Daffodil International University
Bangladesh => Positive Bangladesh => Topic started by: maruppharm on June 10, 2014, 09:46:29 AM
-
রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ থেকে বনশ্রীর দিকে যাওয়ার পথে খানিকটা হাঁটলেই চোখে পড়বে সিটি করপোরেশনের ময়লা-আবর্জনা রাখার জায়গা। সেখানকার আবর্জনার স্তূপ থেকে বিভিন্ন ফেলনা বর্জ্য কুড়ায় সবুজ। তার কুড়ানোর তালিকায় আছে প্লাস্টিকের পেট বোতলও।
দিন কয়েক আগে সেখানেই কথা হয় নয় বছর বয়সী সবুজের সঙ্গে। জানাল, এগুলো সে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে। বেশি চাহিদা লোহালক্কর আর তামার। প্লাস্টিকের বোতলের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলল, ‘বোতল সেলিম ভাইয়ের কাছে বেচি।’ কত পাও?—জানতে চাইলে বলল, ‘কোনো সময় ১০-১২ টাকাও দেয়, কোনো সময় দেয় আট টাকা।’ সেলিম ভাইয়ের দোকান কোথায়?—জানতে চাইলে জানাল, ‘মেরাদিয়া হাট’।
মেরাদিয়া হাটে কিছুক্ষণ খোঁজ করে দেখা মিলল সেই সেলিম ভাইয়ের। পুরো নাম মোহাম্মদ সেলিম। তিনি জানান, পথশিশুদের কাছ থেকে কেনা এসব বোতল ভ্যানে করে ইসলামবাগে পাঠান তিনি। বিক্রি করেন প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে।
নানা পর্যায়ে বেচাকেনা হওয়া এসব বোতল যায় কোথায়? হ্যাঁ, এসব বোতলের বড় অংশেরই গন্তব্যস্থল চীন। তবে পুরো বোতলটি নয়, এগুলো যায় টুকরা হয়ে। আর বোতলকে টুকরা করে রপ্তানি করতে গিয়ে দেশে গড়ে উঠেছে একটি শিল্প খাত। দেশে এখন এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে আনুমানিক দুই হাজার। তবে সরাসরি রপ্তানি করে ৫০-৬০টি প্রতিষ্ঠান। বাকিরা বড় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রপ্তানি করে থাকে।
এসব তথ্য বাংলাদেশ পেট ফ্লেকস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএফএমইএ)। সংগঠনটির মতে, এই শিল্প খাতে দেশে বিনিয়োগ হয়েছে আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার বেশি।
দেশে বোতল থেকে টুকরা তৈরির এ শিল্পের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। সারা দেশেই পেট বোতল পাওয়া যায়। সে কারণে অন্যান্য শিল্পের মতো ঢাকায় সীমাবদ্ধ না থেকে এ শিল্প খাতটি এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে।
বিপিএফএমইএর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৯৯ সালে আমি পেট ফ্লেকসের কারখানা দিই। তখন সারা দেশ থেকে আমার কাছে বোতল আসত। উত্তরবঙ্গ থেকে বোতল নিয়ে সরবরাহকারীরা আমার কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ত। কিন্তু এখন সরবরাহ অনেক কমে গেছে। কারণ সেখানে বেশ কয়েকটি কারখানা গড়ে উঠেছে।’
এ খাতে সরাসরি কত মানুষ জড়িত তার সঠিক তথ্য নেই শিল্পমালিকদের কাছে। তবে তাঁরা বলছেন, মাঝারি ও বড় কারখানায় অন্তত ৫০ জন কাজ করেন। কোনো কোনো বড় প্রতিষ্ঠানে ৭০-৮০ জনও কাজ করেন। সব মিলিয়ে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এ খাতে।
বিপিএফএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৮ হাজার টন বোতলের টুকরা রপ্তানি হয়েছে। প্রতি টন বোতলের টুকরা রপ্তানি হয় গড়ে ৭৫০ ডলারে। এর আগের কয়েক বছর গড়ে ৩০ হাজার টনের বেশি বোতলের টুকরা রপ্তানি হয়েছে।
এ দেশ থেকে রপ্তানি হওয়া বোতলের টুকরার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই যায় চীনে। বাকিটা যায় ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড এবং হংকংয়ে।
রপ্তানি হওয়া এসব বোতলের টুকরা থেকে তৈরি হয় পিএসএফ (পলিস্টার স্টেপল ফাইবার)। এই পিএসএফ দিয়ে সুতাকলগুলো সুতা (পলিস্টার ইয়ার্ন) তৈরি করে। এর বাইরে তৈরি হয় পাপোশ, পর্দা, কার্পেটসহ নানা পণ্য।
কীভাবে হয় বোতলের টুকরা: বিভিন্ন স্থান থেকে কারখানায় আসা বোতলগুলো থেকে প্রথমে প্লাস্টিকের মোড়ক সরানো হয়। এরপর সাদা আর সবুজ বোতল আলাদা করা হয়। কারণ এই দুই রঙের বোতলের টুকরার চাহিদা বেশি। অন্য রঙের বোতলের টুকরা আলাদা রাখা হয়। পরে বোতলের লেবেল তুলে ফেলাসহ পুরো বোতলটি পরিষ্কার করা হয়। এরপর যন্ত্রের মাধ্যমে বোতলগুলো কেটে ও ধুয়ে টুকরাগুলো শুকানো হয়। পরে ২৫ কেজির বস্তায় মোড়কজাত করে তা রপ্তানি করা হয়।
এক টন বোতলকে কেটে টুকরা করার পর তার ওজন দাঁড়ায় প্রায় ৮০০ কেজি। কারণ বোতলে থাকা মাটি ও পানি মুক্ত করতে গিয়ে ওজন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে যায়।
রাস্তাঘাট, নর্দমা, আবর্জনার স্তূপ থেকে বোতল কুড়ায় পথশিশু বা টোকাইরা। সেটা তারা ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে। ভাঙারি দোকানদারেরা আবার একটু বড় দোকানে এসব বোতল বিক্রি করে। সেসব দোকানিরা কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি কারখানায় বোতল সরবরাহ করে। আবার কিছু ক্ষেত্রে তারা আরেকটু বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে। তারাই বোতলের টুকরা করার কারখানায় এসব বোতল সরবরাহ করে থাকে।
বিপিএফএমইএর ধারণা, মাসে আনুমানিক সাড়ে ছয় হাজার টন বোতল সংগৃহীত হয়। এর মধ্যে কারখানাগুলোতে আসে আনুমানিক সাড়ে পাঁচ হাজার টন। বাকিটা বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে পুনর্ব্যবহার হয়।
কী চান উদ্যোক্তারা: বোতলের টুকরা খাতের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এ খাতের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রয়োজন। ইকুইটি অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ ফান্ডের (ইইএফ) মাধ্যমে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) কয়েকটি খাতকে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে থাকে। এ তহবিল থেকে বোতলের টুকরা শিল্প খাতকেও অর্থসহায়তা দেওয়ার দাবি তাদের। সে জন্য তারা এ খাতকে এ তহবিলে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান।
বর্তমানে কৃষিভিত্তিক ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত এ তহবিল থেকে অর্থসহায়তা পায়। অন্যদিকে সরকার বোতলের টুকরা রপ্তানিতে ১০ শতাংশ হারে রপ্তানিকারকদের নগদ সহায়তা দিয়ে থাকে।
আরেকটি সমস্যা উৎসে আয়কর। দশমিক ৬ শতাংশ হারে উৎসে আয়কর দিলেও তা চূড়ান্ত নয়৷ ফলে বছর শেষে আয়করের সঙ্গে এটি সমন্বয় করতে গিয়ে জটিলতা তৈরি হয়৷ অথচ তৈরি পোশাকসহ আটটি খাতে এই উৎসে করই চূড়ান্ত কর।
-
Informative post
-
Thanks for the information.