Daffodil International University

Health Tips => Health Tips => Heart => Topic started by: faruque on December 03, 2014, 10:03:23 AM

Title: হার্ট অ্যাটাকের পর যা করবেন, যা করবেন না
Post by: faruque on December 03, 2014, 10:03:23 AM
হার্ট অ্যাটাকের পর যা করবেন, যা করবেন না

(http://www.deshebideshe.com/assets/news_images/70ca0a33a10da3f7f5b62bebdc2307d8.jpg)

হার্ট অ্যাটাক! জীবনের অন্যতম একটি বিপর্যয়। কেননা হার্ট অ্যাটাকের পর বদলে যায় জীবন যাপন, খাওয়া দাওয়া, বলতে গেলে সম্পূর্ণ লাইফ স্টাইল। হার্ট অ্যাটাকের পর কোনটা আপনার জন্য ভালো হবে আর কোনটা করা অনুচিত? সেই সমস্ত প্রশ্নের জবাব নিয়ে এই ফিচার।

হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হয়। এগুলো হল-

ক. পর্যায়ক্রমে দৈনন্দিন কাজ শুরু করা
খ. পরবর্তী হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ
গ. হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী পুনর্বাসন

হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী করণীয়
-হার্ট অ্যাটাক হওয়ার দিন (প্রথম ২৪ ঘণ্টা) : বিছানায় পূর্ণ বিশ্রাম নেবেন। এ সময় তরল খাবার (দুধ, হরলিকস, স্যুপ ইত্যাদি) খাবেন। পায়খানা-প্রস্রাবের জন্য বেডপ্যান ব্যবহার করবেন।

-দ্বিতীয় দিন (২৪-৪৮ ঘণ্টা) : এক বা দুবার ১৫-৩০ মিনিট বিছানার পাশে চেয়ারে বসবেন। এ সময় গরম খাবার (জাউ, ভাত, ফিরনি, সেমাই, ইত্যাদি) খাবেন। এই দিন বিছানার পাশে কমোড ব্যবহার করতে পারেন।

-তৃতীয় দিন (৪৮-৭২ ঘণ্টা) : ওয়ার্ডের ভেতর হাঁটবেন এবং হেঁটে টয়লেটে যাবেন। এ সময় স্বাভাবিক শক্ত খাবার শুরু করবেন।

-চতুর্থ দিন (৭২-৯৬ ঘণ্টা) : একই তলায় আস্তে আস্তে হাঁটার দূরত্ব বাড়াবেন।

-পঞ্চম দিন (৯৬-১২০ ঘণ্টা) : সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করবেন।

-৫-৭ দিনের মধ্যে রোগী নিজ বাসস্থানে ফিরে যাবেন।

-৭-১৪ দিন : বাড়ির উঠানে বা বাগানে হাঁটবেন।

-১৪-২৮ দিন : আস্তে আস্তে হাঁটার দূরত্ব ও সময় বাড়িয়ে দৈনিক ২০-৩০ মিনিট করতে হবে।

-২৮তম দিনে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করবেন এবং ইটিটি করবেন।

-কাজের ধরন অনুযায়ী ৪-১২ সপ্তাহ পর কার্যক্ষেত্রে যোগদান করবেন।

-২-৬ সপ্তাহ পর স্বামী/স্ত্রীর সঙ্গে স্বাভাবিক মেলামেশা করতে পারবেন।

-২-৬ সপ্তাহ পর যারা হাল্কা গাড়ি চালান তারা গাড়ি চালাতে পারবেন। তবে যারা ভারি যানবাহন (বাস, ট্রাক ইত্যাদি) বা অ্যারোপ্লেন চালান, তাদের বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পর এসব যানবাহন চালানো উচিত।

পরবর্তী হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ
-বেশি ক্যালরি সমৃদ্ধ খাদ্য বর্জন।

-মদ্যপান, সাদা জর্দা, তামাক ধূমপান বন্ধ করতে হবে (ধূমপান ছাড়ার ১০ বছর পর্যন্ত ঝুঁকি থেকে যায়)।

-অতিরিক্ত চা-কফি, ফাস্টফুড টিনজাত ও শুকনো খাবার কোমল পানীয় বর্জন করতে হবে।

-মহিলাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণ, কায়িক পরিশ্রম কম করাও হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। হৃদরোগ বংশগতও হয়।

-অনিদ্রা, টেনশন, ভয়, ক্রোধ, শোক, হতাশা, রাগ, প্রতিশোধ প্রবণতা, হিংসা-বিদ্বেষ, অশান্তি, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় বা চেঁচামেচি (চিৎকার), অস্থিরতা, ক্ষমা করতে না পারা- এসব মানসিক চাপ বর্জনীয়।

-উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার পরও তা নিয়মিত নিয়ন্ত্রিত রাখা (সপ্তাহে ১ দিন রক্তচাপ পরীক্ষা, মাসে ১ বার রক্তের সুগার দেখা, ৩ মাস পর পর লিপিড প্রফাইল ও ৬ মাস পর পর ইসিজি ও বছরে ১ বার করে ইটিটি করা উচিত।

-রক্তের লিপিড প্রফাইলে সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ খাবেন।

-ইকোকার্ডিওগ্রাম ডপলার এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে (রিস্ক ফ্যাক্টর ও বুকে ব্যথা থাকলে হৃদরোগজনিত) এনজিওগ্রাম করতে পারেন (অনেকের হৃৎপিণ্ডে ব্লক ধরা পড়ে)।

-যাদের বয়স ৪০-এর উপরে সুষম খাদ্য খাবেন প্রাণিজ চর্বি (গরু, খাসি, হাঁস, বড় চিংড়ি, ডিমের কুসুম, কলিজা, মগজ, চামড়া, চর্বির টুকরো, ঘি, ডালডা, পনির) খাবেন না, তবে উদ্ভিদ তেল (সয়াবিন, সূর্যমুখী, সরিষার তেল), সামুদ্রিক মাছ খাবেন। বাদাম হৃদরোগের সহায়ক- প্রতি সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ গ্রাম করে (খোসাসহ) খেলে রক্তের HDL (এইচডিএল) বাড়ে। বাদামের ভেষজ প্রোটিন, ফলিক এসিড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফ্লাভোনয়েডস, সেলিনিয়াস ও ভিটামিন-ই হৃদরোগের প্রতিরোধক।

-প্রতিদিন ৩০ মিনিট মুক্ত বাতাসে ব্যায়াম বা দ্রুত হাঁটা (সহনীয়), খেলাধুলা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, বাগান করা এবং সুযোগ পেলেই হাঁটা হৃদরোগ প্রতিরোধক, মাদকাসক্তি হৃৎপিণ্ডের শত্রু।

-প্রচুর ফলমূল, শাকসবজি, তরকারি, আদা, মেথি, করলা, রসুন, টক ফল খাবেন, লবণ ও চিনি কম খান, টকদই খাবেন।

-দাম্পত্য সুখী সম্পর্ক, সামাজিক সুস্থ সম্পর্ক, ধর্মকর্ম, ধ্যান, হৃদরোগ প্রতিরোধ সহায়ক।

হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী পুনর্বাসন
হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী মানসিক এবং শারীরিক এই দুই দিকেরই পুর্নবাসন প্রয়োজন।

মানসিক পুনর্বাসন :
হার্ট অ্যাটাকের পর অনেক রোগীই মনে করেন যে তিনি সম্পূর্ণভাবে অক্ষম হয়ে গেছেন এবং অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। অনেক রোগীই শারীরিক অসুস্থতার চেয়ে মানসিকভাবে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকের কাছ থেকে রোগ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করে এবং নিজের হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা সঠিকভাবে বুঝে নিলে এ মানসিক অস্বস্তি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

শারীরিক পুনর্বাসন :
হার্ট অ্যাটকের পর ধাপে ধাপে ব্যয়াম অনুশীলনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
হার্ট অ্যাটাকের পর উপরোল্লিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে অনেকেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।

লেখক :
ডা. মোহাম্মদ সাইফউল্লাহ
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি বিভাগ, এম এইচ শমরিতা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ

- See more at: http://www.deshebideshe.com/news/details/43743#sthash.fQ6Gr4Sx.dpuf