Daffodil International University
Entertainment & Discussions => Story, Article & Poetry => Topic started by: Mohammad Nazrul Islam on April 02, 2016, 09:51:19 AM
-
আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী/তুমি থাকো সিন্ধু পারে, ওগো বিদেশিনী ...’। সিন্ধুর ওপারের বিদেশিনীরা বরাবরই আমাদের হাতছানি দিয়ে ডেকেছে যুগে যুগে! এই দুর্বার ডাক সাধারন তো দূরের কথা, বড় বড় মানুষরা উপেক্ষা করতে পারেননি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, হেনরিয়েটা সোফিয়া হোয়াইট, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর প্রেমে যেমন মজেছেন মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুররা তেমনি হালে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘর আলো ছড়াচ্ছেন ক্রিস্টিন ওয়াজেদ-রা।
সিন্ধু ওপারের কোন নারী প্রথম এসেছিলেন বাংলায় বউ হয়ে তা জানার আগ্রহ সকলের মাঝেই আছে। এই ইতিহাসটা জানতে হলে আমাদের একটু পিছিয়ে পা ফেলতে হয়। আড়াই হাজার বছর আগে, যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও ৩০০ বছর আগের ভারতবর্ষে!
খ্রিষ্টপূর্ব ৩২১ সালে নন্দরাজবংশের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। মগধ অধিকারের মধ্য দিয়ে নতুন রাজবংশ প্রতিষ্ঠার সূচনা হলো। গাঙ্গেয় সমভূমিতে আধিপত্য বিস্তারের পর তিনি অগ্রসর হলেন উত্তর-পশ্চিম দিকে। আলেকজান্ডারের প্রস্থানের পর এই অঞ্চলে রাজনৈতিক শূন্যতা বিরাজ করছিল। ফলে তিনি এই অঞ্চল সহজেই দখল করে নেন।
সিন্ধু তীর পর্যন্ত সব কিছু দখল করে চন্দ্রগুপ্তকে থামতে হলো। কারণ গ্রিক সেলুসিড রাজবংশ তখন পারস্যে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সিন্ধুতীরবর্তী অঞ্চল সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। সেবার ফিরে আসলেও ৩০৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে চন্দ্রগুপ্ত আবার অভিযান শুরু করেন উত্তর-পশ্চিম অংশে এবং সেলুসিড রাজা সেলুকাস নিকাতরের (Seleucus Nikator ) বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করেন ৩০৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। বর্তমানে যেখানে আফগানিস্তান, সেই অঞ্চল চন্দ্রগুপ্ত লাভ করলেন। তার সাম্রাজ্যের সীমানা গিয়ে দাঁড়াল গাঙ্গেয় সমভুমি থেকে সিন্ধু অঞ্চল ও সুদূর উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল।
সেলুসিড রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধবিগ্রহ থাকলেও দুই রাজ্যের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এবং তারা পরস্পরের সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক ছিল। গ্রিক লেখার মধ্যে সান্ড্রকোট্রস (চন্দ্রগুপ্ত) সম্পর্কে বারবার উল্লেখ দেখা যায়। গ্রিকরা চন্দ্রগুপ্তকে ডাকতো ‘অমিত্রকেটাস’ নামে। সম্ভবত ‘অমিত্রঘাত’(শত্রুবিনাশকারী) থেকে গ্রিক শব্দটি এসেছে। তো এই সেলুকাসের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের সন্ধিচুক্তির সময় তিনি তার এক কন্যাকে চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে বিয়ে দেন!
ফলে সেলুকাসের এক কন্যার আগমন ঘটে মৌর্য বংশে, সেই সঙ্গে আরো কিছু গ্রিক নারী আসেন এখানে। সেলুকাসের প্রেরিত দূত মেগাস্থিনিস অনেক বছর পাটালিপুত্রে কাটিয়েছিলেন এবং ভারতবর্ষের নানা স্থান পরিভ্রমণ করেছিলেন।
দুইরাজ্যের মধ্যে নিয়মিত দূত বিনিময় এবং উপহারদ্রব্য বিনিময়ও প্রচলিত ছিল। উপহারের মধ্যে বহু কামোদ্দীপক বস্তুও থাকতো। পাটালিপুত্রে বিদেশিরা যে রীতিমতো সমাদৃত হতো, তার প্রমাণ হিসেবে পাটালিপুত্র পৌরসভার একটি বিশেষ সমিতির উল্লেখ করা যায়। এই সমিতির কাজ ছিল শহরে বিদেশিদের সুখসুবিধার ওপর দৃষ্টি রাখা।
শেষ জীবনে অবশ্য চন্দ্রগুপ্ত জৈন ধর্ম গ্রহণ করেন এবং সন্ন্যাস গ্রহণ করে সিংহাসন ত্যাগ করেন। তিনি ২৯৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মারা যান।
-
Informative......