Daffodil International University
Entertainment & Discussions => Story, Article & Poetry => Topic started by: imam.hasan on July 01, 2014, 03:25:00 PM
-
বর্ণ গন্ধ ও প্রাচুর্যে একমাত্র গোলাপই সব ফুল ছাড়িয়ে তৈরি করেছে ঐশ্বর্যমণ্ডিত একটি জগৎ। গোলাপের প্রশস্তি নিয়ে রচিত হয়েছে মহাকাব্য, রূপকথা, আছে নানান কিংবদন্তিও। অসংখ্য গবেষণা, প্রেম উপাখ্যান রচিত হয়েছে গোলাপের জাদুস্পর্শে। গোলাপের বর্ণবৈভব যেমন অন্তহীন তেমনি অন্তহীন তার স্তুতিবাক্য।
পৃথিবীর পুরনো গোলাপগুলো ছিল জংলি বা বুনো ধরনের। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা বহুমাত্রিক গবেষণা চালিয়ে উন্নত জাতের বিচিত্র গোলাপ আবিষ্কার শুরু করেন। ১৮৬৭ সালে ফ্রান্সে লা ফ্রান্স জাতের নতুন গোলাপ উদ্ভাবনের মধ্যদিয়ে আধুনিক গোলাপের শুভ সূচনা। গোলাপবিদদের প্রচেষ্টায় পারস্যের হলুদ গোলাপের সংকর মিলনে ১৯০০ সালে প্রথম লাল ও কমলার ছোপযুক্ত গোলাপ এবং ১৯১০ সাল নাগাদ একেবারে খাঁটি হলুদ গোলাপের আর্বিভাব। বর্তমানে পৃথিবীতে শত-সহস্র ধরনের গোলাপ ছড়িয়ে আছে। আবি®কৃত হচ্ছে আরও নতুন নতুন জাতের গোলাপ। এর সবগুলোই আবাদিত।
যে গোলাপ নিয়ে পৃথিবী এতো মাতোয়ারা সেই গোলাপের সঙ্গে আমাদেরও রয়েছে নাড়ির সম্পর্ক। একসময় মনে করা হতো, গোলাপের সঙ্গে আমাদের ঐতিহ্যগত কোনো সম্পর্ক নেই। দেশে স্থানীয়ভাবে চাষ করা গোলাপের সবটুকুই ধার করা। তাছাড়া গোলাপের আদিস্থান বলতেও মধ্যএশিয়া বা ইউরোপের দেশগুলোকেই বোঝায়। কিন্তু চমকপ্রদ বিষয় হলো, আমাদের প্রকৃতিতেও আছে এখানকার নিজস্ব একটি বুনো গোলাপ। আর ফুলটির আবাসস্থল খোদ সুনামগঞ্জ জেলার টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বৃহত্তর সিলেটের হাওরাঞ্চল! নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের বিল-হাওরেও কিছু কিছু থাকতে পারে। মনে করা হয়, এটাই পৃথিবীর একমাত্র জলসহিষ্ণু গোলাপ। জলসহিষ্ণু হওয়ায় বছরের দীর্ঘ সময় পানির নিচেই ডুবে থাকে। পানি সরে গেলে ধীরে ধীরে নতুন পাতা ও ফুলের কুঁড়ি গজাতে শুরু করে। বুনো গোলাপ জন্মে হাওরের অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে। শুকনো মৌসুমে এসব স্থান বিচিত্র তৃণ-গুল্মে ভরে ওঠে। আশপাশে খুব একটা বসতি না থাকায় সাধারণত নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনাও তেমন একটা থাকে না।
মূলত আধুনিক গোলাপের সংখ্যা কয়েক হাজার হলেও তাদের বন্য পূর্বসূরির সংখ্যা নগণ্য। গোলাপের ইতিহাস এক মহাভারত। নির্বাচন ও সযতœ লালনের ফলে নিচের বনগোলাপগুলোর কোনো কোনোটির কিছুটা উন্নত ধরন উনিশ শতকের আগে বাগানে পালিত ও সমাদৃত হতো। পৃথিবীর ১০টি প্রধান আদিজাতের
ফুল নিম্নরূপ :
ক্যাবেজ গোলাপ, দামেস্ক গোলাপ, ফরাসি গোলাপ, চীনা গোলাপ, চা গোলাপ বা টি-রোজ, পারস্যের হলুদ গোলাপ, জাপানি গোলাপ, জাপানি লতানো গোলাপ, প্রেইরি গোলাপ ও কস্তুরি গোলাপ।
আধুনিক গোলাপ মূলত এগুলোর কৃত্রিম সংকরণ থেকেই উৎপন্ন, কখনো কোনো মিউটেশন এ সমাহারে বৈচিত্র্য যুগিয়েছে। আধুনিক গোলাপ দুটি বড় দলে বিভক্ত: ঝোপালো ও লতানো। মোট গোলাপের ৯০ ও ১০ ভাগ যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্গের অন্তর্গত। এবার বনগোলাপ সম্পর্কে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য।
বনগোলাপের প্রচলিত আরেকটি নাম সেঁউতি। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-
‘আমি জানি মনে-মনে, সেঁউতি যূথী জবা।’
বলিষ্ঠ ঝোপাল গুল্ম। খাড়া বা অর্ধ-আরোহী ধনুকের মতো শাখাপ্রশাখা যুক্ত। চ্যাপ্টা কাঁটা উপপত্রের জোড়ায় থাকে। পাতা ৫ থেকে ১০ সেমি লম্বা, পত্রক ৭ থেকে ৯টি, সামান্য বৃন্তক। পাতা ও ডালপালা রোমশ বা মসৃণও হতে পারে। পত্রক সাধারণত ১ জোড়া বা উপপত্রের নিচে সোজা, চ্যাপ্টা, কণ্টকিত, উপপত্র ছোট, ঝালর সদৃশ।
পুষ্পবৃন্তযুক্ত, মঞ্জরিদণ্ড বলিষ্ঠ, পত্র থেকে অনেক ছোট, পুষ্পবৃন্ত ছোট, মঞ্জরিপত্র দেড় সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ঘনভাবে ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত। বৃতিনল গোলাকার। বাইরের দিকটা বাদামি, খণ্ডক দেড় সেন্টিমিটারের মতো, ডিম্বাকার, ভেতরে রোমশ, ক্ষণস্থায়ী। পাপড়ি সংখ্যা ৫, রং সাদা, ১.৭ থেকে ৩ সেমি লম্বা, প্রশস্তভাবে বিডিম্বাকার, শীর্ষ সখাঁজ ও মসৃণ। পুংকেশর অসংখ্য, গর্ভদণ্ড মুক্ত। ফল ১ থেকে ২ সেমি লম্বা, গোলাকার, ঘনভাবে কোমল রোমাবৃত। ফুল ও ফলের মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে জুন।
বাংলাদেশ ছাড়া ভারত ও মায়ানমারেও এ গোলাপ অল্প সংখ্যায় দেখা যায়। বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত। বৈজ্ঞানিক নাম Rosa clinophylla. (Rosa involucrata)।
গোলাপ বহুবর্ষজীবী গুল্ম ও ঝোপজাতীয় গাছ। ছোট ও অনুচ্চ লতার বিভিন্ন ধরনের গাছও দেখা যায়। গাছের কচি ডালের আগায় নিখুঁত পাপড়ির ফুল ফোটে। রঙের বর্ণনা দু’এক বাক্যে বলে শেষ করা অসম্ভব। গোলাপের অসংখ্য জাতের মধ্যে আছে হাইব্রিড-টি, ফ্লোরিবান্ডা, পলিয়েননা, মডার্ন শ্রাবস, মিনিয়েচার, ক্লাইম্বার, র্যামবলার, মাস্ক, মস্ ইত্যাদি। এ জাতগুলোর মধ্যে হাইব্রিড টি ও ফ্লোরিবান্ডা পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত এবং বাংলাদেশের আবহাওয়ায়ও বেশ উপযোগী। দোআঁশ মাটি গোলাপ চাষের জন্য উপযুক্ত।
Source: banglanews24.com