এক নির্ভীক কাপ্তানের গল্প
(http://www.tigercricket.com.bd/images/news/368/5e342c48d09668f51bc2b81fb0d81961edd20866.jpg)
মাশরাফির শুরুটা ২০০১ এর নভেম্বরে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে। এখনকার বাংলাদেশের মত নিয়মিত ম্যাচ জেতার রেশটা তখনকার বাংলাদেশ দলে ছিল না। সেই দলের তরুণ এই পেসার শুরুতেই তার বোলিং নৈপুণ্যে ক্রিকেট বোদ্ধা ও ভক্তদের নজর কাড়েন। তখনকার সময়ে দিনের পর দিন বাংলাদেশ ম্যাচ হেরে গেলেও ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে প্রায়ই মাশরাফি তাঁর গতিময় বোলিং আর ঝড়ো ব্যাটিং নিয়ে আলোচনায় আসতেন। ভালবেসে নাম পেয়ে গেলেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।
২০০৪ সালের ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে এবং দেশের মাটিতে প্রথম জয়ের নায়ক বনে যান এই পেসার। সেই ম্যাচের পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সঞ্চালক রবি শাস্ত্রী তাঁকে ‘মাঠের সুপারম্যান’ আখ্যা দিয়েছিলেন। এরপর ২০০৫ এ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জয় এবং কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়েও তিনি ভূমিকা রাখেন। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম তিনশ পার করা ম্যাচে ছিল তাঁর ১৬ বলে ৪৪ রানের এক ঝড়ো ইনিংস। ঐ বছরই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টি-২০ জয়ের নায়কও মাশরাফি। ২০০৬ সালেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচে মাশরাফির শেষ বলে ছক্কা খেয়ে ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের পর মারাত্মক সমালোচনার মুখে পড়লেও কেনিয়া সফরে পর পর তিন ম্যাচেই ম্যাচসেরার পুরষ্কার জিতে সকল সমালোচনার জবাব দেন।
এরপর ২০০৭ সালে বিশ্বকাপে ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে আবারও নায়কের আসনে বসেন মাশরাফি। ২০০৯ সালে দলের নেতৃত্ব সংকটে তাঁকেই নেতৃত্বের ভার দেওয়া হয়। কিন্তু বরাবরই ইনজুরি প্রবণ মাশরাফি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া প্রথম টেস্টেই ইনজুরিতে পড়েন। যদিও সেই টেস্টটি জিতেছিল বাংলাদেশ এবং তার পর আর টেস্ট খেলা হয়নি মাশরাফির। ২০১১ সালে ইনজুরিতে পড়ে শেষ হয়ে যায় দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন। অনেকেই হয়তো তখন তার ক্যারিয়ারের শেষ ভাবলেও তিনি ফিরে এলেন এবং ২০১২ সালের চমৎকার বোলিং করে ভূমিকা রাখলেন বাংলাদেশের এশিয়া কাপে রানার্সাপ হওয়াতেও। ঐ বছরের শেষের দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়েও তার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডকে বাংলাওয়াশ করার সিরিজেও তিনি নিরব ঘাতকের ভূমিকা পালন করেন।
২০১৪ সালে প্রেক্ষাপট বদলে যায় বাংলাদেশের। অনবরত ম্যাচ হারতে থাকা বাংলাদেশ আবারও নেতৃত্ব সংকটে পড়লে কাণ্ডারি হিসেবে আবির্ভূত হন সেই মাশরাফি। তারপরের ইতিহাসটা একদম গল্পের মতন। ওয়ানডেতে তার নেতৃত্বেই জিম্বাবুয়েকে বাংলাওয়াশ, বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথম বারের মত কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তরণ, ১৬ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জয় ও বাংলাওয়াশ এবং সদ্য সিরিজে ভারতের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ।
কোচ ডেভ হোয়াটমোরের সময়ে দলের ‘পাগলা’ উপাধি পাওয়া সেই দুরন্ত মাশরাফিই আজ আমাদের কাপ্তান। দুই হাটুতে সাতটি অস্ত্রপোচার যাকে রুখতে পারেনি। অসুস্থ সন্তানকে হাসপাতালে রেখে যিনি দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গেছেন। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অফার পেয়েও যিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। হাঁটুতে ‘নী-ক্যাপ’ পড়ে যিনি মাঠ দাপিয়ে বেড়ান যা তাঁর সতীর্থদেরও বরাবর সাহস যোগায়। মাঠে কেউ খারাপ ফিল্ডিং করলে তাকে কড়া চোখের শাসন কিংবা কেউ ভালো করলে তার মাথায় হাত বুলিয়ে অনুপ্রেরণা যোগাতেও যিনি ভোলেন না। ইনজুরির চোখ রাঙ্গানিকে উপেক্ষা করে যিনি এক দুর্দান্ত সাফল্যগাঁথায় গেঁথে রেখেছেন সমগ্র টীম বাংলাদেশকে, অধিনায়ক হিসেবে যার অধীনে এ পর্যন্ত ২২ ওয়ানডের ১৫টিতেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সেই মাশরাফি শুধু এক দুর্বার বাংলাদেশের অগ্রনায়কই নন, নেতা হিসেবে বাংলাদেশের অজস্র ক্রিকেট ভক্তের চোখে তিনি আজ জাতীয় বীর।
মাশরাফির নেতৃত্বে যে জয়রথ ছুটে চলেছে তার শেষ কোথায় জানিনা, তবে এই লেখার শেষটা একটা আলোচিত বিজ্ঞাপনের লাইন দিয়েই করা যাক। আচ্ছা, আমি যা দেখি, আপনারাও কি তা দেখেন? আমি দেখি, মাশরাফির হাতে ২০১৯ এর ক্রিকেট বিশ্বকাপ! সেই সোনালী ভবিষ্যতের অপেক্ষায় রইলাম, এগিয়ে চলুক কাপ্তান মাশরাফির দুরন্ত বাংলাদেশ।
Source: Get him on social: https://www.facebook.com/shayokh.mission