Daffodil International University
Entertainment & Discussions => Story, Article & Poetry => Topic started by: imam.hasan on August 08, 2014, 12:38:53 PM
-
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। জাতিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর পদক্ষেপ একেবারেই অবর্ণনীয়। কিন্তু বিশ্বের এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে শিক্ষাগ্রহণকে এখনও ততোটা মৌলিক বলে মনে করা হয় না, পাশাপাশি এমন কিছু অঞ্চলও রয়েছে যেখানে প্রশাসন চাইলেও অনেক কিছু করতে পারে না। এ ধরনের অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে শিশুরা শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের প্রতিবন্ধতার শিকার হয়। তারপরও থামে না তাদের আলোকিত হওয়ার প্রচেষ্টা। বিশ্ব নাগরিক হয়ে ওঠার প্রচেষ্টায় অব্যাহত রাখেন পড়াশোনা।
সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসে, বিশ্বের অনেক অঞ্চলের শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কতো ঝুঁকিপূর্ণ পথ মাড়িয়ে যেতে হয়।
বাংলাদেশের হাওড়, উপকূল ও পার্বত্যাঞ্চলসহ বিশ্বের এ ধরনের অঞ্চলের শিশুরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষা গ্রহণের পথে অনেক বেশি বাধার সম্মুখীন হয়।
সচিত্র প্রতিবেদনে চীনের জেংগুয়ান গ্রামের স্কুলশিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের গাইঝৌ প্রদেশের স্কুলশিক্ষার্থীরা উঁচু পাহাড়ি পথ বেয়ে প্রত্যহ স্কুলে যায়। পর্বতের চূড়ার মাঝামাঝিতে অবস্থিত বানপো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল পথে যেতে শিশুদের পাহাড়ের বিপদসঙ্কুল ও সংকীর্ণ পাথরের টানেলের সুরু রাস্তা পাড়ি দিয়ে আধা মিটার প্রশস্ত পাথরের স্তূপ অতিক্রম করতে হয়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৪০ বছর আগে একটি সেচ প্রকল্প হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল পথটি। একটি নিরাপদ রাস্তা থাকলেও সে রাস্তা দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেতে দুই ঘণ্টা সময় বেশি ব্যয় করতে হয়। তবে, বাবা-মায়ের স্বস্তির বিষয় হলো বানপো স্কুলের প্রধান শিক্ষক জু লিয়াংফ্যান নিজেই ৪৯ জন শিশুকে একসঙ্গে স্কুলে নিয়ে যান।
আলোকিত হওয়ার জন্য এ ঝুঁকির গল্প বিস্ময়কর হলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ ধরনের আরও অনেক খবর।
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার বাতু বোসুক গ্রামের প্রায় ২০ জন প্রবল আগ্রহী শিক্ষার্থীকে স্কুলে পৌঁছানোর জন্য প্রবাহমান নদীর ৩০ ফুট উঁচু দিয়ে দড়ি বাইতে হয়। তারপর আরও সাত মাইল বনের মধ্য দিয়ে হেঁটে প্যাডাং শহরে অবস্থিত স্কুলে যেতে হয়। প্রবল বৃষ্টিপাতে সেতু ধসে পড়ার পর স্থানীয়দের বাঁধানো ঝুলন্ত দড়ির সাঁকো বেয়ে দুই বছর ধরে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাতায়াত করছে।
ইন্দোনেশিয়ারই সাংগিয়াং তানজুং নামে আরেকটি গ্রামের শিশুরা নদীর অপর পার্শ্বের স্কুলে পৌঁছাতে একটি ভাঙা সেতু পাড়ি দেয়। এটি এতোটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, সেতুটি যেকোনো সময় ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়।
তবে ভাল খবর হচ্ছে, দেশটির বৃহত্তম একটি স্টিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও কিছু এনজিও ২০১২ সালের বন্যায় ধ্বংস হওয়া সেতুর স্থানে একটি নতুন সেতু তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
দেশটির জাভা দ্বীপের সুরো এবং প্লেমপাংগান গ্রামের শিশুরা এখনো স্টিলের ভাঙাচোরা লম্বা সেতুর ওপর বসানো সংকীর্ণ কাঠের ওপর সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়। সাইকেল চালানোর সময় তাদের এক হাতে ব্রিজের লোহার তারও ধরে রাখতে হয়। বিপজ্জনক হলেও ছয় কিলোমিটার পথ বেশি না মাড়তেই এই পথ ব্যবহার করে শিশুরা।
ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার পূর্বদিকে রাইজল প্রদেশের দূরবর্তী একটি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে নদী পার হওয়ার জন্য পানিতে ভাসমান টায়ার টিউব ব্যবহার করে। শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা এবং আসার জন্য কমপক্ষে এক ঘণ্টা হাঁটতে হয়। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক সময় শিক্ষার্থীরা ক্লাস বাদ দিতে অথবা আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। যাতায়াত সহজ, দ্রুত এবং নিরাপদ করার জন্য এলাকার লোকজন স্থানীয় সরকারের নিকট ভাঙা সেতু মেরামত করার জন্য আবেদন করেছে।
ফিলিপাইনের শিশুদের কিছু না থাকলেও টিউব রয়েছে। ভিয়েতনামের শিক্ষার্থীরা ততোটা ভাগ্যবান নয়। দেশটির মিনহুয়া জেলার ত্রংহুয়া গ্রামের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিশুদের স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন দুই বার সাঁতার কেটে নদী পার হতে হয়। পোশাক এবং বইপত্র শুকনো রাখার জন্য বিশাল প্লাস্টিকের ব্যাগের মধ্যে তা ভরে শক্ত করে বেধে রাখে শিক্ষার্থীরা। এরপর অনেক সময় উদোম হয়ে নদী পার হয় তারা। এসব প্লাস্টিকের ব্যাগ নদী পার হওয়ার সময় পানিতে ভাসার কাজেও ব্যবহার করা হয়। ১৫ মিটার চওড়া ও ২০ মিটার গভীর নদীটি পার হয়ে তারা পোশাক পরে স্কুলে যায়।
পর্বতের দেশ নেপালে গন্ডোলা সেতু সর্বত্র দেখা যায়। সেখানে ভাল রাস্তার চাহিদা খুব কম। শিশুরা তক্তা, জীর্ণ রশ্মি ও কলের চাকা দিয়ে তৈরি হ্যান্ডক্রাফট সেতু ব্যবহার করে। গত কয়েক দশক ধরে এ ধরনের পথে যাতায়াতের কারণে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভাগ্যক্রমে গন্ডোলায় দুর্ঘটনা কমানোর জন্য বর্তমানে কিছু এনজিও নিরাপদ সেতু তৈরির জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে।
কলম্বিয়ার রাজধানী বোগুটার ৪০ মাইল দক্ষিণপূর্ব দিকের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় বসবাসকারী খুব কম পরিবারের শিশুরা স্টিলের তারের সাহায্যে এক উপত্যকা থেকে অন্য উপত্যকায় যাতায়াত করে। ওই গ্রামের শিশুদের স্কুলে যাওয়ার রাস্তা একমাত্র এটিই। স্টিলের তারের দৈর্ঘ্য ৮০০ এবং প্রস্ত ৪০০ মিটার।
চীনের পিলির একটি বোর্ডিং স্কুলের প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থীকে বিপজ্জনক ১২৫ মাইল পথ পর্বতের মধ্য দিয়ে জিনজিয়াংয়ের স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল উইঘুরে পৌঁছাতে হয়। বাসা-বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে শিশুরা চারটি শীতল নদী, ৬৫০ ফুট চেইল সেতু এবং চারটি এক কাঠের তক্তার সেতু দিয়ে কষ্টে যাতায়াত করে। লম্বা এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে দুই দিন।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের সময় চারপাশে সহিংসতা সত্ত্বেও নীরবে হেঁটে স্কুলে যেতে দেখা যায় একটি মেয়ে শিশুকে। ইসরাইলের সৈন্যরা পথ অবরোধ করে রাখলেও তাকে নির্ভয়ে হেঁটে স্কুলে যেতে দেখা যায়। বড় কোনো বিপদ হলে কেউ তাকে সাহায্য করারও থাকবে না সেটা পরিস্থিতিই বলে দিচ্ছিল। কিন্তু শত প্রতিকূলতার মধ্যেও শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে এটাই আধো-আঁধারী বিশ্বের জন্য খুশির সংবাদ।