Daffodil International University
Health Tips => Health Tips => Topic started by: Sahadat on March 17, 2015, 05:22:15 PM
-
আমরা প্রতিদিন এমন একটা কাজ করি যা কিন্তু অনেকটাই অদ্ভুত, আর এর পেছনে কারণটি কি তা কেউই সঠিক বলতে পারেন না। হ্যাঁ, এই কাজটি হলো হাই তোলা! ঠিক কী কারণে আমরা হাই তুলি? হাই তোলার ফলে আমাদের শরীরে কী উপকারটাই বা হয়? গবেষকেরা অনেক বড় বড় রোগের পেছনে লেগে আছেন, তাই হাই তোলা নিয়ে বিশদ গবেষণার ফুরসত কারোই হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষের মনে কৌতূহল আছে ঠিকই। আর হাই তোলার কার্যকারণ নিয়েও রয়েছে তত্ব।
হাই তোলা নিয়ে সবচাইতে পুরনো তত্ব সম্ভবত হিপোক্রেটিসের দেওয়া, যেখানে তিনি বলেন- হাই তোলার ফলে “ভালো” বাতাস শরীরে ঢোকে এবং “খারাপ” বাতাস বের হয়ে যায়। বর্তমানেও এমন একটা তত্ব প্রচলিত আছে, যেখানে বলা হয় হাই তোলার ফলে শরীরে অনেকটা অক্সিজেন প্রবেশ করে আমাদের শক্তি দেয় আর বের হয় যায় কার্বন ডাই অক্সাইড।
তবে গবেষণায় এই তত্ব প্রমাণিত হয়নি বরং এর বিপরীত তথ্য জানা গেছে। যেসব মানুষের অক্সিজেনের দরকার বেশি থাকে তারা আসলে অন্যদের চাইতে বেশি হাই তোলেন না। তাই হাই তোলার ব্যাপারটাকে এখনও রহস্যই বলা যায়।
সবচাইতে সাম্প্রতিক তত্ব, যার সাথে বেশিরভাগ গবেষকই সহমত পোষণ করেন, তা হলো হাই তোলার মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা থাকে। মস্তিষ্ক যখন কোনো কারণে গরম হয়ে যায় তখনি আমাদের হাই তুলতে ইচ্ছা হয়। আমাদের মস্তিষ্ক খুব বেশি পরিমাণে শক্তি খরচ করে। এর আকৃতি সারা শরীরের তুলনায় ছোট হলেও, তা খরচ করে বিপাকীয় শক্তির প্রায় ৪০ শতাংশও। আর মস্তিষ্ক প্রায়ই গরম হয়ে যায়, যেভাবে আমাদের কম্পিউটার বেশিক্ষণ চললে গরম হয়ে যায়। আমরা ক্লান্ত হয়ে গেলে, বোর হতে থাকলে বা অসুস্থ থাকলে গরম হয় মস্তিষ্ক। হাই তোলার ফলে মস্তিষ্ক একটু ঠাণ্ডা হয়ে আসে। আর আমাদের মন আগের চাইতে একটু সজাগ হয়ে ওঠে।
মস্তিষ্কের তাপমাত্রা তিনটি বিষয়ের ওপরে নির্ভর করে। ধমনীতে রক্ত প্রবাহের মাত্রা, রক্তের তাপমাত্রা এবং মস্তিষ্কে সৃষ্ট তাপ। হাই তোলার ফলে প্রথম দুইটি ক্ষেত্রে কাজ হয়। ধমনীতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কে অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা রক্ত প্রবেশ করে।
হাই তোলার ফলে বাকি শরীরে কি হয়? আমাদের মুখ হাঁ হয় যায় এবং অনেক গভীর একটা নিঃশ্বাস নেই, আর ছোট্ট করে প্রশ্বাস ছাড়ি। এ সময়ে আমাদের মাথার চারপাশের পেশিগুলো প্রসারিত হয়। ফলে ঠাণ্ডা রক্ত ধমনী দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবাহিত হয় এবং গরম রক্ত শিরা দিয়ে বের করে দেয়। হাই তোলার সময়ে আনুষঙ্গিক আরও কিছু কাজ করি আমরা। অনেকে হাত প্রসারিত করে দেয়, মাথা পেছনের দিকে হেলিয়ে দেয়। এর ফলে আমাদের বগলে ঠাণ্ডা বাতাস লাগে এবং তাতেও শরীর ঠাণ্ডা হয়। সারা শরীর এভাবে স্ট্রেচ করার কারণে আমাদের পেশি কাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়, কেটে যায় ঘুম ঘুম ভাব।
মস্তিষ্কের তাপমাত্রা বাড়লে যে শুধু মানুষেরই ঘুম পায় তা নয়। বরং ইঁদুরের ক্ষেত্রেও তা হতে দেখা গেছে এক গবেষণায়। হাই তোলার ফলে উভয় প্রাণীরই মস্তিষ্কের তাপমাত্রা কমে যায়। পরিবেশের তাপমাত্রা উচ্চ থাকলেও ঘন ঘন হাই তোলার প্রবণতা দেখা যায়। বিবর্তনবাদের গবেষণায় এক তত্বে ধারণা করা হয়, মানুষের মস্তিষ্ক যখন উন্নত হবার পর্যায়ে ছিলো তখনি খুলির আশেপাশে মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা রাখার জন্য ধমনীগুলো তৈরি হতে থাকে এবং এ সময়েই হাই তোলার মত শারীরিক কর্মকাণ্ডের উদ্ভব ঘটে।
কিন্তু হাই তোলার আরও একটি অদ্ভুত ব্যাপার আছে। আমাদের সামনে কেউ হাই তুললে আমাদেরও হাই তুলতে ইচ্ছে করে! এটা কি কারণে হয়? মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা থাকলেও কেন হাই ওঠে? এমনকি অনেক সময়ে হাই তোলার কথা শুনলে/পড়লেও হাই ওঠে (যেমন এ লেখাটি পড়ার সময়ে কারও কারও হাই উঠছে)। ব্যাপারটা অনেকটা সহানুভূতির মত। টেলিভিশনে একজন খেলোয়াড় ব্যাথা পেলে আমরা যেমন আহা-উহু করে সমবেদনা প্রকাশ করি। আর ব্যাপার হলো, একসাথে অনেক মানুষ একসাথে থাকলে যদি একজনের হাই তোলার প্রয়োজন হয়, তবে সম্ভাবনা আছে যে বাকিদেরও হাই তোলার প্রয়োজন হবে এবং এ থেকেই হাই তোলার ব্যাপারটা হয়ে পড়ে অনেকটাই ছোঁয়াচে!