Daffodil International University
Faculty of Engineering => EEE => Topic started by: mahmud_eee on November 25, 2014, 11:26:41 AM
-
হয়তো অফিসে কোন গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে ব্যস্ত, এমন সময় বাসা থেকে কোন জরুরী বার্তা বা ম্যাসেজ এলো। মিটিং চলাকালীন তো আর মুঠোফোন বের করে ম্যাসেজের রিপ্লাই দেয়া যায় না। আবার ম্যাসেজের রিপ্লাই দেয়াটাও হয়তো খুব জরুরী হতে পারে। কিন্তু কিছু করার নেই। আবার ধরা যাক, গাড়ি চালানোর সময় বেজে উঠলো ফোন। ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি চালাতে চালাতে তো আর পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল রিসিভ করা যায় না। এমন সব মুহূর্তে বেশ অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। এমন অবস্থায় না পারা যায় মোবাইলের বিড়ম্বনা এড়াতে আর না চলমান কাজে মনোযোগ দিতে।
বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকেরই স্মার্টফোন রয়েছে। কল রিসিভ অথবা ম্যাসেজ চেক করার জন্য প্রত্যেককেই পকেট কিংবা পার্স থেকে ফোন বের করতে হয়। কিন্তু এমন বিড়ম্বনায় পড়লে, প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ কল রিসিভ বা ম্যাসেজের রিপ্লাই দেয়া প্রায়ই সম্ভব হয় না। এসব ক্ষেত্রে সমাধান হয়ে আসতে পারে পরিধানযোগ্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র। পরিধানযোগ্য যন্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হিসেবে বলা যায় স্মার্টওয়াচের কথা। এরকম একটি স্মার্টওয়াচ হাতে পড়ে থাকরে এমন সব বিড়ম্বনা খুব সহজেই এড়ানো যায়।
বর্তমান ইলেক্ট্রনিক্ বিশ্ববাজারে স্মার্টওয়াচের অনেক চাহিদা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান স্মার্টওয়াচ বাজারে ছেড়েছে। স্মার্টওয়াচের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অ্যাপলের আইওয়াচ, প্যাবেল, স্যামসাং গ্যালাক্সি গিয়ার, গুগল ওয়াচ ও সনির স্মার্টওয়াচ। এসব স্মার্টওয়াচের মূল্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকে। এছাড়াও সমস্যা হল কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্মার্টওয়াচ নির্দিষ্ট কিছু হ্যান্ডসেটের জন্যই কাজ করে। এসব সীমাবদ্ধতার ক্ষেত্রে ভাবনার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশে তা কতোটা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে হতে পারে?
মূলত স্মার্ট ওয়াচ সভার জন্য সহজলভ্য করতেই স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দ তাসনিমুল ইসলাম বিন্তু ও সৈয়দ ইরফান আলী মির্জা তৈরি করেছেন স্মার্টওয়াচ। এই স্মার্ট ওয়াচ এর নাম তারা দিয়েছেন এক্স-টার্ক (X-Tark)। এটি অ্যান্ড্রয়েডচালিত সকল প্রকার স্মার্টফোনেই সমর্থন করে। এ জন্য প্রথমে তারা একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন বানিয়ে নেন। এরপর হার্ডওয়্যারের কাজ শুরু করেন । হার্ডওয়্যার হিসেবে তারা ব্যবহার করেন Arduino Pro Micro/Nano, Bluetooth Module HC-05, OLED display, RTC(Real Time Clock)module, 5 way Switch এবং vibrator motor.
অ্যান্ড্রয়েডের হ্যান্ডসেটকে প্রথমে ব্লুটুথের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয় ব্লুটুথের মড্যুলের সাথে। তারপর অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্রতি সেকেন্ডে হ্যান্ডসেটের ইনকামিং কল এবং ম্যাসেজ চেক করতে থাকে। যখনই কোন ইনকামিং কল আসে স্মার্টওয়াচ ব্যবহারকারীর হাতে ভাইব্রেশন মোটরের মাধ্যমে ভাইব্রেশন তৈরি করা হয় এবং ঘড়ির পর্দায় প্রেরকের নাম দেখায়। প্রেরকের নাম মোবাইলে সংরক্ষণ করা না থাকলে শুধুমাত্র মোবাইল নম্বর দেখাবে। যদি কোন কারণে কল গ্রহণ করা না যায়, তাহলে তা মিসড কল হিসাবে দেখাবে। এছাড়াও কোনো ম্যাসেজ এলে ঘড়ির পর্দায় প্রেরকের পরিচয়সহ ম্যাসেজের প্রথম ত্রিশটি বর্ণ প্রদর্শন করা হয়।
এসব ছাড়াও এই ঘড়ি দিয়ে মোবাইলের রিং টোন এর ভলিউম, মিউজিক এর ভলিউম কমানো কিংবা বাড়ানো, মিউজিক পরিবর্তন যাবে। বর্তমানে স্মার্ট ফোনগুলোর একটি জনপ্রিয় ও অতি প্রয়োজনীয় ফিচার হলো জিপিএস, যা দিয়ে ব্যবহারকারীর বর্তমান অবস্থান খুঁজে বের করা যায়। যেকোনো অপরিচিত জায়গায় গেলে যা খুবই কাজে লাগে। দুই তরূণের তৈরি এই এক্স-টার্ক স্মার্টওয়াচ দিয়ে স্মার্টফোনের জিপিএস চালু করা যায় এবং স্মার্ট ফোন জিপিএসের ডেটা সরাসরি স্মার্টওয়াচেও দেখানো যায়। এসবের পাশাপাশি রুমের তাপমাত্রা এবং ফোনের ব্যাটারি লেভেলও দেখা যায়।
দৈর্ঘ্যে এবং প্রস্থে ৫০ মিমি। আকার ছোট রাখতে মাইক্রোকন্ট্রোলার, ব্লুটুথ ডিভাইস আলাদাভাবে না রেখে সবগুলো ডিভাইসকেই একসাথে সল্ডারিং করা হয়েছে। সাধারণত যে কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের prototype বা মডেলের আকার একটু বড় হয়। বানিজ্যিকভাবে প্রস্তুত করা হলে স্বভাবতই তার আকার আরও ছোট হয়ে আসবে এবং আরও পরিধানযোগ্য হয়ে উঠবে। খরচ কমানোর জন্যে ওয়াইফাই-এর পরিবর্তে ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঘড়ির ব্যাটারি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ৩.৬ ভোল্টের Simple Coin Cell যার আনুমানিক ব্যাটারি লাইফ টাইম প্রায় ২৮-৩০ ঘন্টার কাছাকাছি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে সর্বশেষ নকশায় কিছু পরিবর্তনের পর এ স্মার্টওয়াচটির দাম মাত্র তিন হাজার টাকায় নেমে এসেছে। বাংলাদেশে এটাই সফলভাবে তৈরি প্রথম কোন স্মার্টওয়াচ। উদ্ভাবকেরা আশা প্রকাশ করেন কোন ভাল বিনিয়োগকারীর সাহায্য পেলে খুব দ্রুত তারা এটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারে ছাড়তে পারবেন।
উদ্ভাবকেরা জানান, তারা এই প্রোজেক্টের কাজ শুরু করেছিলেন সাত মাস আগে যা সফলভাবে সম্পন্ন হয় ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল এবং পরবর্তিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন সম্পন্ন করা হয়। এ কাজের সুপারভাইজার হিসেবে ছিলেন ইসিই বিভাগের লেকচারার সুমিত সাহা এবং এতে উৎসাহ দিয়েছেন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
পুরো প্রোজেক্টে হার্ডওয়্যার সংক্রান্ত কাজগুলো করেছেন সৈয়দ তাসনিমুল ইসলাম বিন্তু এবং সফটওয়্যার সংক্রান্ত কাজ করেছিলেন সৈয়দ ইরফান আলী মির্জা। ঢাকার ছেলে বিন্তু কুয়েটে ভর্তির আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন আইডিয়াল স্কুল ও রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে। আর ইরফান পুরোদস্তুর খুলনা শহরের ছেলে।
-
good news