Daffodil International University
Entertainment & Discussions => Sports Zone => Football => Topic started by: maruppharm on June 27, 2014, 02:04:22 PM
-
প্রথম ভালোবাসা অবশ্যই ফুটবল৷ তাঁর পছন্দের অন্যান্য খেলার তালিকায় রয়েছে টেবিল টেনিস, অ্যাথলেটিকস, টেনিস, সাঁতার ইত্যাদি৷ তিনি সংগীতপ্রেমী৷ গাড়ি নিয়ে রয়েছে কিছু বিলাসিতা৷ আর আছে তাঁর যৌথ পরিবার ও জন্মভূমি মাদেইরার প্রতি বিশেষ অনুরাগ৷
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মানুষের কৌতূহল অপরিমেয়৷ ফুটবল তাঁকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে৷ নিজেকে খুব ভালোবাসেন রোনালদো৷ শরীরের যত্ন নেন নিয়মিত৷ তিনি ফ্যাশন-সচেতন৷ কে জানে, ফুটবলার না হলে হয়তো মডেলই হতেন!
যেখানেই যান, নজর কাড়েন সবার৷ তাঁকে ঘিরে উন্মাদনা, কারও ঈর্ষা, কারও ভালোবাসা অথবা ঘৃণার প্রকাশ ঘটে৷ কারও কাছে তিনি আদর্শ, আবারও কারও কাছে বর্জনীয়৷ তবে আলোচনার কেন্দ্রে তিনি অবশ্যই আছেন৷ কেউ কেউ তাঁর অকপট সততার প্রশংসা করেন৷ আবার কেউ কেউ তাঁকে আবেগপ্রবণ ও প্রচণ্ড অহংকারী ঠাওরে নিন্দা করেন৷
সব কাজ নিখুঁত হোক, এটাই তিনি চান৷ উৎকর্ষের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেন৷ আরও ভালো করার তৃষ্ণা তাঁর অফুরন্ত৷ তিনি গোলের পর গোল করতে চান৷ আরও ব্যালন ডি’অর ট্রফি ঘরে তুলতে চান৷ শারীরিক সামর্থ্য ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে খাওয়া-দাওয়া করেন পরিমিত৷ কোনো দিন একটু অনিয়ম হয়ে গেলে ব্যায়ামাগারে বাড়তি পরিশ্রম করে সেটা পুষিয়ে নেন৷ ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলেন৷ ধূমপানবিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় তিনি৷
টেবিল টেনিসের প্রতি রোনালদোর আগ্রহ ছোটবেলা থেকে৷ তিনি খেলতেনও ভালো৷ এমনকি তাঁকে পিং পং দলেও নিতে চেয়েছিলেন স্পোর্টিং লিসবনের টেবিল টেনিস কোচ৷ কিন্তু রোনালদো তো আসলে ফুটবলারই হতে চেয়েছিলেন, অন্য কিছু নয়৷ গান ভালোবাসেন তিনি৷ এক সাক্ষাৎকারে সিআরসেভেন বলেছেন, সংগীত তাঁর জীবনের অংশ৷ অনুশীলন, ভ্রমণ বা কোনো ম্যাচে মাঠে নামার ঠিক আগে তিনি গান শুনতে পছন্দ করেন৷
মায়ের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত রোনালদো, সেই শৈশব থেকেই৷ আর প্রয়াত বাবার সমর্থনও তাঁকে সহায়তা করেছে আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে৷ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে তাঁর চুক্তি সম্পাদনের পর দোলোরেস অবসর নেন, অর্থচিন্তা দূর হয় তাঁর৷ বাবার অ্যালকোহল আসক্তি দূর করতে না পারলেও ভাইকে মাদকের জগৎ থেকে ফিরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছেন রোনালদো৷ সংগীতশিল্পী ছোট বোন কাতিয়াকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন৷ বড় বোন এলমা মাদেইরায় একটি কাপড়ের দোকান দেখাশোনা করেন৷ তাঁকেও সব সময় সাহায্য করেন রোনালদো৷ তাঁদের নিয়েই তো রোনালদোর পৃথিবী৷ মাদেইরার প্রতি তাঁর ভালোবাসা অসীম৷ তাঁর কারণেই জায়গাটির নাম আজ ছড়িয়েছে িবশ্বময়৷ সেখানে যাওয়াটা সব সময়ই আকর্ষণীয় তাঁর কাছে; এমনকি বান্ধবী ইরিনাকেও সেখানে নিয়ে গেছেন একবার৷
ফুটবলার হিসেবে রোনালদোর ভবিষ্যৎ কী? বয়স বাড়ার সঙ্গে তাঁর খেলা যেন আরও ক্ষুরধার হচ্ছে৷ কোথায় গিয়ে থামবেন তিনি? বয়স এখন তিরিশের কাছাকাছি৷ তবু যেমন দাপটের সঙ্গে খেলছেন, তাতে ক্যারিয়ারে অবশ্যই আরও অনেক অর্জন করবেন৷ তিনিই এখন আধুনিক ফুটবলের প্রতীক৷ ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে কেউ কেউ অপরিণামদর্শী, খেয়ালি ও উদ্ধত আখ্যা দিয়ে থাকেন৷ তবে এটা সত্যি, তিনি দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়েছেন৷ শৈশবটা তাঁর জন্য অন্যদের মতো সহজ ছিল না৷ তিনি কম-বেশি স্বশিক্ষিত৷ শক্ত মানসিকতার অধিকারী৷ আটলান্টিকের মধ্যবর্তী একটি দ্বীপ থেকে মাত্র ১২ বছর বয়সে একা একা লিসবনে থাকতে শুরু করেন৷ এখন তাঁর পরিবারে সচ্ছলতা ও খ্যাতি এসেছে৷ এ সবকিছু রোনালদো নিজে নিজে অর্জন করেছেন, কারও সহায়তা ছাড়াই৷ তাই কিছুটা অহংকার তাঁকে নিশ্চয়ই মানায়! তিনি প্রতিভা নিয়ে জন্মেছেন, এটা সত্যি৷ কিন্তু সবাই কি তাঁর মতো নিজের প্রতিভাকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারে?
রোনালদোর পেশাদারি সন্দেহের ঊর্ধ্বে৷ তিনি যে কোচদের অধীনে খেলেছেন, তাঁরা সবাই এ কথা স্বীকার করেন৷ তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, রোনালদোর ক্যারিয়ার অনিশ্চিত৷ কারণ, তিনি একটি বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়েছেন৷ বর্তমানে তাঁর ধারেকাছে বাজারমূল্য খুব কম ফুটবলারেরই আছে৷ এখনো তাঁর সামনে বিভিন্ন ক্লাবের হাতছানি ও বড় অঙ্কের অর্থ উপার্জনের নানা প্রলোভন৷ কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে তিনি যদি কেবল অর্থের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বা উপসাগরীয় কোনো দেশের ক্লাবে পাড়ি দেন, তাতে তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে৷
ফুটবলের পথ ধরে রোনালদো কতদূর যাবেন, সময়ই বলে দেবে৷
সূত্র: প্রথম আলোয় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন, একাধিক ওয়েবসাইট এবং লুকা কাইয়োলির বই রোনালদো৷