Daffodil International University
Help & Support => Common Forum/Request/Suggestions => Topic started by: Md. Neamat Ullah on November 29, 2014, 05:54:58 PM
-
গ্রামের পর গ্রামের মেঠোপথ ছুটে বেড়ানো। হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন ধানখেতে ইঁদুরের গর্ত। কৃষকদের ধান কাটা শেষ হলে সেসব গর্তেই শুরু হয় তাঁর খোঁড়াখুঁড়ি। খাঁচাবোঝাই করেন ধানের শিষে।
তাঁর নাম নূরুল ইসলাম (৫৫)। বাড়ি রংপুর নগরের বুড়িরহাট এলাকায়। সেই ছোটবেলা থেকেই বছরের এই সময়টায় ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধানের শিষ সংগ্রহ করাই তাঁর কাজ।
বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে হারাটি গ্রামে ২১ নভেম্বর দেখা মিলল নূরুলের সঙ্গে। কাঁধে বাঁশের তৈরি খাঁচা, ধানের শিষে ভর্তি। বাড়ি ফিরছেন। সঙ্গে আছে একটি শাবল ও বাঁশের লাঠিও। জানালেন, এই শাবল ও লাঠির সাহায্যেই গর্ত খুঁড়ে ধান সংগ্রহ করেন তিনি।
(http://paimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/350x0x1/uploads/media/2014/11/29/764a20c2dc708fbfc0628ca8e6f1dfbf-desh.jpg)
স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ে নিয়ে নূরুলের কষ্টের সংসার। তাঁর দিনমজুরিই সংসারের চাকা সচল রাখার একমাত্র উপায়। নিজের জমি নেই।
সারা বছর দিনমজুরি করে সংসার চালালেও কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও পৌষ—এই তিন মাস চষে বেড়ান ধানখেত। খুঁড়ে যা ধান পান, তা বেঁচে টানাটানির সংসার কোনোমতে চলে যায়।
নূরুল ইসলাম প্রবল উৎসাহ নিয়ে আমন মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করেন। মৌসুম শুরু হলেই ইঁদুরের গর্তের সন্ধানে নেমে পড়েন, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত।
এরপর কৃষকেরা ধান কেঁটে ঘরে তোলার পরই শুরু হয় তাঁর আসল কাজ, ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধানের শিষ সংগ্রহ। দিনে গড়ে এক থেকে দেড় মণ ধান পান, যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০০ টাকা।
নূরুল জানালেন, ইঁদুরের গর্তে হাত দিতে প্রথমে কেউ সাহস পেত না। যদি কোনো পোকামাকড় থাকে! ভয়ে ভয়ে তিনি একদিন হাত ঢোকান। খসখস শব্দ হয়। ভয় পেয়ে যান। তবে জানতেন, এই খসখস শব্দ মানেই ধান রয়েছে গর্তে। কৌতূহলের সেই কাজটিই এখন তাঁর জীবিকার উপায়।
নূরুল বললেন, ‘নিজের জমি নেই। কিন্তু তাতে কী! এভাবে ধান সংগ্রহ করে নতুন ধানের স্বাদও পাই।’
দুই ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা থাকেন আলাদা। দুই মেয়ের একজন অষ্টম, আরেকজন পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। নূরুলের স্বপ্ন, তিনি যা-ই করেন, মেয়ে দুটি যেন পড়াশোনা করে বড় হয়।