Daffodil International University
Health Tips => Health Tips => Diabetics => Topic started by: mahmudul_ns on September 22, 2015, 12:39:56 PM
-
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব অনেক আগে থেকে। প্রায় প্রতি বর্ষাতেই কমবেশি ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। কিন্তু গত শতাব্দীর শেষ ভাগে হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেলে তা সবার নজরে আসে। মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা, আর দ্রুত কিছু মৃত্যু সাধারণ জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ডেঙ্গু জ্বর বলতে অনেকেই নিশ্চিত মৃত্যু মনে করতে থাকেন। শুরু হয় রক্ত ও প্লাটিলেট দেওয়া নিয়ে দৌড়াদৌড়ি আর অ্যান্টিবডি পরীক্ষার হিড়িক। অবশ্য গত দশ-বারো বছরে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। একদিকে চিকিৎসকদের যেমন অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার দক্ষতা বেড়েছে, তেমনি রোগী ও জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভীতিকর অবস্থারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় রক্তসঞ্চালন ও প্লাটিলেটের ব্যবহার কমেছে অনেক, সেই সঙ্গে মৃত্যুর হার প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। তবে জনমনে কিছুটা আতঙ্ক ও ভুল ধারণা এখনো রয়ে গেছে, যা দূর করা দরকার।
অনেকে এখনো মনে করেন যে ডেঙ্গু জ্বর খুব মারাত্মক রোগ এবং এতে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। এই ধারণা ভুল। সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হলে সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত প্রায় শতভাগ রোগীই ভালো হয়ে যায়। যদিও বলা হয় যে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে মৃত্যুর হার ৫ থেকে ১০ শতাংশ, কিন্তু বাস্তবে নিজ অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে এই হার ১ শতাংশেরও কম। তাই ডেঙ্গু নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কারণ নেই।
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় দিন থাকে এবং তারপর জ্বর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। তবে কখনো কখনো দুই বা তিন দিন পর আবার জ্বর আসতে পারে। জ্বর কমে গেলে বা ভালো হয়ে গেলে অনেক রোগী এমনকি অনেক চিকিৎসকও মনে করেন যে রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু জ্বরে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সময় এটাই। এ সময় প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাওয়ার পরবর্তী কিছুদিনকে তাই বলা হয় ঝুকিপূর্ণ সময়। এ সময়টাতে সবারই সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।
জ্বরের শুরুতে বা দু-এক দিনের জ্বরে রক্ত পরীক্ষায় কোনো কিছু শনাক্ত না-ও হতে পারে এবং তা রোগ নির্ণয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে। রোগী এমনকি চিকিৎসকও মনে করতে পারেন যে রিপোর্ট ভালো আছে, তাই আর কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। মনে রাখতে হবে যে প্লাটিলেট কাউন্ট চার বা পাঁচ দিন পর থেকে কমতে শুরু করে, তাই জ্বর শুরুর পাঁচ বা ছয় দিন পর রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। এর আগে পরীক্ষা করলে তা স্বাভাবিক থাকে বিধায় রোগ নির্ণয়ে যেমন বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, তেমনি অর্থের অপচয় হয়।
অনেকেই দিনে দু-তিনবার করে প্লাটিলেট কাউন্ট করে থাকেন। প্লাটিলেট কাউন্ট ঘন ঘন করার প্রয়োজন নেই, দিনে একবার করাই যথেষ্ট, এমনকি মারাত্মক ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারেও। তা ছাড়া, একই সঙ্গে একাধিক ল্যাবরেটরি থেকে প্লাটিলেট কাউন্ট না করানোই ভালো, এতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। দেখা যায়, বিভিন্ন ল্যাবরেটরি থেকে বিভিন্ন রকমের রিপোর্ট আসছে; এতে কোন রিপোর্ট সঠিক, তা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসক বা রোগী বিভ্রান্তিতে পড়েন।
আরও একটি পরীক্ষা অনেকেই করে থাকেন, যেমন অ্যান্টি ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি। এই অ্যান্টিবডি সাধারণত চার থেকে ছয় দিন পর তৈরি হয়। তাই এই সময়ের আগে এই পরীক্ষা করলে রক্তে অ্যান্টিবডি পাওয়া যায় না, যা রোগ নির্ণয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে। ডেঙ্গু অ্যান্টিবডির পরীক্ষা পাঁচ বা ছয় দিনের আগে করা উচিত নয়। মনে রাখা দরকার যে এই পরীক্ষা রোগ শনাক্তকরণে সাহায্য করলেও রোগের চিকিৎসায় এর ভূমিকা নেই। এই পরীক্ষা না করলেও কোনো সমস্যা নেই।
ডেঙ্গু যেহেতু ভাইরাসের কারণে হয়, সেহেতু উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেমন জ্বর হলে প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ এবং এর সঙ্গে প্রচুর পানি ও শরবতজাতীয় তরল খাওয়ানোই যথেষ্ট। খেতে না পারলে বা অন্য কোনো প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন বা গ্লুকোজ ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় রোগী ও চিকিৎসক উভয়েই রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। অথচ যদি রক্তক্ষরণ না হয় এবং রোগীর রক্তের হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক থাকে, তাহলে রক্ত পরিসঞ্চালন করার প্রয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রে রক্ত দিলে লাভ তো হবেই না, বরং অন্য কমপ্লিকেশন এমনকি হার্ট ফেইলরও হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, রক্তের প্লাটিলেট কম হলেই অনেকে রক্ত দিয়ে বসে। এতে লাভ হবে না। মনে রাখতে হবে যে শুধু কম প্লাটিলেট কাউন্টের জন্য রক্ত দেওয়া উচিত নয়।
ডেঙ্গু আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই ডেঙ্গু জ্বরকে ভয় না পেয়ে এর সঙ্গে যুদ্ধ করেই এবং একই সঙ্গে প্রতিরোধ করেই চলতে হবে
ডেঙ্গু জ্বরের পাঁচ বা ছয় দিনে রোগের স্বাভাবিকতাতেই প্লাটিলেট কাউন্ট কমতে থাকে, দুই বা তিন দিন পর তা আপনা-আপনি বাড়তে শুরু করে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই। অনেক সময় প্লাটিলেট কাউন্ট অল্প কমে গেলেই রোগী ও চিকিৎসক খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং প্লাটিলেট পরিসঞ্চালনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্লাটিলেট পরিসঞ্চালনের কোনো প্রয়োজন হয় না। এক ইউনিট প্লাটিলেটের জন্য চার ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয় এবং সেপারেটর দিয়ে আলাদা করতে হয়, যা ব্যয়বহুল। অথচ রক্তে প্লাটিলেটের হাফ লাইফ মাত্র ছয় ঘণ্টা। তাই প্লাটিলেট পরিসঞ্চালনের সুফল হয় অতি স্বল্পমেয়াদি। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় তাড়াহুড়া করে প্লাটিলেট দেওয়ায় হেপাটাইটিস বি অথবা সি, এমনকি এইচআইভি দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বারবার প্লাটিলেট দিলে রক্তে এর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পারে। তাই অপ্রয়োজনে প্লাটিলেট দিলে লাভ না হয়ে বরং ক্ষতি হতে পারে। কাজেই প্লাটিলেট দেওয়ার জন্য রোগী ও চিকিৎসকের অযথা ব্যতিব্যস্ত হওয়ার বা চিন্তার কোনো কারণ নেই।
এ ছাড়া প্লাটিলেট রিচড প্লাজমা (পিআরপি), প্লাজমা, ডেক্সট্রান ইত্যাদি কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই দেওয়া যাবে, যেমন ডেঙ্গু শক সিনড্রোম, ডিআইসি। অযথা এগুলো না দেওয়াই ভালো। শিরাপথে এলবুমিন দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
যেহেতু ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ, এতে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। তবে মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্য ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগও থাকতে পারে, যেমন টাইফয়েড ফিভার বা অন্য কোনো ইনফেকশন, যার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। অনেকে মনে করেন, ডেঙ্গুতে অ্যান্টিবায়োটিক ক্ষতি করবে না। তবে মাংসে ইনজেকশন দেওয়া যাবে না।
ডেঙ্গু চিকিৎসায় যা মনে রাখা উচিত:
১. ডেঙ্গু কোনো মারাত্মক রোগ নয় এবং এতে চিন্তার কিছু নেই। রোগী ও রোগীর লোকদের অভয় দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২. ডেঙ্গু জ্বর নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়, এমনকি কোনো চিকিৎসা না করলেও। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে, যাতে কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়।
৩. ডেঙ্গু রোগে কী কী করা দরকার, তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ; কী কী করা যাবে না, তা জানাও গুরুত্বপূর্ণ। যা যা করা যায়, তা প্রয়োজন অনুযায়ী করতে হবে, অতিরিক্ত করা যাবে না।
৪. রক্ত বা প্লাটিলেট পরিসঞ্চালন অপরিহার্য—এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।
ডেঙ্গু মশা ও তার বংশবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ দুটোই আমাদের চারপাশে বিদ্যমান। তাই ডেঙ্গু জ্বরকে ঠেকিয়ে রাখা কঠিন। ডেঙ্গু আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই ডেঙ্গু জ্বরকে ভয় না পেয়ে এর সঙ্গে যুদ্ধ করেই এবং একই সঙ্গে প্রতিরোধ করেই চলতে হবে।
ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ: ডিন, মেডিসিন অনুষদ, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
-
we must careful about dengue.