(http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/assets/images/news_images/2015/03/04/1425381652.jpg)
‘ইন্টারভিউ’ শব্দটা শুনলে মনে হয় ঝড় বয়ে চলছে। সহজ বুদ্ধিমত্তা আর আর একটু কৌশলী হলেই অবশ্য ইন্টারভিউ টপকে চাকরির গন্তব্যে যাওয়া যায় খুব সহজেই। সহজ মনে করলেও অনেকে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে নানান বিপাকে পড়েন; আর বেশিরভাগ প্রার্থীরই রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। কারণ লিখিত ইন্টারভিউ দিতে গেলে চাই অভ্যন্তরীণ জ্ঞান আর মক ইন্টারভিউ দিতে চাই বুদ্ধিমত্তা। এসব বিষয় নিয়ে লিখেছেন ফরহাদ হোসেন রনি
আজ আমাদের আলচ্য বিষয় কীভাবে মক ইন্টারভিউ টপকাতে পারেন তা নিয়ে। এই মক ইন্টারভিউয়ের গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ড্যাফোডি লইন্টারন্যশাল ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর এবং সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের প্রধান সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু।
বর্তমান যুগের ছেলে-মেয়েরা সববিষয় নিয়েই অস্থির থাকে বা তাদের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করে। তাদের চাহিদার তুলনায় বেশি চায় তারা। যেটুকু তার প্রাপ্য তার চেয়ে বেশি আশা করে। তাই চাকরি ক্ষেত্রে আগে নিজকে জানতে হবে আমার কী চাই আর আমি কতটুকু পারবো। যার যে যোগ্যতা আছে, তার সে অনুযায়ী চাহিদা থাকতে হবে। একটা চাকরি ক্ষেত্রে কখনোই সিভি আর লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার দক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তার বিচার পূর্ণভাবে করা সম্ভব হয় না। এই জন্যই দরকার হয় ভাইভা অথবা মক ইন্টারভিউ। সে জন্য বড় বড় নিয়োগকর্তারা আপনার দক্ষতা সম্পর্কে যাচাই করতে এই ইন্টারভিউয়ের আয়োজন করে। আর বেশিরভাগ প্রার্থীরাই এতে বিপাকে পড়ে যান। ইন্টারভিউয়ের সামনে বসলে হাত পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়।
পোশাক নিয়ে সচেতনতা
ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনার পোশাক। কিছু কিছু ইন্টারভিউয়ের কার্ডে ড্রেস কোড সম্পর্কে ধারণা দেওয়া থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমনটি থাকে না। ড্রেস কোড উল্লেখ না থাকলে ফর্মাল ধরনের পোশাক পড়ে যাওয়াটাই রীতি। গরমের দিনে এক রঙের শার্টের সাথে ফর্মাল প্যান্ট এবং মানানসই টাই পড়তে পারেন। চেক শার্ট থেকে বিরত থাকাই ভালো। আর শীতকালে স্যুট পড়তে পারেন। জুতা হওয়া চাই কালো রঙের।
সময়মতো উপস্থিত হওয়া
ইন্টারভিউ বোর্ডে সময়মতো উপস্থিত না হতে পারলে আপনার ৫০ ভাগ আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগকারীরা ইন্টারভিউ গ্রহণই করেন না। এই ক্ষেত্রে আপনাকে ইন্টারভিউ শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে হাজির হতে হবে। এতে আপনি ওই অফিস সম্পর্কেও একটা ধারণা পেয়ে যাবেন। আর কোনো প্রার্থী বোর্ড থেকে বের হলে তাকে জিজ্ঞাসা করবেন না ‘আপনাকে কী কী প্রশ্ন করছেন?’ এতে বরং আপনার ভীতি বাড়বে। মনে মনে প্রস্তুতি নিন আর আত্মবিশ্বাসে স্থির থাকুন। মনে রাখবেন, আত্মনির্ভরশীলতা আপনাকে ৫০ ভাগ জয় এনে দিবে।
শারীরিক ভাষা ও আই কন্টাক্ট
আপনি যখন ইন্টারভিউ রুমে ঢুকবেন তখন নিয়োগকারীরা আপনার প্রবেশ করার কৌশলটি লক্ষ করবেন। আপনি কতটুকু স্মার্ট, সেটার একটা প্রাথমিক ধারণা দেবে এই অংশটি। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়েই প্রবেশ করুন ভাইভা বোর্ডে। তবে অতি আত্মবিশ্বাসও কিন্তু ক্ষতিকর। তা আপনাকে গুলিয়ে ফেলতে ভূমিকা রাখবে। শব্দ করে না শান্তভাবে ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রবেশ করুন। উত্তেজিত হবেন না। ঢোকার আগে সালাম এবং সময় দেখে সম্ভাষণ জানান। ছোটবেলা আমাদের গুরুজনেরা বলতেন যে কারো চোখের দিকে তাকানো যাবে না। সেই উপদেশ অন্যান্য ক্ষেত্রে কার্যকরী হলেও ইন্টারভিউ বোর্ডে তা খাটাতে যাবেন না। এখানে বরং আপনার প্রশ্নের উত্তরগুলো প্রশ্নকর্তার চোখে চোখ রেখে দিন। বোর্ডে একাধিক প্রশ্নকর্তা থাকলে যার প্রশ্ন তার চোখে তাকিয়ে উত্তর দিন। তাহলে তিনি বুঝতে পারবেন আপনি তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। চেয়ারে বসার আগে অবশ্যই অনুমতি নিয়ে বসবেন। বসার পর পা কিংবা শরীরের কোনো অঙ্গ দোলাবেন না, কাত হয়ে বসবেন না। সোজা হয়ে মেরুদণ্ডের ওপর ভর করে বসুন। এতে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী মনে হবে।
প্রশ্ন বুঝে নিন ঠিকঠাকভাবে
ইন্টারভিউয়ের সময় প্রশ্নকর্তার করা কোনো প্রশ্ন বুঝে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্ন না বুঝলে অনেকেই উল্টোপাল্টা কথা বলতে থাকেন, যা খুবই ক্ষতিকর। ধরুন,আপনাকে কুকুরের ইংরেজি জিজ্ঞাসা করা হলো কিন্তু আপনি এটা জানেন না কুকুরের ইংরেজি কী। তবুও উত্তর দিয়ে বসলেন ‘ক্যাট’। এ থেকে বুঝা যাবে আপনি কুকুর এবং বিড়াল কোনোটারই উত্তর জানেন না। তাই আপনি যদি প্রশ্ন বুঝতে না পারেন, তাহলে আবার জিজ্ঞাসা করে তা ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত। ঠিকভাবে বুঝতে না পারলে প্রশ্নটির যতখানি বুঝেছেন, তেমন একটি প্রশ্ন করে জিজ্ঞাসা করুন—এমনটিই তিনি জানতে চেয়েছেন কি না।
প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকলে
একটি সামান্য ভুলও কোনো সম্ভাবনাময় ইন্টারভিউয়ের করুণ পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারে। এ কারণে ইন্টারভিউয়ারদের কোনো প্রশ্ন বুঝতে না পারলে বা তার উত্তর যদি জানা না থাকে তাহলেও তার উত্তর দেওয়া উচিত ‘আমি জানি না’। না জানা যতটা আপনার জন্য ক্ষতিকর, না জেলে ভুলভাল উত্তর দেওয়া তার চাইতেও বেশি ক্ষতিকর। এতে আপনার সততার পরিচয়ও পাওয়া যাবে।
সিভি ঠিক রাখুন
ইন্টারভিউ বোর্ডের সাথে সিভির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিকে অনেকেই গুরুত্ব দেন না। কিন্তু আপনার সিভিতে যেসব তথ্য রয়েছে সেগুলো তারা নজর বুলিয়েই দেখে নিতে পারেন। সেখান থেকে তাই কোনো প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে তার সদুত্তর দেওয়া জরুরি। তারা যদি প্রশ্ন করেন আট বছর আগে আপনি কী কী করেছেন, তার উত্তরে কোনো আমতাআমতা নিশ্চয়ই শুনতে চাইবেন না প্রশ্নকর্তারা। তাই সিভিতে যেসব তথ্য দেওয়া রয়েছে, সেগুলো সঠিকভাবে মনে রাখুন।
প্রতিষ্ঠান ও নিয়োগকারীদের সম্পর্কে আগে থেকে জানা
প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীর অবশ্যই ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। এরপর প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে সেই জ্ঞান আপনার বুদ্ধির সঙ্গে ইন্টারভিউতে কাজে লাগাতে হবে। কোম্পানির প্রতিষ্ঠা কবে, এর সিইও কে, কী ধরনের কাজ করে থাকে কোম্পানিটি—এসব সম্পর্কে ধারণা রাখুন।
বিদায়বেলা
বিদায় নেওয়ার সময় অবশ্যই হ্যান্ডশেক করে আসবেন এবং হ্যান্ডসেক করার সময় সরাসরি চোখের দিকে তাকাবেন। ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিবেন। মনে রাখবেন অবশ্যই আপনার মুখ সবসময় হাসি মুখ থাকবে।
আশা করছি উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ান, আত্মবিশ্বাসী হোন। ভেঙ্গে পরবেন না। জয় আপনার হবেই।
Source: http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/cariar/2015/03/04/35229.html