Daffodil International University

Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Allah: My belief => Topic started by: cmtanvir on October 08, 2015, 12:41:38 PM

Title: মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার প্রকৃত মর্ম ও তাৎপর্য।
Post by: cmtanvir on October 08, 2015, 12:41:38 PM
ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো : আশ্বাস প্রদান করা। বিশ্বাস করা। আশ্রয় গ্রহণ করা ও আশ্রয় প্রদান করা। নিরাপত্তা গ্রহণ করা ও নিরাপত্তা প্রদান করা। ‘ঈমান’ একটি আরবি শব্দ এবং আম্ন (اَمْنٌ) শব্দমূল থেকে উদ্গত। এই আম্ন اَمْنٌ থেকেই গঠিত হয়েছে ঈমান (اِيْمَانٌ), আমানত (اَمَانَةٌ) এবং মুমিন (مُؤْمِنٌ)।

ইসলামের মৌলিক পরিভাষা হিসেবে ঈমান পরিভাষাটির মর্ম হলো- মহাবিশ্বের স্রষ্টা মহান আল্লাহর অস্তিত্ব, এককত্ব, অধিকার, ক্ষমতা ও গুণাবলী সম্পর্কে স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট বুঝ, জ্ঞান ও ধারণা অর্জন করে তাঁর কাছে নিজেকে নিরংকুশভাবে সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ততা, স্বস্তি ও প্রশান্তি অর্জন করা এবং অন্যসব কিছু থেকে নির্ভয় ও নির্ভীক হয়ে যাওয়া। ইসলামের পরিভাষায় এমন ব্যক্তিকেই বলা হয় মুমিন। মুমিন শব্দটি ক্রিয়া বিশেষ্য। অর্থাৎ স্থাপনকারী, গ্রহণকারী ও অর্জনকারী।
অপরদিকে আল্লাহ পাক নিজেও নিজেকে মুমিন বলে পরিচয় দিয়েছেন (সূরা ৫৯ আল হাশর : আয়াত ২৩)। আল্লাহর মুমিন হবার অর্থ হলো, তিনি আশ্রয়, নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা, নিশ্চিন্ততা, নির্ভয়, স্বস্তি ও প্রশান্তি প্রদানকারী। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করে তাঁর কাছে আশ্রয় ও নিরাপত্তা গ্রহণকারীকে তিনি আশ্রয়, নিরাপত্তা, নির্ভয়, স্বস্তি ও প্রশান্তি প্রদান করেন।

এই হলো মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার প্রকৃত মর্ম ও তাৎপর্য। এভাবে যিনি ঈমান আনেন মহান আল্লাহ প্রকৃত ক্ষতি থেকে তার নিরাপত্তা, তার মানসিক স্বস্তি ও প্রশান্তি, তার প্রকৃত কল্যাণ ও সাফল্যের জিম্মাদার হয়ে যান। ঈমানের অস্বীকৃতিকে বলা হয় কুফর। কুফর হলো অজ্ঞতা, হঠকারিতা ও প্রবৃত্তির দাসত্বের পথ। কুফর হলো এক মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহর পরিবর্তে অসংখ্য অক্ষম সৃষ্টির প্রভুত্ব স্বীকার করা এবং তাদের আনুগত্য ও দাসত্ব করা।
সুতরাং আল্লাহর বাণী আল কুরআনের দৃষ্টিতে :
১. মহান স্রষ্টা আল্লাহ ও মানুষের মাঝে সম্পর্কের ভিত্তি হলো ঈমান।
২. আল্লাহর জিম্মায় জীবনের প্রকৃত কল্যাণ ও সাফল্য লাভের পূর্বশর্ত হলো ঈমান।
৩. ঈমান ছাড়া হিদায়াত তথা সরল সঠিক পথ লাভ করা সম্ভব নয়।
৪. যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেনা, সে তাগুতের প্রতি ঈমান রাখে।
৫. যে ব্যক্তি ঈমান আনেনা, সে জীবনের চরম ক্ষতি ও ধ্বংস থেকে তথা জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার সব পথই বন্ধ করে দেয়।
৬. ঈমান হলো মুক্তির পথ। আর আল্লাহর প্রতি অস্বীকৃতি হলো ধ্বংসের পথ।
৭. ঈমান বিহীন সৎকর্ম তলা বিহীন ঝুড়িতে রাখা মনিমানিক্যের মতোই নিষ্ফল।

**- আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাবি:
যে কেউ জেনে বুঝে সঠিক স্বচ্ছ জ্ঞানের মাধ্যমে মহাবিশ্বের মালিক মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, তার প্রতি অনিবার্যভাবে বর্তায় আল্লাহর প্রতি ঈমানের কয়েকটি অপরিহার্য দাবি। সেই দাবিগুলো হলো-
১. তাকে তার এই ঈমানের সুস্পষ্ট মৌখিক ঘোষণা প্রদান করতে হবে।
২. আল্লাহ তায়ালা আরো যেসব বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে বলেছেন, সেসব বিষয়ের প্রতি তাকে ঈমান আনতে হবে, বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
৩. তাকে তার সামগ্রিক দৃষ্টিভংগি, জীবন পদ্ধতি ও কার্যক্রমে এই ঈমান বা বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
৪. যে মহান আল্লাহ তার ঈমান ও বিশ্বাসের মূল ভিত্তি কেবল তাঁরই হুকুম মতো তাকে জীবন যাপন করতে হবে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর হুকুম পালন করতে হবে। জীবনের কোনো অংশকে তাঁর আনুগত্যের বাইরে রাখা যাবেনা।
৫ তিনি যা যা নিষেধ করেছেন, নিষ্ঠা ও বিনয়ের সাথে তাঁর নিষেধ করা সকল বিষয় পরিহার ও বর্জন করতে হবে।
৬. আল্লাহর সর্বশেষ বার্তাবাহক মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা.-কে জীবনের সকল ক্ষেত্রে আদর্শ ও অনুকরণীয় মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
৭. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জকেই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
৮. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাঁর আনুগত্য ও দাসত্বের নীতিমালার সাথে যা কিছুই সাংঘর্ষিক হবে, সবই বর্জন করতে হবে।
৯. পার্থিব জীবনকে পরকালীন অনন্ত জীবনের জয়-পরাজয়ের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং পার্থিব জীবনকে পরকালীন জীবনের মুক্তি ও সাফল্যের রাজপথে পরিচালিত করতে হবে।

**. অনন্ত পরকালীন জীবনে মুক্তি ও সাফল্যের রাজপথ:
এই রাজপথের নাম ‘ঈমান ও আমলে সালেহ্।’ এই রাজপথের অপর নাম ‘সিরাত আল মুস্তাকিম (সরল সোজা পথ)।’ সিরাত বা পথ হলো ‘ঈমান’। আল মুস্তাকিম (সরল সোজা) মানে- ‘আমলে সালেহ্’। কুরআন মজিদে ‘ঈমান’ ও ‘আমলে সালেহ্’কে মুক্তি ও সাফল্যের উপায় ঘোষণা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন :

وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِن ثَمَرَةٍ رِّزْقًا ۙ قَالُوا هَـٰذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِن قَبْلُ ۖ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا ۖ وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ
অর্থ: যারা ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে, তাদের সুসংবাদ দাও যে : তাদের জন্যে রয়েছে উদ্যান আর বাগবাগিচা, সেগুলোর নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ-নদী ঝর্ণাধারা। আর তাদের জন্যে সেখানে থাকবে অনাবিল পবিত্র জুড়ি। (সূরা ২ আল বাকারা : আয়াত ২৫)

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُم بِإِيمَانِهِمْ ۖ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ

অর্থ: যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, তাদের প্রভু তাদের ঈমানের ভিত্তিতে তাদের পরিচালিত করেন জান্নাতুন নায়ীম-এর দিকে, যেগুলোর নিচে দিয়ে থাকবে বহমান নদ-নদী ঝর্ণাধারা। (সূরা ১০ ইউনুস : আয়াত ৯)

وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ۙ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ

অর্থ: যারা ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে, আল্লাহ তাদের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন ক্ষমার এবং মহা পুরস্কারের। (সূরা ৫ আল মায়িদা : আয়াত ৯)
অর্থ: যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, তাদের আপ্যায়ন করার জন্যে রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে থাকবে তারা চিরদিন। সেখান থেকে তারা স্থানান্তর হতে চাইবেনা কখনো। (সূরা ১৮কাহ্ফ : আয়াত ১০৭-১০৮)
অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, আল্লাহ তাদের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন, তিনি অবশ্যি তাদের পৃথিবীতে খিলাফত (রাষ্ট্র ক্ষমতা) দান করবেন, যেমনিভাবে খিলাফত দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তী লোকদের; তিনি প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন তাদের মনোনীত পছন্দের দীনকে, তাদের ভয়ভীতি ও আতংকের পরিবেশকে বদল করে তাদের প্রদান করবেন নিরাপত্তার পরিবেশ। (সূরা ২৪ আন নূর : আয়াত ৫৫)
অর্থ: যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, আমি অবশ্যি মিটিয়ে (মুছে) দেবো তাদের সমস্ত মন্দকর্ম এবং তাদের প্রতিফল দেবো তাদের উত্তম কর্মের ভিত্তিতে। (সূরা ২৯ আনকাবুত : আয়াত ৭)

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَـٰئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ

অর্থ: যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, তারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। (৯৮:৭)
অর্থ: আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে (We created man in the best stature)। তারপর তাকে নামিয়ে দিই নিচুদের চেয়েও নিচে; তবে তাদেরকে নয়, যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে। তাদের জন্যে তো রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। (সূরা ৯৫ আত তীন: আয়াত ৪-৬)
Title: Re: মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার প্রকৃত মর্ম ও তাৎপর্য।
Post by: hassan on January 19, 2016, 08:39:40 AM
Thanks for your valuable post.