মহিমায়, কারও কাছে নিষ্ঠুর এক মঞ্চ৷ কাউকে দিয়েছে দুহাত ভরে, কাউকে শূন্যহাতে ফিরিয়েছে বারবার৷ প্রথম দলে যদি থাকেন হার্স্ট, দ্বিতীয় দলে একটি নাম নিশ্চিত৷ আর্থার আন্তুনেস কোইমব্রা, ফুটবল বিশ্ব যাঁকে চেনে জিকো নামে৷ ১৯৭০ থেকে ১৯৯৪ বিশ্বকাপ জয়ের মাঝামাঝি যে দুই যুগ বিশ্বকাপ ছিল ব্রাজিলের কাছে হতাশার আরেক নাম, সেই যুগের সবচেয়ে বড় তারা জিকো৷ বিশ্বকাপ যাঁকে বারবার হাতছানি দিয়েও ফিরিয়ে নিয়েছে মুখ৷
তৃতীয় বিশ্বকাপ জিতে পেলে যখন ক্যারিয়ার সায়াহ্নে, নতুন আশার সুপ্রভাত হয়ে ব্রাজিল ফুটবলে আবির্ভাব জিকোর৷ দেড় যুগের সান্তোস অধ্যায় চুকিয়ে নিউইয়র্ক কসমসের হয়ে যখন দেখা যাচ্ছে পেলের সেরা সময়ের কঙ্কাল, ব্রাজিলে তখন ফ্ল্যামেঙ্গোর হয়ে জিকো মনে করিয়ে দিচ্ছেন পেলেকে৷ প্রকৃতিদত্ত প্রতিভা তো ছিলই, নিজেও পরিশ্রমে কমতি রাখেননি৷ বিবিসির সঙ্গে কথোপকথনে স্মৃতির ডানায় জিকো ফিরে গেলেন শুরুর সেই সময়টায়, ‘আমি অনুভব করতে পেরেছিলাম, ঈশ্বরের উপহার পেয়েছি আমি, সেটাকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে৷ যে প্রতিভা আমাকে উপহার দেওয়া হয়েছে, সেটার যোগ্য হয়ে উঠতে হবে৷’ পেরেছিলেন বলেই এগিয়ে যান তরতর করে৷ ১৯৭৮ বিশ্বকাপ খেলতে প্রতিবেশী আর্জেন্টিনায় গেলেন, তত দিনে ফুটবল বিশ্বে জিকো পরিচিত হয়ে গেছেন ‘নতুন পেলে’ আর ‘সাদা পেলে’ নামে৷
তাঁকে ঘিরে সেই উন্মাদনা আর প্রত্যাশার চাপের সঙ্গে তাল মেলানো সহজ ছিল না৷ কাজটা আরও কঠিন করে দিল আর্জেন্টিনার এবড়োখেবড়ো মাঠ৷ শটের সঙ্গে উঠে আসত মাটি আর কাদা৷ জিকোর টাচ ফুটবলের জন্য যা উপযুক্ত ছিল না মোটেও৷ প্রথম ম্যাচে তবু সুইডেনের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে দলকে প্রায় জিতিয়েই দিচ্ছিলেন হেডে গোল করে৷ কিন্তু জালে ঢোকার আগে বল শূন্যে থাকতেই বিতর্কিতভাবে শেষ বাঁশি বাজিয়ে দেন ওয়েলসের রেফারি ক্লাইভ টমাস৷ সেবার শেষ পর্যন্ত তৃতীয় হয়েছিল ব্রাজিল৷ এত দিন পর অবশ্য জিকোর মনে হয়, মাঠের চেয়েও বেশি সমস্যা ছিল আরেকটি, ‘১৯৭৪ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস যে ফুটবল খেলেছিল, পুরো ব্রাজিল তাতে অত্যধিক মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েছিল৷ সবাই চাইছিল আমরাও ক্রুইফের দলের মতো খেলি৷ খুব কম সময় পেয়েও কোচ ক্লদিও কতিনহোও চেষ্টা করলেন আমাদের ওভাবে খেলাতে৷ তাতেই সব গড়বড় হয়ে গেল৷ ছেলেরা সবাই নিজেদের কারিকুরি, টেকনিক ভুলে গেল৷’
চার বছর পর এই সমস্যা ছিল না৷ ‘জিকো প্রজন্মে’ তখন মোহিত গোটা ফুটবল বিশ্ব৷ জুনিয়র-ফ্যালকাও-সক্রেটিস-সেরেজো-জিকোদের জাদুতে ফুটবল যেনে পেয়েছিল চূড়ান্ত উৎকর্ষের ছোঁয়া৷ সৃষ্টিশীল ও আনন্দদায়ী ফুটবলে খেলাটিকে তুলে নিয়েছিলেন নতুন এক উচ্চতায়৷ চোখধাঁধানো সৌন্দর্যের ফুল ফুটিয়ে প্রথম রাউন্ডে তিন ম্যাচেই জয়ে ১০ গোল, দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনার জালে তিনটি৷ প্রতিটি গোল ছাড়িয়ে গেল আগেরটিকে৷ জিকো নিজে করলেন ৪ গোল, সরাসরি অবদান আরও চারটিতে৷ উড়ন্ত দল হঠাৎ কুপোকাত ইতালিয়ান রূপকথার এক নায়কের হাতে৷ বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা এক ম্যাচে পাওলো রসির হ্যাটট্রিকে শেষ চারে ওঠার লড়াইয়ে ইতালি ব্রাজিলকে হারিয়ে দিল ৩-২ গোলে৷ অনেকের মতেই সর্বকালের সেরা দলটিকে আনুষ্ঠানিক একটা স্বীকৃতি বঞ্চিত করল বিশ্বকাপ৷
পরের বিশ্বকাপ আসতে আসতে জিকোর বয়স ৩৩৷ খুব একটা আগ্রহই ছিল না বিশ্বকাপে যাওয়ার৷ হাঁটুর চোটও খুব ভোগাচ্ছিল৷ তবু কোচের অনুরোধে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে আধা ফিট হয়েই গেলেন বিশ্বকাপে৷ দ্বিতীয়ার্ধে কিছু সময় খেলার মতো অবস্থায় ছিলেন, খেলছিলেন সেভাবেই৷ কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে তাঁর দুর্দান্ত এক ডিফেন্স চেরা পাস থেকেই পেনাল্টি আদায় করে নিল ব্রাজিল৷ কিক নিলেন নিজেই৷ কিন্তু...জিকোই মনে করিয়ে দিলেন বাকিটা, ‘আমি ঠিক ছন্দে ছিলাম না, এ জন্যই হয়তো স্বাভাবিকের চেয়ে অন্যভাবে কিক নিলাম৷ ওদের কিপার সেভ করে ফেলল৷ আমি কিকটা নিতে এগিয়ে না গেলে সক্রেটিস নিত৷ পরে টাইব্রেকারে কিন্তু আমি গোল করেছিলাম, সক্রেটিস মিস করেছিল৷’ টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতেছিল প্লাতিনির ফ্রান্স৷
এত দিন পর আক্ষেপ, মন খারাপের ভিড়ে সান্ত্বনার প্রলেপ বুলিয়ে দেয় নিজের ফুটবল দর্শন, ‘ব্রাজিল দারুণ খেলেছে, সবাই ভালোবেসেছে, পছন্দ করেছে৷ কিন্তু আমরা বিশ্বকাপ জিততে পারিনি৷ আমি সব সময় ফুটবলকে কেবল খেলা হিসেবেই দেখেছি৷ কখনোই মরিয়া দৃষ্টিকোণ থেকে দেখিনি৷ সম্ভব সবকিছুই আমি করেছি৷ জিততে পারিনি—ব্যস, পারিনি৷’
তবে নিজের দর্শনের উল্টোটা দেখে হোক বা মনে আক্ষেপের চোরকাঁটা থেকে, পরমুহূর্তেই আবার বলেন, ‘হয়তো আমাদের ইতিহাস এই শিক্ষাও দেয় যে শেষ পর্যন্ত জয়টাই আসল, সেটা যেভাবেই আসুক৷ কোনো আক্রমণকে খুন করতে হলে গতি নষ্ট করো, ফাউল করো৷ ব্যস, হয়ে যাবে!’ ওয়েবসাইট৷