Daffodil International University
Entrepreneurship => Successful Entrepreneur => Topic started by: Karim Sarker(Sohel) on August 30, 2015, 04:45:51 PM
-
শূন্য হাতের নাসির উদ্দিন আজ ১১০ বিঘা জমির মালিক। সেই সাথে আছে সাতটি ট্রাক। নিজে চড়েন ২৭ লাখ টাকার একটি প্রাইভেট কারে। তাই বলে নাসির উদ্দিন কিন্তু আলাদিনের চেরাগ হাতে পাননি। নিজের শ্রম ও মেধা কাজে খাটিয়ে তিনি আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছেন।
নাসির উদ্দিনের বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলার পুটখালী গ্রামে। তিনি গরু মোটাতাজাকরণের কাজ করেন। নাসির উদ্দিন নিতান্তই অতিসাধারণ ঘরের ছেলে। একসময় বাবার সহযোগী হিসেবে সংসারের কাজকর্ম করতেন। তখন সংসার চলত টাইটুই করে। কাজের ফাঁকে বিকল্প আয়ের পথ খুঁজতে তিনি দু-একটি গরু নিয়ে শুরু করেন এই কাজ, যা আজ বিন্দু থেকে বৃত্তে বিস্তৃত। গত এক দশক ধরে সফলতার সাথে চলছে তার ফার্মটি। তিনি জানান, তার যা কিছু সব গরু পালন করেই হয়েছে।
নাসির উদ্দিনের ফার্মে গরু আছে ১৪৭টি। এই গরুগুলো এতটাই বড় যে, প্রতিটি গরু জবাই করলে গোশত পাওয়া যাবে ১৫ মণ থেকে ১৮ মণ করে। গোশতের এই পরিমাণ অনুমাননির্ভর নয়। গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়মিত মেশিনে ওজন নেয়া হয়। তার ফার্মের গরু সারা বছরই বিক্রি হয়। তবে কোরবানির সময় বিক্রি হয় বেশি। ঈদুল ফিতরেও নেহাত কম বিক্রি হয় না। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের শৌখিন ব্যক্তিরা তার ফার্মে এসে গরু কিনে নিয়ে যান।
নাসির উদ্দিনের লাভজনক গরু ফার্ম দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার তিন ভাই তিনটি ফার্ম করেছেন। এর মধ্যে ওলিয়ার রহমানের ফার্মে ৪৫টি, জসিম উদ্দিনের ফার্মে ১৮টি ও আবদুর রশিদের ফার্মে ৩২টি গরু পালন করা হচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের গরু নাসির উদ্দিনের গরুর মতোই বড়।
নাসির উদ্দিন জানান, তার ফার্মে গরু এত বড় হওয়ার ব্যাপারে কোনো অনৈতিক ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সাধারণত দেখা যায়Ñ কোরবানির আগে অসাধু ব্যবসায়ীরা রোগা গরু কিনে নিষিদ্ধ ভারতীয় ওষুধ খাইয়ে অথবা ইঞ্জেকশন দিয়ে মোটাতাজা করে বিক্রি করেন। এ ছাড়া প্রয়োগ করা হয় নিষিদ্ধ কোরোফেনাক ও কিটোফেন ইঞ্জেকশন। এসব গরুর গোশত স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফার্মের গরুর ক্ষেত্রে এসব নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগ করা যায় না। কারণ এসব ওষুধ প্রয়োগকৃত গরু দু-এক সপ্তাহের মধ্যে জবাই করতে হয়। নতুবা গরু মরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফার্মের গরু ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত পালন করতে হয় বলে এসব গরুর দেহে নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগ করার সুযোগ নেই।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের শার্শা উপজেলার মাঠ কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জানান, নিষিদ্ধ ওষুধের বিষক্রিয়া এতই তীব্র যে, কোনো গরুর ওপর এই ওষুধ প্রয়োগের পর জবাই করা হলে ওই গোশত খেয়ে মানুষ বিষক্রিয়ায় মারা যেতে পারে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের গবেষণায় দেখা গেছে, এসব ওষুধ প্রয়োগ করা গরু মারা যাওয়ার পর ওই মরা গরু খেয়ে বিষক্রিয়ায় শকুন মারা গেছে। দেশে শকুন বিলুপ্তির এটি অন্যতম কারণ।
নাসির উদ্দিনের ফার্মের গরুকে সুসম খাদ্য দেয়া হয়। বিচালি ছাড়াও ছোলা, ভুট্টা, মসুর, খেশারি প্রভৃতির ভুসি এবং ধান মাড়াই করা পালিশ, গ্লুকোজ, আটা, খৈল, লবণ, ক্ষুদের ভাত প্রভৃতি খেতে দেয়া হয়। এতে তার ফার্মে প্রতিদন গোখাদ্য বাবদ ব্যয় হয় ২০ হাজার টাকা। এই নিয়মে খাদ্য দিলে এবং গরুর স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখলে মোটাতাজকরণের জন্য ক্ষতিকর কিছুু করার দরকার হয় না।
এ ছাড়া শ্যাম্পু দিয়ে দুই দিন অন্তর প্রতিটি গরুর গা ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া মশা-মাছিতে যাতে কোনো ক্ষতি করতে না পারে সে দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়। আর নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ওষুধ-পথ্য তো আছেই। ফার্মের সার্বিক কাজ দেখাশুনার জন্য ১১ জন শ্রমিক আছে। তাদের প্রত্যেককে মাসে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হয়।
ইছামতি নদীর তীরে নাসির উদ্দিনের গরুর ফার্ম। বাইরে দাঁড়িয়ে অনুমান করা যাবে না সেখানে গরু পালন করা হয়। এক একরের মতো জমি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। সুরম্য একটি গেটও আছে। বাইরে থেকে দেখলে অভিজাত একটি বাড়ি বলে মনে হবে।
ফার্মের শ্রমিক কামাল, রবিউল, মুন্না, রফিক, হাসেম ও তুহিন জানান, জেলাজুড়ে পুটখালীর একটা দুর্নাম আছে, আর তা হলো সীমান্ত লাগোয়া এ গ্রামটির সব মানুষ চোরাচালানি। এই গরুর ফার্মটি তাদের এমন কালিমা থেকে মুক্ত করেছে। সাধারণ কৃষি শ্রমিকেরা প্রতিদিন যা আয় করেন সে তুলনায় তাদের আয় অনেক বেশি। তারা সবাই নাসির উদ্দিনের ফার্মে কাজ পেয়ে খুব খুশি।
শ্রমিকেরা ফার্মের সব চেয়ে বড় গরুটি দেখিয়ে জানান, গরুটির ওজন ২৫ মণ। ভুঁড়ি ও আনুষঙ্গিক কিছু অংশ বাদ দিয়ে গোশতের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৮ মণ। ইতোমধ্যে গরুটির দরদাম শুরু হয়ে গেছে। - See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/50143#sthash.P9AQDR1m.dpuf