Daffodil International University

Health Tips => Health Tips => Topic started by: Lazminur Alam on September 02, 2015, 11:43:25 AM

Title: কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন?
Post by: Lazminur Alam on September 02, 2015, 11:43:25 AM
পেটের পীড়া সবার কাছে সাধারণ রোগ। যে খাবার থেকে আমরা শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি আহরণ করি তার অপ্রয়োজনীয় অংশ মল রূপে দেহ থেকে বের করে দিই। স্বাভাবিক মলত্যাগ দেহের সুস্থতার একটি লক্ষণ। ডায়রিয়া হলে যেমন মল পাতলা হয়ে যায় আবার কখনো তা শক্ত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের আকার ধারণ করে থাকে। বেশি সময় ধরে মলত্যাগ না হওয়া বা পায়ুপথ দ্বারা বায়ু নির্গত না হওয়া বা মলত্যাগ সম্পূর্ণ না হওয়াই কোষ্ঠকাঠিন্য। সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ কোষ্ঠকাঠিন্যের পর্যায়ে পড়ে। কোষ্ঠকাঠিন্য যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের বেশি হয়।
আমাদের পরিপাকতন্ত্র কয়েক ঘণ্টার ভেতর খাদ্য ও পানীয় থেকে পুষ্টি উপাদান বের করে রক্তে পাঠিয়ে দেয়। অজীর্ণ উপাদানগুলো শরীর থেকে বের করার প্রস্তুতি নেয়। অন্ত্রের মাধ্যমে তা মলাশয়ে গিয়ে সাময়িকভাবে জমা হয়। এখান থেকে পানি শোষিত হয়। বাকি অংশ এক বা দুই দিনের মধ্যে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এটি নির্ভর করে খাদ্যতালিকা, বয়স এবং শারীরিক পরিশ্রমের ওপর।

কেন এমন হয়
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যান্ত্রিক জীবনযাত্রা এর জন্য দায়ী। শিশুদের ক্ষেত্রে মায়ের দুধ ছাড়া কৌটার দুধ খেলে এবং শিশুরা যখন প্রথম স্কুলে ভর্তি হয় তখন কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। বয়স্কদের যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, তাঁদেরও কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি হয়।
 খাদ্যে আঁশের স্বল্পতা।
 পানি কম খাওয়া।
 দুগ্ধজাত খাদ্য বেশি পরিমাণে খাওয়া।
 খাদ্যাভ্যাসের বারবার পরিবর্তনশীলতা।
 পরিপাকতন্ত্রের স্নায়ু ও মাংসপেশির সমস্যা (হাইপোমোবিলিটি)।
 মলত্যাগের চাপ চেপে রাখার প্রবণতা।
 দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ।
 গর্ভাবস্থায়।
 শারীরিক পরিশ্রম কম করার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
বিভিন্ন রোগের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে যেমন: হাইপোথাইরয়েডিজম, পারকিনসন ডিজিজ, আইবিএস, মলাশয়ের ক্যানসার ইত্যাদি।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন: নারকোটিকস, মানসিক রোগের ওষুধ বা লৌহ-জাতীয় ওষুধ, অ্যালুমিনিয়াম বা ক্যালসিয়ামযুক্ত অ্যান্টাসিড দ্বারাও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন
 মলত্যাগের সময় প্রচুর চাপ প্রয়োগ।
 শক্ত বা ছোট ছোট মল যা বের করা কষ্টকর ও ব্যথা হয়।
 মলত্যাগের অপূর্ণতা।
 কমপক্ষে তিন দিন মলত্যাগ না করা।
 পেট ফুলে যাওয়া বা পেট ব্যথা, যা মলত্যাগের ফলে কমে যায়।
 বমি হতে পারে।
 মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া (হেমোরয়েড বা ফিশার-এর কারণে)।

রোগ নির্ণয়
দুই সপ্তাহের বেশি যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কী করবেন
 প্রতিদিন স্বাভাবিক পানির পরিমাণের চেয়ে দু-চার গ্লাস পানি বেশি খাওয়া (চিকিৎসকের নিষেধ থাকলে নয়। যেমন: কোনো কিডনি রোগ)।
 ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া। যেমন: ফলমূল, শাকসবজি।
 হালকা গরম দুধ বা পানি পান করা।
 ইসবগুলের ভুসি খাওয়া।
 মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়া খাওয়া। (দুই সপ্তাহের বেশি নয়)।

চিকিৎসকের পরামর্শ
দুই সপ্তাহে অবস্থায় উন্নতি না হলে, মলের সঙ্গে রক্ত গেলে, মলত্যাগের সময় ব্যথা হলে অথবা চিকন মল বের হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা
 অনেক দিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ‘ফিকাল ইমপ্যাক্ট’ হয়ে যেতে পারে। তখন শল্যচিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
 মাঝে মাঝে তরল মল নির্গত হতে পারে (ফিকাল ইনকনটিনেন্স)।
 সব সময় চাপ প্রয়োগের ফলে হেমোরয়েড বা ফিশার হতে পারে।

প্রতিরোধ
 সুষম খাদ্য খেতে হবে, যাতে প্রচুর ফাইবার আছে (যেমন: শাকসবজি, ফল, ডাল, সিরিয়াল ইত্যাদি)।
 পরিমাণমতো পানি এবং অন্যান্য তরল (যেমন: ফলের রস) পান করা।
 অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফেইন না খাওয়া (যেমন: চা, কফি)।
 দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার আগে ‘ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স’ আছে কি না পরীক্ষা করে দেখা।
 নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা।
 মলত্যাগের চাপ চেপে না রাখা।
 কোনো শারীরিক সমস্যা আছে কি না তা পরীক্ষা করা। যেমন: হাইপোথাইরয়েডিজম।
 দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করা।
কোষ্ঠকাঠিন্য নিজে খুব জটিল রোগ না হলেও এর কারণে বহু জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আগে থেকেই সাবধান হওয়া ভালো। এটি কোনো কোনো জটিল রোগের পূর্বাভাসও হতে পারে যেমন: মলাশয়ের ক্যানসার। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যকে অবহেলা নয়।


http://www.prothom-alo.com/life-style/article/619582/কোষ্ঠকাঠিন্যে-ভুগছেন