Daffodil International University
Career Development Centre (CDC) => Education => Bangladesh Civil Service-BCS => Topic started by: sisyphus on November 23, 2015, 10:09:25 AM
-
সার্থকভাবে মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলা করতে হলে বিজ্ঞানের প্রথম নির্দেশ থেকে শুরু করতে হবে। সেটা হলো নিজেদের অজ্ঞতা স্বীকার করে বলা যে, আমাদের জানার থেকে অজানার পরিধি অনেক বড়। ঐতিহ্যগতভাবে এ ধরনের সংশয়ের শুরু করেছিলেন অ্যাবডেরার অ্যানাক্সাগোরাস ও এলিসের পাইরো নামক দুই গ্রিক দার্শনিক। তেমন কড়া স্বদেশী মেজাজের মানুষদের আশ্বস্ত করার জন্য বলছি যে, যিশুখ্রিস্টের থেকেও আনুমানিক শ তিনেক বছর আগে অ্যানাক্সাগোরাস ভারতবর্ষে এসেছিলেন। ভারতীয় দার্শনিকদের অনুরূপ ধারণায় যে তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন, এটা নিজের কথাতেই স্বীকার করে গেছেন।
আমরা যা কিছু দেখি, সব কিছুই কেউ ইচ্ছা করে ঘটিয়েছে বলে ভেবে থাকি। এজন্যই মুদ্রাস্ফীতির কথা নিয়ে এত বিবাদ। সরকার মুদ্রাস্ফীতি ঘটিয়ে থাকে বলে জনসাধারণ মনে করে। আমরা দেখেছি যে, মুদ্রাস্ফীতি লেগে থাকার জন্য প্রতিবাদী মানুষ সরকারের নিন্দা করছে। অনেক সময় মুদ্রাস্ফীতিকে দুর্নীতির সমতুল্য বলেও ধরা হয়। দুর্নীতি লজ্জাজনক ব্যাপার। আমি মনে করি যে, যারা সরকারে আছেন, আমার মতো মানুষদের কথাও এখানে বলছি, তাদের খোলাখুলিভাবে দুর্নীতির সমালোচনা করা কর্তব্য। সরকার এমনকি জাতির প্রতি বিশ্বস্ততা আমাদের ব্যক্তিগত নৈতিকতার থেকে বড় হতে পারে না।
সরকারকে যেভাবে দুর্নীতির জন্য দায়ী করা হয়, সেভাবে মুদ্রাস্ফীতির জন্য দায়ী করার কোনো মানে হয় না। চারটি কারণে এটা বলছি। প্রথমত. মুদ্রাস্ফীতির কারণগুলো পুরোপুরিই বোঝার চেষ্টা করা হয় না। এটা আমাদের সরকার বা যে কোনো সরকারের ওপর কোনো মন্তব্য নয়। এটা তাত্ত্বিক অর্থনীতির অবস্থার ওপর মন্তব্য। আমরা মুদ্রাস্ফীতির অনেক দিক বুঝতে শিখেছি কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি ব্যাপারটার সব কিছু এখনো বুঝতে পারিনি। দ্বিতীয়ত. সামান্য যেটুকু জেনেছি, সেখানে একটা কথা খুব পরিষ্কার। শুধু সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের— আমাদের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া— কাজকর্ম থেকে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় না। হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও লক্ষ লক্ষ নাগরিকের কাজকর্মও এর পেছনে কাজ করে। তৃতীয়ত. দুর্নীতিতে যারা লাভবান হয়, তারা নিজেদের স্বার্থে দুর্নীতি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির মতো সমস্যা কোনো গণতান্ত্রিক সরকারই বয়ে বেড়াতে চায় না। চতুর্থত. মুদ্রাস্ফীতি ঘটার কারণগুলো অর্থনীতিকদের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট না হলেও মুদ্রাস্ফীতি কমানোর উপায়ের ওপরে ভালো রকম দখল অর্জন করা গেছে। কিন্তু এ উপায়গুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি ঠেকাতে গেলে বেকারত্ব বেড়ে যেতে পারে। ফলে সমালোচকদের কথা শুনে বেপরোয়াভাবে মুদ্রাস্ফীতি রোধের উপায়গুলো প্রয়োগ করা যায় না।
এ প্রসঙ্গে কিছু তথ্য আর কিছু সাধারণ নীতির কথা বলা যেতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি মাপার জন্য কোনো নির্বাচিত স্থানে নির্দিষ্ট দিনের বাজারদরের সঙ্গে এক বছর আগের বাজারদর তুলনা করা হয়। একবার মূল্য বৃদ্ধির ঘটনাকে সারা বছরের মূল্য বৃদ্ধি হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়ে থাকে। যেহেতু বর্তমানের মূল্যের সঙ্গে ঠিক এক বছর আগের ওই দিনের মূল্যস্তর তুলনা করা হয়, যেহেতু বছরে পরবর্তী সময়ে মূল্যস্তর স্থিতিশীল হলেও সূচকের কোনো পরিবর্তন করা হয় না।
খাদ্যদ্রব্যের বর্তমান মূল্য বৃদ্ধি এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। খাদ্যমূল্যের সূচক ২০০৯-এর জুন থেকে বাড়তে বাড়তে ২৭ নভেম্বর সর্বোচ্চ হয়েছিল। তার পরে গড় সূচক বছরের বাকি অংশে স্থিতিশীল রাখা হয়েছিল। কিন্তু পূর্ব নির্দিষ্ট দিনে একবার সূচক নথিভুক্ত হলে ওই বছরের মধ্যে সেটির বদল করা হয় না। ফলে পুরো বছরটির জন্য একটি মুদ্রাস্ফীতির সূচক, ধরা যাক ১০ শতাংশ নথিভুক্ত হচ্ছে।
মুদ্রাস্ফীতির কারণ বিবিধ। আমরা সবাই জানি যে, লোকেরা তাদের খানিকটা সঞ্চয় নগদ টাকাকড়িতে রাখেন। অর্থাৎ লকারে বা বালিশের তলায়। রাজেশ শুক্লা ঘঈঅঊজ ও ঈগঈজ সংস্থা দুটির মারফত ২০১০ সালে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে, গ্রামীণ সঞ্চয়ের ৪১ শতাংশ এইভাবে রাখা হয়েছে। এর একটা মজার দিক আছে। এই টাকাটা বাজারে না আসার ফলে সরকার অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি না ঘটিয়ে ওই পরিমাণ টাকা বাজারে ছাড়ার সুযোগ পায়।
অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, শিল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে সামান্য বেশি ঘাটতি বহন করা সম্ভব হয়। এর একটা কারণ হলো উদীয়মান দেশগুলোর সাধারণ নাগরিক খুব সম্ভব সঞ্চয়ের একটা অংশ নগদে ধরে রাখে এবং বাজারে ছাড়ে না। মুদ্রাস্ফীতি না ঘটিয়ে বিত্ত মন্ত্রক কতটা ঘাটতি বহন করতে পারে আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কতটা অর্থ সৃজন করতে পারে, তার কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। এগুলো আমরা অভিজ্ঞতা থেকে শিখি। এই কারণেই আর্থিক নীতি আর রাজস্ব নীতি হলো খানিকটা বিজ্ঞান আর খানিকটা অভিজ্ঞতাপ্রসূত আন্দাজ।
তথ্যসূত্রঃ বণিকবার্তা
-
Nice post.