Daffodil International University

Faculties and Departments => Faculty Sections => Topic started by: riazur on April 18, 2015, 01:21:55 PM

Title: যে কারণে তিব্বত কে নিষিদ্ধ দেশ বলা হয়
Post by: riazur on April 18, 2015, 01:21:55 PM
(http://www.bd24live.com/bangla/article_images/2015/03/24/Tibet_somoyerkonthosor.jpg)
নিষিদ্ধ দেশ কোনটি প্রশ্ন করলে এক বাক্যে সবাই বলবে তিব্বত। কিন্তু এই নিষিদ্ধের পেছনের রহস্য অনেকেরই অজানা। শত শত বছর ধরে হিমালয়ের উত্তর অংশে দাঁড়িয়ে আছে তিব্বত নামের এই রহস্যময় রাজ্যটি। তিব্বতে যে কী আছে সে ব্যাপারে সবার মনে রয়েছে জিজ্ঞাসা।
হিমালয়ের উত্তরে অবস্থিত ছোট একটি দেশ তিব্বত। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে ত্রয়োদশ দালাইলামা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গণচীনের একটি সশাসিত অঞ্চল তিব্বত। মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত এই অঞ্চলটি তিব্বতীয় জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। এই অঞ্চলটি চীনের অংশ হলেও এখানকার অনেক তিব্বতি এই অঞ্চলকে চীনের অংশ মানতে নারাজ। ১৯৫৯ সালে গণচীনের বিরুদ্ধে তিব্বতিরা স্বাধিকার আন্দোলন করলে সেটি ব্যর্থ হয়। তখন দালাইলামার নেতৃত্বে অসংখ্য তিব্বতি ভারত সরকারের আশ্রয় গ্রহণপূর্বক হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে স্বাধীন তিব্বতের নির্বাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

তিব্বতিরা অত্যান্ত ধর্মভীরু । তাদের মধ্যে ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাদের প্রধান ধর্মগুরুর নাম দালাইলামা। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা তিব্বতে লামা নামে পরিচিত। লামা শব্দের অর্থ সর্বপ্রধান, আর দালাই শব্দের অর্থ জ্ঞান সমুদ্র। অর্থাৎ দালাইলামা শব্দের অর্থ হচ্ছে জ্ঞান সমুদ্রের সর্বপ্রধান। ধর্মগুরু বা দালাইলামা বাস করে সোনার চূড়া দেওয়া পোতালা প্রাসাদে। ১৩৯১ সালে প্রথম দালাইলামার আবির্ভাব ঘটে। দালাইলামাকে তিব্বতিরা বুদ্ধের অবতার মনে করে থাকে। তিব্বতিদের বিশ্বাস, যখনই কেউ দালাইলামার পদে অভিষিক্ত হয় তখনই ভগবান বুদ্ধের আত্মা তার মধ্যে আবির্ভূত হয়। এক দালাইলামার মৃত্যুর পর নতুন দালাইলামার নির্বাচন হয়। দালাইলামা নির্বাচনের পদ্ধতিটাও বেশ রহস্যময় এবং রোমাঞ্চকর।

তিব্বতিদের দালাইলামা বা নেতা নির্বাচনের পদ্ধতিটি খুবই বিচিত্র। তিব্বতি প্রথা মতে কারও মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই তার মরদেহের সৎকার করা হয় না। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, মৃত্যুর পরও আত্মা জাগতিক পরিমণ্ডলে বিচরণ করে। আর যতক্ষণ পর্যন্ত আত্মা জাগতিক পরিমণ্ডল ত্যাগ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা মরদেহটি তাদের বাড়িতে রেখে দেয়। কোনো লামার মৃত্যু হলে লাসার পূর্বে লহামপূর্ণ সরোবরের তীরে লামারা ধ্যান করতে বসে। ধ্যানযোগে লামারা দেখতে পায় সেই সরোবরে স্বচ্ছ পানির ওপর ভেসে উঠছে একটি গুহার প্রতিবিম্ব। যে গুহার পাশে আছে একটি ছোট্ট বাড়ি। প্রধান লামা তার সেই অলৌকিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে এঁকে দেবে নতুন দালাইলামার ছবি। বড় বড় লামারা সেই ছবির তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করে। তারপর কয়েকজন লামা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তিব্বতের বিভিন্ন স্থানে যায় শিশু অবতারের খোঁজে। তারা তিব্বতের ঘরে ঘরে গিয়ে সেই ছবির হুবহু শিশুটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। আর এভাবেই তারা খুঁজে বের করে তাদের নতুন দালাইলামাকে।

তিব্বতের লামারাসহ সাধারণ মানুষেরাও প্রেতাত্মাকে খুবই ভয় পায়। তারা সর্বদা প্রেতাত্মার ভয়ে আড়ষ্ট থাকে। অধিকাংশ তিব্বতির ধারণা, মানুষের মৃত্যুর পর দেহের ভেতর থেকে প্রেতাত্মারা মুক্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। ওই প্রেতাত্মার লাশ সৎকার হওয়ার আগ পর্যন্ত সে মানুষের ক্ষতি করার জন্য ঘুরে বেড়ায়। তারা কখনও মানুষের ওপর ভর করে, কখনও পশু-পাখি কিংবা কোনো গাছ অথবা পাথরের ওপরও ভর করে। প্রেতাত্মাদের হাত থেকে বাঁচতে ও প্রেতাত্মাদের খুশি রাখতে তিব্বতিরা পূজা করে থাকে।
তিব্বতে সরকারি ভাষা হিসেবে চীনা ভাষার প্রচলন থাকলেও তিব্বতিদের ভাষার রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস। তাই চীনের বেশ কিছু প্রদেশ এবং ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানে তিব্বতি ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে।

তিব্বতিদের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী আচার হলো মৃতদেহের সৎকার। এদের মৃতদেহ সৎকার পদ্ধতি খুবই অদ্ভুত। কোনো তিব্বতি যদি মারা যায়, তবে ওই মৃতদেহ কাউকে ছুঁতে দেওয়া হয় না। ঘরের এক কোণে মৃতদেহটি বসিয়ে চাদর অথবা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। মৃতদেহের ঠিক পাশেই জ্বালিয়ে রাখা হয় পাঁচটি প্রদীপ। তারপর পুরোহিত পোবো লামাকে ডাকা হয়। পোবো লামা একাই ঘরে ঢোকে এবং ঘরের দরজা-জানালা সব বন্ধ করে দেয়। এরপর পোবো মন্ত্র পড়ে শরীর থেকে আত্মাকে বের করার চেষ্টা করে। প্রথমে মৃতদেহের মাথা থেকে তিন-চার গোছা চুল টেনে ওপরে আনে। তারপর পাথরের ছুরি দিয়ে মৃতদেহের কপালের খানিকটা কেটে প্রেতাত্মা বের করার রাস্তা করে দেওয়া হয়। শবদেহকে নিয়ে রাখে একটা বড় পাথরের টুকরোর ওপর। ঘাতক একটি মন্ত্র পড়তে পড়তে মৃতদেহের শরীরে বেশ কয়েকটি দাগ কাটে। দাগ কাটার পর একটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে সেই দাগ ধরে ধরে মৃতদেহকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হয়। তারপর পশুপাখি দিয়ে খাওয়ানো হয়।
তিব্বতের সামাজিক অবস্থার কথা বলতে গেলে বলতে হয় এমন এক সমাজের কথা, যা গড়ে উঠেছিল আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগে। তখন পীত নদীর উপত্যকায় চীনারা জোয়ার ফলাতে শুরু করে। অন্যদিকে আরেকটি দল রয়ে যায় যাযাবর। তাদের মধ্য থেকেই তিব্বতি ও বর্মী সমাজের সূচনা হয়।

খাবার- দাবারের ও রয়েছে যথেষ্ট ভিন্নতা । শুনলে অবাক হবেন উকুন তিব্বতিদের অতি প্রিয় খাবার। ঐতিহ্যগত তিব্বতি সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ যাযাবর বা রাখাল জীবনযাপন। ভেড়া, ছাগল ও ঘোড়া পালন তাদের প্রধান জীবিকা। শুধু চীনের তিব্বত স্বশাসিত অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ২৪ শতাংশ এই যাযাবর রাখাল সম্প্রদায়। এরা কখনও চাষাবাদের কাজ করে না। মোট ভূমির ৬৯ শতাংশ এলাকা চারণ বা তৃণভূমি। চীনা ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে তিব্বতিরাও ভীষণ চা প্রিয়। তাদের বিশেষ চায়ে মেশানো হয় মাখন এবং লবণ। তবে তিব্বতিদের প্রধান খাবার হলো চমবা। গম এবং যবকে ভেজে পিষে চমবা তৈরি করা হয়। তারা খাবার পাত্র হিসেবে ব্যবহার করে কাঠের পেয়ালাকে। আধুনিক বিশ্ব দিন দিন আধুনিক হলেও আজও তিব্বত বিশ্বে রহস্যময় একটি অঞ্চল।