‘রেকর্ড নিয়ে মাতামাতির লোক আমি নই’
ক্রিকেটের ব্যাকরণ নতুন করে লিখছেন তিনি। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে রেকর্ড গড়ে চলেছেন একের পর এক। সারা বিশ্বের বোলারদের কাছে যিনি মূর্তিমান আতঙ্ক, সেই এবি ডি ভিলিয়ার্স কেমন মানুষ? খেলোয়াড় কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর দর্শনটাই বা কী? আইসিসির ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খুঁজে পাওয়া গেল এক অন্য ‘এবি’কে
(http://s3.india.com/wp-content/uploads/2015/06/sa-wc-ab-de-villiers.jpg)
এবি ডি ভিলিয়ার্স
* এখন তো আপনি এবি ‘ড্যাডি’ ভিলিয়ার্স। বাবা হওয়ার পর কেমন লাগছে?
এবি ডি ভিলিয়ার্স: খুব বেশি দিন হয়নি বাবা হয়েছি। এটা আসলে অসাধারণ অনুভূতি। তবে বাবা হওয়ার সঙ্গেই সঙ্গেই যে অনেক কাজ বেড়ে যায়, এটা নিয়ে আমাকে আগে কেউ সতর্ক করেনি (হাসি)। খুবই শ্রমসাধ্য কাজ। তবে আমি আর ড্যানিয়েলে (এবির স্ত্রী) দুজনই গর্বিত। জুনিয়রকে ঘিরে আমাদের এই নতুন জীবনকে উপভোগ করছি। মাস খানেকের মতো হয়েছে। কিন্তু আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই বাবা-মা হয়ে গর্বিত ও সম্মানিত।
* গ্রায়েম স্মিথের কাছ থেকে নেতৃত্ব পাওয়ার পর কেমন লেগেছিল?
ডি ভিলিয়ার্স: মাঝে আমরা একটা কঠিন সময় পার করেছি। যখন মার্ক (বাউচার), জ্যাক (ক্যালিস), গ্রায়েম (স্মিথ) অবসর নিল। যদি আরেকটু পেছনে যাই তাহলে পোলি (শন পোলক) ও মাখায়ার (এনটিনি) অবসরের সময়টাও ধরা যায়। বিশেষ করে সর্বশেষ গ্রায়েমের অবসরটা আমাদের জন্য বড় ধাক্কা ছিল। কারণ ও দলে এমন একটা সংস্কৃতি তৈরি করেছিল, যেটা আমরা গর্বভরে ধারণ করি। ও যখন অবসর নিল দলে একটা বিশাল পরিবর্তন এল। আমি, ফাফ (ডু প্লেসি), জেপি (ডুমিনি), আমরা যারা একটু সিনিয়র ছিলাম, ভাবতে শুরু করলাম, গ্রায়েমকে ছাড়া কী করে চলবে! একটা পর্যায়ে এসে আমরা বুঝতে পারলাম, যা হয়ে গেছে সেটি নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। এগিয়ে যেতে হবে। দলে অনেক তরুণ খেলোয়াড় এল। এখন আমরা যেভাবে খেলি, যেদিকে এগোচ্ছি, তা নিয়ে আমরা গর্বিত। গ্রায়েমের সময়কার সংস্কৃতিটা এখনো আছে, কিন্তু এই দলটা অন্য রকম।
* অধিনায়ক হিসেবে আপনার দর্শন কী?
ডি ভিলিয়ার্স: পরিশ্রম আর ত্যাগ। দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারাটা দারুণ সম্মানের। কিন্তু সেই সম্মান আর গর্বের সঙ্গেই পরিশ্রম আর ত্যাগের ব্যাপারও চলে আসে। সেটা আপনার খারাপ লাগবে না। কারণ যখন খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কিছু করবেন, তখন সব দায়িত্বই উপভোগ্য মনে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলা, নেতৃত্ব দেওয়া আমি উপভোগ করি। তবে কিছু সময় আসে, যখন মাসের পর মাস পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়। এখন তো অনেক ক্রিকেট খেলা হয়। তারপর আইপিএল, যেটা মনে হয় শেষই হবে না কোনো দিন! এ রকম সূচির মাঝে বিশ্রাম দরকার হয়। সবাই হয়তো একরকম নয়। কিন্তু আমার মনে হয় যারা সিনিয়র খেলোয়াড়, তাদের কখনো কখনো বিশ্রাম দরকার হয়।
* সর্বশেষ বিশ্বকাপের কথা মনে হলে খারাপ লাগে? এত কাছে, তবু এত দূর!
ডি ভিলিয়ার্স: যে খারাপ লাগাটার কথা বলেছিলাম সেটা তাৎক্ষণিক। বিশ্বকাপ থেকে ফিরে যাওয়ার সময় খারাপ লেগেছিল। কিন্তু আমরা যেভাবে খেলেছি সেটা নিয়ে আমি গর্বিত। আমরা চোক করিনি, দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছি। সেমিফাইনালে আমাদের সুযোগ এসেছিল। সেই সুযোগ মর্মান্তিকভাবে হাতছাড়া হয়ে গেছে। আমরা নিতে পারিনি। আমি এখন ম্যাচের প্রতিটি বল ধরে ধরে বলতে পারব কোথায় আমাদের ভুল হয়েছে, কোথায় আমরা সুযোগ হারিয়েছি। কিন্তু এটাই ক্রিকেট। কখনো আপনি ছন্দ পাবেন, কখনো হারাবেন। আমরা ভুল সময়ে ছন্দ হারিয়েছি। নিউজিল্যান্ডের কৃতিত্ব প্রাপ্য, দিন শেষে ওরা জয়ী হিসেবে ফিরেছে।
* ২০১৫ সালে আপনি অনেক রেকর্ড গড়েছেন। ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরি, দ্রুততম ১৫০...
ডি ভিলিয়ার্স: জোহানেসবার্গে সেদিন (ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরির দিন) কী হয়েছিল, আমার আসলে অনেক কিছুই মনে নেই। একটা খ্যাপাটে দিন ছিল, এটুকু মনে আছে। কিন্তু কীভাবে খেলেছি তা মনে নেই। একই কথা সিডনির সেই ম্যাচটা (দ্রুততম ১৫০) নিয়েও। তবে অনেক ইনিংস আছে, যেখানে বড় রান তাড়া করতে গিয়ে হয়তো ৬০ বা ৭০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছি। সেগুলোও এ দুটির মতো সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটি ইনিংস বিশেষ, কারণ এর সঙ্গে রেকর্ড জড়িয়ে আছে। তবে রেকর্ড নিয়ে মাতামাতি করার লোক আমি নই। হয়তো যখন বুড়ো হব, নিজের ক্যারিয়ারের দিকে ফিরে তাকাব, তখন ভালো লাগবে। তবে এ মুহূর্তে যদি বলতে বলা হয়, আমি বলব আমার এগুলোর চেয়েও ভালো ইনিংস আছে।
* এই যে বিনয় এবং মাটিতে পা রেখে চলা, এটা নিয়ে কিছু বলবেন?
ডি ভিলিয়ার্স: মাটিতে পা রেখে চলাটাই আমার পছন্দ। নিজের খেলা নিয়ে সৎ থাকতে পছন্দ করি। আপনার উত্থান যেমন হতে পারে, আবার যেকোনো সময় পতনও হতে পারে। আমি কখনোই সামনে তাকিয়ে ভাবি না যে, আমি গ্রেট খেলোয়াড় হব। আমি শুধু আত্মবিশ্বাসী থাকি। আমি পরিশ্রম করি। আমার প্রতিটি ইনিংসে শ্রম জড়িয়ে আছে। অনেক সময় মনে হতে পারে যে খুব সহজেই অনেক কিছু করে ফেলেছি। আসলে তা নয়। আরও একটা কথা বলতে চাই। আমার মনে হয় না যে আমি ম্যাথু হেইডেন কিংবা অতীতের অন্য খেলোয়াড়দের মতো। ওরা আমার মতো এত সুযোগ পায়নি। আমরা এখন আইপিএল খেলতে পারছি, একে অন্যের সঙ্গে মিশে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারছি। ওরা যা করেছে, এ সুযোগটা না পেয়েই করেছে। সুতরাং আমার মনে হয় না, কোনো খেলোয়াড় আমাকে নিয়ে বলবে যে, আমি ক্রিকেটের সুপারম্যান কিংবা আমাকে দেখে কেউ ভয় পাবে। আর আমি এমনিতেও যথেষ্ট ভদ্রলোক (হাসি)।