Daffodil International University

Entrepreneurship => Successful Entrepreneur => Topic started by: Karim Sarker(Sohel) on March 11, 2015, 02:14:46 PM

Title: কবুতর পালন করে স্বাবলম্বী এক ভিক্ষুক
Post by: Karim Sarker(Sohel) on March 11, 2015, 02:14:46 PM
বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি :সকিনা বেগম (৫৫)। সবাই তাকে বেগম নামে চেনে। বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কুমরুল গ্রামে। স্বামী মারা গেছেন প্রায় ২০ বছর আগে। কোন পুত্রসন্তান নেই। দুটি মেয়েকে বিয়ে

দিয়ে বৃদ্ধ বয়সে বাড়িতে তিনি একা। কিন্তু ফাঁকা বাড়িটা জমজমাট করে রেখেছে একদল কবুতর। পাখা ঝাপটে উড়াউড়ি আর বাকবাকুম শব্দে গোটা বাড়িটা মুখর করে রেখেছে কবুতরগুলো। সংসারের অভাব আর একাকিত্বের দুঃসহ জ্বালা দূর করতে কবুতর পালনকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন তিনি। কবুতর পালনের মাধ্যমে তার নিত্য অভাবের সংসারে আজ লেগেছে সচ্ছলতার ছোঁয়া। এখন আর ভিক্ষা করেন না তিনি।
প্রায় ১৬ বছর আগে মাত্র ৪টি কবুতর নিয়ে শুরু করেছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তার বাড়িতে কবুতরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই শ'তে। এখন কবুতর বিক্রির টাকায়ই চলে তার সংসারের প্রাত্যহিক খরচ। আর তা থেকে টাকা জমিয়ে জমিয়ে তিনি ইতিমধ্যেই ২ বিঘা জমি কিনেছেন বলে জানান। জানা গেছে, বড়াইগ্রাম উপজেলার গলাকাটা কাচুটিয়া গ্রামে ছিল সকিনা বেগমের বাবার বাড়ি। ১২/১৩ বছর বয়সেই তাকে বিয়ে দিয়েছিলেন বাবা-মা। ধীরে ধীরে তাদের সংসারে জন্ম নেয় দুই মেয়ে। কিছুদিন পরেই স্বামী মেছের শেখ মারা যান। দুটি কন্যাসন্তান নিয়ে নিত্য অভাবের সংসারে রীতিমত সাগরে ভাসার উপক্রম হলো তার। প্রায় দেড় যুগ অন্যের বাড়িতে কাজ করে খেয়ে না খেয়ে কেটেছে সকিনার সংসার। বয়স হয়ে যাওয়ায় পরিশ্রম করতে না পারায় জীবিকার প্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তিও করেছেন বেশ কিছুদিন। এক সময় গ্রামের লোকজনের সহযোগিতায় মেয়ে দুটি বিয়ে দিয়েছেন। তারপর থেকে শুরু হলো তার একাকিত্বের জীবন। সংসারের অভাব মেটানোর পাশাপাশি নিজের একাকিত্ব ঘোচাতে অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন কবুতর পালনের। তিলে তিলে জমানো ১৪ হাজার টাকা দিয়ে নাটোর থেকে ৪টি সিরাজী জাতের কবুতর কিনে এনে নতুনভাবে শুরু করেন জীবন গড়ার সংগ্রাম। চারটি কবুতর নিয়ে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ধীরে ধীরে বর্তমানে তা আড়াইশ ছাড়িয়ে গেছে। সিরাজী ও ডাবুক এ দুই জাতের কবুতর আছে তার খামারে। তবে সিরাজী জাতেরই বেশি। বর্তমানে সিরাজী জাতে এক জোড়া কবুতরের বাচ্চা
দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় এবং পূর্ণ বয়স্ক এক জোড়া কবুতর ৭-৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন। প্রতি মাসে গড়ে ৮-১০ জোড়া বাচ্চা বিক্রি হয়। তবে বড় কবুতর কেনার লোক খুব কম। কবুতরের খাবার দেয়া ও তাদের পরিচর্যা করতেই তার দিন কেটে যায়। তিনি এখন আর ভিক্ষা করেন না। তার সংসারে এখন আর না খেয়ে থাকার কষ্ট নেই। নেই একাকী জীবনের দুঃসহ যন্ত্রণা। পাশাপাশি কবুতর পালন করে অর্জিত অর্থ দিয়ে ইতোমধ্যে তিনি ২ বিঘা জমি কিনেছেন। হাসি খুশি আনন্দেই চলছে তার জীবন।
তবে কবুতর পালন করতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখিও হতে হচ্ছে তাকে। কোন প্রশিক্ষণ না থাকা এবং সংসারে পুরুষ মানুষ না থাকায় কবুতরের সঠিক পরিচর্যা করতে পারছেন না। তাই মাঝে মাঝে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে কবুতর মারা যায়। অনেক সময় দুষ্ট লোকেরা কবুতর চুরিও করে। তাছাড়া খাঁচা পদ্ধতি করতে না পারায় ঘরের মেঝেতেই বসবাস করে এরা। এ কারণে রোগবালাইয়ের প্রকোপ একটু বেশি হয়। তাই কবুতরগুলোকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করাতে হয়। তাছাড়া এলাকায় পশু-পাখির ভালো চিকিৎসক না থাকায় এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের সাথে কোন যোগাযোগ না থাকায় সব সময় সঠিক চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না।
সংগ্রামী নারী সকিনা জানান, স্বামীর মৃত্যু এবং মেয়েদের বিয়ে দেয়ার পরে একা হয়ে পড়েছিলাম। সাংসারিক অভাব আর একাকিত্ব ঘুচাতে সিদ্ধান্ত নেই কবুতর পালনের। ছেলে নেই, মেয়েরাও দূরে। কবুতরগুলোই এখন আমার সন্তানের মত। এরাই আমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। এ কবুতরই আমার জীবনকে পাল্টে দিয়েছে।

Collected from Facebook
Title: Re: কবুতর পালন করে স্বাবলম্বী এক ভিক্ষুক
Post by: Karim Sarker(Sohel) on March 11, 2015, 02:18:25 PM
ছবিতে দেখুন