Daffodil International University
IT Help Desk => ICT => Topic started by: mahmudul_ns on October 08, 2015, 06:06:48 PM
-
ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি বলে একটি চুক্তি সই হয়েছে গত সোমবার। এই চুক্তি সইয়ের যেসব খবর বের হয়েছে, তাতে অনেক গণমাধ্যমে এই চুক্তিকে ‘বিতর্কিত’ বা ‘বহুল বিতর্কিত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চুক্তিটি সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য হচ্ছে, এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশ এই চুক্তিতে সই করেছে। এই দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ব্রুনাই দারুস সালাম, কানাডা, চিলি, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম। চুক্তিটির ফলে এই দেশগুলো বিনা শুল্কে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-সুবিধা পাবে। এই ১২টি দেশ বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এসব তথ্য থেকে আমরা চুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে অনেকটাই আঁচ-অনুমান করতে পারি।
আরও তথ্য হচ্ছে এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, এই শিল্পে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে তার তৈরি পোশাক পাঠানোর ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা, অর্থাৎ শুল্ক ছাড়া প্রবেশের সুযোগ পাবে। শুধু তা-ই নয়, টিপিপিতে ‘বাণিজ্য-সংক্রান্ত মেধা’ যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশ বিপদে পড়বে। কারণ, এর ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে উন্নত প্রযুক্তি কিনতে হবে। বাংলাদেশের কৃষি খাত ও ওষুধশিল্প এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাণিজ্য ও অর্থনীতির এই দিকগুলো নিয়ে নিশ্চয়ই সামনে আরও বিশ্লেষণ হবে, আমাদের বিশেষজ্ঞদের মতামতও পাব। আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকেরা এসব বিবেচনায় নিয়েই হয়তো কৌশল নির্ধারণ করবেন।
সাধারণভাবে টিপিপি একটি বাণিজ্য বা ‘মুক্ত বাণিজ্য’ চুক্তি হিসেবে বিবেচিত। সে কারণেই এই চুক্তি সইয়ের খবরটি আমরা পড়েছি প্রথম আলোর বাণিজ্য পাতায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা এই চুক্তির ব্যাপারে মূল সমালোচনা হচ্ছে এটা আসলে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নয়। এর খসড়া নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। টিপিপির বিরোধিতা করে ‘এক্সপোজ দ্য টিপিপি’ নামে একটি বৈশ্বিক আন্দোলনও দাঁড়িয়ে গেছে। তারা বলে আসছে, টিপিপির খসড়ায় যে ২৯টি অধ্যায় রয়েছে, তার মধ্যে মাত্র পাঁচটি প্রথাগত বাণিজ্য-বিষয়ক। তারা বলছে, টিপিপি নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে, কারণ চুক্তি সই করা দেশগুলোর দেশীয় আইনকে টিপিপির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। তারা বলে আসছে, টিপিপি কার্যকর হলে একটি পরিবারের গার্হস্থ্য বিষয়াদিকেও টিপিপির নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে—খাদ্যনিরাপত্তা, ইন্টারনেটের স্বাধীনতা, ওষুধের দাম, আর্থিক বিধিবিধানসহ আরও অনেক কিছু।
বড় আরও এক বিপদের তথ্য হচ্ছে টিপিপি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, ইন্টারনেটের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এক বড় হুমকি হিসেবে হাজির হতে যাচ্ছে। এই চুক্তি ইন্টারনেটের ওপর ‘সবচেয়ে বড় নজরদারির’ পরিস্থিতি তৈরি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এর সমালোচকেরা। আগেই বলেছি, এই আইনের খসড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক চলেছে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের সান্ড্রা ফুলটন বেশ আগেই এই আইনকে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মেধাস্বত্বের ওপর নজিরবিহীন হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
টিপিপি অনুযায়ী, ইন্টারনেটে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহকদের ওপর সব ধরনের নজরদারির কাজে লাগানো যাবে। তারা গ্রাহকদের গতিবিধি খেয়াল রাখবে এবং তাদের ইন্টারনেটের সব ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবে। এমনকি কোনো গ্রাহককে তাঁর তৈরি কোনো কনটেন্ট (তথ্য উপাদান, যেকোনো ডকুমেন্ট, অডিও বা ভিডিও) ব্যবহার করা থেকেও তারা বিরত রাখতে পারবে। দরকার পড়লে গ্রাহককে ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বঞ্চিতও রাখা যাবে। সহজভাবে বললে, এই চুক্তির ফলে মানুষ ইন্টারনেট বা নিজের কম্পিউটারে বসে কী করছে, তার ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ করা আইনগতভাবে আরও সহজ হয়ে যাবে।
এই চুক্তির সূত্র ধরে সামনে নানা বিপদের কথা আলোচিত হচ্ছে। অনেকে বলছেন, ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো মাধ্যমে দেওয়া কোনো কনটেন্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি করলে তা তাদের তুলে নিতে হবে। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানের অফিস যুক্তরাষ্ট্রে। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে কার্যত ইন্টারনেটের মতো একটি বৈশ্বিক মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি জোরদারের বিষয়টিই প্রতিষ্ঠিত হবে।
এই চুক্তির সূত্র ধরে সামনে নানা বিপদের কথা আলোচিত হচ্ছে। অনেকে বলছেন, ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো মাধ্যমে দেওয়া কোনো কনটেন্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি করলে তা তাদের তুলে নিতে হবে। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানের অফিস যুক্তরাষ্ট্রে
কপিরাইটের বিষয়টি জোরালো হওয়ায় ব্যক্তিগত বা শিক্ষামূলক কোনো কাজে অন্য ভিডিও থেকে ক্লিপ নিয়ে তৈরি করা ভিডিও আইন লঙ্ঘনের আওতায় পড়বে। এবং তা অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলা যাবে। অথবা কপিরাইট করা উপাদান অবাণিজ্যিক কারণে ডাউনলোড করা হলেও তার জন্য বাধ্যতামূলক জরিমানা গুনতে হবে। ‘এক্সপোজ দ্য টিপিপি’-এর মতে এসব কারণে নতুন কিছু সৃষ্টি ও সৃষ্টিশীলতার বিনিময় কঠিন হয়ে পড়বে, সৃজনশীলতার পথে বড় বাধা তৈরি হবে। তারা বলছে, বৈধ কারণে ডিজিটাল লক ভাঙা হলেও (যেমন লিনাক্স ব্যবহার) ব্যবহারকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে জরিমানা দিতে হবে। ডিজিটাল লকের কারণে অডিওযুক্ত বিষয়বস্তু ও ক্লোজড ক্যাপশনে প্রবেশ বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং সে কারণে অন্ধ ও বধির মানুষেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। টিপিপি অনুযায়ী কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা যেকোনো বিষয়বস্তু ১২০ বছরের জন্য কপিরাইটের সুরক্ষা পাবে।
বলা হচ্ছে, বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা ও নানা বিপদ থেকে তাদের বাঁচানোই এই চুক্তির লক্ষ্য। টিপিপি অনুযায়ী, ‘কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে’ কোনো নাগরিক কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের অপকর্ম প্রকাশ করলে তা এই আইনে দেওয়া ‘ট্রেড সিক্রেট’-এর সুরক্ষা ভঙ্গ করার দায়ে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। গত মে মাসে কয়েক শ টেক কোম্পানি ও ডিজিটাল অধিকার গ্রুপ এই আইনের বিরুদ্ধে কংগ্রেসে যে চিঠি লিখেছে, তাতে বলা হয়েছে, এ ধরনের বিধানের ফলে জনগণকে ক্ষতি করছে এমন কোনো জরুরি ইস্যুতেও গণমাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
টিপিপির ফলে সদস্য ১২টি দেশের জনগণ কিসের মধ্যে পড়তে পারে তার একটি ভাষ্য দিয়েছেন উইকিলিকসের জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। বলেছেন, ‘চুক্তি হয়ে গেলে টিপিপির আইপি (ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি) ব্যক্তি অধিকার ও মুক্তবাককে পায়ে মাড়িয়ে যাবে, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল সাধারণ মানুষের জন্য তা হবে নির্মম অত্যাচারের শামিল। আপনি যদি পড়েন, লেখেন, কোনো কিছু প্রকাশ করেন, চিন্তা করেন, নাচেন, গান করেন বা আবিষ্কার করেন, যদি আপনি চাষ করেন বা ভোগ করেন, যদি আপনি এখন অসুস্থ হন বা ভবিষ্যতে কোনো দিন অসুস্থ হন, তাহলে আপনি টিপিপির বন্দুকের নিশানার মধ্যে চলে আসবেন।’
টিপিপির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সরাসরি এর কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সরাসরি বাণিজ্যের বিষয় নয়, এমন দিকগুলোও আমাদের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মেধাস্বত্ব বিষয়টি সব পর্যায়ে আমাদের জন্য বড় এক সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। এর আরও কী প্রভাব আমাদের ওপর পড়তে পারে, তা হয়তো সামনের দিনগুলোয় আরও পরিষ্কার হবে। তবে ইন্টারনেটে ‘নজিরবিহীন’ নজরদারির উদ্যোগ বা ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র সমস্যাটিকে শুধু চুক্তি স্বাক্ষরকারী ১২ দেশের নাগরিকদের জন্য বিপদের কারণ বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। আমরাও এর বাইরে থাকতে পারব না। আর খারাপ বাতাস ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগে না।
এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক।
-
this is the sign of hell that are going on general people and it is also the curse of lower income country like Bangladesh.
-
সোশাল নেটওয়ার্কিং এর যুগে গোপনীয়তার সংজ্ঞটাই বদলে গেছে। নিজেদের নিতান্তি ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো আমরা নিজেরাই ফেসবুকে শেয়ার করে বেড়াচ্ছি। ভাবনার জায়গাটা হচ্ছে ক্লাউড কম্পিউটিং আরও জনপ্রিয়তা পেলে পুরো লাইফটা চলে যাবে ক্লাউডে ??? তখন আমাদের জীবনের নিয়ন্ত্রক হবে অন্য কেউ, ভেবে দেখেছি কি?