Daffodil International University

Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Topic started by: shilpi1 on June 18, 2014, 04:35:36 PM

Title: একটু পানি অনেক পূণ্যের হাতছানি
Post by: shilpi1 on June 18, 2014, 04:35:36 PM
দেশজুড়ে প্রচণ্ড গরম পড়ছে গত কয়েকদিন ধরে। বৈশাখী বৃষ্টির সময়টুকু বাদে যখন সূর্য প্রখর হয়ে ওঠে, তখন অসহনীয় তাপে ক্লান্ত হয়ে পড়ে মানুষ।

একটু ছায়ার আশায় পথ ছেড়ে পাশে কোথাও আশ্রয় নেয় পথচারী, পিপাসার্ত শ্রমিক খুঁজে ফেরে একটু পানি।

প্রকৃতির এ তীব্র দাবদাহে আমরা চাইলে খুব সহজেই অসীম পূণ্যবান হতে পারি। জীবনযাপনে মানুষের যা যা প্রয়োজন, ইসলাম সে সব কিছুর মধ্যেই আমাদের জন্য নেকি ও পূণ্যের ব্যবস্থা করেছে। শুধু পরকালীন নেকি-পূণ্যের হিসেব নয় বরং এসবে ইহজগতে নিজেদের মানবিকতা চর্চারও নানা উপায় লুকানো রয়েছে।

কাউকে পানি পান করানোর বিষয়টি আজ আমাদের কাছে হয়তো আহামরি কোনো দান কিংবা বিষয় নয়, অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এ সামান্য কাজটিও অসীম পূণ্যের কাজ। হাদিসের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ বুখারি শরিফে একটি পূর্ণ অধ্যায়ের নামকরণ করা হয়েছে- পানি পান করানোর ফজিলত শিরোনামে। এতে এ বিষয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিসগুলোকে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম সদকা হলো মানুষকে পানি পান করানো। (আহমদ, আবু দাউদ)
 
হজরত সাদ বিন উবাদা (রা.) এসে নবীজিকে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি তার জন্য কোনো কিছুর ওসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষ হয়ে কিছু সদকা করি, তবে কি তা আমার মায়ের কোনো উপকারে আসবে? নবীজি বললেন, হ্যা, হবে। তুমি মানুষকে পানি পান করাও।

হজরত ইবনে আব্বাসকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন দানটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন, অন্যকে পানি পান করানো। ইমাম কুরতুবি একটি আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে বলেছেন, যার গোনাহ বেশি হয়ে গেছে, সে যেন মানুষকে পানি পান করায়।
সহিহ বুখারি শরিফে বর্ণিত হাদিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর বদৌলতে এক পাপী ব্যক্তিকেও আল্লাহ পাক মাফ করে দিয়েছেন।

সামান্য কুকুরের তৃষ্ণা মেটানোয় যদি এতো বড়ো পুরস্কার হয়, তবে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে পানি পান করানোর বিনিময় আরও কতো মহান হতে পারে- তা কি কখনো ভেবে দেখেছি!

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোথাও একটি কূপ খনন করে দেয় এবং তারপর সেখান থেকে কোনো মানুষ, পশু-পাখি অথবা কোনো প্রাণীও যদি পানি পান করে, তবে প্রত্যেকটির বিনিময়ে আল্লাহ পাক তাকে কিয়ামতের দিন নেকি দান করবেন। এখানে শুধু কূপ নয়, বরং শহর ও অঞ্চল ভেদে যে কোনোভাবে পানি পান করার ব্যবস্থা করে দেওয়ার ফজিলত বোঝানো উদ্দেশ্য।

কোনো আততারগিব ওয়াততারহিব গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, হাদীস শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ ইমাম হাকেম একবার অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তার চেহারায় ফোড়া দেখা দিল এবং আকৃতি যেন বদলে গেল। তখন তিনি তার বাড়ির দরজায় সাধারণ পথচারীদের জন্য পানি পানের ব্যবস্থা করে দিলেন। লোকেরা চলতিপথে পিপাসার্ত হলে সেখান থেকে পানি পান করে নিত। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। তার চেহারায় আগের চেয়েও সৌন্দর্য বেড়ে গেল। ইমাম হাকেম মূলত ওই হাদীসের ওপর আমল করেছিলেন, যেখানে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য সদকা করো, এতে তাদের সুস্থতা নিহিত।

প্রসিদ্ধ ইমাম ও বুজুর্গ হজরত আব্দুল্লাহ বিন মুবারকের কাছে এক লোক এসে তার হাঁটুতে ক্ষত সম্পর্কে জানালো। লোকটি বললো, আমি অনেক ধরনের চিকিৎসা করিয়েও কোনো সুফল পাচ্ছি না। আব্দুল্লাহ বিন মুবারক তখন তাকে বললেন, যাও, অমুক জায়গায় গিয়ে সেখানে একটি কূপ খনন করে দাও। ওখানকার মানুষ পানির জন্য কষ্ট পায়। আমি আশা করি, এতে তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে। লোকটি তার কথা মতো সেখানে একটি কূপ খনন করে দিল ও সত্যিই কয়েকদিন পর সে সুস্থ হয়ে উঠলো।

শহরে নগরে রাজপথে হেঁটে চলা ক্লান্ত পথিকের সংখ্যা মোটেও কম নয়। আপনার আমার বাসা-বাড়ি কিংবা দোকানের সামনে দিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য পথচারী পথ চলছে। তাদের সেবায় যদি একটি ড্রামভর্তি বিশুদ্ধপানি আর দু’য়েকটি গ্লাস আমরা কোথাও রেখে দিই, তবে নিজেদের মানবিকতার বিশুদ্ধ চর্চার পাশাপাশি তা আমাদের আখেরাতেও অসীম পূণ্যের দুয়ার খুলে দেবে।

আজকের আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় নিজেদের পরকালীন আমলনামাকে সমৃদ্ধ করতে খুব বেশি কিছু করার সুযোগ আমাদের সবার হয়ে ওঠে না। অর্থ ও সাধ্যের অভাবে বড় অঙ্কের দান-খয়রাতও আমাদের সবার জন্য সম্ভব নয়। সার্বজনীন সুন্দর ও মানবতার ধর্ম ইসলাম এমন সবার জন্য খুব সহজেই পূণ্যবান হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা যদি স্ব স্ব অবস্থানে থেকে পিপাসার্ত মানুষের পিপাসা মেটাতে কিছু করার উদ্যোগ নিই, তবে কাল কিয়ামতের মাঠে এটুকুই হয়তো আমাদের জন্য অনেক বড় সঞ্চয় হয়ে থাকবে। সামান্য এক গ্লাস পানির বিনিময়ে যদি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পাক আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান, তবে এমন সৌভাগ্যবান আর কে আছে!