Daffodil International University

Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Topic started by: faruque on January 03, 2015, 01:43:59 PM

Title: বিশ্বশান্তির প্রতীক মুহাম্মদ (সা.)
Post by: faruque on January 03, 2015, 01:43:59 PM
বিশ্বশান্তির প্রতীক মুহাম্মদ (সা.)

স্বর্গদূতের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো, গবংংবহমবৎ ড়ভ মড়ফ. আরবি প্রতিশব্দ হলো রসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। এ মহামানবকে নিয়ে যুগে যুগে রচিত হয়েছে শত শত গ্রন্থ। তাঁর জীবনচরিত নিয়ে রিসার্চ করে বহু মহামনীষী ঘাম ঝরিয়েছেন। কিন্তু কেউ কোনো কূলকিনারায় পেঁৗছতে পারেনি। পারবেইবা কী করে? তাঁর চরিত্র তো স্বয়ং আল্লাহপাক তাঁর বিশেষ নেগরানীতে গঠন করেছেন। তাই তো হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রসুল (সা.)-এর চরিত্র কেমন ছিল? তিনি একবাক্যে বলেছিলেন, তাঁর চরিত্র হলো পবিত্র আল কোরআন। অর্থাৎ তিনি পবিত্র কোরআনের চাহিদা অনুযায়ী স্বীয় জীবন পরিচালনা করেছেন। আল্লাহপাকের মানশা অনুযায়ী তিনি জীবন পরিচালনা করেছেন। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন, আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা নূন : ০৪ ) সূরা আহজাবের ২১নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম নমুনা। রসুল (সা.)-এর জীবনী নিয়ে গবেষকদের দল শুধু মুসলমানই ছিলেন না বরং অসংখ্য অগণিত অমুসলিম লেখকরাও রসুল (সা.)-এর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে চিন্তাভাবনা করে হয়রান হয়ে গেছেন। শুধু ইউরোপেই রসুল (সা.)-এর জীবন চরিত নিয়ে লেখা হয়েছে দেড় হাজারেরও অধিক গ্রন্থ। অঙ্ফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আরগোলিয়াথ সত্য কথা বলেছেন, এই মহামানবের জীবনচরিত নিয়ে লেখকের সংখ্যা সঠিকভাবে নিরূপণ করা সত্যিই কঠিনসাধ্য ব্যাপার। বরং এই মহামানবের লেখকদের খাতায় নাম লেখানো এক মহাগৌরবের বিষয়ও বটে। মার্কিন ও ফরাসি বিজ্ঞানীরা তাদের রচিত গ্রন্থ বাইবেল ও কোরআন এবং দি হানড্রেডের মধ্যে মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনচরিত নিয়ে দীর্ঘ লেখার পর, এই কথা লিখতে বাধ্য হয়েছেন, তিনিই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তিনি জন্মলগ্ন থেকেই বরকতময়। মা আমেনা সম্পর্কে ইবনে ইসহাক লিখেছেন। মা আমেনা বলতেন গর্ভাবস্থায় আমি দেখতাম আমার শরীর থেকে নির্গত একটি আলো এত দূর পর্যন্ত আলোকিত করত, যার আলোয় সুদূর সিরিয়ার বুশরা নগরী পর্যন্ত আলোকিত হয়ে যেত। মা আমেনা আরও বলেন, আমার এই সন্তান প্রসবের সময় আমার কোনো কষ্টই অনুভূত হয়নি। জন্মের পর তিনি তার হাতকে মাটির ওপর রেখে মাথাকে আকাশের দিকে ফিরিয়ে রেখেছিলেন। এসব ঘটনাবলি প্রমাণ করে, এই ছেলে কোনো সাধারণ ছেলে নয়। এই অসাধারণ ছেলেটি দুনিয়ার তাগুতী শক্তির মূলোৎপাটন ঘটাবেন। তিনি দুনিয়াতে আগমন করার বহুকাল পূর্ব থেকেই আরবের সর্বত্র ছিল এক অরাজকতা ও থমথমে পরিবেশ। বিশেষ করে তাদের নৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অবস্থা ছিল বড়ই নাজুক। মদ্যপান, জুয়াখেলা, সুদ খাওয়া, ব্যভিচার, বংশীয় অহমিকা, গোত্রীয় লড়াই, প্রতিমা পূজা, ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস, কন্যাসন্তানকে জীবন্ত দাফন, হত্যা, লুণ্ঠন এবং পরস্পর রেষারেষি ছিল তাদের দৈনন্দিন রুটিন। মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে এই মহামানবকে ওই সময় দুনিয়ার বুকে পাঠিয়ে দুনিয়াবাসীর ওপর বিশাল অনুগ্রহ করেছেন। এই মহামানবের জন্ম প্রসিদ্ধ রেওয়াত অনুযায়ী রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার দিন হয়েছিল। যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য দিন ছিল। কারণ রসুল (সা.)-এর জন্মের কিছু দিন আগেই আবরাহার বাহিনী তথা হস্তীবাহিনী নির্মমভাবে পবিত্র মক্কায় নিষ্পেষিত হয়। বিস্তারিত ঘটনা সূরা ফিলে বর্ণিত হয়েছে। এই দিনই নিখিল বিশ্বের সৃষ্টির মূল লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়, হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর প্রার্থনা, হজরত মূসা (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.) ভবিষ্যদ্বাণীর উদ্দীষ্ট পুরুষ অর্থাৎ হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীর বুকে আগমন করে বিশ্ববাসীকে চিরশান্তির বার্তা দিয়েছেন। একদিকে পৃথিবীর দেবালয়ে নবুয়ত-রবির আবির্ভাব ঘটে। আর অপরদিকে ভূমিকম্পের আঘাতে পারস্য রাজপ্রাসাদের ১৪টি চূড়া ধসে পড়ে, পারস্যের শ্বেত উপসাগর সহসাই শুকিয়ে যায়। পারস্যের অগি্নশালার সেই অগি্নকুণ্ড নিজে নিজেই নিভে যায়, যা বিগত এক হাজার বছর যাবৎ মুহূর্তের জন্যও নির্বাপিত হয়নি। (সিরাতে মোগলতাই পৃষ্ঠা-৫) প্রকৃতপক্ষে এসব ঘটনাবলি ছিল অগি্ন-উপাসনা ও যাবতীয় গোমরাহীর পরিসমাপ্তির ঘোষণা, পারস্য ও রোম সাম্রাজ্যের পতনের প্রতিও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত এবং অন্যায়, অনাচার, জুলুম-নির্যাতনের দিন শেষের প্রতিও সুস্পষ্ট ঘোষণা। বিশ্বশান্তির অগ্রদূত তাওহিদী বার্তা, রিসালাত এবং মহান চরিত্র মাধুরীর মাধ্যমে আরব জাতিকে সব অপকর্ম থেকে মুক্তি দেওয়ার সাধ্যাতীত চেষ্টা করেছেন। তাঁর নবুয়তের দীর্ঘ ২৩ বছরের নিরলস সাধনা ও আরাধনার ফলে আরব জাতি অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আসতে পেরেছেন। অজ্ঞতা ছেড়ে জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে পেরেছেন। তাওহিদের রঙ্গে রঙ্গায়িত হতে পেরেছেন। সূরা বাকারার ১৩৮ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করেছি। আল্লাহর রঙের চেয়ে উত্তম রং আর কার হতে পারে? আমরা তারই ইবাদত করি। প্রকৃতপক্ষে এই আরব জাতিই রসুল (সা.)-এর সোহবত ও সংস্পর্শ পেয়ে এক সময় সারা জাহানের শান্তির দূত হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছিলেন। পরে তারাই আবার অন্ধকারে নিমজ্জিত পথহারা অন্য জাতিকে সভ্য ও প্রগতিশীল করে তুলেছেন। হেদায়েতের আলো নিয়ে বিশ্বের আনাচে-কানাচে সফর করেছেন। তাঁদের সেই ধারা আজও সারা বিশ্বে বিদ্যমান এবং কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমিন


লেখক : খতিব, বাইতুল আমান মসজিদ, বারিধারা, ঢাকা।

 

- See more at: http://www.bd-pratidin.com/islam/2015/01/02/53694#sthash.WrIfayBK.dpuf