Daffodil International University
Health Tips => Protect your Health/ your Doctor => Children => Topic started by: taslima on April 04, 2016, 05:17:40 PM
-
ঘুম বা নিদ্রা হচ্ছে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন কর্মকান্ডের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যখন সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্তিমিত থাকে। নিষ্ক্রিয় জাগ্রত অবস্থার সাথে ঘুমন্ত অবস্থার পার্থক্য হল এ সময় উত্তেজনায় সাড়া দেবার ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং শীতনিদ্রা বা কোমার চেয়ে সহজেই জাগ্রত অবস্থায় ফেরত আসা যায়।
সকল স্তন্যপায়ী ও পাখি এবং বহু সরীসৃপ, উভচর এবং মাছের মধ্যে ঘুমানোর প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী এবং অন্য বেশ কিছু প্রানীর (যেমন কিছু প্রজাতির মাছ, পাখি, পিঁপড়া এবং ফ্রুটফ্লাই) অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে নিয়মত ঘুম আবশ্যক। ঘুমানোর কারণ সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি জানতে পারেননি এবং তা নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে।
আর একটি ব্যপার- ঘুমন্ত মানুষের চেহারার কোন এক অজানা অতিরিক্ত আবেগ অনুভূতি কাজ করে। যা তার গোপন এক প্রাকৃতিক নিরাপত্তা দেয়। শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য ফ্যাট জাতীয় খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘুমকেও দায়ি করা হয়। অথচ পর্যাপ্ত ঘুমের মাঝেই লুকিয়ে আছে ওজন কমানোর গোপন রহস্য। জিমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কষ্টকর শারীরিক কসরত করার প্রয়োজন হয় না। ঘুমিয়েও শরীরের বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলা সম্ভব। আর সেজন্য ভালো ঘুমের সঙ্গে বিশেষ কয়েকটি অভ্যাস রাখা জরুরি।
১। অন্ধকার ঘরে ঘুম
ঘুমের সময় ঘরকে একেবারে অন্ধকারের কুঠুরি বানিয়ে দিন। দেখবেন, কোনো ফাঁক দিয়ে যেন আলো ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে। প্রয়োজনে দরজা, জানালায় মোটা পর্দা টেনে দিন। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় দেখা যায়, অন্ধকার ঘরে শরীরের মেলাটোনিন হরমোন বেশি পরিমাণে নিঃসরণ হয়। এই হরমোনটি ভালো ঘুমের পাশাপাশি শরীরের বাড়তি মেদ ঝরাতে দারুণ সাহায্য করে।
ফোন দূরে রাখুন
ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা বলছে, স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের থেকে নিঃসরিত শর্ট ওয়েভ বেগুনি রশ্মি শরীরের মেলাটোনিন নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটায়। এর ফলে খাবার হজমে ব্যাঘাত ঘটে। ঠিকমতো হজম না হলে মেদও বাড়ে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে করে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট বিছানা থেকে সরিয়ে অন্যত্র রেখে দিন।
ক্যাফেইন নয়
চকোলেট বা কফিতে অনেক পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে। ঘুমানোর আগে এগুলো খেলে ঠিকমতো ঘুম আসতে চায় না। তার উপর রাতে খাওয়া চকোলেট হজমও হয় না। পুরো ক্যালরিই মেদ হয়ে জমতে থাকে শরীরে। তাই রাতে চকোলেটকে একদমই না বলে দিন।
২। কার্যক্ষমতা বাড়ায় ঘুম
সহজভাবে চিন্তা করলে মনে হবে, ঘুমের সময় কমিয়ে দিলে কাজ করার সময় বেড়ে যাবে। আসলে ঘুম কম হলে মানুষের মস্তিষ্ক তার ক্ষমতার সবটুকু দিয়ে কাজ করতে পারে না। বৈজ্ঞানিক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের নিয়মিত কমপক্ষে সাত ঘণ্টার ঘুম দরকার হয়। তা না হলে ঘুম ঘুম ভাবটা থেকেই যায়। শরীর বিশ্রামের অভাবে ভুগতে থাকে।
৩। সহজে নতুন কিছু শেখা
আধুনিক যুগে কর্মক্ষেত্রে চলে দক্ষতা প্রদর্শনের ইদুর দৌড়। সেখানে সাফল্য পেতে আপনিও রীতিমতো দৌড়াচ্ছেন। তাই সফল হতে হলে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন কিছু শিখতে হবে। শেখার মাঝেই কাটাতে হবে জীবন। আর শেখার জন্য দরকার সঠিক মনোযোগ। ঘুমের অভাব আমাদের মনোযোগ ক্ষমতা নষ্ট করে এবং নতুন কিছু শেখা কষ্টকর করে ফেলে। নতুন নতুন তথ্য মনে রাখার জন্যেও ঘুমটা উপকারী।
৪। সৃজনশীলতা বাড়ায়
সৃষ্টিশীল বা সৃজনশীল হওয়াটা অনেক ক্ষেত্রেই সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর নিয়মিত ঘুম সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়। কিন্তু ঘুম না হওয়া থেকে সৃষ্ট ক্লান্তি মস্তিষ্কের গতি কমিয়ে দেয় এবং নতুন কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে না।
৫। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতেও সাহায্য করে ঘুম। আপনি যখন ঘুমের অভাবে ভুগছেন তখন আপনার শরীলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে সহজেই আপনার জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি,কাশি হবে। তাই শরীরকে সতেজ ও রোগ মুক্ত রাখতে দৈনিক ৭ ঘণ্টা ঘুমান।
৬। ভুল কমায়
আপনার ঘুম না হলে ভুলের সংখ্যা নিঃসন্দেহে বাড়বে। কোনো কিছু মনে করতে ভুল হবে, কাজ করতে ভুল হবে, সিদ্ধান্ত নিতেও ভুল হবে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটা তাদের ফলাফল খারাপ করে দেয়। একমাত্র সঠিক ঘুম আপনার কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়াতে পারে এবং ভুল করা কমাতে পারে।
৭। দুর্ঘটনা কমায়
ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে গাড়ি চালানোর ফলে প্রতিবছর প্রচুর মানুষ মারা যান। একটানা ১৬ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে থাকলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এছাড়াও বিরতীহিনভাবে ২৪ ঘণ্টার টানা কাজ করলেও দুর্ঘটনা সম্ভাবনা বাড়ে।
বাম কাত হয়ে ঘুমানোর উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলো-
৮। লিম্ফেটিক সিস্টেম কার্যকর করে আয়ুর্বেদ মতে, বাম কাত হয়ে ঘুমালে ভালোভাবে লিম্ফ রস নি:সৃত হয়। কারণ আমাদের দেহের বামদিকে লিম্ফেটিক অংশের প্রাধান্য রয়েছে। এই রস ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দেহ থেকে বের করে এবং শরীরের কলাসমূহ পরিষ্কার রাখে। পশ্চিমা গবেষণায়ও দেখা গেছে, বাম কাত হয়ে ঘুমালে মস্তিষ্কের বর্জ্য পদার্থ কমাতে সহায়ক হয়। পক্ষান্তরে ডান কাত হয়ে ঘুমালে লিম্ফেটিক সিস্টেমের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে।
৯। হজম সক্ষমতা বৃদ্ধি করে খাদ্যবস্তু হজমের জন্য বাম কাত হয়ে ঘুমানো ডান কাত হয়ে ঘুমানোর চেয়ে সহায়ক। কারণ পাকস্থলির পজিশন ও মধ্যাকর্ষণ এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। বিশেষকরে, বাম কাত হয়ে ঘুমালে খাদ্যবর্জ্য বৃহদান্ত্র থেকে ডিসেন্ডিং কোলনের দিকে সহজে যেতে পারে। আমাদের পেটের বাম দিকে থাকে পাকস্থলি ও অগ্ন্যাশয়। বাম কাত হয়ে ঘুমালে পাকস্থলি ও অগ্ন্যাশয় থেকে এনজাইম বা পাচক রস নি:সরণে ভূমিকা রাখে।
১০। হৃদপিন্ডের জন্য উপকারী: হৃদপিন্ডের রক্ত সঞ্চালন ত্বরান্বিত করতে চিকিৎসকরা দীর্ঘদিন ধরে গর্ভবতী নারীদের বাম কাত হয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন। গর্ভবতী নারী অথবা নারী না হলেও সবার জন্য বাম কাত হয়ে ঘুমালে হৃদপি- থেকে কিছুটা চাপ তৈরি হতে পারে। তবে উল্লেখ করা যেতে পাওে, হৃদপিন্ডের জন্য বাম কাত হয়ে না ডান কাত হয়ে ঘুমানো ভালো, তা নিয়ে মতভিন্নতা আছে।
১১। গর্ভবতী নারীদের জন্য উত্তম বাম কাত হয়ে ঘুমালে গর্ভবতী মায়েদের শুধু রক্ত সঞ্চালনই বাড়ে না, এতে পিঠের ওপর তৈরি হওয়া চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং জরায়ু যকৃতের সাথে চেপে ধরে না। আর এতে জরায়ু, কিডনি ও গর্ভাশয়ে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। আর এ জন্য চিকিৎসকরা গর্ভবতী নারীদের ঘুমের অধিকাংশ সময় বাম কাত হয়ে শোয়ার জন্য পরামর্শ দেন।
১২। হৃদপিন্ডের প্রদাহ কমায়: ক্লিনিক্যাল গ্যাস্ট্রো এন্ট্রোলজির জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাম কাত হয়ে ঘুমালে এসিড রিফ্লক্স (এসিডের বিপরীতমুখী প্রবাহ) হ্রাস পায়। কারণ আমাদের পাকস্থলি দেহের বাম পাশে থাকে। আর ডান কাত হয়ে ঘুমালে এ লক্ষণ বেড়ে যেতে পারে। আর এ জন্য হৃদপ্রদাহের ব্যক্তিদের জন্য অন্তত ১০ মিনিট বাম কাত হয়ে শোয় উচিত।
১৩। পিঠের ব্যাথা উপশম করে যারা দীর্ঘদিন ধরে পিঠের ব্যাথায় ভুগছেন তাদের জন্য বাম কাত হয়ে ঘুমানো উপকার বয়ে আনতে পারে। কারণ এতে হৃদপিন্ডের ওপর চাপ কমায়। এটি আরামদায়ক এবং সর্বোপরি গভীর ঘুমের জন্য সহায়ক হয়।
বিশেষ সতর্কতা: তবে সতর্ক থাকার প্রয়োজনও রয়েছে। যাদের হৃদরোগ, গ্লুকোমা, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কারণে ঘুমভঙ্গের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বাম কাত হয়ে ঘুমানো হিতে বিপরীত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয় জরুরি।
- See more at: http://www.somoyerkonthosor.com/archives/375895#sthash.e8kLvr9H.dpuf