রহমত, বরকত ও মাগফিরাত এর পয়গাম নিয়ে আসে মাহে রমজান। আমাদের দেহযন্ত্রটি সার্ভিসিং করার জন্যই এ মাসের আগমন ; শুধু দেহই নয়, আত্নার পরিশুদ্ধিরও এক বিশাল সুযোগ দেয়া হয়ছে এ মাসে।
রোযার মাসে খাওয়া দাওয়া ও সাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে কম বেশী অভিযোগ নেই এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। এসিডিটি, পেটের গোলযোগ আর দুর্বলতা নিয়ে তাদের অভিযোগ লেগেই থাকে। তখন সব দোষ গিয়ে পড়ে রোযার উপর। অসুখে পড়বেন বলে রোযা রাখেন না এমন মানুষও একদম কম নেই। আসলে দোষ কিন্তু রোযা বা খাবার কোনটিরই না... সমস্যা আমাদের নিজেদের অভ্যাসের। রোযার সময় যদি আমরা প্রচলিত ভাজাভুজি বা বেশী মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিয়ে খাবারের মেনুতে ও রান্নার প্রণালীতে একটু পরিবর্তন আনি, তাহলে কিন্তু পু্রো রোযার মাসটাই সুস্থভাবে কাটানো যাবে। অনেক অসুখ-বিসুখের সমাধান কিন্তু রোযা রাখা বা কম খাওয়া। ইসলাম ধর্ম ছাড়া আরও কিছু ধর্মে উপবাসের প্রথা চালু আছে। কিন্তু ইসলাম ধর্মের মত এত সহজ ও স্বাস্থসম্মত নিয়ম-নীতি অন্য কোন ধর্মে নেই। তাই রোযা অনেকগুলো রোগ-ব্যাধির চিকিৎসাও বটে ।
সাহরীতে যা খাওয়া উচিত :
সাহরীর খাবার এমন হওয়া উচিত যা দীর্ঘক্ষন পেটে থাকে অর্থাৎ হজম হতে বেশি সময় লাগে। কেউ কেউ মনে করেন, সাহরীতে প্রচুর পরিমান আমিষ ( Protien) জাতীয় খাবার খেলে সারাদিন একটু সবল থাকা যাবে। কেঊ কেউ আবার ভাত (Carbohydrate) বেশী খাওয়ার পক্ষপাতি। আসলে এর কোনটিই ঠিক নয়। সাহরীতে খাবারের প্রত্যেকটি উপাদান যেন প্রয়োজনীয় পরিমাণে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বছরের অন্যান্য সময়ে হয়ত আমরা এভাবে সুষম খাবার খাওয়ার কথা ভাবি না, কিন্তু অন্যান্য সময় ত বটেই, রোযার মাসে এ দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। আমিষ, শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাবারের কোনটিই যেমন খাদ্যতালিকায় বাদ পড়া উচিত নয়, তেমনি কোনটি পরিমানে বেশী খাওয়া ঠিক নয়। শর্করা জাতীয় খাবার বেশী খাওয়ার ফলে pancreas থেকে ইনসুলিন এর নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত ইনসুলিন গ্লুকোজ কে রক্ত থেকে দ্রুত দেহকোষে প্রবেশ করিয়ে দেয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত ইনসুলিন এর কারনে রক্তে গ্লুকোজ বেশীক্ষণ থাকতে পারে না। অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণের কারণে দেহের স্থুলতা বেড়ে যায়। আবার,আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসের কারণে দৈনিক যে নির্দিষ্ট পরিমাণ আমিষ-হজমকারী এঞ্জাইম আমাদের পাকস্থলি থেকে নিসৃ্ত হয় , তা দিয়ে অতিরিক্ত আমিষ হজম করা সম্ভব নয়। তাছাড়া অতিরিক্ত আমিষ গ্রহনের ফলে শরীরে ঝিমুনি আসে ও রক্তে ইউরিয়ার পরিমান বেড়ে যায়, যা দেহের জন্য একটি ক্ষতিকারক বর্জ্য পদাথ। অনুরূপভাবে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার দেহকোষ ও রক্তে অনাকাংখিত মেদ তৈরী ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। যাদের পিত্তথলি বা লিভারের সমস্যা আছে তাদের জন্য অতিরিক্ত চর্বি অত্যন্ত ক্ষতিকর !তাই রোযার মাসে সাহরীতে অন্য মাস গুলোর মত স্বভাবিক খাবার খাওয়াই শ্রেয়ঃ। তবে জটিল শর্করা (Complex carbohydrate) জাতীয় খাবার খুব ধীরে হজম হয় বলে এ ধরনের খাবার সাহরীতে খাওয়া ভালো। যেমন- ঢেঁকিছাটা চালের ভাত, লালরুটি, পাউরুটি, বার্লি, সব রকমের আলু, oatmeal, pasta, macaroni, spaggetti ইত্যাদি। এই খাবারগুলো পাকস্থলীতে দীর্ঘক্ষণ স্থিত থাকে ,হজম হয় ধীরে ধীরে। তাই রোযাদারের ক্ষুধাভাব কম অনুভব হয়। এর সাথে পছন্দ অনুযায়ী পরিমিত মাছ/ গোশ্ত ও প্রচুর পরিমানে শাকসব্জি খেতে পারেন।
(http://4.bp.blogspot.com/_JE_Uz18sRQU/TH5DM1NQVdI/AAAAAAAAAtI/ZpL5eqHZ6WQ/s320/forum+adddah+banner+01.jpg)
ইফতারে যা খাওয়া উচিত নয়ঃ
ভাজা-পোড়া ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার শরীরের জন্য সবসময়ই ক্ষতিকর। বিশেষ করে শরীরের তাৎক্ষণিক ঘাটতি পূরণ ও শক্তি যোগানের ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা নেই বললেই চলে। এসব খাবারের উপরিভাগে তেলের আবরণ (Oily coating) থাকার কারনে এরা পাকস্থলীতে পরিপাক হয় না এবং পাকস্থলী অতিক্রম করতে অনেক সময় নেয়; তারপর অন্ত্রে গিয়ে শোষিত হয়ে রক্তে মিশে। ফলে এ ধরনের খাবার দেহে দ্রুত শক্তি যোগাতে পারে না।
রোযার সময় দাঁতের যত্নের ব্যাপারে আমরা অনেকেই বেখেয়াল হয়ে যাই। রমজান মাসে সাহরীর পর অবশ্যই টুথপেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে দাঁত ও জিহ্বা পরিষ্কার করা উচিৎ। সম্ভব হলে একটু কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলি করে নেয়া যেতে পারে। ইফতারের পর আরেকবার ব্রাশ করে নেয়া ভাল। এর মাঝে রোযা রাখা অবস্থায় মেসওয়াক অথবা শুধু ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে পারেন । তাতে মুখে দূর্গন্ধ কম হবে এবং দাঁত ও মাড়ির রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
(http://1.bp.blogspot.com/_JE_Uz18sRQU/TH5AysBuQHI/AAAAAAAAAsY/bvJwruXJMRQ/s320/my+web+site+add.jpg)