Daffodil International University

Faculties and Departments => Faculty Sections => Faculty Forum => Topic started by: mahmud_eee on August 10, 2014, 06:27:07 PM

Title: আমিও আড়ালে কাঁদতে চাই
Post by: mahmud_eee on August 10, 2014, 06:27:07 PM
আর্থিক অনটনের মধ্যে সাধ্যের সবটুকু দিয়ে প্রিয়জনকে কিছু উপহার দেয়া অনন্য সাধারন অনুভূতি সৃষ্টি করে মনের মাঝে। অনেক টাকার মালিক যারা তাঁরা হয়তো কোনদিনও এই অসামান্য অনুভূতি উপলব্ধি করার সুযোগ পায়না। ছাত্রজীবনে টিউশনির টাকা পেয়ে অনেক সময়ই বাসার প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনতাম। দোকান থেকে জিনিসপত্রগুলো যেই হাতে নিতাম সেই থেকে বাসায় আসা পর্যন্ত পুরো রাস্তায় মনে হতো আমি এক টুকরা সুখ কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। রিক্সাবা অন্য কোনো যানবাহনের সাহায্য ছাড়া পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতাম অই স্বর্গীয় অনুভূতিকে একটু বেশি সময় একান্ত নিজের মতো উপলব্ধি করার লোভে।


যখন চাকরি পেলাম, তখন থেকে পার্থক্য খেয়াল করলাম। আমার টাকা যতো বাড়ছে, কেনাকাটার ক্ষমতাও বাড়ছে, কিন্তু আমার তৃপ্তি দিন দিন কমছে। এর কারন হলো আমাকে আর সাধ্যের সবটুকি দিয়ে পরিবার পরিজনের জন্য কিছু কিনতে হচ্ছেনা। সাধ্যের সবটুকু দিয়ে কিছু করা, জীবনের একটা বিশেষ স্টেজ। এটা পাওয়া ভাগ্যের বেপার, সবাইকে সৃষ্টিকর্তা এই ভাগ্য দেয়না। কাউকে সারাজীবনই এই স্টেজে থাকতে হয়, আমরা তাদের বলি দীনদরিদ্র। ওরা কিন্তু এটাকে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেনা। বরং বিপরীতভাবে আরো উপরওয়ালার কাছে নিয়মিত অভিযোগ করে, তাঁরাকি পাপ করছিলো?, কেন আজ তাঁরা গরীব?, ইত্যাদি। এমন হওয়ারই কথা। আবার, অনেককে সৃষ্টিকর্তা এত্ত অঢেল অর্থসম্পদ দিয়েছেন যে তাঁদের যা ইচ্ছা হয় মুহুর্তেই হাজির হয়ে যায়। ওদের বেশিরভাগই কিন্তু উপরওয়াল ধার ধারেনা। যেহেতু কোনো কিছুই তাঁদের সাধ্যের বাইরে না, তাই কষ্টার্জনের অলৌকিক তৃপ্তি তাঁরা কোনোদিনও উপলব্ধি করেনা। আর কিছু মানুষ আছে যাদের সৃষ্টিকর্তা উপরের দুই ধরনের স্তরে থাকার সুযোগ দিয়েছেন। হয়তো কাউকে ধনী থেকে ধীরে ধীরে গরীব করেছেন অথবা ঠিক তার বিপরীত।


আমার বাবা-মা আমাকে অনেক কষ্টে বড় করেছেন। আমি খুব ভালো করে জানি যথাসাধ্যের চেহারা কেমন। সাধ্যের সবটুকুর শক্তি আমি দেখেছি প্রতি নিয়ত। তাঁদের সব স্বপ্ন আমাদের ঘিরে। একদিন বড় হবো, অনেক টাকা আয় করবো, সংসারের অভাব দূর হবে, আরো অনেক কিছু। বাবা যখন মাকে প্রচন্ড আবেগ নিয়ে বলতেন “আমার ছেলেমেয়ের যেন কোনোকিছুর অভাব না হয়” মা নিশ্চুপ সায় দিতেন। আড়াল থেকে শুনে আমাদেরও অনেক ভালো লাগতো। কিন্তু ঈদের দিন যখন বন্ধুদের সবার মাঝে একমাত্র আমার গায়ে পুরোনো জামা থাকতো তখন অনেক কষ্টে চোখে পানি আসতো। অবুঝ ছিলাম তাই। এখন আর এমন হয়না। এখন বুঝি, অর্থের সাথে সাধ্যের সবটুকুর সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক। ইস তখন কত্ত বোকা ছিলাম, নতুন জামার সাথে মুখের হাসির কত্ত মূল্য দিতাম। সাধ্যের সবটুকুর পুরোনো জামার সাথে আবেগি চোখের পানির মূল্য বুঝতে আমার এত্ত বছর লাগলো। এখন সাধ্যের সবটুকু দিয়েও আমি আর চোখে এক ফোটাও জল আনতে পারিনা।


ছেলেবেলায় আমার সবচেয়ে পছন্দের বস্তু ছিল সাইকেল। অনেক বায়না ধরেছি, বাবা-মার সামনে ড্রাইভিং টেস্ট দিয়েছি, বন্ধুকে পেছনে বসিয়ে তার সাইকেল চালিয়ে হাজার বার স্কুলে গিয়েছি, কিন্তু তারপরও বাব-মা তখন সাইকেল কিনে দিতে পারেনি। তখন এর উপযুক্ত কারণ আমার অজানা থাকলেও এখন আমি জানি। ঐযে বললাম সাধ্য, সাধ্যের সবটুকু দিয়েও কেনা যায়নি। এই সাধ্যের সবটুকুর জন্য আমাকে বেশ কয়েক বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। অবশেষে কোনো এক শুভদিনে আমি একটা সাইকেলের মালিক হই। ওইদিন হয়তো আমি অনেক খুশী ছিলাম কিন্তু এখন আমি জানি আমার বাবা-মা আমার থেকেও বেশি খুশী ছিলেন। কারণ ওই একই, সাধ্যের সবটুকু দিয়ে ছেলের সবচেয়ে পছন্দের জিনিসটা তাকে উপহার দেয়া। কিজানি, হয়তো আমার খুশী দেখে আড়ালে আবডালে তাঁদের চোখে কোনে পানি জমেছিল।


কিছুদিন আগে নিজের জন্য একটা সাইকেল কিনেছি যা আমার বাবার দেয়া সাইকেলের চেয়ে ত্রিশগুন বেশি দামি। আমার অনেক পছন্দের এই সাইকেলটি কিন্তু আমাকে আগের মতো খুশী করতে পারেনি। কারণ, এটি আমি নিজের জন্য কিনেছি আর এটি কিনতে আমার সাধ্যের সবটুকু দিতে হয়নি।


আমার সাইকেলে হাতেখড়ি বাবারসাইকেল দিয়ে। উনি তার সাইকেলটি কিনেছেন প্রায় ৩০ বছর আগে। বাবা এটি সাধ্যের সবটুকু দিয়েই কিনেছিলেন। এই সুদীর্ঘ সময়ের প্রায় প্রতিদিনই তিনি সাইকেলটি ব্যবহার করেছেন,যত্ন নিয়েছেন, সাজিয়েছেন, সারিয়েছেন, আপগ্রেড করেছেন। বাবার সাথে তাঁর সাইকেলের রোজকার এই সম্পর্ক অবশ্যই সুদৃঢ়।


আমার উপার্জন ধীরে ধীরে বাড়ছে আর আমি মৃদু শঙ্কিত হচ্ছি, কিছুদিন পর হয়তো সাধ্যের সবটুকু না দিয়েই প্রিয় মানুষগুলোকে উপহার দিতে পারবো। তবে এর অনুভূতি হয়তো আমার হৃদয় স্পর্শ করবেনা, চোখে অশ্রু আনতে পারবেন। নাহ, এমন হয়নি এখনও। গত কয়েক মাস আমি কিছুটা আর্থিক সঙ্কটে আছি। এমাসে তা চরম আকার ধারন করেছে, এতটাই চরম যে আমার একাউন্টে এখন সর্বসাকুল্যে তিন সংখ্যার একটা কিছু জমা আছে।


আজকে মাকে ফোন দিতেই মা একটুচাপা গলায় বললেন “তোর বাবার সাইকেলটা চুরি হয়েছে”। আমি আন্দাজ করতে পারি বাবা অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছেন। তাঁর কাছে নিশ্চয়ই অনেকটা সন্তান হারানোর মতো। আমি কিন্তু ভীষণ খুশী হয়েছি। আমার বাবাকে আমি তেমন কিছু এখনও দিতে পারিনি। আমার বর্তমান অর্থাভাব আর বাবার সাইকেল হারানো একইসাথে আমাকে সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। বাবাকে আমি নতুন একটা সাইকেল কিনে দিতে চাই আর তা আমার সাধ্যের সবটুকু দিয়ে যেমনটা তিনি আমার জন্য করেছিলেন। তাঁর হাসিমুখ দেখে আমিও আড়ালে কাঁদতে চাই, তাঁর মতো। মনের খুশিতে বহুদিন আমার চোখ আর্দ্র হয়নি। এ সুযোগ সবাই পায়না, সবসময় আসেনা।

Collected
Title: Re: আমিও আড়ালে কাঁদতে চাই
Post by: utpalruet on August 10, 2014, 10:52:12 PM
very sad to hear this