Daffodil International University

Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Topic started by: shilpi1 on July 23, 2014, 11:16:01 AM

Title: রোজা ক্ষমা প্রাপ্তির মহাসুযোগ
Post by: shilpi1 on July 23, 2014, 11:16:01 AM
ফেসবুকে এক বন্ধু লিখেছে, আয়নায় যদি চেহারা দেখা না গিয়ে চরিত্র দেখা যেত তাহলে কেউই আর আয়না ব্যবহার করতো না–সামগ্রিকভাবে কথাটা আমাদের দরিদ্র চরিত্রের উদাহরণ অবশ্যই।

আমার আরও মনে হয় পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ আত্মজীবনী লেখা। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘটনা যা আমার শঠতায় ভরা, অসৎ চিন্তায় ভরা, পরশ্রীকাতরতায় ভরা, হিংসায় ঠাসা, সুক্ষ্ম অহঙ্কারের কুটচালে ভরা, লোভ, লালসা, অপরকে হেয় করা, মিথ্যা কথা, মিথ্যা আশ্বাস, কারণে অকারণে মিথ্যা বলা, আমানতের খেয়ানত করা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, কারো সঙ্গে মতের অমিল হলে তাকে গালিগালাজ করা ইত্যাদি আরও অনেক অনেক কু-রিপুর কথা যা শুধু আমি জানি তা কি সততার সঙ্গে লেখা সম্ভব? শুধু আমি নই,  যে কাউকে এই ব্যাপারে লিখতে বসালে ভয়ঙ্কর বিপদে আপতিত হবে সে। এই লেখার জন্য যত বড় পুরস্কারই থাকুক না কেন আমি বা আমরা কেউ লিখতে পারবো না। কারণ মনে এক মুখে আর এক, এই হলাম আমি।

এসবের একটাই কারণ তা হলো আমার অহঙ্কার, আমার বড়ত্ব, আমিত্ব। সেজন্য আল্লাহর একনিষ্ঠ এক বান্দা বলেছেন, পাপী অহংকারী অপেক্ষা শ্রেয়। কেননা পাপী নিজের পাপ স্বীকার করে। কিন্তু অহংকারী অহমিকার কারণে বন্দি থাকে।

অন্য একজন বলেছেন, মানুষের বিপদ আসে তিনটি বস্তু থেকে। যথা- (ক) স্বাভাবিক রোগ, (খ) অভ্যাসগত রোগ ও (গ) অসৎ সঙ্গ রূপ রোগ। অবৈধ খাদ্য থেকে স্বাভাবিক রোগ হয়। নিষিদ্ধ ও ত্রুটিযুক্ত বস্তুর দৃষ্টির ও পরনিন্দা শোনার অভ্যাস থেকে অভ্যাসগত রোগের উৎপত্তি। আর রিপুর দাসত্ব থেকে অসৎ সঙ্গ রোগ দেখা দেয়।

অবৈধ আয় থেকে অবৈধ খাদ্য আর নিষিদ্ধ ও ত্রুটিযুক্ত বস্তুর দৃষ্টি ও পরচর্চা, পরনিন্দা যা শয়তান এতোই আমাদের কাছে শোভন করেছে যে কখন তা আমার অভ্যাস রোগ হয়ে গেছে যে বুঝতেই পারিনা। আর কু-মতলব হাসিলের জন্য তো কু লোকেরই দরকার।

অন্য একজন বলেছেন, খাঁটি হতে হলে চারটি বস্তু বিশেষ প্রয়োজন। তা হলো- সত্য কথা, সত্য কাজ, খাঁটি বন্ধুত্ব ও খাঁটি আমানত।

আমি বা আমরা আজ এসব রোগাক্রান্ত। সমাজ আমার কারণে দূষিত। একবেলা নামাজ পড়ি তাতে আমার গর্বে বুক ফুলে যায় কিন্তু ঠিক নামাজের পরেই ফিতনা করি তাতে আমার আল্লাহ্‌র ভয় আসে না মনে। এই আমি আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত চরিত্রবান। এই হচ্ছে মুখে এক অন্তরে আর এক। যা আজকের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে বাস করে যেমন বাংলাদেশের আইন ভঙ্গ করার কোনো অবকাশ নেই তেমনি পৃথিবীর কোথাও বা কোনো দেশে বা সমাজে বাস করে সে দেশের বা সমাজের আইন ভঙ্গ করারও কোনো অবকাশ নেই। দেশ বা সমাজের আইন ভেঙে যেমন কারো পার পাওয়ার উপায় নেই, সমাজ বা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে পাকড়াও হতে হবে। তেমনি কেউ দেখুক বা না দেখুক ছোট বড় কোনো পাপ করে বাঁচার অবকাশ নেই। মহান আল্লাহ্‌র বিচারের সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।

মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, তোমাদের মনের কথা তোমাদের রব জ্ঞাত, সৎকর্মী হলে তিনি তওবাকারীদের দোষ ক্ষমাকারী”। সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-২৫।

আরও একজন আল্লাহর ঈমানদার বান্দা বলেছেন, যদি বান্দাকে তার নিজের অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হতো তবে গুনাহ ও গোমরাহ ছাড়া অন্য কিছু বের হতো না।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি দোয়া ছিল,  হে আল্লাহ্! আমি আমার তত্ত্বাবধানে থাকার চেয়ে আপনার আশ্রয় চাই, আমাকে সার্বক্ষণিক আপনার তত্ত্বাবধানে রাখুন।

মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে কিছু কঠিন কথা সহজ ভাষায় বলেছেন। তাই আমি একে পড়লেও মনে ভয় আসে না আমার দুনিয়া প্রীতি, প্রতিযোগিতা, মোহ, লোভ, লালসার কারণে। কোরআন বুঝে না পড়ার কারণে। কারণ চাক্ষুষ প্রমাণ আমাকে প্রভাবিত করে। পুলিশের ভয়ে আমি চুরি করি না কিন্তু মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর ভয়ে রিপুর ঘৃণিত স্বভাব গুলো আমি ত্যাগ করি না। পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারায় মহান আল্লাহ্ বলেছেন, ইহা সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য পথ প্রদর্শক। যারা গায়েবে বিশ্বাস করে, ঠিকভাবে নামাজ পড়ে ও তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা হতে খরচ করে। আয়াত-২-৩।


প্রথমেই মহান আল্লাহ্ বলেছেন, ইহা সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই। কোনো প্রকার সন্দেহের স্থান নেই এই কিতাবে। যা বলা হয়েছে সহজ সরল ও হিকমতের সাহায্যে তাই সত্য, অকাট্য। যা মুত্তাকীদের  জন্য পথ প্রদর্শক। মুত্তাকীদের প্রাথমিক পরিচয়ে তাদের তিনটি পরিচয় দিয়েছেন যেমন- তারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, নামাজ পড়ে ও তাদের যে রিজিক দেওয়া হয়েছে তা সৎ পথে ব্যয় করে।

যে সব গোপন পাপ আমরা করি, যার কোনো সাক্ষী নাই। এসব পাপের জন্য আমরা কোনো অনুতাপ করিনা,  অনুশোচনাও করিনা এমন কি বুঝিও না যে এটা পাপ। পুলিশ নেই বলে নাকি সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি হয় না বলে আমরা এমন করি? আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি যে এখন যে পাপ আমরা করলাম তার নগদ শাস্তি যদি হতো তাহলে আমাদের কি গতি হতো? আমি এতোই মোহাচ্ছন্ন যে পাপ পূণ্যের হিসাব করতে ভুলে গেছি।

মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এমন চারটি চরিত্র দোষ আছে যে কোনো ব্যক্তির মধ্যে তার সমষ্টি পাওয়া গেলে সে পুরোপুরি মোনাফেক পরিগণিত হবে ও তার কোনো একটি পাওয়া গেলেও তার মধ্যে মোনাফেকের স্বভাব আছে বলা যাবে। এ দোষগুলো হলো-আমানতের খেয়ানত করা, কথায় কথায় মিথ্যা বলা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা ও কারো সঙ্গে মতানৈক্য বা বিরোধ হলে তাকে গালিগালাজ করা। সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা.) হতে বর্ণিত। বোখারি শরীফ, প্রথম খণ্ড, হাদিস নম্বর-৩০।

পরিস্থিতির আলোকে মনে হয় এগুলো কোনো পাপই নয়, কেহ দেখেনা, লোক চক্ষুর অন্তরালে করা যায় ইত্যাদি। কিন্তু আসলে কি তাই?
যে সব মোনাফেকি করে আজ পার পেয়ে যাই, কু-রিপুর তাবেদারি করে সাময়িক লাভ করি তার হিসেব দিতেই হবে। দুনিয়ায় আত্মজীবনী সৎভাবে লিখতে না পারলেও আখিরাতে অবশ্যই লিখিত হিসেবে পাওয়া যাবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে বলেছেন-আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবে, হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না। সুরা আল-কাহফি, আয়াত-৪৯।

এবং নিজেকে নিজের কৃতকর্মের কিতাব পড়তে দেয়া হবে এটা ও মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে সুরা বনি ইসরাইলে বলেছেন, আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার গ্রীবলগ্ন করে রেখেছি। কেয়ামতের দিন বের করে দেখাব তাকে একটি কিতাব, যা সে খোলা অবস্থায় পাবে।পাঠ কর তুমি তোমার কিতাব। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্যে তুমিই যথেষ্ট।
-