Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Topic started by: faruque on March 01, 2015, 09:56:29 AM
-
নৈতিক মূল্যবোধের বাহক ইসলাম
মানুষ মৌলিকভাবে স্বীয় বিবেক নামের মনোগত চেতনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই চৈতন্যের নির্মোহ প্রেরণা তাকে নীতিবান হতে উদ্বুদ্ধ করে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, 'মুফতীকে জিজ্ঞেস করার আগে নিজের বিবেককে জিজ্ঞেস করে নাও।' বিবেক মানুষকে অনৈতিক থেকে সব সময়ই বাধা দেয়। একটি হাদিসে আছে, যে বিষয়ে তোমার খটকা জাগে তা ত্যাগ কর।
মানুষের মধ্যে দুই ধরনের নৈতিকতা লক্ষণীয়। এক. স্বভাবজ, দুই. আরোপিত। স্বভাবজ নৈতিকতা মানুষের প্রকৃতিগত ও মনোগত চৈতন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ধর্ম-বর্ণ অঞ্চল নির্বিশেষে এগুলো কার্যকর। সব সমাজে, সব স্তরে এগুলো লালিত। মানবিক ঐতিহ্য এগুলোকে বহন করে এবং এর মাধ্যমে ভালো-মন্দের ধারণা মানুষের মাঝে গড়ে ওঠে। প্রেম, সহমর্মিতা, সততা আত্দত্যাগ ইত্যাদি লালিত বিষয়গুলো মানুষের স্বভাবজ। সঙ্গে সঙ্গে মানুষ মহৎ সত্তার পরিচয় নির্মাণে ধর্মের আশ্রয় নেয়। ধর্মের আশ্রয়ে সে নিজেকে পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করে। তাই ধর্ম থেকে নৈতিকতার ব্যবচ্ছেদ অপ্রাকৃত ও স্বভাববহির্ভূত। সুতরাং বলা যায়, নৈতিকতার মূল বাহনই হলো ধর্ম। মানুষের স্বভাব চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ইসলাম ধর্মের উদ্ভব এবং তা পরিপূর্ণতা ও পরিপক্বতা পায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত স্বভাব যার ওপর তিনি মানবকূল সৃষ্টি করেছেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক ভূমিষ্ঠ শিশুই তার স্বভাবজ প্রকৃতির ওপর জন্মলাভ করে। পরে আর্থ-সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশ তাকে ভিন্ন করে তুলে। কেউবা ইহুদি হয়। আবার কেউ হয় খ্রিস্টান। সুতরাং নৈতিকতাকে শাশ্বত ধর্ম মতের সঙ্গে বিজড়িত হতে হবে। চোখ যতই ভালো দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন হোক না কেন, বাইরের আলো ব্যতীত তা কার্যকর হয় না। তেমনি বাইরে যতই আলো থাকুক না কেন চোখের দৃষ্টিশক্তি না থাকলে কোনো কিছুই দৃষ্টিগ্রাহ্য হবে না। তেমনি নৈতিকতার যে অভ্যন্তরীণ উপাদান বিবেক বলে যাকে আমরা চিনি, সেটি কার্যকর হতে হলে বাইরের সমভাবাপন্ন শক্তি ধর্মের সঙ্গে সমন্বয় করে তা করতে হবে।
মানুষের নৈতিক মাহাত্দ্যকে উন্নত করতে তা রক্ষা করতে কাজ করে এমন বড় একটি উপাদান হচ্ছে- জবাবদিহিতার চেতনাবোধ। জাগতিক জবাবদিহিতা অনেক সময় নানা কারণে ব্যর্থ হয়। চালাক মানুষ ফাঁকফোকরে নিজেকে এড়িয়ে নিয়ে যায়। তাই মহৎ ব্যক্তিরা মৃত্যু ও মৃত্যু-পরবর্তী জবাবদিহিতার চেতনা জাগরুক করতে সচেষ্ট হয়েছেন। কারণ সেখানে সর্বজ্ঞ সৃষ্টিকর্তার সামনে ফাঁকিবাজির কোনো অবকাশ নেই। এ জবাবদিহিমূলক চেতনা নৈতিকতার বাস্তবায়নে মোক্ষম উপায় হিসেবে কাজ করে।
মনে রাখতে হবে, পিতা-মাতার কোল থেকেই পরিবার সমাজ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ নৈতিকতার অনুশীলন ও লালন না হলে কোনো দোহাই-ই মানুষের নৈতিক মান সংরক্ষণ করতে পারে না।
নৈতিক মূল্যবোধসমূহকে জাগরূক ও কার্যকর রাখতে হলে প্রয়োজন স্বভাবজ নৈতিক বোধসমূহ, বিবেক, শাশ্বত ধর্মীয় চেতনা এবং আর্থসামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চেতনা সমূহের সুস্থ অনুশীলন। নইলে মানুষ আর পশুতে তেমন কোনো পার্থক্যই থাকে না।
লেখক : খতিব, মুহাম্মাদিয়া দারুল উলুম জামে মসজিদ, রামপুরা, ঢাকা।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/islam/2015/02/18/63583#sthash.6sl2cWec.dpuf