Daffodil International University
Faculties and Departments => Business Administration => Business & Entrepreneurship => BBA Discussion Forum => Topic started by: JEWEL KUMAR ROY on June 12, 2015, 09:15:59 AM
-
অনেক আশা নিয়ে সুপার স্টোরের ব্যবসা শুরু করেছিল বহুমাত্রিক কোম্পানি এসিআই লিমিটেড। নানা কারণে এ আশায় ছাই পড়েছিল। স্বপ্ন নামের চেইন সুপারস্টোরের ভার বইতে গিয়ে গত এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মত লোকসানে পড়তে হয়েছিল ব্লুচিপ কোম্পানিটিকে। সেটি ২০১২ সালের কথা। সেই থেকে বিনিয়োগকারীরা স্বপ্নকে এসিআইয়ের দুঃস্বপ্ন মনে করে আসছেন।
তবে চলতি বছরের মধ্যেই এ দুঃস্বপ্ন কেটে যাবে বলে মনে করছেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আরিফ দৌলা। তিনি বলেছেন, এ বছরের শেষ নাগাদ এসিআই লিজিস্টিকস লিমিটেড, যার ব্র্যান্ড নাম স্বপ্ন, ব্রেকইভেনের (না লাভ, না লোকসান অবস্থা) কাছাকাছি চলে যাবে। আর তার পর থেকেই দেখা যাবে ভিন্ন এক স্বপ্নকে।
আগামি ৫ বছরের মধ্যে স্বপ্ন তার ম্যাজিক দেখাবে। তখন এসিআইয়ের সবচেয়ে লাভজনক সহযোগী প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারে এটি। এমন সুখ স্বপ্নের কথাও শুনিয়েছেন আরিফ দৌলা।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এসিআই লিমিটেডের ৪২তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এই আশাবাদের কথা শুনিয়েছেন আরিফ দৌলা।
বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৪ সালে এসিআই লিমিটেড (মূল কোম্পানি) ৯৫ কোটি ৭ লাখ টাকা নিট মুনাফা করে। কিন্তু কোম্পানিটির সমন্বিত মুনাফা (সাবসিডিয়ারি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসানসহ) দাঁড়ায় ৫৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সমন্বিত মুনাফা কমে যাওয়ার পেছনে প্রধান দায় এসিআই লজিস্টিকসের। কোম্পানিটি আগের বছরের মতো ২০১৪ সালেও বড় লোকসান দেয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৪ সালে স্বপ্নের লোকসান হয়েছে ১০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আগের বছর লোকসানের ৮৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। বছর শেষে স্বপ্নের পুঁঞ্জিভুত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪১১ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
ACI-AGM
২০১৪ সালে স্বপ্নের লোকসান বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন এসিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আরিফ দৌলা। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের বড় প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করতে গিয়ে সাময়িক লোকসান বেড়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের শেষের দিকে সব জায়গায় ভাড়া অনেক কমে যায়। ওই সময় আমরা মনে করলাম এখনই ব্যবসা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এই চিন্তা থেকে স্বপ্নের আউটলেটগুলোর সম্মিলিত আয়তন ১ লাখ ২৪ হাজার স্কয়ার ফিট থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার স্কয়ার ফিট করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু সমান্তরালভাবে আয় না বাড়ায় লোকসানের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
কিন্তু তাতে কোম্পানির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। ভবিষ্যতে ভোক্তা বাজারে শীর্ষস্থান দখলের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি জানান, ২০১৪ সালে স্বপ্নের বিক্রি বেড়েছে ২৫ শতাংশ। আউটলেটগুলোতে ক্রেতাদের পদচারণা বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ। এটি কোম্পানির জোরালো প্রবৃদ্ধির ঈঙ্গিত দিচ্ছে।
আরিফ দৌলা বলেন, এসিআই লিমিটেড বহু খাতে বিনিয়োগ করছে। ফার্মসিটিউক্যালস, ভোগ্য পণ্য নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করছি। শেষ বছর এসিআই সল্টের ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আগে যেখানে ৪ হাজার মেট্রিক টন লবন বিক্রি করতেই কষ্ট হতো, সেখানে গত বছর সাড়ে ৮ হাজার মেট্রিক টন বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে।
এক প্রশ্নরে জবাবে এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনিস-উদ-দৌলা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদে আলোচনা করা হবে। যদি বোর্ড সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে আমরা আপনাদের কথা রাখবো।
এসিআই ফার্মার প্রবৃদ্ধি:
কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৪ সালে এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশ। এটি দেশের ওষুধ শিল্প খাতের গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে ১১.৪ শতাংশ বেশি।
কোম্পানিটি আলোচিত বছরে ক্যামেরুন, ম্যাকাউ, সলোমন আইল্যান্ড, ভানুয়াতু ও সামোয়ায় ওষুধ রপ্তানি শুরু করেছে। এ সময়ে কোম্পানিটি সৌদি আরবের কিং আব্দুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ করার জন্য নির্বাচিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৪৭ টি পণ্য বাজারজাত করার অনুমতি পাওয়া গেছে।
এ বছর এসিআই ফার্মার নিট মুনাফা আগের বছরের চেয়ে ১৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বেড়ে ৯৫ কোটি ৭ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। ২০১৩ সালে এ কোম্পানির নিট মুনাফা ছিল ৭৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে মুনাফা বেড়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ।
সহযোগী প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসানঃ
এসিআই লিমিটেডের ১৩ টি সহযোগী কোম্পানি রয়েছে।
এসিআই লজিস্টিকসঃ ২০১৪ সালে এসিআই লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসান দিয়েছে এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেড (স্বপ্ন)। লোকসানের পরিমাণ ১০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
এসিআই পিউর ফ্লাওয়ার লিমিটেডঃ
পিউর ব্র্যান্ডের আটা-ময়দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসিআই পিউর ফ্লাওয়ার লিমিটেড। ২০১৪ সালে এ কোম্পানি ৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে। তবে আগের বছর মুনাফার পরিমাণ ছিল আরও বেশি। ২০১৩ সালে কোম্পানিটি ৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছিল।
৪ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানির ৯৫ ভাগ শেয়ারের মালিক এসিআই লিমিটেড।
এসিআই ফুডস লিমিটেডঃ
চাল, ডাল, চিনি, চানাচুর, চিপস, মসলা ইত্যাদি পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এসিআই ফুডস। কোম্পানি পিউর ও ফান ব্র্যান্ড নামে পণ্য বিক্রি করে।
২০১৪ সালে কোম্পানিটি ১৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা নিট লোকসান করেছে। আগের বছর এ লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৬ কোটি ১২ লাখ টাকা।
কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৪ কোটি টাকা। এসিআই লিমিটেড এর ৯৫ ভাগ শেয়ারের মালিক।
এসিআই সল্ট লিমিটেডঃ
পিউর ব্র্যান্ডের লবণ উৎপাদন ও বিপননকারী এসিআই সল্ট লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকা। এর ৭৭ দশমিক ৬৭ ভাগ শেয়ারের মালিক এসিআই লিমিটেড। ২০১৪ সালে কোম্পানিটি ৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে, যা আগের বছর ছিল ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
এসিআই মটরস লিমিটেডঃ
এসিআই মোটরস লিমিটেড মূলত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবসা করে থাকে। এ কোম্পানির প্রধান ব্যবসা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ট্রাক্টর, পাওয়ারটিলার ইত্যাদি বিক্রি করা। গত বছর কোম্পানিটি নির্মাণ যন্ত্রপাতি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভারতের কেস কনস্ট্রাকশন ইক্যুইপমেন্ট ইন্ডিয়া-এর সাথে ডিলারশিপ চুক্তি করে। এর আওতায় নির্মাণ যন্ত্রাদি ছাড়াও ডিজেল জেনারেটর, গ্যাস জেনারেটর ইত্যাদি বিক্রি করবে কোম্পানিটি।
আলোচিত বছরে কোম্পানি নিট মুনাফা করে ১১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে কোম্পানিটি ৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছিল।
১০ লাখ টাকা মূলধনের এ কোম্পানির ৬৬.৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিক এসিআই লিমিটেড।
ক্রিয়েটিভ কমিউনিকেশন লিমিটেডঃ
ক্রিয়েটিভ কমিউনিকেশন লিমিটেড মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপন সংস্থা। এর পরিশোধিত মূলধন ১০ লাখ টাকা। এ কোম্পানির ৬০ ভাগ শেয়ারের মালিক এসিআই লিমিটেড।
২০১৪ সালে কোম্পানিটি ১৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে। আগের বছর মুনাফার পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।