Daffodil International University

Science & Information Technology => Science Discussion Forum => Latest Technology => Topic started by: ehsan217 on September 26, 2014, 10:21:40 AM

Title: অবাস্তবের বাস্তবতা
Post by: ehsan217 on September 26, 2014, 10:21:40 AM
নিজ ঘরে বসে আছেন, মাথায় কিম্ভূতদর্শন এক যন্ত্র লাগিয়ে, এক ঝটকায় চলে গেলেন অন্য কোথাও! হয়তো আপনাদের নিয়মিত আড্ডাখানায়, কোনো সমুদ্রসৈকতে, এমনকি চন্দ্রপৃষ্ঠে কিংবা মঙ্গলের মতো কোনো গ্রহে! সেখানে দৃশ্যমান প্রকৃতি দেখবেন, হেঁটে বেড়াবেন, ফুলের গন্ধ নেবেন, হয়তো ছুঁয়েও দেখবেন। বিজ্ঞান কল্পকাহিিনতে এমন দৃশ্য দেখা যায়। তবে এবার আর শুধু কল্পনা নয়, বাস্তবেই এমনটা হতে পারে। কর্মব্যস্ত জীবনে ঈদের সামান্য কটা দিনের ছুটিতেও ঘুরে আসতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন বা ফ্রান্সের বিখ্যাত দ্য ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে। তাও আবার ঘরে বসেই! এই অসম্ভব ভাবনার বাস্তব রূপ দেওয়ার নাম ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, যা প্রযুক্তিজগৎকে নতুন করে নাড়া দিয়েছে। ফেসবুক, সনি, স্যামসাং, গুগলের মতো মহারথীরা মহাসমারোহে এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে আমাদের দৈনন্দিন কাজের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিজগতের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কাজ করে মূলত দুটি ধাপে। প্রথমে কম্পিউটারে তৈরি ত্রিমাত্রিক ছবি দিয়ে ভার্চুয়াল পরিমণ্ডল বানানো হয়। পরের ধাপে ব্যবহারকারীর গতিবিধি অনুসরণ করে ত্রিমাত্রিক ছবি সে অনুযায়ী পরিবর্তন করতে হয়। আপনি ডান দিকে তাকালে ডান দিকের ছবি দেখাবে, গেমে শত্রু সামনে এলে প্রয়োজন অনুযায়ী হাত নেড়ে তার সঙ্গে লড়াই করতে হবে। এই নাড়াচড়াগুলো অনুসরণ করার জন্য সেন্সর ব্যবহার করা হয়। ত্রিমাত্রিক ছবি দেখার জন্য লেন্সসহ হেডসেট ব্যবহার করা হয়, যা একই সঙ্গে চোখের গতিবিধির হিসাব রাখে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে বেশ হইচই পড়ে গেলেও এ ধারণা মোটেও নতুন নয়। ১৯৬২ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা মর্টন হেলিগ সেনসোরামা নামের একটি যন্ত্র তৈরি করেন, যাতে চেয়ারে বসে পর্দার ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে ত্রিমাত্রিক ছবি দেখা যেত, সেই সঙ্গে কম্পনের মাধ্যমে অনুভূতি এবং গন্ধ পাওয়া যেত। বড়সড় আকারের হওয়ায় ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য যন্ত্রটি সুবিধাজনক ছিল না। মাথায় পরার মতো ছোট ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যন্ত্র ১৯৬৮ সালে প্রথম তৈরি করেন মার্কিন বিজ্ঞানী আইভান সাদারল্যান্ড। এরপরে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার একতরফাভাবে সামরিক এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের কাজে দেখা যায়। লড়াইয়ের কৌশল কিংবা বিমান বা জাহাজ চালনা শেখার ক্ষেত্রে এটি ভালো ফল দেওয়া শুরু করে। মজার ব্যাপার, তখনো কিন্তু ‘ভার্চুয়াল রিয়েলিটি’ নামটাই চালু হয়নি। আশির দশকে মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী জ্যারন ল্যানিয়ার প্রথম ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শব্দযুগলের প্রচলন শুরু করেন। নব্বইয়ের দশকে কিছু যন্ত্র তৈরি হয়েছিল বটে, তবে এরপর তা নিয়ে আলোচনা একরকম থেমে যায়। এর স্বপ্নদ্রষ্টারা যে কাজের জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তৈরি করতে চেয়েছিলেন, তা একরকম দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছিল সে সময়ে।
২০১২ সালে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রতিষ্ঠান ওকুলাস ভিআর ‘ওকুলাস রিফট’ নামের মাথায় পরিধেয় যন্ত্র বানানোর ঘোষণা দেয়, যা গেম খেলার ধারণা আমূল পালটে দেবে। এ যন্ত্রের কারণে মানুষ নিজেই গেমের একটি চরিত্রে পরিণত হবে, যে কিনা শত্রুর মোকাবিলা করছে কিংবা গুপ্তধন খুঁজে বেড়াচ্ছে। গত ২৬ মার্চে ওকুলাস ভিআর ২০০ কোটি মার্কিন ডলারে কিনে নেওয়ার ঘোষণা দেয় ফেসবুক। এরপরই সবাই নড়েচড়ে বসে। ভবিষ্যতের সামাজিক যোগাযোগ রক্ষাটা কি তবে ভার্চুয়াল জগতে হবে, এমন প্রশ্নে প্রযুক্তিবিশ্ব মুখর হয়ে ওঠে। এদিকে সনি শুধু প্লে স্টেশনের গেম খেলার জন্য তৈরি করছে মরফিউস নামের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যন্ত্র। অপর দিকে ওকুলাসের সঙ্গে যৌথভাবে স্যামসাং তাদের নতুন স্মার্টফোনের জন্য গিয়ার ভিআর নামের যন্ত্রের ঘোষণা দিয়েছে। গুগলের আই/ও সম্মেলনে কার্ডবোর্ডের তৈরি কম খরচের একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যন্ত্র দেখানো হয়। কাজ করার জন্য এর মধ্যে স্মার্টফোন দিয়ে চোখে লাগাতে হয়।
তবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যন্ত্রগুলো ব্যবহারে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বেিশ ক্ষণ ব্যবহারে বমি বমি ভাব সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। ত্রিমাত্রিক দুনিয়ায় বিচরণে এখনো মানুষ অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। ওকুলাস রিফট বা সনির মরফিউস, দুটিই পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। এখনো সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল অভিজ্ঞতা কেউ দিতে পারেনি। চূড়ান্ত পণ্যে সমস্যার সমাধান নিশ্চয় করা হবে। তবে বেটা সংস্করণগুলো কেনার সুযোগ আছে ওকুলাসের ওয়েবসাইটে। সেখানে কিছু গেম খেলার ব্যবস্থাও আছে।
এত দিন ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কেন্দ্রে ছিল গেমিংশিল্প। কিন্তু ফেসবুকের ওকুলাস ভিআর ক্রয়ে নতুন সম্ভাবনা উঁকি দিতে শুরু করেছে। ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ নিজেই বলেছেন, খেলার মাঠে বন্ধুর ছবি না দেখে সরাসরি মাঠে তার সঙ্গে কেন যোগ দেব না? নিজে উপস্থিত হয়ে ঘুরে দেখার সুযোগ যখন আছে, তখন কেন ভিডিও চ্যাটে বন্ধুর বাড়ি দেখব? মুখোমুখি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সম্ভব, বিশ্বের নানা প্রান্তের শিক্ষক-ছাত্রের সঙ্গে একই শ্রেিণকক্ষে পাঠ গ্রহণ সম্ভব। আর এসব করা যাবে ঘরে বসেই, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্যে। বাস্তবে নয়, তবে বাস্তবের মতো করেই।