Daffodil International University
Faculty of Science and Information Technology => Science and Information => Topic started by: khairulsagir on September 02, 2014, 12:54:34 PM
-
গলফ খেলতে ও পিয়ানো বাজাতে ভালোবাসে অ্যালানা সারিনেন (১৩)। গান শোনা এবং আড্ডা দেওয়াও তার খুব প্রিয়। এসব বিষয় বিবেচনায় সে পৃথিবীর আর দশটা কিশোরীর মতোই। তবে আসলে তা নয়। কারণ, অ্যালানার দেহের প্রতিটি কোষ আপনার বা আমার মতো নয়। অ্যালানা পৃথিবীর গুটি কয়েক মানুষের একজন, যাদের দেহে রয়েছে তিনজনের ডিএনএ।
বিষয়টি ভালো করেই জানে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা অ্যালানা: ‘অনেকেই বলেন, আমার মুখমণ্ডলটা মায়ের মতো আর চোখ দুটো একেবারে বাবার মতো...তাঁদের কাছ থেকে স্বভাবতই কিছু বৈশিষ্ট্য পেয়েছি। আর আমার ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও একই কথা। এ ছাড়া আমার শরীরে রয়েছে তৃতীয় এক নারীর ডিএনএ। অবশ্য, আমি তাঁকে মা মনে করি না। আমি তাঁর কাছ থেকে কেবল মাইটোকন্ড্রিয়া পেয়েছি।’
মাইটোকন্ড্রিয়াকে বলা হয় কোষের শক্তির উৎপত্তিস্থল। এটি কোষের কর্মতৎপরতার জন্য দরকারি শক্তি জোগায় এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখে। তবে সেখানে সামান্য পরিমাণে ডিএনএ থাকে।
বিশ্বে অ্যালানার মতো মানুষ আছে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ জন, যারা মা-বাবা ছাড়াও তৃতীয় একজনের ডিএনএর অধিকারী। অ্যালানার মা তাকে ধারণ করেছিলেন বিশেষ এক বন্ধ্যাত্ব চিকিত্সার মাধ্যমে, যা পরে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে শিগগিরই অ্যালানার মতো আরও মানুষ দেখা যেতে পারে। কারণ, যুক্তরাজ্য নতুন একটি পদ্ধতির বৈধতা দিতে যাচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদ্ধতির মতোই। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হলে যুক্তরাজ্যই হবে তিনজনের ডিএনএ থেকে শিশু জন্মের অনুমোদন দেওয়া একমাত্র দেশ।
অ্যালানার মা শ্যারন সারিনেন সন্তান নেওয়ার জন্য ১০ বছর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শেষমেশ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির চিকিৎসক ও গবেষক জ্যাকস কোহেনের শরণাপন্ন হন।
কোহেন নব্বইয়ের দশকে সাইটোপ্লাজম (জীবের কোষের মধ্যে থাকা একধরণের তরল, যাতে মাইটোকন্ড্রিয়া, নিউক্লিয়াসসহ বিভিন্ন উপাদান থাকে) প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার উপায় বের করেন। শ্যারনের সমস্যা ছিল মাইটোকন্ড্রিয়ায়। তাই কোহেন একজন দাতা নারীর কাছ থেকে মাইটোকন্ড্রিয়া-সমৃদ্ধ সাইটোপ্লাজম সংগ্রহ করেন। এরপর পরীক্ষাগারে শ্যারনের ডিম্বাণু ও তাঁর স্বামীর শুক্রাণু নিষিক্ত করার সময় সংগৃহীত মাইটোকন্ড্রিয়া প্রতিস্থাপন করেন। ফলে নিষিক্ত হওয়া ভ্রূণের মধ্যে দাতা নারীর কিছু ডিএনএ ঢুকে পড়ে। এতে করে সন্তান ধারণে সক্ষম হন শ্যারন।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক হাসপাতাল এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে। এক কোহেনের প্রতিষ্ঠানেই এভাবে ১৭টি শিশুর জন্ম হয়। তবে এই চিকিৎসায় অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটতে পারে; আবার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্নও উঠতে থাকে। তাই ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্র তা নিষিদ্ধ করে। কিন্তু বর্তমানে যুক্তরাজ্যে এই চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসলের গবেষক ডাগ টার্নবুলের মতে, দেশটির প্রতি তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজারে একজন মাইটোকন্ড্রিয়ার সমস্যায় ভুগছে। এর চিকিৎসা থাকলেও সম্পূর্ণভাবে সারিয়ে তোলা অসম্ভব। তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি না। বরং আমরা একটা রোগকে প্রতিরোধের চেষ্টা করছি। আমি মনে করি, এই চিকিৎসার একমাত্র যুক্তি এটাই।’ বিবিসি।
http://paimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/643x0x1/uploads/media/2014/09/01/fbfbfa48b5b22091c5f0f94ede620fd0-PIAON.jpg
source: www.prothom-alo.com