Daffodil International University

Entertainment & Discussions => Sports Zone => Football => Topic started by: maruppharm on June 27, 2014, 02:14:30 PM

Title: রোনালদোর পর্তুগালের বিদায়
Post by: maruppharm on June 27, 2014, 02:14:30 PM
ঘানার জাল থেকে বলটা তুলে নিয়ে যখন দৌড় দিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, আবারও ফিরে এলেন ইউসেবিও। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে অবিস্মরণীয় ওই ম্যাচের ফুটেজে একটা দৃশ্যই বারবার ফিরে আসে। গোল করার পর জাল থেকে বলটা নিয়ে মাঝবৃত্তের দিকে দৌড়াচ্ছেন ইউসেবিও।
কাল ম্যাচের ৩১ মিনিটের গোলটা অবশ্য রোনালদো করেননি। সেটি আত্মঘাতী গোল। এই অমিলের মতোই অমিল থাকল আসল জায়গাতেও। ইউসেবিও আর হওয়া হলো না রোনালদোর!
ম্যাচের শেষ বাঁশি বেজেছে। দু দলের বাকি খেলোয়াড়েরা মাঠের মাঝখানে শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত। রোনালদো একা মন্থর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে মাঠের সীমানার ধারে চলে এলেন। হয়তো বেরিয়েই যেতেন। পর্তুগাল দলের কর্মকর্তা স্থানীয় তিন-চারজনকে এগিয়ে যেতে দেখা গেল। তাঁরাই হয়তো বোঝালেন, অধিনায়কের এভাবে বেরিয়ে আসা ঠিক নয়। রোনালদো তাই ফিরে গেলেন মাঠের মাঝখানে। গিয়ে কোমরে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। যন্ত্রের মতো হাত মেলালেন ঘানাইয়ানদের বাড়িয়ে দেওয়া হাতে। আমার বিশ্বকাপ তাহলে এখানেই শেষ! হ্যাঁ, কাগজে-কলমে বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে আর দেখবে না এই বিশ্বকাপ।
দেয়ালের লিখনটা পড়া যাচ্ছিল আগেই। তার পরও অলৌকিক কিছুর আশা নিয়ে ম্যাচটা শুরু করেছিল পর্তুগাল। এখানে বড় ব্যবধানে জয়, আর জার্মানি-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচটা যেন ড্র না হয়। সেখানে দুই দলের কোচই জার্মান, একে অন্যের বন্ধু। ম্যাচেও তাঁরা সেই বন্ধুত্ব নিয়ে যান কি না, এ নিয়ে কত কথাবার্তা!
সবকিছুকে অপপ্রচার প্রমাণ করে এই বিশ্বকাপে টমাস মুলারের চতুর্থ গোলে জার্মানিই জিতল। কিন্তু পর্তুগালের আশার পালে তাতে একটুও হাওয়া লাগল না। প্রায় একই সময়ে এখানে যে ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে এনেছে ঘানা। আসামোয়া জিয়ানের হেডে গোল ‘হলেও হয়ে যেতে পারে’ স্বপ্নটা প্রায় মুছেই দিয়েছে পর্তুগিজদের মন থেকে। তখন বরং পর্তুগালের চেয়ে ঘানারই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
শেষ পর্যন্ত কারোরই ওঠা হলো না। ২-১ গোলে জিতল পর্তুগাল। যে জয় আনন্দের বদলে জার্মানির কাছে চার গোল খেয়ে বসার দুঃখটা আরও বাড়িয়ে দিল। যুক্তরাষ্ট্রের সমান পয়েন্ট, কিন্তু গোল-পার্থক্যে বাদ। সেই গোল-পার্থক্যের ব্যবধান ঘুচিয়ে দেওয়ার সুযোগ যে পর্তুগাল পায়নি, তা নয়। তবে সুযোগের কথা বললে সেটি ঘানাও কম পায়নি। দু দলের জন্যই জয় ছাড়া কোনো আশা ছিল না, তাই গোলের সুযোগও তৈরি হয়েছে অনেক। ফিনিশিংয়ের দুর্বলতার বিচারে দু দলই প্রায় সমানে সমান।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো না থাকলে এই ম্যাচ নিয়ে কারও কোনো আগ্রহ থাকত বলে মনে হয় না। প্লে-অফে বলতে গেলে একাই সুইডেনকে হারিয়ে পর্তুগালকে তুলে এনেছেন বিশ্বকাপে। আবার এমন কিছু তো করতেই পারেন! মাঠে নামার সময় পা দুটি ঝাঁকি দিলেন। লাফ দিলেন দুবার। ম্যাচ শুরু হতে যেন তর সইছে না।
বাঁ দিকে শুরু করে ডানে গেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মাঝখানে। ম্যাচের শুরুর আধঘণ্টামতো ডান-বাম-মাঝে সব জায়গাতেই রোনালদো। ঘানাকে কাঁপিয়েও দিয়েছিলেন। প্রথমার্ধে ঘানার গোলে থেকেছে পর্তুগালের তিনটি শটই, তিনটিই রোনালদোর। এর একটি অবশ্য হেড। যেটি ঠেকিয়ে ঘানার গোলরক্ষক রীতিমতো রণহুংকার দিয়েছেন। সেটিও একবার নয়।
এর আগে রোনালদোর ফ্রি-কিক ঠেকিয়েছেন। ম্যাচের শুরুর দিকে অবশ্য গোলরক্ষক নন, রোনালদোকে বঞ্চিত করেছে গোলপোস্ট। ডান পাশের প্রায় পার্শ্বরেখার কাছ থেকে দুর্দান্ত কোনাকুনি শট ফিরেছে বারে লেগে। বারবার রোনালদোর গোলের কাছ থেকে ফিরে আসতে দেখে মনে হচ্ছিল, গত তিনটি বিশ্বকাপের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বোধ হয় এবারও হচ্ছে। ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় কোনো গোল পাবেন না। ২০০২ বিশ্বকাপে লুইস ফিগো পাননি। ২০০৬ বিশ্বকাপে রোনালদিনহো ও ২০১০ বিশ্বকাপে মেসিও।
গত দু দিন টুইটারে ছড়িয়ে পড়া কৌতুকটাও আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছিল—
মেসি: ৩ ম্যাচে ৪ গোল
নেইমার: ৩ ম্যাচে ৪ গোল
রোনালদো: ২ ম্যাচে ২ হেয়ারকাট
এই ম্যাচের আগে আবারও ক্ষৌরকারের কাছে গিয়ে ৩ ম্যাচে ৩ হেয়ারকাট নিশ্চিত করে ফেলেছেন রোনালদো। হেয়ারকাটের সঙ্গে অবশ্য একটা গোলও মিলল শেষ পর্যন্ত। ৮০ মিনিটে বক্সে মুফতে পেয়ে যাওয়া ওই বলে রোনালদোর গোল না করে উপায় ছিল না। ম্যাচের বাকি সময়টাতেও কমপক্ষে তিনবার গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু হাঁটুর চোট যে রোনালদোকে নিজের ছায়া বানিয়ে রেখেছে! নইলে ওসব সুযোগ রোনালদোর মিস করার কথা নয়।
রোনালদো মিস করলেন। বিশ্বকাপও নিশ্চিত মিস করবে তাঁকে।