Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Allah: My belief => Topic started by: imam.hasan on February 11, 2015, 02:07:06 PM
-
প্রতিদিন পাঁচবার আমাদের কানে মধুর আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। মুসলমান মাত্রই আজানের ধ্বনি শুনে আবেগাপ্লুত হন, আমোদিত হন। আজান আল্লাহতায়ালার একত্ববাদ ও তাওহিদের মহা আওয়াজ। আজান এক বিরল জিকির। দৈনিক পাঁচবার শান্তি প্রতিষ্ঠার আহবান জানায় আজান। উচ্চৈঃস্বরে প্রচারিত আল্লাহর একত্ববাদের এই ঘোষণার মাধ্যমে সারা বিশ্বের অগণিত মসজিদের মিনার থেকে দৈনিক পাঁচবার কার্যত বান্দা মহান প্রভু আল্লাহতায়ালার বশ্যতার ঘোষণা দেয়া হয়। স্বীকার করা হয় আল্লাহর বড়ত্বের। মনে গভীর থেকে পরম বিশ্বাসের সঙ্গে স্বাক্ষ্য দেয়া নবী করিম (সা.)-এর নবুওয়তের।
আজানের প্রথম তাকবির হলো আল্লাহু আকবার। এর অর্থ- আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। দুনিয়া ও পরকালের স্রষ্টা আল্লাহ একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। তাই আজানে আল্লাহু আকবার বলে সব ধরনের শিরক, বিদয়াত প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বের মালিক বলে ঘোষণা দেয়া হয়। দুনিয়ার সৃষ্টি, নিয়ন্ত্রণ ও সমস্ত সৃষ্টি জীবের রিজিকসহ সব কল্যাণ-অকল্যাণের একক মালিক আল্লাহ। আজানে আল্লাহু আকবার চারবার করে উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়, মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য, পরকালের সফলতার জন্য একমাত্র আল্লাহতায়ালার কাছেই আশ্রয় নিতে হবে। অন্য কোথাও মানুষের শান্তি নেই, কল্যাণ নেই। এই ঘোষণা রয়েছে আল্লাহু আকবারে।
আজানের দ্বিতীয় ঘোষণা হলো, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এর মানে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই। যে ব্যক্তি এ ঘোষণায় একমত, তিনি মুসলমান। এভাবে দু’বার মুয়াজ্জিন এ আওয়াজ তোলেন। এরপর ঘোষণা হয়, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ। এর মানে হলো, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। এটাই সেই রেসালাতের ঘোষণা, যা কালেমা তাইয়্যেবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর এক অংশ। মহান প্রভু আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসেবে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে একমাত্র নেতা হিসেবে মেনে নেওয়া ঘোষণা।
এরপর ঘোষণা হয়, হাইয়া আলাস সালাহ। মানে- এসো তোমরা নামাজের জন্য এসো। আল্লাহতায়ালার দরবারে সেজদা করে একক আল্লাহর আনুগত্যের প্রমাণ দিতে সবাইকে আহ্বান জানানো হয় পর পর দুইবার। পরে ঘোষণা হয়- হাইয়া আলাল ফালাহ। মানে এসো কল্যাণের জন্য, সফলতার জন্য। জীবন-মরণের কল্যাণ এই নামাজে নিহিত। মুক্তি ও কল্যাণের পিপাসায় যারা কাতর তাদেরকে নামাজে আসতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
আজানের শেষলগ্নে পুনরায় সেই প্রথমবারের স্বীবারোক্তি আল্লাহু আকবার দু’বার উচ্চারণ করে মানুষকে সাবধান করার পাশাপাশি পুনরায় মনে করিয়ে দেওয়া হয়- আল্লাহ এক, তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। এ বিরাট ঘোষণা যেন মানুষের হৃদয়মূলে গেঁথে যায় তাই সবার শেষে বলা হয়, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। মানে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই।
আজান মূলতঃ নির্ভেজাল তাওহিদের ঘোষণা। আজানের মধ্যে আল্লাহর পরিচয় নিহিত। আসলে আল্লাহ মানুষের প্রভু, আল্লাহ আমাদের আইনদাতা, বিধান দাতা। এটা মানুষকে মনে করিয়ে দেয়া হয় বারবার আজানের মাধ্যমে। আর এভাবেই সারা বিশ্বে যুগ যুগ ধরে উচ্চ আওয়াজে প্রচারিত ইসলামের নির্যাস ও বার্তা বিঘোষিত হয়ে আসছে আজানের মাধ্যমে।
প্রতিদিন মুয়াজ্জিনের মধুর কণ্ঠে প্রচারিত আজান শুনে ধর্মপ্রাণ লাখো-কোটি মানুষ আল্লাহর দরারে হাজিরা দিতে মসজিদে দৌঁড়ায়। এ আবেগের কথা কবি অত্যন্ত সুন্দর ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবে-
‘কে ঐ শোনালো মোরে আযানের ধ্বনি,
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর!
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
কি মধুর সে আযানের ধ্বনি!’
এখন কথা হলো আমরা কী এই কবির মতো করে আজান শুনি? বস্তুত আজানের মাধ্যমে আল্লাহর একত্ববাদের আওয়াজ মানুষের কর্ণকূহরে পৌঁছানোর মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর অনুগতশীলদের মিছিলে যোগ দেয়ার আহবান জানানো হয়। যে আহবানের পরতে পরতে রয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রত্যয় ও ঘোষণা।
-
Jazakallahu Khair.