Daffodil International University
Faculty of Allied Health Sciences => Pharmacy => Topic started by: ariful892 on June 28, 2015, 04:14:39 PM
-
ওষুধ শিল্প বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত। এর বিকাশ এবং ক্রমবর্ধমান রফতানি শিল্প খাতটির সাফল্যের বড় প্রতিফলন। বর্তমানে প্রায় ৩০০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রস্তৃতকৃত ১৮৭ ধরনের ওষুধ বিদেশে রফতানি হয়।
বিশ্বের অনেক দেশেই বাংলাদেশের ওষুধ সামগ্রী রফতানি হচ্ছে। এর মধ্যে ভিয়েতনামে সবচেয়ে বেশি ওষুধ রফতানি হয়। যে সব দেশে ওষুধ রফতানি হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আফগানিস্তান, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ভুটান, বতসোয়ানা, ব্রাজিল, কম্বোডিয়া, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, চিলি, সেন্ট্রাল আমেরিকা, ডেনমার্ক, মিসর, ফিজি, ড্যাম্বিয়া, জার্মানি, ঘানা, গুয়েতামালা, হুন্ডুরাস, হংকং, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, জর্ডান, কেনিয়া, কোরিয়া, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, মরিশাস, মেক্সিকো, মিয়ানমার, নেপাল, নিকারাগুয়া, নেদারল্যান্ডস।
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ও ইনসেপ্টা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদিরের ভাষ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ওষুধের অভ্যন্তরীণ বাজারটি ছিল প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার, প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১ শতাংশ। তাই, চলতি বছর শেষে ওষুধের অভ্যন্তরীণ বাজারটির আকার সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ ছাড়া ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত সাড়ে ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ বছর শেষে প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশেরও বেশি হতে পারে। তবে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে এ খাতে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা খুব কঠিন হবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ জিএমপি ধরে রাখতে সমর্থ হলে এবং সরকারের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে ২০১৫ সাল নাগাদ ১৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ রফতানি করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশে নিযুক্ত সদ্য বিদায়ী আমেরিকান রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মোজিনা বলেছেন, বাংলাদেশ অচিরেই দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক বাঘে পরিণত হচ্ছে এবং এতে ওষুধ শিল্প একটি বড় ভূমিকা রাখবে। তিনি ৪ নভেম্বর, ২০১৪ গাজীপুরের টঙ্গীতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তিতে বিশ্বমানের ওষুধ প্রস্তুত হচ্ছে। দেশে বিদেশে এই ওষুধ সমাদৃত হচ্ছে, যা উৎসাহব্যঞ্জক। বাংলাদেশি ওষুধ পণ্য আমদানিতে আমেরিকান ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথাও বলেন তিনি।
ওষুধ তৈরির পেছনে রয়েছেন ফার্মাসিস্ট। যারা শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করেন রোগাক্রান্তের হাতে ওষুধ তুলে দিতে। ক্যারিয়ার হিসেবেও এই পেশা অনেক সম্ভাবনাময়। তাই আমাদের দেশের হাজারো মেধাবী তরুণ আজ আত্মনিয়োগ করেছেন এই পেশায়। বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে বিশাল অবদান রয়েছে ফার্মাসিস্টদের। তারা কেবল দেশেই নয় দেশের বাইরেও কাজ করে সুনাম বয়ে আনছে। দেশের ওষুধ শিল্পের ব্যাপক প্রসার হওয়ায় এ শিল্পে সংশ্লিষ্টদের কাজের সুযোগও অনেক বেড়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এই সুযোগ এখন বিশ্বব্যাপী। বিভিন্ন দেশে এখন কাজ করছে বাংলাদেশের ফার্মাসিস্টরা। একজন ফার্মাসিস্ট নতুন ওষুধ আবিষ্কার থেকে শুরু করে নানান প্রকার কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেন।
ফার্মাসিস্টদের কাজ কি, তারা কারা, তারা কি করেন এসব বিষয়ে আমাদের অনেক শিক্ষিত মানুষেরও পরিষ্কার ধারণা নেই। ফার্মাসিস্ট বা ওষুধ বিশেষজ্ঞ হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং বিধিবদ্ধ সংস্থা বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে ফার্মেসি পেশা চর্চার জন্য নিবন্ধন পেয়েছেন। অনেকেই মনে করেন ঔষধের দোকানে যিনি বিক্রেতা তিনিই ফার্মাসিস্ট। অথচ উন্নত দেশে হসপিটাল ও কমিউনিটি ফার্মাসিস্টদের ফার্মাসিস্ট হিসেবে চাকরি রয়েছে। অনেকেরই ধারণা, ফার্মেসি পড়লে শুধু ওষুধ শিল্পে কাজ করতে হয়। এর বাইরেও তাদের জন্য কাজের নানা ক্ষেত্র রয়েছে। ফার্মাসিস্টদের কাজ শুধু ওষুধ কোম্পানিগুলোতে নয়, ওটা তাদের কয়েকটি কাজের জায়গার মাত্র একটি। এর বাইরে তাদের সরকারি নানা দপ্তর, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, কমিউনিটি ফার্মেসি, শিক্ষকতা, গবেষণাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও নিয়োগ লাভের সুযোগ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ ফার্মাসিস্টরা চিকিৎসার জন্য ওষুধ ব্যবহার সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান, ওষুধের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার নজরদারি ও প্রতিরোধকরণে বিশেষ পারদর্শী। সর্বোপরি রোগীর চাহিদা অনুযায়ী ফার্মেসি সেবা প্রদান করতে হলে ফার্মাসিস্টের কোনো বিকল্প নেই।
এটা সর্বজনস্বীকৃত যে ভালো ফার্মাসিস্ট ছাড়া সঠিক গুণগত মানের ওষুধ উৎপাদন অসম্ভব। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ফার্মেসি বিভাগ খোলা হলেও বর্তমানে দেশের অনেকগুলো পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি পড়ানো হচ্ছে। এই বিভাগগুলো দেশের ওষুধ শিল্পকে নিয়মিতভাবে দক্ষ জনশক্তি সরবরাহ করছে। পৃথিবীর অনেক দেশই যেখানে ফার্মাসিস্টদের অভাবে তাদের ওষুধ শিল্পকে বিকশিত করতে পারছে না সেখানে দক্ষ জনশক্তি ও বিদেশ থেকে এদেশে প্রযুক্তি স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ওষুধ শিল্প, ফার্মেসি, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট দরকার ৪ লক্ষাধিক। তাই ওষুধের গুণগতমান ও সঠিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিপুলসংখ্যক দক্ষ জনবল তৈরির মহাপরিকল্পনা এখনই গ্রহণ করতে হবে।
Courtesy: বিভাগীয় প্রধান, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি.
-
Nice to Know