Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Topic started by: monirulenam on October 26, 2014, 02:46:25 PM
-
মানুষের মৃত্যু সম্পর্কে নানাবিধ বাক্য আমরা ব্যবহার করে থাকি। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ আমরা বলে থাকি মানুষ মরণশীল। জন্মিলে মরতে হবে আবার একই কথা ইংরেজি ভাষার মানুষ বলে Man is Mortal এটা চিরন্তন সত্য বা, Universal Truth- এ বাক্য কি কোনো প্রথিতযশা খ্যাতিমান ব্যক্তি বা কোনো ধর্মযাজকের উক্তি? নয়, একেবারেই নয়। এ মহান উক্তিটি মহান রাব্বুল আলামিনের, যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের স্রষ্টা। পবিত্র কোরআনুল কারিমে তিনি ঘোষণা করেছেন ‘প্রাণী মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত ১৮৫)। উপরোক্ত আয়াত দিয়ে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। এটি কোনো ব্যক্তির বাক্য নয়। আমরা আমাদের জীবদ্দশায় মানুষের মৃত্যু দেখে আসছি যা একটি প্রথা হিসেবে প্রচলিত তা ভাববারও কোনো অবকাশ নেই। মৃত্যু শাশ্বত সত্য বলে আমরা জানি এবং মানি। এ আয়াতের সঙ্গে পরবর্তী আয়াত হচ্ছে ‘তোমাদের কেয়ামত দিবসে তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেয়া হবে এবং যাদের জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং যাদের বেহেশতে দাখিল করা হবে তারাই হবে সফলকাম। কিন্তু এ আয়াতের মর্মটি জেনেও কিন্তু মানবজাতির মধ্যে অনেক গোষ্ঠী আছে যারা বিশ্বাস করে না। আবার কোনো কোনো গোষ্ঠীর মধ্যে কিছুসংখ্যক আছে বিশ্বাস করলেও আমলে নেয় না। এ ধরনের মানসিকতা কোনোক্রমেই কাম্য হতে পারে না। আল্লাহতায়ালার একটি বিধান যা বাস্তবে দেখেছি (মৃত্যু সম্পর্কে) আর যা না দেখেছি তা অদেখা বলে মানব না তা কি মানা উচিত নয়। তিনিই তো বলেছেন, ‘আল্লাজিনা ইউ মিনুনা বিল গাইবি’ অর্থাৎ অদেখা জিনিস/ঘটনার ওপরও ঈমান আনতে হবে, নতুবা সে মুমিন হতে পারবে না। অদেখা বিষয়টি মানতে যত বিড়ম্বনা। আমাদের অনেকের হাব-ভাবে মনে হয় এটি কথার কথা। এটা ভাবা উচিত নয়। পৃথিবীর সব ব্যক্তি একত্রিত হলেও যেমন বিধাতার বিধান মৃত্যুকে রোধ করতে পারে না, তেমনি সেই বিধাতার বিচার দিবসের মুখোমুখি হতেও রেহাই পাবে না। কাজেই সৃষ্টির প্রতি তার প্রাপ্যতা আমাদের পূরণ করা অবশ্যই দরকার।
আমরা প্রতিটি মানুষ যদি আমাদের কৈশোর জীবন, ছাত্রজীবন, কর্মজীবন, পারিবারিক ও সমাজজীবন পর্যালোচনা করি তা হলে কী দেখি? আমরা দেখতে পাই কৈশোর জীবনে বাবা-মা আমাদের যে আদেশ-নির্দেশ দেন তা পালন না করলে বকাঝকা খেতে হয়। আদেশ পালন করলে আদর-যত্ন বেশি করেন। ছাত্রজীবনে পড়ালেখা না করলে শিক্ষকের বেত্রাঘাত খেতে হয়। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল লাভ করা যায় না। যার ফলে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা যায় না। অন্যদিকে লেখাপড়া ভালো করলে শিক্ষকরা যেমন প্রশংসা করেন, তেমনি পুরস্কার হিসেবে ভালো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে ভালো পদে আসীন হওয়া যায়। কর্মজীবনেও প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা রয়েছে। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে ভালো কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ পদোন্নতি পেয়ে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হওয়া যায়। আবার কর্মের ত্র“টি-বিচ্যুতি ও অসততার দরুন পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হতে হয়। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের ক্ষেত্রে একই প্রভাব পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। কাজেই মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা রয়েছে। রয়েছে পুরস্কার ও তিরস্কারের ফলাফল ভোগ করার ব্যবস্থা। তাই যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কেন তাঁর প্রাপ্য পাবেন না। আর ভালো ও মন্দের অঈজ/ সার্টিফিকেট কেন দিতে পারবেন না। অবশ্যই পারবেন এবং দেবেন এটি বিশ্বাস করতে ও মানতে হবে। তাই কেয়ামত/বিচার দিবসে আমাদের পার্থিব জীবনের কৃতকর্মের হিসাব দিতেই হবে। মানুষকে মৃত্যুবরণ করতেই হবে এটি যেমন তাঁর বিধান, তেমনি কেয়ামত দিবসে হিসাব দিতে হবে এটিও তাঁর বিধান। অন্য কথায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছি যেমন তাঁর ঘোষণানুযায়ী তেমনি তাঁর পরবর্তী ঘোষণানুযায়ী আমাদের পুনরুজ্জীবিত করা হবে ও জবাবদিহির মাধ্যমে কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হবে।
কাজেই মানুষকে জ্ঞান নিতে হবে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করার মানসিকতা নিয়ে। তাঁর প্রদত্ত বিধান অনুসরণ করে কাজ করে জীবন গড়তে হবে। ছাত্র-শিক্ষক-কর্মজীবী মানুষ ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে যখন ইন্টারভিউ বোর্ডে হাজির হন তখন সে যত মেধাবী হোন না কেন ওই মুহূর্তে গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণে গ্লাসভর্তি পানি খেয়ে বোর্ডে হাজির হন। মেধাবী হলে আগাম ধারণা করতে পারে ভালো করবে, কিন্তু নিশ্চিত হতে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হয়। এমনি করে পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনে ভাবতে হবে যিনি সৃষ্টি করেছেন আমাকে-আপনাকে সেই স্রষ্টারও প্রাপ্যতা আছে। আছে ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা।
লেখক : পরিচালক (এস্টেট-ভূমি), রাজউক, ঢাকা