Daffodil International University

Faculty of Allied Health Sciences => Public Health => Topic started by: azad.ns on April 05, 2016, 06:47:53 PM

Title: শরীর ও স্বাস্থ্য মেয়েদের ধূমপান কতটা বিপদের?
Post by: azad.ns on April 05, 2016, 06:47:53 PM
শহুরে আধুনিকাদের মধ্যেই কি ধূমপানের প্রবণতা বেশি?
হ্যাঁ, শহরে ধূমপানের প্রবণতা বেশি তো বটেই। তবে শুধু শহুরে আধুনিকাদের মধ্যেই নয়, গ্রামাঞ্চলেও মেয়েদের মধ্যে ধূমপানের হার কম নয়। শহরের দিকে তাকালে দেখতে পাচ্ছি হাইস্কুল স্টুডেন্ট, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন ধূমপানের চল আছে, তেমন কর্পোরেট সেক্টরের মহিলাদের মধ্যেও ধূমপানের প্রবণতা আছে।
কিন্তু কেন মেয়েরা ধূমপান করেন বলে মনে হয়?
কেন করেন এর পিছনে কারণ অনেক কিছুই হতে পারে। শহরের মেয়েরা আধুনিকতা দেখাতে বা মানসিকভাবে এগিয়ে আছি কিংবা পুরুষের সমতুল্যতা দেখাতে গিয়ে ধূমপান বেশি করেন। আবার শুধুই ভালো লাগে বলেও অনেকে ধূমপান করেন। মেন্টাল, সাইকোলজিক্যাল আবার সোশ্যাল কারণও জড়িয়ে থাকতে পারে এই কেন’র সঙ্গে। তবে আমার মনে হয় কেন করেন, সেটা বড় কথা নয়— মেয়েরা যে ধূমপান করেন সেটাই সত্যি। আর এটাই ভাবনার বিষয়।
গ্রামীণ ক্ষেত্রেও তাহলে ধূমপানের চল রয়েছে?
অবশ্যই। ধূমপান মানে শুধুই নামী ব্র্যান্ডের দামি সিগারেট নয়। তাই সিগারেট না হলেও বিড়ি পান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনও হতে পারে। এহেন নেশার মাত্রা গ্রামাঞ্চলে যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
বর্তমানে কি ধূমপানের হার ক্রমবর্ধমান?
হ্যাঁ। ধূমপান অবশ্যই বেড়েছে। একটা ছোট্ট হিসাব দিই। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর ৭০-৮০ হাজার নতুন ক্যানসার রোগী দেখা যায়। নতুন এবং পুরানো মিলিয়ে এই সংখ্যাটা ছাড়িয়ে যায় ৩-৪ লক্ষ। আমাদের দেশে প্রতি বছর ১১ লক্ষ নতুন ক্যানসার রোগী পাওয়া যায় এবং নতুন পুরানো মিলিয়ে এই সংখ্যাটা ৩০-৪০ লক্ষ। এই পরিসংখ্যানটা যতটা সম্ভব দেওয়া গেলেও প্রান্তিক মানুষের মধ্যেও যে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা কত তা সঠিকভাবে অনেক সময়েই জানা যায় না। কারণ পরিসংখ্যান নেওয়ার মতো সুযোগ সুবিধাও সেখানে মেলে না। ফলে বোঝাই যাচ্ছে আসল সংখ্যাটা অনেক বেশি হবে।
ধূমপান নিয়ে শুনেছি অনেকের কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। ধূমপান করলে নাকি বুদ্ধি খোলে...?
একেবারেই সত্যি এটা। আশ্চর্যজনক যে মেয়েদের মধ্যে ধূমপানের বড় কারণ, অনেকে ভাবেন ধূমপান শরীরের জন্য ভালো। এটা ভেবেও অনেক মহিলাকে ধূমপান করতে শুনেছি যে, ধূমপান করলে নাকি শরীর ভালো থাকে, চিন্তাভাবনা ভালো হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। ধূমপান থেকে ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হয় না।
ধূমপানের ফলে মেয়েদের শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা কতটা?
অনেকটাই। প্রথমত ধূমপান যে বেড়েছে, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। এখন অনেক মহিলাই আমাদের কাছে আসেন ফুসফুসের ক্যানসারের জন্য। আগে স্মোকিং রিলেটেড ক্যানসারের হার কম থাকলেও এখন সেটা ক্রমশ বেড়েছে। আর এর হার এতটাই যে এখন মহিলাদের ওরাল ক্যানসার, ভয়েস বক্স, লাং ক্যানসারে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। আর এত আলোচনা, সচেতনতার পরেও সেটা কমেনি এখনও খুব পর্যন্ত, এটাই দুশ্চিন্তার বিষয়।
আর কী কী ক্ষতি হতে পারে নিয়মিত ধূমপান থেকে?
অর্ধেকের বেশি ক্যানসারের প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে ধূমপানের সঙ্গে। ওরাল, লাং ক্যানসার, ভয়েস বক্স ক্যানসার ছাড়াও গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টিনাল ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসার এবং সার্ভাইক্যাল ক্যানসারও ধূমপানের সঙ্গে জড়িয়ে। তাই আমরা চিকিৎসকরা বারবার বলব, ধূমপান ত্যাগ করুন।
গর্ভাবস্থায় ধূমপানের প্রত্যক্ষ প্রভাব কতটা?
ক্যানসারের বাইরে এক্ষেত্রেও ধূমপান যথেষ্ট ক্ষতি করে বইকি। এই সময় মা এবং সন্তান উভয়ের জীবন এক সূত্রে জড়িয়ে, ফলে ধূমপান না করাই শ্রেয়। এই সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা দরকার।
প্যাসিভ স্মোকিং কি সমান ক্ষতিকর?
প্যাসিভ স্মোকিং, স্মোকিংয়ের থেকেও মারাত্মক। অনেক ঘরোয়া গৃহবধূ আমার কাছে এসেছেন যাঁদের লাং ক্যানসার হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে তাঁরা জীবনে সিগারেট খাননি। তাহলে তাঁদের কেন এই ক্যানসার হল? প্রথমত, জেনেটিক কারণে হতেই পারে। তার সঙ্গে দূষণ তো আছেই। সব মিলিয়ে তাঁর রোগের উৎস কোথায়, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আলোচনা করে দেখলাম তিনি প্যাসিভ স্মোকিংয়ের শিকার।
তাহলে বাঁচার উপায়?
কেউ ধূমপান করলে সেখান থেকে সরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এখন তো দেখেছি শহুরে জীবনে ছোট্ট আবাসে স্থানাভাব একটা অন্যতম সমস্যা। যেখানে স্মোকার স্বামী ধূমপান করছেন, তখন স্ত্রী যাবেন কোথায়? এইভাবে প্যাসিভ স্মোকিংয়ের শিকার মেয়েদের হতেই হয়। কিছু বলে উঠতে পারছেন না হয়তো। এটা একটা বিরাট ক্ষতি। আমাদের কাছেও খুব কষ্টকর হয়ে যায় মেনে নেওয়া। যখন দেখি একজন সুগৃহিণী জীবনে কখনও ধূমপান করেননি, ভাবতেও পারেন না নেশাজাত কোনও দ্রব্য সেবনের কথা, তাঁকে ক্যানসার আক্রান্ত হতে দেখতে তখন খুব খারাপ লাগে।
মেয়েদের ধূমপান করা কি তাহলে একেবারেই বন্ধ করা উচিত?
এই বিষয়টা খুব সেনসিটিভ। মেয়ে বলে আলাদা আইন বা নিয়ম আমরা আনতে চাই না। ইনডিপেনডেন্টলি একজন মহিলা পুরুষের সমকক্ষ, সমতুল্য হিসেবে সব কাজ করতেই পারেন। সেদিক থেকে তাঁকে শুধু মহিলা বলে. কোনও কাজে বাধা দেওয়ার যুক্তি নেই। কিন্তু বাধাটা অন্য জায়গায়। সেটা আবার শুধু একজন মহিলাকে নয়, একজন পুরুষকেও ধূমপান করতে নিষেধ করা দরকার। তামাক সেবন, স্মোকিং বন্ধ হওয়াই উচিত, এর থেকেই ক্যানসারের আশঙ্কা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
আইন করে ধূমপান বন্ধ করা সম্ভব?
আইন করেই শেষ নয়, আইন মানা হলে সম্ভব। কারণ আইন তো রয়েছেই। কেন্দ্রীয় সরকারের কোটপা (সিগারেট অ্যান্ড আদার টোব্যাকো প্রডাক্ট অ্যাক্ট ২০১৫) অ্যাক্ট অনুযায়ী পাবলিক স্পেসে ধূমপান নিষিদ্ধ, স্কুলের ১০০ গজের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করা যাবে না। জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টে এই নির্দেশিকাও আনছে স্কুল শিক্ষার্থীদের তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে ৭ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডও হতে পারে। এটা আমরা সমর্থন জানাচ্ছি। তবে মনে রাখতে হবে আইন মেনে চলতে হবে।
সচেতনতা ছাড়া তো তা সম্ভব নয়?
অবশ্যই। সচেতনতাই পারে একজন সাধারণ নাগরিককে আদর্শ নাগরিক করে তুলতে। আইন তো রয়েছেই পাবলিক স্পেসে স্মোক করা যাবে না। অথচ আমরা দেখি একজন রাস্তায় ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে তাকে পুলিশ জরিমানা দিতে বাধ্য করেন। এটা স্মোকিংয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
আইন অনুসারে স্কুল কলেজেও ধূমপান করা যায় না, অথচ অনেকেই করে। আবার এই একই শিক্ষার্থীকে দেখা যায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধূমপান করা যাবে না বলে করছে না।
সে সেখানে আইনটা মেনে চলছে কারণ সে বাধ্য।
একই ব্যক্তি একই আইনের দু’ক্ষেত্রে দু’ধরনের প্রয়োগ করছে, অথচ ধূমপানের বিরুদ্ধে না হয় নজরদারি, না হয় ফাইন। তাই আমার মতে আইনের যথাযথ প্রয়োগটা জরুরি।
অনেকে নাকি চেষ্টা করেও এ নেশার হাত থেকে মুক্তি পান না?
এই কথাটা আংশিক সত্যি। আংশিক বললাম কারণ চেষ্টা না করলে ছাড়া সম্ভব নয়। টোব্যাকো এমন একটা নেশা যা আসক্তি তৈরি করে।
একবার এই নেশা শুরু করলে ছাড়াটা সত্যি অত সহজ নয়। ছাড়তে গেলে মানসিক জোর লাগে। এমন অনেককে আমি চিনি যাঁরা বহুবার সিগারেট ছেড়েছেন, পুনরায় ধূমপান শুরু করেছেন।
বিভিন্ন দেশে শুধু মেয়েদের জন্য ধূমপান ব্যানড হয়েছে। তেমন কিছু এদেশে তো হয়নি?
না হয়নি। কেউ ভাবতেই পারেন আইনত টোব্যাকো আমাদের দেশে ব্যানড হয়নি, তাহলে কেন ধূমপান করব না! যদিও গুটখা ব্যানড হয়েছে। সেটা সেবন করা মানে আইন ভাঙা, ফলে অনেকে গুটখা সেবন করেন না বা কম করেন। আবার আইনকে তোয়াক্কা না করা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু এমন কিছু এখনও পর্যন্ত ধূমপানের ক্ষেত্রে হয়নি।
আগেই বলেছি ক্ষতিটা শুধু মেয়েদের নয়, ছেলে-মেয়ে সবার। তাই সবাইকেই সচেতন হতে হবে, ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। মেয়েদের খেয়াল রাখতে হবে জেনেশুনে নিজেদের ক্ষতি করলে কেউ বাধা হয়তো দিতে পারে না, কিন্তু জেনেবুঝে অন্যের ক্ষতি করার অধিকার কারওর নেই।
ধূমপান থেকে তো পরিবেশেরও সমান ক্ষতি হচ্ছে?
এমনিতে তো দূষণ বাড়ছে, কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড বাড়ছে। তার সঙ্গে এই ধূমপান। রাস্তাঘাটে, পাবলিক স্পেসে, এমনকী কর্পোরেট অফিসেও ধূমপান ক্রমশ বাড়ছে। বছর ১০-১২ আগেও গৃহিণীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের রোগী অতটা পেতাম না, যেটা এখন খুব বেড়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কিন্তু বেশ জটিল। রাজ্য সরকারকেও অনুরোধ করছি, আইনের সঠিক প্রয়োগের দিকটা যেন উপেক্ষিত না হয়।
চিকিৎসার দ্বারা ধূমপান ছাড়ানো কি সম্ভব?
এখন নিকোটিন প্যাচ ব্যবহার করে ধূমপান ছাড়ার পদ্ধতি রয়েছে। তবে আমি চিকিৎসক হিসেবে মনে করি, ওইভাবে জোর করে ধূমপান ছাড়ানো সম্ভব নয়। যিনি ধূমপায়ী তাঁকে বুঝতে হবে, এটা শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর। তাঁর একার ক্ষতিই শুধু নয়, তাঁর পরিবার-পরিজন, তাঁর কাছাকাছি যাঁরা থাকেন তাঁদেরও ক্ষতি। মানসিক জোর থেকেই আর ধূমপান করব না ভেবে ছেড়ে দিতে হবে।
মনে রাখবেন, তামাকের অন্য নাম ক্যানসার। নানা ভাবে এটা খাওয়া যায়। তামাক চিবিয়ে, প্যাকেটজাত নানা নেশার দ্রব্য কিনে একসঙ্গে অনেকে খান। তামাক থেকে কিন্তু কারও উন্নতি হয়নি একমাত্র সেই উৎপাদক সংস্থা ছাড়া। তাই ধূমপান ছাড়ুন, সুস্থ থাকুন।
সাক্ষাৎকার: শেরী