Daffodil International University
Faculties and Departments => Faculty Sections => Topic started by: mahmud_eee on July 24, 2014, 12:28:11 AM
-
নিউজিল্যান্ডের ভেড়ার লোমে এক ধরনের প্রোটিন আছে। এই প্রোটিনকে বলে কেরোটিন। এটিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষত নিরাময়ের প্রযুক্তি ও ওষুধ উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. আজম আলী। এ কাজে প্রথমে তিনি ভেড়ার লোম থেকে কেরোটিন নামের এ প্রোটিনকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন ধরনের এবং ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জৈব প্রোটিন তৈরি করেন। উদ্ভাবিত নতুন এ পদার্থের চরিত্র ও আচরণ সম্পূর্ণ মৌলিক। এর সঙ্গে আরো কিছু পরীক্ষা চালিয়ে তৈরি করেন ক্ষতের চিকিৎসার সেই প্রযুক্তি ও ওষুধ। এসিডে ঝলসে বা আগুনে পুড়ে মানুষের চামড়ায় যে মারাত্মক ক্ষত হয়, তার চিকিৎসায় এত দিন যে ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হতো, ড. আজম আলীর ওষুধটি কাজ করে তার চেয়ে ৪০ গুণ দ্রুত।
ড. আজম ইউনিভার্সিটি অব ওটাগোর ডানেডিন ক্যাম্পাসে কাজ করছেন। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান গবেষণামূলক সরকারি প্রতিষ্ঠান ক্রাউন রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (এজি রিসার্চ) কাজ করেছেন। এজি রিসার্চ ছাড়ার আগে তিনি জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে বায়োম্যাটারিয়াল এবং ন্যানোটেকনোলজি বিভাগের বিজ্ঞানী দলের প্রধান পদে দায়িত্বরত ছিলেন।
২০০৩ থেকে ২০০৭-এর জানুয়ারি পর্যন্ত উল রিসার্চ অর্গানাইজেশনে জৈব রসায়নের বায়োম্যাটারিয়াল নিয়ে গবেষণা দলের প্রধান হয়ে কাজ করেছেন। পিএইচডি শেষ করেই ২০০০ সালে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো হিসেবে যোগ দেন পোহাং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে। একই বছরের অক্টোবরে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনয়ায় রসায়ন বিভাগের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে গবেষণা শুরু করেন এবং ২০০৩-এর জুলাই পর্যন্ত কাজ করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ন্যানোফটোরেজিস্ট সিনথেসিস, ফটোলিথোগ্রাফি, পলিমার বা বায়োপলিমেরিক বায়োম্যাটারিয়ালসের উন্নয়ন, টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাটারিয়ালস এবং বায়োম্যাটারিয়ালসের চরিত্র নির্ণয় এবং এগুলোর নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে জটিল সব গবেষণা করেন। এছাড়া মালয়েশিয়ার পাম অয়েল বোর্ড, জাপানের জায়েরি (জেএইআরআই), দক্ষিণ কোরিয়ার পোসটেকে (পিওএসটিইসিএইচ) কাজ করেছেন এই বিজ্ঞানী।
বিভিন্ন জৈবিক পদার্থ থেকে মানুষের চিকিৎসাসহ নানা কাজে প্রয়োজনীয় নতুন পদার্থ উদ্ভাবনে সিদ্ধহস্ত ড. আজম আলী। তাঁর কাজের পরিধিতে রয়েছে বায়োপলিমার এবং প্রোটিন কেমিস্ট্রি, পলিমার ও ম্যাটারিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োম্যাটারিয়ালস, ন্যানোবিজ্ঞান, ন্যানোপ্রযুক্তি ইত্যাদি। চিকিৎসার নানা জৈব যন্ত্রপাতি তৈরি, বায়োসেন্সর এবং বায়োম্যাটারিয়ালস ও বায়োলজিকের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ, চরিত্রগত পরিবর্তন, নতুন বৈশিষ্ট্য প্রদান এবং নিয়মিত মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করেন তিনি। পাশাপাশি ম্যাটারিয়ালস এবং বায়োম্যাটারিয়ালসের চরিত্রগত ভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রদানসহ এসব বিষয়ে বৃহৎ পরিসরে প্রকল্প তৈরি, অবকাঠামো গড়ে তোলা, যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা এবং নেতৃত্ব প্রদান করে থাকেন ড. আজম।
ড. আজমের আবিষ্কৃত ওষুধটি চামড়ার টিস্যুর সঙ্গে এমনভাবে কাজ করে যে, তা অতি দ্রুত টিস্যুকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়। টিস্যু ছাড়াও মাংসপেশির একই ধরনের জখমে এই বিশেষ জৈব প্রোটিন চামড়ার বিক্ষত চেহারাটিকে আগের মতোই করে দেয়। অন্যদিকে প্রচলিত ওষুধ শুধু ক্ষতের উপরিভাগ নিরাময় করে। ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু বা চামড়ার অন্য অংশ আগের সৌন্দর্য সহজে ফিরে পায় না। ড. আজমের উদ্ভাবিত এ ধরনের দুটি প্রযুক্তি ও ওষুধ ইতোমধ্যে আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ গোটা ইউরোপে নিজ নিজ দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিভাগের স্বীকৃতি পেয়েছে।
২০১০ সালের ২৪ আগস্ট নিউজিল্যান্ডের এজি রিসার্চে কর্মরত থাকার সময় বিখ্যাত ‘বেয়ার ইনোভেটর্স’ পুরস্কারে ভূষিত হন ড. আজম। বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে অত্যন্ত সম্মানজনক এই পুরস্কার। এছাড়াও নিজের কাজের জন্য পেয়েছেন অনেক সম্মাননা। এর মধ্যে ২০০৩ সালে এনসিবিসি (ইউএস) রিসার্চ ফেলোশিপ, ২০০১ সালে ডিওডি (ইউএস) রিসার্চ ফেলোশিপ, ২০০০ সালে ব্রেইন কোরিয়া কে-২০ ফেলোশিপ, ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ান প্রাইমারি ইন্ডাস্ট্রি সিলভার মেডেল, ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বোর্ড ফেলোশিপ এবং ১৯৮৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর চ্যান্সেলর স্কলারশিপের অধিকারী তিনি। পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁর গবেষণালব্ধ লেখাগুলো বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
বিজ্ঞানী হিসেবে যুক্ত হয়েছেন অনেক আন্তর্জাতিক সংগঠনে। অস্ট্রেলিয়ান সোসাইটি ফর বায়োম্যাটারিয়ালস অ্যান্ড টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং, নিউজিল্যান্ড কন্ট্রোলড রিলিজ সোসাইটি, ক্যান্টাবুরি মেডিকেল রিসার্চ সোসাইটি, অস্ট্রেলিয়ান পলিমার সোসাইটি, আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির সদস্য তিনি।
শাহবাজ জাহেদ