Daffodil International University
Entertainment & Discussions => Sports Zone => Football => Topic started by: maruppharm on June 27, 2014, 02:06:04 PM
-
রিয়াল মাদ্রিদের সাদা জার্সি পরে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর যাত্রাটা যেমন জাঁকালো ছিল, শুরুর দিকে খেলাটা সেই তুলনায় ছিল অনেক নিষ্প্রভ৷ তাঁর নতুন ক্লাব ওই মৌসুমে কোনো শিরোপাই পায়নি৷ বড় ধরনের চোট পেয়ে টানা কয়েক সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হয় সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়কে৷ আর তখন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হারে রিয়াল মাদ্রিদ৷ সব মিলিয়ে তাঁর জন্য সময়টা ছিল হতাশা আর বিষাদে ভরা৷
নতুন কোচ ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনি, অধিনায়ক রাউল, সতীর্থ হেইঞ্জ, গুতি, সালগাদো, কাকা, বেনজেমা প্রমুখের সঙ্গে মানিয়ে নিতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি রোনালদোকে৷ তবু তিনি কেন যেন নিজেকে ঠিক মেলে ধরতে পারছিলেন না৷ স্পেনের ক্রীড়াদৈনিক মার্কার মন্তব্য, পর্তুগিজ তারকা রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে খেলতে এসে নিজের ছন্দ খুুঁজে পাচ্ছেন না৷ তিনি আক্রান্ত হয়েছেন ‘জিদান সিনড্রোমে’—অতিমাত্রায় প্রত্যাশার চাপ এবং নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে ব্যর্থতাজনিত সমস্যা৷
চোটের ধকল কাটাতে টানা ৫৫ দিন মাঠের বাইরে থাকার পর মাঠে ফিরলেন৷ তারপর ধীরে ধীরে নিজেকেও ফিরে পেতে শুরু করেন রোনালদো৷ গোলের দেখাও পাওয়া গেল৷ এদিকে, স্পেনের আরেক ক্লাব বার্সেলোনা ওই মৌসুমে দুর্দান্ত সাফল্য দেখিয়ে লা লিগায় অনেক এগিয়ে যায়৷ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে থাকাকালীন রোনালদোর ফিটনেস কোচ ছিলেন ভালতের দি সালভো৷ তিনি পরামর্শ দেন, ‘রোনালদোকে কিছুদিন থামতে হবে এবং প্রশান্তি খুঁজতে হবে৷ জীবনের যাবতীয় উদ্বেগ ও চাপ থেকে তাকে সাময়িকভাবে দূরে থাকতে হবে৷ সে সেরা সাফল্য পেতে নিজেকে সব সময় উজাড় করে দেয়৷ কারণ, মানুষ এমনটাই চায় তার কাছে৷ এ রকম চাপের মধ্যে যাকে সব সময় থাকতে হয়, তার পক্ষে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কখনো কখনো খুব কঠিন হয়ে পড়ে৷’
লা লিগায় বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের লড়াই জমে ওঠে৷ তারপর দুই দল যথাক্রমে ৯৯ ও ৯৬ পয়েন্ট নিয়ে খেলা শেষ করে৷ পিছিয়ে পড়ার ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেন রোনালদো, ‘দলে বড় বড় খেলোয়াড় থাকলেও আমরা এখনো বার্সেলোনার মতো সমন্বিত, সুসংগঠিত ও পরিমার্জিত হয়ে উঠতে পারিনি৷ ফুটবল ভালোবাসে এমন যে কেউ স্বীকার করবেন, বার্সেলোনা আকর্ষণীয় ফুটবল খেলেছে৷ কিন্তু আমরাও ভালো খেলব৷ শুধু একটু সময় দরকার৷ আগামী মৌসুমটা নিশ্চয়ই অন্য রকম হবে৷’
কিন্তু রিয়ালের পরবর্তী মৌসুম আসার আগে রোনালদোর সামনে আরও বড় লড়াই অপেক্ষা করছিল৷ সেটা ২০১০ সালের বিশ্বকাপ৷ পর্তুগাল জাতীয় দলের ভরসাও যে তিনিই৷ বাছাইপর্বে একটাও গোল করতে পারেননি৷ তবু হতাশ ছিলেন না৷ কারণ তিনি রিয়াল মাদ্রিদের সতীর্থ নিস্টলরয়কে বলতে শুনেছেন, ‘গোল হচ্ছে সস বা আচারের মতো৷ বোতল থেকে সহজে বের করা যায় না৷ কিন্তু হঠাৎ বেরোতে শুরু করলে একসঙ্গে অনেক বেশিই পাওয়া যায়৷’
বিশ্বকাপে নিজের সেরা প্রয়াসের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক আশা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান রোনালদো৷ ‘জি’ গ্রুপে পর্তুগালের প্রতিপক্ষ ছিল ব্রাজিল, উত্তর কোরিয়া ও আইভরিকোস্ট ৷ অপরাজিত থেকে গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে প্রতিবেশী স্পেনের মুখোমুখি হয় পর্তুগাল৷ রিয়াল মাদ্রিদ এবং স্পেনের লা লিগায় খেলার সুবাদে রোনালদো ওই ম্যাচে অন্য রকম অনুভূতি ও প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নামেন৷ কারণ, স্পেন দলে তাঁর ক্লাব-সতীর্থসহ পরিিচত অনেকেই ছিলেন৷ ওই ম্যাচে পর্তুগাল ১-০ গোলে পরাজিত হওয়ার পর অধিনায়ক রোনালদোর হতাশা প্রকাশের ধরন নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷
বিশ্বকাপটা ভালো যায়নি রোনালদোর৷ ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে তিনি গোল করেন মাত্র একটি৷ বিশ্বের সেরা এবং সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের কাছ থেকে স্বভাবতই আরও ভালো কিছুরই প্রত্যাশা ছিল৷
সূত্র: প্রথম আলোয় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন, একাধিক ওয়েবসাইট এবং লুকা কাইয়োলির বই রোনালদো৷