Daffodil International University

Help & Support => Common Forum/Request/Suggestions => Topic started by: sahadat_185 on November 12, 2014, 05:39:58 PM

Title: অভিভাবক VS আমরা
Post by: sahadat_185 on November 12, 2014, 05:39:58 PM
পুরাতন BACKDATED বাঙালীরা অনেক অসভ্য জাতি …

তারা ভোর সকালের দিকে স্কুলে যায়, বাদরামীর মধ্যে দিয়ে ক্লাস শেষ করে, দুপুরের আগেই ছুটির ঘন্টা বাজলে ... আর কি? পুরো কাচা বাজার। তারপর বাড়ি এসেই কিছু মুখে দিতে না দিতেই, মাঠে গিয়ে ঘাসে গড়াগড়ি পাড়া। এভাবে হেসে-খেলেই দিন যায়, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঝগড়া বাধে, মারামারি করে এসে বাড়িতে বাবার হাতে মার খায়, টুকিটাকি পড়ে হোমওয়ার্ক কমপ্লিট করে; রাতে ঘুমিয়ে পড়ে ... পরের দিনটা আবারও শুরু

‘হোচট খেয়ে পড়ে পড়েই’ তাদের শরীর শক্ত হয়; বন্ধুদের মধ্যে ‘কে আগে মাঠে পৌছাতে পারে’ প্রতিযোগীতা করে, তারা অ্যাকটিভ হয়; সামনে যা পায়, তাই খেয়ে ক্ষুধা মেটায়; ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে বর্ষায় ফুটবল ম্যাচ খেলার প্ল্যান’ থেকেই তারা ইন্টেলিজেন্ট হয়

এখনকার MODERN বাঙালীরা কিন্তু হেব্বি সভ্য জাতি ...

তারা নিজেরা সকালে ঠিকঠাক উঠতে না পেরে মাঝে মাঝে স্কুল মিস করে, সারাদিন ডিসিপ্লিনের মধ্যে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস করতে হয়, ক্লাস থেকে বাড়ি ফিরেই আধা ঘন্টার মধ্যে বের হতে হয় আর্ট, নাহয় গান শেখার ক্লাসের উদ্দেশ্যে; সন্ধ্যের মধ্যেই বাড়ি এসে টুকিটাকি কিছু পেটে দিয়েই আবারও পড়ার টেবিলে। তারা মাঠে খেলার সুযোগ পায়না বলে, তাদের বাবা-মা বাড়িতে কম্পিউটার কিনে রাখেন যেন বাইরের বিনোদনটা বাড়িতে পায়; যদিও সেটা নামেমাত্র

--- --- ---

আমার ছোট ভাই ...

সকালে স্কুল বাস আসে ৮টার আগে, তাকে মোটামুটি পৌনে আটটার মধ্যেই প্রস্তুত থাকতে হয়। বিকেলে স্কুল বাস বাড়িতে রেখে যায় ৪টার দিকে। আসার সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে যাবার মত করে খাটে শুয়ে পড়ে; এমনকি ড্রেস চেঞ্জ করার মত ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। খাটে শুয়ে পড়ার সাথে সাথেই, তার উপর শুরু হয় কড়াকড়ি ... “এই, ড্রেস না খুলে খাটে শুয়ে পড়লি! গোসল করে নে, খেয়ে নে; তারপর স্কুলের হোমওয়ার্কগুলো একটু এগিয়ে রাখতে পারিস, নিজের ব্যাগটাও ঠিকঠাক রাখিসনি। টেবিলটারও কি অবস্থা! অন্যান্য ছেলেমেয়েরা কত গোছালো, আর তুই?” ... etc ... etc!

স্বাভাবিকভাবেই... টানা গ্যাঞ্জাম টাইপের একটা জায়গা থেকে বাড়িতে এসে, একটু শরীরটা এলিয়ে দিয়ে রেস্ট নেয়াতেও এতটা কথা শুনতে নারাজ হওয়ায়, যখন সে একটু কিঞ্চিৎ উত্তপ্ত কথা বলতে বাধ্য হয়; তখন সে হয়ে যায় অসভ্য, বেয়াদব। এরপর গোসলসহ আরো ব্যাপার নিয়ে তো এক গন্ডগোলটাইপ অবস্থার সৃষ্টি হয়ই।

ব্যক্তিগতভাবে যদি বলতে হয়... তবে একটা স্টুডেন্টের পক্ষে সকাল থেকে টানা বিকাল পর্যন্ত ক্লাস করা আর ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া বাস জার্নি করা ... একই! কিন্তু একজন যে এমন লং জার্নি করেছে, তাকে আমরা কিভাবে ট্রিট করি আর আমাদের এই স্টুডেন্টকে আমরা কিভাবে মূল্যায়ন করি!

বেশিরভাগ স্টুডেন্টের সাথে অভিভাবকদের মতের অমিল হয় দুই জায়গায়।

এক...

স্কুল বা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের একটা উক্তি থাকে... “আমাদের সময় আমরা হেটে হেটেই তো এগুলোতে যাওয়া-আসা করেছি। আর তোরা এভাবে বড় হচ্ছিস? অকর্মার ঢেকি!”

দুই...

বাড়িতে থাকা কম্পিউটারের গায়ে হাত দিলেই... ... ... থাক, আর বললাম না।

প্রথমত... আমার মতে যখন তারা তাদের সময়ে হেটে যাতায়াত করেছিলেন.. তখনকার আবহাওয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের রেকর্ড হয়নি। তখনকার আশেপাশের রাস্তার ফুটপাতে পাওয়া কোন তরমুজ খেয়ে মানুষ মরেনি। তখন আপনারা হেটে হেটে এভাবে ঘামে শতভাগ কাপড় ভিজিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে হাপাতে হাপাতে বাড়িতে ঢোকেননি। তখনকার দিনে.. রাস্তায় পাশ দিয়ে মাইক্রো ছুটে গেলে, এখনকার মত বালিতে মুখে প্রলেপ পড়েনি। কিংবা, তখনো কোন বড় বিল্ডিং এর ছায়ায় হাটতে হয়নি।

...কিন্তু এখন হচ্ছে!

দ্বিতীয়ত... এবার আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন, আপনার বাড়ির সামনে কি জায়গা আছে? আপনি কি আপনার সন্তানকে বিকেলে মাঠে খেলতে যাবার অনুমতি দেন নাকি বিকেলে সে কোন না কোন কোচিং এ সময় দেয়? সারাদিনে কি আদৌ সে নিজের মনমত কোন বিনোদনের দেখা পায়? আপনার ডেইলি কড়া কড়া রুটিং এর ফ্রেমে বাধা আপনার সন্তানের দৈনিক রুটিং এ কি আপনার ধমক ছাড়া, তার স্বানন্দে করার মত কোন কাজ থাকে?

সবগুলোর উত্তর একটাই ... “নাহ”

যদি তাইই হয়, তবে এটা তো মানেন যে সারাটা দিনে এমন অন্যের বেধে দেয়া ছকে রুটিং এ চলতে ওদের কেমন লাগে! তাই ওদের নিজেদের মনের মত করার কিছু একটা প্রয়োজন। আপনি তাকে পিসি কিনে দিয়েছেন, কিন্তু আবার সেটাতে হাত দিলেই আপনি এমন তাকে ঝাড়ি দিয়ে ওঠেন; ব্যাপারটা নিতান্তই অমানবিক হয়েই যায় বৈকি। অনেকে হয়ত বিনীতভাবে নম্রসুরে বলবেন.. “আসলে, বর্তমান বিশ্ব এতটাই প্রতিযোগীতায় চলছে যে ‘যা চলছে’ তার বিকল্প কিছু করা যাচ্ছে নাহ।

...উহু; এখানেও উত্তর ভূল। প্রতিযোগীতা চলছে নাহ, আমরা চালাচ্ছি। আমরা এখন ‘ভালো’তে সন্তুষ্ট না; ‘আরো ভালো’ চাই। বাচ্চা অংকে ৯৮ পাচ্ছে, চলবে নাহ; ৯৯ চাই। পরের বার ৯৯ পেলো, তাও চলবে নাহ; এবার ১০০ চাই। হয়ত পরের বার ১০০ই পেলো। তবুও কি আপনি তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট? ...আদৌ নাহ। তখন হয়ত আপনি তার ‘হাতের লেখা’ টাইপ কোন একটা ইস্যু নিয়ে পড়বেন।

এটা তো গেল একটা ব্যাপার ...

আপনার সন্তান জন্মানোর সাথে সাথেই আপনার পরিকল্পনাও ঠিক হয়ে যায়.. “এই আমার ছেলে/মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে!” ... সে বড় হবার সাথে সাথেই, আপনার সেই ইচ্ছাটারও প্রসার পেতে থাকে। কিন্তু কখনো কি দেখেছেন, আপনার সেই ইচ্ছার উপর তার ইচ্ছা আছে কিনা?

আপনার সন্তান ভাল আর্ট করতে পারে.. ভাল ক্রিকেট খেলতে পারে.. ভাল গান গাইতে পারে.. স্পষ্ট, শুদ্ধ এবং সুন্দর করে কথা বলতে পারে... কিংবা সে হয়ত হতে পারে অনেকক অ্যাকটিভ। এগুলোও কিন্তু যোগ্যতা। ক্রিকেটপ্রেমী সন্তানদের বাবা-মায়ের একটাই কথা থাকে.. “সবাই কিন্তু শচীন হতে পারে না, সো ... get back soon”

এখানে আমার একটা কনসেপ্ট আছে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত.. শচীন যখন ছোট ছিলেন, তখন হয়ত তার বাবা-মা তাকে বলতেন.. “সবাই কিন্তু ইমরান খান হতে পারে না, সো ... get back soon”

কিন্তু শচীন কিন্তু দেখিয়েই দিয়েছেন, “সবাইকে ইমরান খান হওয়া লাগে না; কাউকে শচীনও হতে হয় যে ক্রিকেট বিশ্বে ঐ ইমরান খানকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। আপনার সন্তান শচীন হবে নাহ, কিন্তু সে নিজের পরিচয়েই অনেকের আইডল হয়ে উঠতেই পারে। আপনার সন্তান আর্ট করতে ভালবাসে.. তখন আমার মতে তার জন্য ‘CSE’ বা ‘IT’ না ভেবে, ‘চারুকলা’ ভাবা উচিত। হয়ত অনেকেই নাক শিটকাতে পারে.. “চারুকলা আবার একটা সাবজেক্ট হল নাকি?”

উত্তর একটাই... “সে কোন জায়গায় চান্স পায়নি বলে চারুকলাতে পড়ছে নাহ; তার ইচ্ছা এটা নিয়ে সে পড়বে ... তাই পড়ছে” দেশে কিন্তু মোস্তফা মনোয়ারও আছেন।

সে নিজে যেটাতে ভাল এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, তবে তাকে সেটাতেই সাহস দিন। আর্টে যেন মোস্তফা মনোয়ারের পরের জায়গাটা ধরতে পারেন... কিংবা উপস্থাপনায় যেন হানিফ সংকেতের পরের স্থানেই রাজত্ত্ব করতে পারে ... ইত্যাদি ইত্যাদি!

যারা এখন আমাদের অভিভাবক পর্যায়ে আছেন, তাঁরাও কিন্তু জীবনে এমন অনেকক যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েই এই পর্যায়ে এসেছেন। কিন্তু আমাদেরকে সেই পথে ঠেলতে না দেবার কারণ হল.. তাদের মনে চলতে থাকা সর্বদা ভয়, “আমি নাহয় পেড়িয়ে গেছি; আমার সন্তান কি আদৌ পারবে?” ... আসলে, নিজের ফ্রেন্ড যখন বাইক চালায়, তখন পেছনে বসে নিজেরও ভয়টা নিতান্তই কম লাগে নাহ, সে যতই ভাল বাইক চালাক না কেন। যদিও নিজেও হয়ত তার চেয়েও বিশ্রীভাবেই চালানো হয়; তবুও! নিজের উপর ভরসাটা সবারই একটু বেশিই থাকে।

তবে মূল ব্যাপারটা হচ্ছে ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং’

একটা কথা যদি বলি, জানিনা কেমনভাবে নেবেন সবাই। তবে যেটা আমি অন্ততপক্ষে আমার ছোট ভাইয়ের ক্ষেত্রে মেনে চলি, সেটা সবাইই অন্তত একবার মেনে দেখতে পারেন। রাতে বাড়ি ফিরে যখন দেখি, আমার ছোট ভাইটা পড়ার সময়ে কম্পিউটারে গেইমস খেলছে; তাকে আমি ঝাড়ি বা ধমক কিছুই দেইনা। বরং পাচটা মিনিট তার সাথে ঐ কম্পিউটার গেমসেই সময় দিই। আমাকে এভাবে পাশে পেয়ে সেও বেশ মজাই পায়। এরপর যখন পাচটা মিনিট পরে, তাকে আদর করেই বলি.. “ইমরান, যা ভাইয়া; এবার একটু পড়তে যা” ... লক্ষ্য করি, আমাকে গালে একটা চুমু দিয়ে স্বানন্দেই ও লাফাতে লাফাতে পড়তে চলে যায় এবং বেশ ফ্রেশ মুডেই স্টাডিটা ক্যারি করে।

এর কারণ হল... স্বাভাবিকভাবেই এমন একটা সময়ে আমার বাড়িতে আসাটা ওর কাছে কিছুটা হলেও একটা ভীতি তৈরী করেছিল, “না জানি ভাইয়া আজ আমাকে কিই না করবে!” কিন্তু ওর সাথে আমার গেমসের প্রতি মিশে যাওয়াটা দেখে, ওর মধ্যে থেকে ভীতিটা চলে যায় এবং ঐ সময়টুকু পার করার পর ও নিজেকে অনেকক ফ্রেশ অনুভব করে। আর এমন একটা মুডে, বড়দের কথা মানতেও ভাল লাগে।

...আর যদি আপনি আপনার মতই তাদেরকে ঐ সময়গুলোতে বকতে থাকেন.. তবে দেখবেন, তারা কেমন যেন ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠছে। কারণ, সারাদিন অক্লান্তভাবে স্কুল/কলেজ/কোচিং শেষ করার পর আমার মনে হয় না, তারা বাড়ি ফিরেই আপনার ধমক খাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখবে।

অভিভাবক-সন্তানের সম্পর্কটাই বন্ধুত্ত্বপূর্ণ... বন্ধুত্ত্বপূর্ণই থাকুক!