Daffodil International University

Help & Support => Common Forum/Request/Suggestions => Topic started by: Akter Hossain on February 06, 2016, 03:58:04 PM

Title: শুধু নারী নয়, মানুষ ভাবুন স্ত্রীকে
Post by: Akter Hossain on February 06, 2016, 03:58:04 PM
গত ২৬ জানুয়ারি প্রথম আলোর নারীমঞ্চ পাতায় একটি প্রতিবেদন পড়ে কিছুটা বিস্মিত হলাম। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় গত এক বছরে ৫৮৩টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। দেশের শুধু এই একটি উপজেলায় মাত্র এক বছরে বিবাহবিচ্ছেদের এই সংখ্যা একটু বেশিই মনে হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই যে এত বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে, তার ৯০ শতাংশ হয়েছে নারীদের উদ্যোগে। নারীরাই তাঁদের স্বামীকে তালাক দিয়েছেন।
ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এসব বিবাহবিচ্ছেদের পেছনে মূলত রয়েছে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন। তাহলে কি আমরা ধরে নেব, নারীর ওপর নির্যাতনের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে তা সহ্য করতে না পেরে নারীরাই সংসার ভেঙে দিচ্ছেন! তা-ই হবে। কেননা, বাঙালি নারীদের যে চিরন্তন রূপ, তা হলো তাঁরা সহনশীল ও নমনীয়। সহজে তাঁরা সংসার ভাঙতে চান না। পুরুষদের অত্যাচারের শিকার হলেও সন্তান ও সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে তাঁরা মুখ বুজে সব সহ্য করেন। সেখানে যখন নারীরাই স্বামীদের তালাক দিচ্ছেন, তাহলে বুঝতে হবে, নির্যাতনের মাত্রা ভয়াবহ রকমভাবেই বেড়েছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিবাহিত জীবনে ৮৭ শতাংশ নারী নির্যাতনের শিকার হন। শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি নারীরা মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৯২ জন নারী। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৬৭ জন। নারীর ওপর এসব নির্যাতন কোনোভাবেই কাম্য নয়। হয়তো এসব নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাতেই তাঁরা স্বামীদের তালাক দিচ্ছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) হিসাব অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচটি জোন থেকে ১৫ হাজার ২৮৬টি তালাকের নোটিশ জমা পড়ে। এর মধ্যে স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাকের নোটিশ জমা পড়ে ১০ হাজার ২৩০টি। আর স্বামীর পক্ষ থেকে ৫ হাজার ৫৬টি নোটিশ জমা পড়ে। কার্যকর হয় ১৪ হাজার ১৫১টি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পাঁচটি অঞ্চল থেকে ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ হাজার ২৫৫টি তালাকের নোটিশ জমা পড়ে। সেখানেও নারীরা এগিয়ে। এসব নারী তাঁদের স্বামীদের তালাক দেওয়ার কারণ হিসেবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌতুক, স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, মাদকাসক্তি ইত্যাদি উল্লেখ করেছেন৷
নারীরা যে স্বামীদের তালাক দিচ্ছেন, অনেকেই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তাঁরা মনে করছেন, নারীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তাঁদের আত্মমর্যাদাবোধ বাড়ছে। তাই যেখানে তাঁরা নির্যাতিত হচ্ছেন, সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করছেন। তবে আমার মতে এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। বরং যে কারণে মূলত বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে, তা নির্মূল করতে হবে। নারীর ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
বিয়ে হলো একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি, যার মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বিয়ের মাধ্যমে গঠিত হয় পরিবার। সুযোগ সৃষ্টি হয় বংশবিস্তারের। সবাই চায় পরিবার টিকিয়ে রাখতে। কিন্তু পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য স্ত্রীই যদি সহিংসতার শিকার হন, তাহলে সেই পরিবার টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। পুরুষদের বলছি, দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো আচরণ করবেন না। স্ত্রীকে ভালোবাসুন। তাঁকে শ্রদ্ধা করুন। শুধু নারী নয়, মানুষ মনে করুন স্ত্রীকে।
বিবাহবিচ্ছেদ মানে তো শুধু একটি নারী এবং একটি পুরুষের মধ্যে বিচ্ছেদ নয়, সন্তান থাকলে তাদের ওপরও এই বিচ্ছেদের কুপ্রভাব পড়ে। তাদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়, পড়ালেখা হয় না। অনেকে বখে যায় এবং নেশার দিকে ঝুঁকে পড়ে। এ রকম উদাহরণ সমাজে ভূরি ভূরি রয়েছে।
সংসার টিকিয়ে রাখতে হলে প্রথমে স্ত্রী নির্যাতন বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। নারী নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তবেই বিবাহবিচ্ছেদের হার কমতে পারে।
রোকেয়া রহমান: সাংবাদিক।