Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Useful Videos on Islamic Topics => Topic started by: yousuf miah on March 14, 2016, 10:08:51 AM
-
আরমান চাকরিতে ঢুকেছেন মাত্র ৯ মাস। সর্বসাকল্যে বেতন পাচ্ছেন ১৪ হাজার ৪শ' টাকা। অভিভাবকদের ইচ্ছায় এরই মধ্যে আবার বিয়েও করেছেন। নতুন সংসার পেতেছেন ভাড়া বাসায়। কত কিছু কেনাকাটা করতে হচ্ছে। হিমশিম অবস্থা। অফিসের কাজের চাপে আর ট্রাফিক জ্যামের সময় গ্রাসে ছুটির দিন ছাড়া পুরো সপ্তাহে বাজার করার আর কোনো ফুরসতই মেলে না।
তাই সাধ্য না থাকলেও দরকার একটি রেফ্রিজারেটর। কী করবেন ভেবে পান না। প্রতিবেশী ভাবি পরামর্শ দিল, শোরুম থেকে ছয় মাসের কিস্তিতে ফ্রিজ কেনেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, তিন মাসের কিস্তিতে কিনলে নগদ মূল্যের ওপর শতকরা পনের টাকা আর ছয় মাসের কিস্তিতে কিনলে শতকরা ২৫ টাকা বেশি দিতে হবে। তিনি হতাশ হলেন। রেফ্রিজারেটর কেনা তার জন্য সম্ভব নয়। যতই কষ্ট হোক সুদের কারবারে নিজেকে জড়িত করে আল্লাহর অবাধ্য হতে পারবেন না।
সানজিদা সেলাই কাজ শিখেছে। উদ্দেশ্য ছিল লেখাপড়ার পাশাপাশি বাড়িতে বসেই কিছু টাকা উপার্জন করবে। বাবার বোঝা কিছুটা লাঘব করবে; কিন্তু পল্লী বাজারের ছোট একটি দোকানদার আরিফ সাহেব। তার পক্ষে সম্ভব নয় মেয়েকে নগদ টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন কিনে দেওয়া। তিনি খোঁজ পেলেন নগদ মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি দামে সহজ কিস্তিতে সেলাই মেশিন কেনা যায়। তিনি ভয় পেলেন, আমি মুসলমান। সুদে জড়িত হবো!
আমাদের সমাজে এ রকম আরমান, আরিফ অনেক আছেন। তারা এ ভুল করে থাকেন। নগদ মূল্য থেকে কিস্তি মূল্যের অতিরিক্ত অংশকে সুদ হিসেবে গণ্য করেন। আবার অনেকে কিস্তিকে সুদের সমার্থক ভাবেন। সুদ ও অতিরিক্ত অংশকে এক ভাবেন। অথচ এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে।
সব অতিরিক্ত অংশ সুদ নয়। কিস্তিতে টাকায় আদায় করা হলেই তা সুদ নয়- বিজ্ঞ ইসলামি চিন্তাবিদদের সুচিন্তিত মতানুসারে। কোনো লেনদেনে এক পক্ষের দেয় অতিরিক্ত অংশ সুদ হবে যদি উভয়পক্ষের আদান-প্রদানকৃত বস্তুদ্বয় সমজাতের হয়। আর যদি বস্তুদ্বয় সমজাতের না হয় তাহলে অতিরিক্ত অংশ সুদ হবে না।
যেমন- যায়েদ ২০ কেজি গমের বিনিময়ে উমরকে বাইশ কেজি গম দিল। এখানে যেহেতু উভয় পক্ষের বস্তু এক জাতের সেহেতু যায়েদের দেওয়া অতিরিক্ত দুই কেজি গম ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ। আবার যায়েদ ২০ কেজি ধানের বিনিময়ে উমরকে বাইশ কেজি গম দিল। এখানে যেহেতু উভয় পক্ষের বস্তু এক জাতের নয়, সেহেতু যায়েদের দেওয়া অতিরিক্ত দুই কেজি গম ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ নয়।
অনুরূপভাবে বেচাকেনায় যদি এক পক্ষ পণ্য দেয়, তা যে কোনো আইটেমের হোক। অপর পক্ষ মুদ্রা দেয়, তাহলে যে কোনো এক পক্ষের দেয় বস্তুটির পরিমাণ যত বেশিই হোক না কেন, আর এর পশ্চাৎ কারণ যা-ই থাকুক না কেন সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অংশকে সুদ গণ্য করা হয় না। কেননা, মুদ্রা ও পণ্য এক জাত নয়।
উপরোক্ত আলোচনা ও উদাহরণ দ্বারা স্পষ্ট যে, বর্তমানে বিভিন্ন উৎপাদক, পরিবেশক ও বিক্রেতা ক্রেতাদের কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের সুযোগ দিয়ে নিজেদের পণ্য বেশি টাকায় বিক্রির অফার দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ওইসব পণ্য যেমন- রেফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল, সেলাই মেশিন ইত্যাদি নগদ মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে কিস্তিতে কেনাকে সুদের কারবার বলা যাবে না এবং দামের ওই অতিরিক্ত অংশকে সুদ বলা যাবে না।
তবে কিস্তিতে বেচাকেনার যে পদ্ধতি আমাদের বাজারে প্রচলিত, তাতে একটি বিষয় অবশ্যই সংশোধনযোগ্য। সাধারণত বিক্রেতা পক্ষ কিস্তির সংখ্যাভেদে কয়েক ধরনের দাম প্রস্তাব করে। যেমন- মূল্য নগদ দিলে ১০ হাজার টাকা, তিন মাসে শোধ করলে ১২ হাজার টাকা, ছয় মাসে শোধ করলে ১৫ হাজার টাকা, ১২ মাসে শোধ করলে ১৮ হাজার টাকা।
ক্রেতা কিস্তির কথা বলে পণ্য নিয়ে যান। মূল্য ও কিস্তির ধরন নির্দিষ্ট করেন না। পরে নিজের রুচি ও সুবিধামতো প্রস্তাবের যে কোনো একটি মূল্য পরিশোধ করেন। মূল্য সুনির্দিষ্ট না করে বিভিন্ন মেয়াদভিত্তিক বিভক্ত রেখেই বেচাকেনার চুক্তি সম্পাদন করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
বেচাকেনা শুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যক হলো- বিভিন্ন মেয়াদভিত্তিক বিভক্ত মূল্যগুলো থেকে যে কোনো একটি মূল্য ও মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করে চুক্তি সম্পাদন করা।
মুফতি মাহফূযুল হক
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম