Daffodil International University
Famous => History => Topic started by: Mohammad Nazrul Islam on April 04, 2016, 03:49:03 PM
-
মহান সাধক সৈয়দ কালু শাহ ফকির পরম প্রেমে-প্রেমিক হয়ে আজীবন পরমাত্ব খুঁজে ফিরেছেন। তিনি উপ-মহাদেশের অন্যতম আধ্যাত্বিক সিদ্ধি পুরুষ । ১৮০৯ কিংবা ১৮১০ ইং সালে তৎকালীন পাবনা জেলার (বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার) উল্লা-পাড়া উপজেলার কালিগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নিতাই ব্যাপারী, এবং মাতার নাম নুরজাহান বেগম। জন্মের পর তার নাম রাখা হয়ে ছিল অছিমুদ্দিন। শিশুকালে মা তাকে আদর করে (গায়ের রং কালো থাকার কারণে) কালু বলে ডাকতেন। পরবর্তী কালে এই কালুই মহান সাধক ‘সৈয়দ কালু শাহ ফকির’ নামে খ্যাতি লাভ করেন।
জীবন যুদ্ধের ইতিহাস পরিক্রমা থেকে জানা যায় , পিতা নিতাই ব্যাপারী ছিলেন একজন ক্ষুদ্র-ব্যবসায়ী। ব্যবসা-বানিজ্যের কারণে প্রায়ই তাকে নিজ বাড়ী কালিগঞ্জ ছেড়ে দুর- দূরান্তে পড়ে থাকতে হত। ‘অছিমুদ্দিনের’ বয়স যখন ১০ বছর সেই সময় নিতাই ব্যাপারী স-স্ত্রীক বেড়াতে আসেন শ্বশুরালয়-তৎকালীন ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জ মহকুমার সাটুরিয়ার কাউন্নারা গ্রামে। সঙ্গে ছিল তার ছেলে -অছিমদ্দিন এবং কন্যা -শাবানী। পরবর্তীতে তিনি স্ত্রী, পুত্র, কন্যাকে শ্বশুড়ালয়ে রেখে ব্যবসার কাজে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেও তিনি ফিরে ছিলেন কিনা তার সঠিক তথ্য আজও জানা যায়নি।
সে সময় থেকেই বালক অছিমুদ্দিন তার মায়ের সঙ্গে কাউন্নারা গ্রামে তার (মামার বাড়ীতে) বড় হতে থাকে। নানা কোরবান আলী সরদার ছিলেন সে সময়ের প্রভাবশালী লাঠিয়াল দলের নেতা। মামা জামাল সরদার এবং কামাল সরদারের ইচ্ছা ছিল তাদের ভাগ্নে তাদের মতোই লাঠিয়াল হবে। কিন্তু মায়ের একান্ত ইচ্ছায় তাকে কাউন্নারা রাহাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়। বাল্যকাল থেকেই অছিমদ্দিন স্মরণ শক্তি এবং মেধা চরম বিকাশ ঘটতে থাকে । ফলে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি কোরআন শরিফ মুখস্থ করে ”হাফেজ” উপাধি লাভ করেন । পরবর্তিতে তিনি কাউন্নারা মসজিদে ”ইমামতী” দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
অল্প দিনেই নিজ গ্রামসহ এলাকার জন সাধারনের নিকট শ্রদ্ধার পাত্র হিসাবে গন্য হয়ে উঠেন। তার আধ্যাত্বিক- চিন্তা ও মনন ভাবনায় ফকিরি ভাব প্রকাশ পেতে থাকে। তিনি গভীর রাত পর্যন্ত মহান আল্লাহ তা‘লার সৃষ্টি রহস্য নিয়ে চিন্তা ও সাধনায় মশগুল থাকেন। সাধনার এক পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন, অাধ্যাত্বিক সাধনার জন্য একজন পথ-প্রদর্শক প্রয়োজন । তৎপর তিনি হযরত সৈয়দ শাহ আতাউর রহমান আল কাদেরী কাছে মুরিদ হয়ে ঢাকাতে চলে আসেন। তৎপর তিনারা ঢাকার- ধামরাইতে হাজী-গাজী-পীর নামক স্থানে আস্তানা স্থাপন করেন। এখান থেকেই আছিমুদ্দিনের রুহানী শক্তি এবং বিশুদ্ধ চিন্তা প্রকাশিত হতে থাকে এবং তিনি ‘কালু শাহ ফকির’ নামে (সিদ্ধ পুরুষ) হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি দিনের বেলায় স্বল্প ঘুমে থেকে সারা রাত আল্লাহর ধ্যান- সাধনা মশগুল থাকতেন।
লোক মুখ থেকে জানা যায় তিনি গভীর পানির নিচে দীর্ঘ সময় ‘ধ্যান-সাধনায়’ রাত কাটাতেন। এমন কি তিনি ৪১ দিন মাটির নিচে কবরের মধ্যে থেকেও সাধনা করেছেন বলেও শুনা যায়। পীরের নির্দেশে একাধিক বার গভীর জঙ্গলে অ-নাহারে ঈশ্বর সাধনায় মশগুল থাকতেন। পরতর্বীতে সাধনার পথেই তিনি দিব্য দৃষ্টি লাভ করেন। তার আধ্যাত্বিক গুন ছিল তিনি কয়েক মাইল দুরে কোথায় কি ঘটছে, অবিকল তা বলে দিতে পারতেন। মাঝে মাঝে তিনি তার মামার বাড়ী সাটুরিয়া বাজার সংলগ্ন নদী পারের আস্ততানায় সময় কাটাতেন।
দূর-দূরান্ত থেকে অগনিত ভক্ত এসে তাকে ঘিরে থাকতো। তিনি সবাইকে ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মুক্তি এবং শান্তির পথ নির্দেশ করতেন। অধিকাংশ সময়ে তিনি গানের মাধ্যমে ভক্তদের প্রয়োজনীয় উপদেশ ও পরামর্শ দিতেন। এই গান গুলিই আজও হাজার হাজার ভক্ত, ফকির ,বাউলের মুখে মুখে ফিরছে। নিরিক দর্শন, মারিফতি, দেহতত্ব এবং ঈশ্বর প্রেম বিষয়ক দু ‘হাজারের ও বেশী গান সাড়া দেশে ছড়িয়ে আছে তার অগনিত ভক্তদের মাঝে। সৈয়দ কালু শাহ ফকিরের গানের আধ্যাত্বিক বক্তব্য স্বাক্ষর বহন করে। তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন বড় মাপের সাধক-কামেল ছিলেন। ১৯০৫ইং সালে ( বাংলা ১১ ইঅগ্রহায়ণ, ১৩১২ সাল ) মামার বাড়ী সাটুরিয়ার কাউন্নারা গ্রামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাড়ী সংলগ্ন স্থানেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
বর্তমানে তার উত্তসূরি সৈদয় বাদশা আলম কালু শাহ্ স্বরনে ‘মানিকগঞ্জ-সাটুরিয়া সদরে ‘সৈয়দ কালু শাহ ডিগ্রী’ কলেজ নামে একটি মনোরম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার মাজারের পরি-পাটিতে- এই মহান ব্যাক্তি অকাতরে অর্থ ব্যয় করে থাকেন। প্রতি বছর তার মৃত্যু বাষিকীতে এখানে সাত দিন ব্যাপি বাউল-মেলা বসে। মেলাতে অগনিত মানুষের সমাগ্রম হয়। উল্লেখ্য যে সৈয়দ কালু শাহ ফকিরের লিখিত গান গুলো নিয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক গবেষণা চলছে।এই মহান বাউল সাধক আজীবন মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে বেচেঁ থাকবেন আমাদের মানিকগঞ্জ-সাটুরিয়া তথা সমগ্র বাংলাদেশে।