Daffodil International University

Entertainment & Discussions => Story, Article & Poetry => Topic started by: myforum2015 on October 31, 2015, 05:04:53 PM

Title: যমজদের গ্রাম ‘টুইন টাউন’
Post by: myforum2015 on October 31, 2015, 05:04:53 PM
আমাদের পৃথিবীতে আছে প্রায় ১৯৫ টি দেশ। যাদের ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন অঞ্চল। আর যে অঞ্চলগুলোর ভেতরে লুকিয়ে আছে অসংখ্য গ্রাম। কিন্তু এত-শত গ্রামের ভিড়েও কিছু গ্রাম আছে যেগুলো নিজেদের নিজস্বতা দিয়ে এগিয়ে রয়েছে সবার চাইতে। হয়ে রয়েছে অনন্য। নাম লিখিয়েছে অন্যরকম আর আলাদা হিসেবে। তবে তাদের বেশিরভাগই এ ব্যাপারে সাহায্য পেয়েছে প্রকৃতির কাছে।
কোনো কোনো গ্রাম আবার পুরোটাই মানুষের সৃষ্টি আর কল্পনায় হয়ে গিয়েছে অসাধারণ আর অন্যরকম গ্রামের তালিকাভুক্ত। আর এদের বাইরে আর একরকমের গ্রাম রয়েছে যার নিজস্বতা সৃষ্টিতে যতটা না সাহায্য করেছে প্রকৃতি, ততটাই মানুষ। মোটকথা মানুষ আর প্রকৃতির একেবারে অবিচ্ছেদ্য মিশেলে তৈরি হয়েছে এরা। নাম লিখিয়েছে অদ্ভূত আর আর দশটি গ্রামের চাইতে আলাদা গ্রামের তালিকায়। আসুন আজ জেনে নিই এমনই এক গ্রামের কথা।
জমজদের গ্রামের নাম শুনেছেন কখনো? এমন গ্রামের কথা জানতে খুব বেশি দূরে যেতে হবে না। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে রয়েছেন এমনি এক গ্রাম। ভারতের মালাপুরাম জেলার কেরালা রাজ্যের কোদিনহি গ্রামেরই আরেক নাম হচ্ছে জমজদের গ্রাম বা ‘টুইন টাউন’। শুনতে একটু অবাক করা লাগলেও সত্যি যে এ গ্রামটি আরো দশটা গ্রামের চাইতে আলাদা এর সৌন্দর্যের কারণে নয়, নয় এর কোনো নিজস্ব সংস্কৃতির কারণেও। বিশ্বের বুকে কোদিনহি গ্রামটি যদি আর কোনো কারণে পরিচিত হয়ে থাকে সেটি হচ্ছে এখানকার অধিবাসীদের জন্যে। এখানকার মানুষের জন্যে। ভাবছেন কি করেছে এখানকার মানুষ? না, কোনরকম চমকদার কাজ নয়, নয় কোন সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডও। নাম দেখেই নিশ্চয় বুঝে গিয়েছেন। এখানকার মানুষের একটিই নিজস্বতা আর অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে ঘন ঘন জমজ বাচ্চা জন্ম দেওয়ার প্রবণতা। আর জমজ না হলেও দেখতে হুবহু একই রকম চেহারা খুঁজে পাওয়া যায় এদের ভেতরে। বুড়ো থেকে শিশু- যেমনটা চাইবেন সেই বয়সের মানুষই পাবেন আপনি এখানে দুজন করে।
মুসলমান অধ্যুষিত এই গ্রামের অধিবাসীরা না চলাফেরা, না খাওয়া-দাওয়া বা সংস্কৃতি- কোনটাতেই খুব একটা আলাদা নয় ভারতের অন্যকোন স্থানের চাইতে। বিশেষ করে আশপাশের কেরালা রাজ্যের ভেতরে থাকা গ্রামগুলোর চাইতে তো নয়ই। কিন্তু তারপরেও একটি জায়গায় এসে আর সবার চাইতে প্রচন্ড রকম আলাদা হয়ে যায় এরা আর সবার চাইতে। আর সেটি হচ্ছে এখানকার জমজ শিশুর জন্মহার।
বিশ্বের অন্য যে কোন স্থানের চাইতে এই গ্রামে ছয় শতাংশ বেশি জমজ বাচ্চা জন্ম নেয়। ২০০৮ সালে সর্বোচ্চ ১৫ টি জমজ বাচ্চা জন্ম নেয় এ গ্রামে। যেটা কিনা ছাড়িয়ে যায় বিশ্বরেকর্ড! গত ৫ বছরে এ সংখ্যা গিয়ে দাড়িয়েছে ৬০ টি জমজ শিশুতে। গত কয়েকবছর ধরে স্থানীয় চিকিৎসক ও জমজ শিশু নিয়ে উৎসাহী কৃষ্ণান শ্রীবিজু জানান যদিও বর্তমানে ২৫০ টি জমজের কথা এ গ্রাম থেকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, আসল সংখ্যাটি আরো বেশি।
‘আমার মতে বর্তমানে কোদিনহি গ্রামের সীমানার ভেতরে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টির মতন জমজ আছেন।’ বলেন তিনি। ‘সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে প্রতি বছর এদের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া। এটা এতটাই যে গত দশ বছরে কোদিনহির জমজদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে।’ গ্রামবাসীদের দেওয়া তথ্যানুসারে, এই জমজদের জন্ম প্রথম শুরু হয়েছিল তিন প্রজন্ম আগে। চিকিৎসকের মতে সেটা ছিল ৬০ থেকে ৭০ বছর আগে। যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কিছু বলা সম্ভব নয় জানালেও শ্রীবিজুর ধারনা এখানকার এমন জমজ শিশুর অস্বাভাবিক জন্মহার এর অধিআসীদের খাবার আর পানীয়র সঙ্গে জড়িত। আর সেটাই যদি আসল কারণ হয়ে থাকে তাহলে এই পদ্ধতিতে নিঃসন্তান দম্পতিদের কিছুটা হলেও সাহায্য করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
অনেকের ধারনা গ্রামটির এমন অতিরিক্ত জমজ শিশু জন্ম নেওয়ার কারণ আর কিছু নয়, এর কোন এক ধরনের রাসায়নিক তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাব। তবে সে ধারনাটিকে পুরোপুরি বাতিল করে দেন শ্রীবিজু। কারণ সেটাই যদি হত তাহলে এত সুস্থ আর সবল শিশু জন্ম নিত না।
বর্তমানে কোদিনহি গ্রামের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২,০০০ জন। আর এক পরিসংখ্যান অনুসারে, গ্রামের প্রতি হাজারজন শিশু প্রতি ৪৫ জন জমজ জন্ম নেয় এখানে। বর্তমানে এখানকার এই জমজ সন্তান জন্ম নেওয়ার খবর ছড়িয়ে গিয়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে। দ্য টুইনস অ্যান্ড কিনস অ্যাসোসিয়েশন নামক একটি সংগঠনও প্রথমবারের মতন তৈরি হয়েছে এখানে। যদিও এখন অব্দি অনেকেই কেবল ধারনা দিয়ে গিয়েছেন কেবল এই গ্রামের এই বিশেষত্বের কারণ নিয়ে, আজ অব্দি কোনো সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুধু কোদিনহি গ্রামটিতেই নয়, এর মেয়েদের অন্য কোন স্থানে বিয়ে হলে সেখানেও জমজ বাচ্চা জন্ম দেওয়ার খবর শোনা যায়। সুতরাং ডাক্তার শ্রীবিজুর সঙ্গে পুরোপুরি একমত হওয়া যায় না যে এখানকার পানি কিংবা খাদ্যদ্রব্যেই কোন সমস্যা রয়েছে। অনেকের মতে এটা জিনগত ব্যাপার-স্যাপার থেকেই ঘটে চলেছে।
জমজদের গ্রাম হিসেবে কোদিনহিকে সবাই অনেক বেশি আলোচনায় নিয়ে আসলেও বাস্তবে কোদিনহি একা নয়, এর সাথে রয়েছে পৃথিবীর আরো দু-একটি গ্রাম। যেখানটায় জমজদের সংখ্যা ঠিক এই কোদিনহি গ্রামটির মতনই অস্বাভাবিক। এই যেমন- নাইজেরিয়ার ইগবো ওরা। ইগবো ওরার নারী-পুরুষদেরকে নিয়ে একটি গবেষনা চালায় ইউনিভার্সিটি অব লাগোস। আর সেখানেই তারা ধারনা করে খাবার আর পানীয়ের সঙ্গে হয়তো কোন সম্পর্ক রয়েছে এই জমজ সন্তানের। এ ব্যাপারে পুরোপুরি শ্রীবিজুর সঙ্গে একমত হয় তারা। তবে এক্ষেত্রে আরেকটি কথা উঠে আসে সামনে। আর সেটি হল ইগবো ওরার অধিবাসীদের খাদ্যাভ্যাস আর কোদিনহির অধিবাসীদের খাদ্যাভ্যাসের ভেতরে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তবে?
জমজদের গ্রামের তালিকায় ইগবো ওরা আর কোদিনহিকে সঙ্গ দিতে পাশে এসে দাড়িয়েছে ব্রাজিলের কানডিডো গডইও। অনেকে মনে করেন নাজি গবেষকদের কোনরকম গবেষনার ফল এটা। তবে সেটা ব্রাজিলের ক্ষেত্রে সত্যি হলেও ভারত কিংবা নাইজেরিয়ার জন্যে নয়। সত্যি বলতে গেলে, জমজ শিশু কেন এত অস্বাভাবিক পরিমাণে জন্ম নিচ্ছে এটা জানার জন্যে এই তিনটি স্থানেই নিজ নিজভাবে কাজ করা হলেও এখনো অব্দি কোন একটি সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। জানা যায়নি সত্যিকারের কারণ। রহস্য থেকে গিয়েছে আজ অব্দি রহস্যই! [সংগৃহীত]