Daffodil International University

Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Topic started by: BRE SALAM SONY on April 10, 2016, 09:24:21 PM

Title: বিভিন্ন ইসলামীক মাসলা-মাসায়েল ও প্রশ্ন উত্তর বিভাগ [ http://zilhajjgroup.com ]
Post by: BRE SALAM SONY on April 10, 2016, 09:24:21 PM
বিভিন্ন ইসলামীক মাসলা-মাসায়েল
জীবন জিজ্ঞাসা : এ সংখ্যার উত্তর দিয়েছেন : মুফতি সাহেব, মারকাজুল ইসলাম
রশ্ন : অনেক সময় মাদরাসার হুজুরদেরকে যাকাতের টাকা কালেকশনের সময় যাকাতদাতা পৃথকভাবে কিছু টাকা হাদিয়া দেয়। উক্ত হাদিয়া গ্রহণ করা জায়িয আছে কিনা?
উত্তর : না, উক্ত হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে না। তবে যদি তাদের মাঝে পূর্ব থেকে হাদিয়ার আদান প্রদান হয়ে থাকে, তাহলে গ্রহণ করা যাবে। তথাপি গ্রহণ না করাই উত্তম। [সহীহ বুখারী : ২/১০৬৪, সহীহ মুসলিম : ২/১২৩, ফাতহুল কাদীর : ৬/৩৭১, আদ-দুররুল মুখতার : ৮/৪৯, ইমদাদুল মুফতিয়ীন : ৮৮৩ পৃ:]

খালেদ, ঢাকা।
প্রশ্ন : এক লোক এক লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রাখে। পাঁচ বছর পর মুনাফাসহ এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা পায়। মুনাফা  বাবদ প্রাপ্ত এ পঞ্চাশ হাজার টাকার যাকাত দিতে হবে কিনা?
উত্তর : বর্ণিত ৫০ হাজার টাকার পুরোটাই সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া যাকাতের হকদারদের মধ্যে বন্টন করে দিতে হবে। নিজে ভোগ করা জায়িয হবে না। অতএব এর যাকাত প্রদানের প্রসঙ্গ রইলো না। [আদ্-দুররুল মুখতার : ৩/২১৮, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ২/২৮৯, ফাতাওয়া বাযযাযিয়া আলা হামেশে হিন্দিয়া : ৪/৮৬, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৮৩, ইমদাদুল মুফতিয়ীন : ২/১৫]

ছাইফুল ইসলাম, চাঁদপুর।
প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তির হাতে মাদরাসার গোরাবা ফান্ডের কিছু টাকা ছিলো। এক সময় বিশেষ প্রয়োজনে তিনি সেই টাকা ব্যক্তিগত কাজে খরচ করে ফেলেন। অবশ্য পরবর্তীতে তা দিয়ে দিয়েছেন। এভাবে ব্যক্তিগত কাজে গোরাবা ফান্ডের টাকা ব্যায় করাতে তার গুনাহ হয়েছেকিনা?
উত্তর : গোরাবা ফান্ডের টাকা ব্যক্তিগত কাজে লাগানো জায়িয নেই। যতো দ্রুত সম্ভব তা গরীবদের দিয়ে দেয়া চাই। কাজেই প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি গুনাহগার হয়েছে। ভবিষ্যতে আর এমনটি করবে না। [আদ-দুররুল মুখতার : ৩/১৮৮, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ২/৮৯১, খুলাছাতুল ফাতাওয়া : ১/২৪৪]

আব্দুল আউয়াল, নারায়ণগঞ্জ।
প্রশ্ন : মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিলে তা  গ্রহণযোগ্য হবে কিনা?
উত্তর : সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত হলো, কাযী বা বিচারকের সামনে সাক্ষী সশরীরে উপস্থিত থাকা। তাই ফোনে সাক্ষ্য দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। [জাদীদ ফিকহী মাসায়িল : ১/৪৫২, আদ-দুররুল মুখতার : ৫/৪৬১, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৩/৪৫, আল-বাহরুর রায়িক : ৭/৫৬, ফাতহুল কাদীর : ৬/৪৪৬]

আনিছুর রহমান, পাবনা।
প্রশ্ন : হাদিসে সকাল-বিকাল পড়ার ব্যাপারে যে সকল যিকির বর্ণিত আছে, সেগুলো সকাল বিকাল কোন সময় পড়তে হবে?
উত্তর : হাদিসে বর্ণিত সকালে পড়ার যিকির সমূহ ফজরের পর থেকে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত। আর বিকালে পড়ার যিকির সমূহ যোহরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পড়ার অবকাশ আছে। তবে উত্তম হলো, ফজরের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সকালের যিকির সমূহ পড়ে নেয়া। আর আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিকালের যিকির সমূহ পড়া। তবে যেসব দু’আ ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর পড়ার কথা হাদিসে উল্লখ আছে, সেগুলো উল্লিখিত সময়েই পড়তে হবে। [আল আযকার লিন্-নববী : পৃ.৭১,রিয়াযুস সালিহীন : ৩৪৭, তাফসীরে রূহুল মা‘আনী : ১০/১৭৬, কাওয়ায়িদুল ফিক্হ : পৃ: ৩৪৬, পৃ.৪৮১, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : পৃ.৩৫৪, ৫৬৪]

শফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন : যে কোনো এক্সিডেন্টে মৃত্যুবরণকারী এবং অস্বাভাবিকভাবে মৃত ব্যক্তির লাশের পোষ্টমর্টেম করা সরকারী আইনে জরুরি। তাই প্রশ্ন হচ্ছে, এটা জায়িয আছে কিনা?
উত্তর : শরী‘আতে পোষ্টমর্টেম করার অনুমতি নেই। তদন্তের প্রয়োজনে অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবে, পোষ্টমর্টেম নয়। [সুরা বনী ইসরাঈল : ৭০, নিজামুল ফাতাওয়া : ১/৪১৩, আবু দাউদ : ২/১০২, আওযাযুল মাছালিক : ২/৫০৭, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ৬/৩৫৫, আহসানুল ফাতাওয়া : ৮/৩৩৮]

রহমত উল্লাহ, ঢাকা।
প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তি উত্তর দিকে ফিরে পেশাব করে পশ্চিম দিকে ফিরে পানি ব্যবহার করেছে। এভাবে পশ্চিম দিকে ফিরে পানি ব্যবহার করা জায়িয আছে কিনা?
উত্তর : হাজত পূর্ণ করার পর পশ্চিম দিকে ফিরে পানি ব্যবহার করা বেয়াদবী। তাই তা পরিহার করবে। [আদ-দুররুল মুখতার : ১/৫৫৪, মুনইয়াতুল মুসল্লী : ১/১১, আল-বাহরুর রায়িক :১/২৪৩, গুনইয়াতুল মুতামাল্লী : ১/৩৮, কিতাবুল ফিকহী আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আ : ১/৮৮, বাদরুল মুত্তাকী বিহামেশি মাজমায়িল আনহুর : ১/৬৭]

আসমা, গাইবান্ধা।
প্রশ্ন : ৪/৫ মাস গর্ভধারিনী স্ত্রীর পেটে তার স্বামী আঘাত করে। ফলে তার পেট থেকে শুধু হাত পা বিশিষ্ট সন্তান প্রশব হয়ে যায়। এতে মহিলার রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এ অবস্থায় উক্ত রক্ত নিফাস হিসেবে গণ্য হবে নাকি এস্তেহাযা?
উত্তর : নিফাস হিসাবে গণ্য হবে। [আল-হিদায়া : ১/৭০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৩৭, তাবয়ীনুল হাকায়িক : ১/৬৭, আল-বাহরুর রায়িক : ১/৩১৮, ফাতাওয়া তাতারখানিয়াহ : ১/৩৯২]
তরিকুল ইসলাম, লাকসাম।
প্রশ্ন : অনেকে মুরব্বী এবং সম্মানী লোকদের পায়ে হাত বুলিয়ে হাতে চুমু খায়। এটা কতোটুকু শরী‘আত সম্মত জানাবেন।
উত্তর : কোনরূপ বদ আকিদা ও ভিন্ন মতাদর্শের বশবর্তী হওয়া ব্যতীত মুরব্বী বা সম্মানী লোকদের পায়ে হাত বুলিয়ে হাতে চুমু খাওয়া জায়িয আছে। খেয়াল রাখতে হবে, পায়ে হাত বুলানোর সময় যেন রুকূ এবং সিজদার সূরত না হয়ে যায়। তথাপি আকিদাগত ফিতনা ও বিভ্রান্তির এযুগে এরূপ করবে না। [আদ-দুররুল মুখতার : ২/৩৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩৬৯, আল-বাহরুর রায়িক : ৮/১৯৮, কিফায়াতুল মুফতী : ৯/১১৫, ফাতাওয়া রশীদিয়া : ১৬৯]

হাবিবুর রহমান, বরগুনা।
প্রশ্ন : যেসব মুসলিম শাসকদের মাঝে ইসলামী আদর্শ নেই, তাদেরকে খলীফাতুল মুসলিমীন বা শুধু খলীফা বলা যাবে কিনা?
উত্তর : ইসলামী পরিভাষায় যেসব গুণাগুণ থাকলে কোন শাসককে খলীফাতুল মুসলিমীন বা আমীরুল মুমিনীন বলা যায়, বর্তমান মুসলিম শাসকদের মধ্যে সেসব গুণাগুণ নেই। তাই তাদেরকে ইসলামী পারিভাষিক উপাধি খলীফাতুল মুসলিমীন বা আমিরুল মুমিনীন বলা যাবে না। [ইযালাতুল খাফা আন খিলাফাতিল খুলাফা : ১/১৯, তাফসীরে ইবনে কাছীর : ১/৭২, তাফসীরে মাযহারী : ১/৪৯, তাফসীরে খাযিন : ১/৪২]

আল আমীন, গাজিপুর।
প্রশ্ন : আমাদের দেশে কুরআনে কারিমের ত্রিশতম পারাটি আম্মাপারা নামে পৃথকভাবে ছাপানো পাওয়া যায়। এটি কুরআন শরিফের তারতীবে ছাপা হয়নি; বরং সম্পূর্ণ বিপরীত তারতীবে ছাপা হয়েছে। আর মকতবে বাচ্চাদেরকে এই আম্মাপারাই পড়ানো হয় এবং কুরআনে কারিমের বিপরীত তারতীবে পড়ানো হয়। এব্যাপারে শরয়ী দৃষ্টিভঙ্গী কি?
উত্তর : বাচ্চাদের শিক্ষার সুবিধার্থে এভাবে ছাপানো এবং পড়ানো দুটিই জায়িয আছে। তবে তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যে উল্টোভাবে পড়ার অনুমতি নেই। [আদ-দুররুল মুখতার : ১/৫৪৬, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ১/৬৯৬,  ফাতাওয়া রাহীমিয়া : ১/১৯-২০, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১/১৩-১৭, আহছানুল ফাতাওয়া : ৮/১৭]

মোবারক হোসেন, নেত্রকোণা।
প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তির জানা আছে সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। সে প্রতিদিন ফজরের নামাযের পর হাটতে হাটতে সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করে। এসময় অনেকে তাকে সালাম দেয়। সালামের জওয়াব দিতে গেলে তিলাওয়াতের ব্যাঘাত ঘটে। এ অবস্থায় সালামের উত্তর দেওয়া জরুরি কিনা?
উত্তর : না, তিলাওয়াতকারীর উপর সালামের উত্তর দেওয়া জরুরি নয়।  [ফাতাওয়া শামী : ১/৬১৮, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ৩/৫৭৮, আল-বাহরুর রায়িক : ২/৯, তাবয়ীনুল হাকায়িক : ১/৫৭]

রফিকুল ইসলাম, তুরাগ, ঢাকা।
প্রশ্ন : শুনেছি মসজিদের উপরতলার প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর চেয়ে নীচতলার শেষ কাতারে দাঁড়ানোর সাওয়াব বেশি। কথাটি সঠিক কিনা জানাবেন।
উত্তর : হ্যাঁ, আপনার শ্র“ত কথাটি সঠিক। [আদ-দুররুল মুখতার : ১/৫৬৯-৫৭০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৭৯, আল-বাহরুর রায়িক : ১/৩৫৪, হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ : পৃ. ১২৮]

বেলাল হাওলাদার, নীলফামারী।
প্রশ্ন : যদি কেউ অতি বৃদ্ধ হওয়ার দরুণ নিজের শরীরের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করতে সক্ষম না হয়, তাহলে তার জন্য করণীয় কি?
উত্তর : এ অবস্থায় সে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মাধ্যমে পরিষ্কার করে নিবে। আর যদি স্ত্রী না থাকে বা স্ত্রীও যদি অক্ষম হয়, তাহলে বর্তমানে বাজারে যে সব লোমনাশক ক্রীম, জেলী ইত্যাদি পাওয়া যায়, এসব ব্যবহার করে পরিষ্কার করে নিবে। [বাদায়িউস সানায়িউ : ৫/১১৯, ফাতাওয়া শামী : ৯/৫৪৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩৫৮, আল মুহীতুল বুরহানী : ৬/৭০, আল-বাহরুর রায়িক : ৮/১৯২]

আব্দুল কাদির, শেরপুর।
প্রশ্ন : রাস্তা ঘাটে অনেক ভেল্কিবাজ ভেল্কির খেলা দেখায়। এসব দেখা জায়িয কিনা জানাবেন।
উত্তর : না, এসমস্ত ভেল্কিবাজী দেখা জায়িয নেই। [সূরা লুকমান : ৬, মুকাদ্দিমাতু দুররিল মুখতার : ১/১২৭, ফাতাওয়া শামী: ৬/৩৯০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩৫২, আল-হিদায়া : ৪/৪৭৫, ফাতাওয়া রহীমিয়া : ৭/২৭৭]

বিলকিস আকার, নেত্রকোণা।
প্রশ্ন : গোবর বা নাপাক বস্তু থেকে সৃষ্ট গ্যাস অথবা সরাসরি শুকনো গোবর দিয়ে রান্না করা বস্তু খাওয়া যাবে কিনা?
উত্তর : হ্যাঁ, যাবে। [আল-মুহীতুল বুরহানী : ৭/৩০২, আল-হিদায়া : ৪/৪৬৮, আদ-দুররুল মুখতার : ৯/৫৫২, বাদায়িউস সানায়ি’ : ১/১৯৭]

আব্দুর রাজ্জাক, নাটোর।
প্রশ্ন : কেউ যদি চল্লিশ দিন পর্যন্ত ক্ষুরকার্য না করে, তাহলে তার নামায হবে কি না?
উত্তর : চল্লিশ দিন ক্ষুরকার্য না করার কারণে নামাযে কোনো ক্ষতি হবে না। তবে এমনটি করা মাকরূহে তাহরীমী। তাই এজন্য তার কঠিন গুনাহ হবে। [ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩৫৭, ফাতাওয়া শামী : ২/১৮১, মাজমাউল আনহুর : ২৫৫৬, আল-মুহীতুল বুরহানী : ২১৩]

আক্তার হোসেন, নেত্রকোণা।
প্রশ্ন : হিফজ বিভাগের একজন শিক্ষক ছোট এক ছাত্র দুষ্টুমি করায় শাসনের উদ্দেশ্যে কয়েকটি হালকা বেত্রাঘাত করেন। ঘটনাক্রমে একটি বেত্রাঘাত গলায় লাগে। এতে সে সাথে সাথে মাটিতে পড়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়া হলে সে সেখানে মারা যায়। এমতাবস্থায় উক্ত শিক্ষকের উপর দিয়াত আসবে কিনা?
উত্তর : হ্যাঁ, বর্ণিত অবস্থায় শিক্ষকের উপর দিয়াত ওয়াজিব হবে। [ফাতাওয়া শামী : ৪/৬৪৯, ফাতহুল কাদীর : ৫/১১৯, কিতাবুল ফিকহি আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আ : ৫/২৫৮, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া  আদিল্লাতুহু : ৬/৩১১]
জয়নুল আবেদীন, রাঙ্গামাটি।
প্রশ্ন : যেসব লোক উলামায়ে কিরামের সমালোচনা করে, গালিগালাজ করে, তাদেরকে সালাম দেয়া তাদের সালামের উত্তর দেয়া যাবে কিনা?
উত্তর : শরয়ী কোনো কারণ ব্যতীত উলামায়ে কিরামকে গালমন্দকারী ফাসিক। এতে কোনো সন্দেহ নেই। বরং এতে তার ঈমান চলে যাওয়ারও সমূহ আশংকা রয়েছে। কাজেই তার প্রতি শ্রদ্ধা বা সম্মান প্রদর্শন হয় এমন যে কোনো কাজ করা মাকরূহে তাহারীমী। কেননা তারা কেবল লাঞ্ছনা বঞ্চনা আর অপমান পাওয়ার যোগ্য। আর ফাসিককে সালাম দেয়া তাকে সম্মান প্রদর্শনের নামান্তর। তাই উলামায়ে কিরামের গালমন্দকারীকে সালাম দেয়া মাকরূহে তাহরীমী। এমন ব্যক্তি সালাম দিলে তার উত্তর দেয়াও জরুরি নয়। [আদ-দুররুল মুখতার মাআ ফাতাওয়া শামী : ৬/৪১৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ২/২৭০; ২/৩২৬, আল-বাহরুর রায়িক : ১২৩/৫, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ৭/৪১৪]

নূরুল হুদা, পাবনা।
প্রশ্ন : একসাথে ৮/৯ টি ডিম সিদ্ধ করা হয়। পাত্র থেকে ডিম উঠানোর পর জানা যায়, দুইটি ডিম নষ্ট ছিলো। এখন বাকী ডিমগুলো একসাথে সিদ্ধ হওয়ার দরুণ খেতে কোন সমস্যা আছে কিনা?
উত্তর : বর্ণিত অবস্থায় ভালো ডিমগুলো ফাটা না হলে তা খেতে কোনো সমস্যা নেই। তবে সব সময়ই ডিম সিদ্ধ করার পূর্বে তা পঁচা কিনা দেখে নিবে। [আদ-দুররুল মুখতার : ১/৫৪৪, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১/৩১২, ফাতহুল কাদীর : ১/১৮৫, আল-মুহীতুল বুরহানী : ১/২২৭, কিতাবিল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আ : ১/২৩]

মুহাম্মদ যুবায়ের, দিনাজপুর।
প্রশ্ন : দ্বীনের ব্যাপারে পরামর্শ করা ফরয। আর দুনিয়ার ব্যাপারে পরামর্শ করা মুস্তাহব। কথাটি কতোটুকু সঠিক?
উত্তর : কুরআনে কারিম ও পবিত্র হাদিসের মাধ্যমে জানা যায় যে, এমন বিষয় যেখানে ভিন্ন ভিন্ন রায় বা মতামতের সম্ভাবনা রয়েছে, চাই তা রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে হোক বা অন্য কোনো ব্যাপারে হোক সেক্ষেত্রে পরস্পরে পরামর্শ করা হুজুর সা. ও সাহাবায়ে কিরাম রা. এর সুন্নাত। এতে দুনিয়া ও আখিরাতে বরকতও লাভ হয়। আর যে বিষয় জনসাধারণের সাথে সম্পৃক্ত যেমন রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয় সেক্ষেত্রে পরামর্শ করা ওয়াজিব।
একটি বিষয় জেনে রাখা জরুরি যে, পরামর্শ শুধু এমন ক্ষেত্রেই সুন্নাত যে ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদিসের স্পষ্ট কোনো নির্দেশ নেই। যেখানে স্পষ্ট শরয়ী হুকুম রয়েছে, সেখানে কারো সাথে পরামর্শের প্রয়োজন নেই। এমনকি তা জায়িযও নেই। পরামর্শ শুধু দুনিয়াবী ব্যাপারে নয় বরং যে শরয়ী আহকামের ব্যাপারে ইসলামী শরীআতে স্পষ্ট বিধান নেই সে সবের বেলায়ও পরামর্শ করা সুন্নাত। [মূল : তাফসীরে কুরতুবী : ৪/২৫০-২৫১,  মাআরিফুল কুরআন : ২/২১৯-২২০, আহকামুল কুরআন : ২/৬৫-৬৮, মাআরিফুল কুরআন : মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ. : ২/২১৯-২২০, মাআরিফুল কুরআন : মাওলানা মুহাম্মদ ইদরীস কান্ধালবী রহ. : ২/৭৮, তাফসীরে ইবনে কাছীর : ১/৩৯৭]

শাখাওয়াত, মাগুরা।
প্রশ্ন : কোনো এলাকার জনৈক মাওলানা সাহেব বলেছেন, সকাল-বিকাল সুরায়ে হাশরের শেষের তিন আয়াত তিলাওয়াত করার সময়                                            তিন বার

পড়ে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। একথাটি সঠিক কিনা দলীলসহ জানতে চাই।
উত্তর : না, সঠিক নয়। কেননা, যে হাদিসে সকাল-বিকাল সুরায়ে হাশরের শেষের তিন আয়াত পড়ার কথা বলা হয়েছে, সে হাদিসে এর পর বিসমিল্লাহ পড়ার কথা উল্লেখ নেই। [তাফসীরে ইবনে কাছীর : ৪/৩৪৪, তিরমিযী : ২/১২০, তাফসীরে রুহুল মা‘আনী : ১৪/৬৪, তাফসীরে মাযহারী : ৯/২৫৭]

আব্দুর রহীম, ঢাকা।
প্রশ্ন : ক্রামবোর্ড খেলার ব্যাপারে শরয়ী বিধান কি?
উত্তর : ক্রামবোর্ড খেলা নাজায়িয। [আদ-দুররুল মুখতার : ৯/৫৬৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩৫২, ফাতহুল কাদীর : ৮/৮৯৪, বাদায়িউস সানায়ি’ : ৫/১২৭, আল-বাহরুর রায়িক : ৮/২০৭, আপ কে মাসায়িল আওর উনকা হল : ৪/৩২৯, আল-ফিককুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ৩/৫৭১]

আব্দুস সাত্তার, সাতক্ষীরা।
প্রশ্ন : যদি কারো দাঁত স্বর্ণ বা রূপা দ্বারা বাঁধাইকৃত হয়, তবে মৃত্যুর পর তা খুলে দাফন করতে হবে কিনা?
উত্তর : যদি দাঁত মুখ থেকে বের করা কঠিন হয় এবং এর কারণে মৃত ব্যক্তির অসম্মানী হয়, তাহলে সেটি সহই দাফন করবে। অন্যথায় খুলে রেখে দাফন করবে। [আদ-দুররুল মুখতার : ২/২৩৮, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহ : ২/৫২৯, ফাতহুল কাদীর : ২/১০২, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৪১]

জাকির, কুমিল্লা।
প্রশ্ন : আমার তাবীজের  উপর আরবী অক্ষরে আল্লাহ লেখা রয়েছে, তা গলায় ঝুলিয়ে পড়তে হয়। এখন যদি আমি উক্ত তাবীজ নিয়ে বাথরুমে যাওয়ার সময় কাপড়ের নীচে লুকিয়ে যাই, তাহলে কোনো সমস্যা হবে কিনা?
উত্তর : না, এতে কোনো সমস্যা হবে না। তবে তা খুলে রেখে যাওয়াই উত্তম। [হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ : ফ. ৩, মিশকাত শরীফ : ১/৪২, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ১/২০২, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৫০, মিরকাতুল মাছাবীহ : ১/৩৫৩]

রফিকুল হক, বাগেরহাট।
প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তি প্রতি বছর তার পিতার মাগফিরাত কামনায় ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে ফকীর-মিসকীন ও আলিম-উলামাদের জন্য দাওয়াতের আয়োজন করে। তবে তা তার পিতার মৃত্যুর তারিখে না করে একদিন আগে বা পরে করে। এভাবে ইসালে সাওয়াবের অনুষ্ঠান করা জায়িয হবে কিনা?
উত্তর : মৃত ব্যক্তির জন্য ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্য কোনো দিন তারিখ জরুরি মনে না করে গরীব-মিসকীনদের খাওয়ানো যাবে। এমনকি মাইয়িতের মাগফিরাতের জন্য মাঝে মাঝে এ ধরনের খাওয়ানো ভালো। তবে ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করে বিনিময় লেনদেন করা নাজায়িয ও হারাম। তাই তা করবে না। [ফাতাওয়া শামী : ৩/১৪৮, আল-বাহরুর রায়িক : ২/১৯২, বাদরুল মুত্তাকী লি হামিশে মাজমায়িল আনহুর : ১/১৮৭]

রিজওয়ান আহমেদ, ভোলা।
প্রশ্ন : এক স্থান হতে অন্য স্থানে ডাক যোগে কুরআন শরিফ পাঠালে গুনাহ হবে কিনা জানাবেন।
উত্তর : প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে যথাযথ ইহতিরামের সাথে ডাক যোগে কুরআন শরিফ পাঠালে কোনো গুনাহ হবে না। তবে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কুরআন শরিফ ডাকে পাঠাবে না। [ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/২২৩, ফাতাওয়া বাযাযিয়াহ আলা হামিশিল হিন্দিয়া : ৬/৩৭৭, ফাতাওয়া খানিয়াহ : ৪/৩৭৮, আল মুহীতুল বুরহানী : ৭/৫০]
Title: Re: বিভিন্ন ইসলামীক মাসলা-মাসায়েল ও প্রশ্ন উত্তর বিভাগ [ http://zilhajjgroup.com ]
Post by: BRE SALAM SONY on April 10, 2016, 09:27:44 PM
 (http://zilhajjgroup.com)
মোবাইলের সঠিক ব্যবহার ও জরুরি মাসায়েল : মুফতি নাজমুল হাসান
[/url]


আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক নব আবিস্কার হলো মোবাইল ফোন। বাদশাহ ফকির, নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, শিশু-কিশোর সকলের হাতেই এখন মোবাইল। কেমন যেন, মোবাইল ফোনটি আজকাল জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর মানুষের জীবনকে করেছে গতিময়। আগের যামানায় যে কাজে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হত, বর্তমানে তা মুহূর্তের মধ্যে হয়ে যায়। এদিকে লক্ষ করলে বুঝে আসে মোবাইল অত্যন্ত জরুরি একটি জিনিস। কিন্তু একথা সত্য যে, মোবাইল ফোনের ব্যবহার কারো কারো জন্য অভিশাপের কারণ। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এর শিকার। অনেকের মোবাইল তো অশ্লীলতা ও বেহায়াপনায় ভরপুর। শুধু মোবাইলই নয়, রেডিও, টেপরেকর্ড, অডিও, ভিডিও, ক্যামেরা, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেটের সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে মহামূল্যবান সময় নষ্ট করছে কত মানুষ। ভিডিও ফিল্ম দেখে, চলতে ফিরতে গান শুনে ইন্টারনেটে অশ্লীল ছবি দেখে নিজের চারিত্রকে ধ্বংস করছে। মোবাইল ফোন একজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষার উজ্জ্বল আলো থেকে বঞ্চিত করে মূর্খতার ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত করছে। ধ্বংস করে দিচ্ছে তার মহামূল্যবান জীবন সম্পদ কে। তাছাড়া যারা প্রয়োজনে মোবাইল ব্যবহার করে তাদের কেউ কেউ কিছু জিনিসের ক্ষেত্রে শরয়ী সীমা-রেখাকে  স্থির রাখেনা এবং তাদের দ্বারা কী ভুল ভ্রান্তি হয় তাও বুঝে না। মোবাইল ফোনের এসব ভয়াবহ ক্ষতি খারাবের প্রতি ইঙ্গিত, জনসাধারণের নিকট মোবাইল সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান ও মাসআলা-মাসায়েল উপস্থাপন করাই হলো এ লিখনির মূল উদ্দশ্য। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন। প্রিয় পাঠক! আল্লাহ তাআলার মনোনীত ধর্ম একমাত্র ইসলাম। আর কেয়ামত পর্যন্ত যাবতীয় সমস্যার শরয়ী সমাধান একমাত্র ইসলাম ধর্মেই পাওয়া যায়। আধুনিক সকল মাসআলা-মাসায়েলের সমাধান দিতে ইসলাম সম্পূর্ণ সক্ষম। আর বিজ্ঞানের একটি নব আবিস্কার হলো মোবাইল ফোন, যার সাথে শরিয়তের অনেক মাসআলা মাসায়েলের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সে মাসআলাগুলো মোবাইল ব্যবহারকারী প্রতিটি মুসলিম ভাইদের জানা অত্যন্ত জরুরি। যাতে এ সমস্ত মাসআলা মাসায়েল জেনে মোবাইলের ভয়াবহ ক্ষতি ও অপব্যবহার থেকে বাঁচতে পারে এবং শরিয়াতের অন্যতম উসুল ‘‘যতটুকু দ্বারা প্রয়োজন পূরণ হয় ততটুকু করা” এর উপর আমল করে মোবাইলের সঠিক ব্যবহার জানতে পারে। মাওলানা মানসুরপুরী সাহেব মোবাইলের ব্যবহার নীতির উপর মূল্যবান ছোট্ট একটি রেসালা উর্দু ভাষায় রচনা করেছেন, যার অনুবাদ করেছেন ইবরাহিম খলীল সাহেব, এতে মোটামুটি মোবাইলের জরুরি মাসআলাগুলো লেখা হয়েছে। সেখান থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে এখানে তুলে ধরা হলো-

নামাজের মধ্যে মোবাইল ফোন বন্ধ করা নামাজ শুরু করার পূর্বেই মোবাইলের রিংটোনটি বন্ধ করে নেয়া আবশ্যক। এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে অভ্যাসে পরিণত করা চাই। তবে যদি ভুলবশত বন্ধ না করে নামাজ শুরু করে আর নামাজে তা বেজে উঠে, তখন  মোবাইলটি পকেটে রেখেই এক হাত দিয়ে বন্ধ করবে। এর দ্বারা নামাজে কোন রকমের সমস্যা হবে না। আর মোবাইল বন্ধ করার জন্য নামাজ ছেড়ে দেয়ার প্রয়োজন নাই। [বাহরুর রায়েক : ২/১১] নামাজে বারবার মোবাইল বাজা যদি একবার বন্ধ করার পর (অর্থাৎ একবার পকেটে হাত দিয়ে কল কেটে দেয়ার পর) যদি আবার বেজে উঠে, তাহলে আমলে কালিলের মাধ্যমে তিনবার পর্যন্ত কল বন্ধ করা যেতে পারে। তবে শর্ত হলো- এ বন্ধ করাটা যাতে আমলে কাছিরের সীমা পর্যন্ত গিয়ে না পৌঁছে। যদি আমলে কাছির হয়ে যায়, তাহলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে। [মাজমাউল আনহার : ১/১২] আমলে কালিল ও আমলে কাছির নামাজে আমলে কালিল ও আমলে কাছির নির্ধারণের ব্যাপারে ফোকাহায়ে কেরামের বিভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যায়। তন্মধ্যে গ্রহণযোগ্য মত হলো আমলে কাছির বলা হয়- নামাজে এমন কোন কাজ করা যার দ্বারা নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। অযথা এমন কোন কাজ করা, যা দেখে সামাজের বাহিরের লোকদের প্রবল ধারণা হয় যে, লোকটি নামাজে নেই। তবে যদি মুসল্লির কাজটি এ পর্যায়ের না হয়। তাহলে তাকে আমলে কালিল বলা হয়। [শামী : ১/৪৩] মোবাইল বন্ধ করার জন্য নামাজ ভেঙ্গে ফেলা যদি আমলে কালিলের মাধ্যমে মোবাইল বন্ধ করা সম্ভব না হয়, আর তা বাজতে থাকার কারণে নিজের ও অন্যান্য মুসল্লিদের নামাজে সমস্যা হয়, তাহলে শুধু একারণে নামাজ ছেড়ে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করা জায়েয নেই। কারণ নামাজ ছেড়ে দেয়ার অনুমতি শুধু বিশেষ কিছু ওযরের কারনে হয়ে থাকে। আর নামাজে একাগ্রতায় সমস্যা হওয়া এমন কোন শরয়ী ওযর নয়, যার কারনে নামাজ ছেড়ে দেয়ার অবকাশ রয়েছে। [শামী : ১/৪৪] রিংটোন হিসেবে আযান বা কুরআনের আয়াত সেভ করা রিংটোন দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করা যে, কোন ব্যক্তি আপনার সাথে আলাপ করার আশা করছে। বিষয়টি কেমন যেন দরজায় আওয়াজ করার মত। সুতরাং এজন্য কুরআনের আয়াত অথবা আযানের আওয়াজকে ব্যবহার করার কোন যৌক্তিকতা নেই, বরং এক হিসেবে এর দ্বারা কালামে পাক ও আযানের মান ক্ষুন্ন হয়। তাই এর ভিত্তিতে ফোকাহায়ে কেরাম এ ধরণের উদ্দেশ্য হাসিলের ক্ষেত্রে যিকিরের শব্দগুলো ব্যবহার করাও না জায়েয বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং ফোকাহায়ে কেরামের ঘোষণা অনুযায়ী মোবাইলে রিংটোন হিসেবে আযান, কুরআনে কারিমের আয়াত ও হামদ-নাম ইত্যাদি সেভ করা ঠিক হবে না। অনেক সময় এমনও হয়ে থাকে যে, কেউ মোবাইল নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করলো, আর সেখানে আয়াতে কারিমার আওয়াজ ভেসে উঠলো এতে কুরআনের অবমাননা হয়। তাই এর থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। [হিন্দিয়া : ৫/৩১৬, আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ের : ৫৩, ইমদাদুল ফাতওয়া : ৩৪৯] রিংটোন হিসেবে গান সেভ করা মোবাইলের রিংটোনে গান বাজানো এবং মিউজিক লাগানো কখনই জায়েয নয় বরং মহাপাপ। [আত তারগিব ওয়াত তারহিব : ৪/১৮৪, শামী জাকারিয়া : ৯/৫৬৬] গান শোনা কোন অস্থাতেই গান শোনা জায়েয নেই চাই মোবাইলের মাধ্যমে হোক কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে হোক। [কুরতুবি : ৭/৫০, শামী জাকারিয়া : ৯/৫৬৬] মোবাইলে ফিল্ম দেখা ফিল্ম দেখা সর্বাবস্থায় নাজায়েয হারাম। চাই মোবাইলে দেখুক কিংবা অন্য কোথাও দেখুক। মোবাইলে ক্রিকেট ম্যাচ দেখা মোবাইল ইত্যাদির মাধ্যমে ক্রিকেট ম্যাচ দেখা অনর্থক সময় অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। অনেক সময় তাতে গুনাহ অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। কারণ খেলার মাঝে মাঝে এমন কিছু অশ্লীল ছবি ও এডভেটাইজ দেখানো হয়, যা দেখার দ্বারা দৃষ্টির হেফাজত সম্ভব হয় না। [ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৪/২৫৭, ফাতাওয়া রাহমানিয়া : ১০/৩২৬] মোবাইলে গেমস খেলা মোবাইলে গেমস খেলা মানে নিজের অমূল্য সম্পদ সময়কে অপচয় করা। তাই তা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। [শুয়াবুল ঈমান : হা. ৪৯৮৭] মোবাইলের মাধ্যমে দ্বীনী বয়ান শোনা মোবাইলের মাধ্যমে দ্বীনী বয়ান হামদ-নাত ইত্যাদি শোনা জায়েয। তবে শর্ত হলো তাতে কোন ছবি না থাকা। [ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৫/২৪৯, কিফায়াতুল মুফতি : ৯/২০৭] মোবাইলে মিস্ডকল দেয়া মিস্ডকল করার ক্ষেত্রে একটু ব্যাখ্য রয়েছে, যদি এমন ব্যক্তিকে মিস্ডকল করা হয় যার সাথে তার অন্তরঙ্গতা রয়েছে কিংবা মিস্ডকল দিলে খারাপ মনে করবে না; বরং তার সাথে কল মিলাবে, তাহলে এমন ব্যক্তিকে মিস্ডকল দিতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি কোন অপরিচিত লোক হয়, অথবা এমন কোন লোক হয় যাকে মিস্ডকল দিলে খারাপ মনে করবে, তাহলে এমন লোককে মিস্ডকল দেয়া ঠিক হবে না। [রুহুল মায়ানি : ১০/৩২৩] বিরক্ত করা মোবাইলে রিং দিয়ে কাউকে বিরক্ত করা বা কষ্ট দেয়া মস্পূর্ণ না জায়েয। [বুখারি]
Title: Re: বিভিন্ন ইসলামীক মাসলা-মাসায়েল ও প্রশ্ন উত্তর বিভাগ [ http://zilhajjgroup.com ]
Post by: BRE SALAM SONY on April 10, 2016, 09:29:12 PM
প্রশ্ন : করয দেয়া টাকার উপর যাকাত আসবে কি না?
আরিফ বিল্লাহ, মাদারগঞ্জ।
উত্তর : করয দেয়া টাকা উসুল হওয়ার পর উক্ত টাকার যাকাত দিতে হবে এবং বিগত বছরসমূহে উক্ত টাকার যাকাত না দিয়ে থাকলে সেই যাকাতও দিতে হবে। তবে কেউ যদি করযের টাকার উসুল হওয়ার পূর্বে প্রতি বছর উক্ত টাকার যাকাত দিয়ে দেয়, তাহলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। [প্রমাণ : আদদুররুল মুখতার : ২/২৬৬,  ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৫,৭৭]
প্রশ্ন : বিভিন্ন সময় দেখা যায় কতক পীরের মুরিদগণ তাদের পীর সাহেবকে ‘কিবলা’  সন্বোধন করে থাকেন। এটা কি বৈধ?                                                  আনোয়ার, পীরগাছা।
উত্তর : উস্তাদ বা পীর সাহেবের উপাধী কিংবা সন্বোধন ‘কিবলা’ শব্দটি না বলাই উচিত। প্রকৃত অর্থের প্রতি লক্ষ্য না করে নিছক সম্মানার্থে এই শব্দটি বলা যেতে পারে। কিন্তু প্রকৃত অর্থ বুঝানোই যদি এই শব্দ ব্যবহারের উদ্দেশ্য হয় তাহলে জায়িয হবে না। [প্রমাণ : ফাতাওয়ায়ে রাশিদিয়া : ৪৬৩, ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৪/২৭৪]
প্রশ্ন : কাজ করা অবস্থায় বা চলাফেরা অবস্থায় জিকির করা বৈধ কি না?                             মারুফ আল কাদির, মুক্তাগাছা।
উত্তর : কাজ করা অবস্থায় বা চলাফেরা অবস্থায় সব ধরনের জিকির করা যায়। [প্রমাণ : মিশকাত শরীফ : ১/৪৯]
প্রশ্ন : কোন ব্যক্তি যদি রাসূলুল্লাহ সা. সম্পর্কে কটূক্তি বা অবমাননামূলক কথা বলে, তবে তার জন্য শরীয়তের বিধান কি?                                             শিব্বির আহমদ, ঢাকা।
উত্তর : রাসূল সা. সম্পর্কে যদি কোন লোক কটূক্তি বা অবমাননাকর কোন কথা বলে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে এবং বিবাহিত হলে তার বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে। তাকে নতুনভাবে কালিমা পড়ে তাওবা পড়তে হবে এবং বিবাহ পড়াতে হবে। গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বার, মাতব্বর ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে জনসম্মুখে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারে। [প্রমান ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ১২/৩৬২,  ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৪/৫৩,  দুররে মুখতার : ৪/২৩১]
প্রশ্ন : ইশার নামাযের সর্বশেষ সময়সীমা রাত কয়টা পর্যন্ত? রাত ১.৩০ মিনিটে ইশার নামাযের জামা’আত করলে তা শুদ্ধ হবে কি?                                            নূর মুহাম্মদ, নেত্রকোনা।
উত্তর : সূর্যাস্তের পর পশ্চিমাকাশে সাদা আভা দূর হবার পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত ইশার ওয়াক্ত থাকে। তবে রাত্রের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করে ইশা পড়ে নেয়া মুস্তাহাব এবং এটিই ইশার নামাযের মুস্তাহাব ওয়াক্ত। অর্ধেক রাত্র পর্যন্ত শরঈ উযর ব্যতীত ইশার নামায বিলম্বিত করে পড়লে তা মাকরূহ হবে। ১.৩০ মিনিট যেহেতু রাত্র দ্বিপ্রহরের পরের সময়। অতএব, বিনা উযরে সে সময় ইশার নামায একাকী পড় বা জামা’আতের সাথে পড়া মাকরূহ। [ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া : ১/২০৭]
প্রশ্ন : আমাদের মহল্লার জনৈক ব্যক্তি বলল, নামাযের মধ্যে অযু ভেঙ্গে গেলে কারো সাথে কথা না বলে পুনরায় অযু করে যে কয় রাকা’আত বাকী ছিল তা পড়ে নিলেই চলবে। নামায পুনরায় শুরু থেকেই পড়তে হবে না। এটা কি সঠিক?
মাসউদুল কাদির,  শেরপুর।
উত্তর : কোন ব্যক্তির নামাযে অযু ভেঙ্গে গেলে সে কোন কথাবার্তা না বলে অযু করে এসে পূর্বের নামাযের সাথে যোগ করে বাকী নামায আদায় করবে, এটা জায়িয। তবে যোগ না করে পুনরায় তাকবীরে তাহরীমা বলে নতুন করে নামায পড়াই উত্তম। অতএব, জনৈক ব্যক্তির কথা ঠিক আছে। তবে নামায শুরু থেকে পড়া উত্তম কথাটিও তার বলে দেয়া ভাল ছিলো।  [প্রমান : নাসবুর রা’য়া ফি তাখরিজিল আহাদিসিল হিদায়া : ২/৫৩-৬৮, তালখিসুল হাবির ফি  তাখরিজিল আহাদিসুর রাফিঈল কাবির : ১/৪৩১ হা. ২]
প্রশ্ন : সকল নামাযে রুকু-সেজদা, বৈঠক-তাশাহ্হুদ আছে কিন্তু জানাযার নামাযে নেই কেন?
রাকিবুল হাসান, চট্টগ্রাম।
উত্তর : জানাযার নামায মূলত মৃত্যু ব্যক্তির আত্মার মাগফিরাত কামানার জন্য দু’আ বিশেষ। আর সে দু’আ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এ পদ্ধতিতেই শিক্ষা দান করেছেন। অর্থা’ উক্ত দু’আর মধ্যে অতিরিক্ত দু’আ বা মুনাজাতের বিধান নেই। মূল কথা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ভাবেই মুর্দার জন্য দু’আ শিখিয়েছেন। এটাই আসল। এর পর আমাদের জন্য অন্য কোন কারন খোঁজার  দরকার নেই। [প্রমান : আল বাহরুর রায়িক : ২/১৮৩, ফাতাওয়া আলমগীরী : ১/১৬৪, বাদায়িউস সানায়ি : ১/৩১৪]
প্রশ্ন : আমাদের এলাকার একজন পীরভক্ত লোক বলেন যে নবীজী নাকি সর্বত্র হাযির নাযির। এটা কতটুকু ঠিক?
মাহমুদুল হাসান কবীর, লালমনিরহাট।
উত্তর : সর্বত্র হাযির নাযির থাকা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার ছিফাত। কোন নবী বা ওলী সব জায়গার হাযির নাযির হতে পারেন না। আল্লাহ তা’আলার ছিফাতের সঙ্গে বান্দাকে মিলানো কুফর ও শিরক। এ ধরনের বিশ্বাস দ্বারা ঈমান চলে যায়। হাদিসে উল্লেখ আছে রাসূল সা. ইরশাদ করেন, তোমরা আমার উপর দরূদ শরীফ পড়লে ফিরিস্তাদের মাধ্যমে তোমাদের নাম ও গোত্রসহ তা আমার নিকট পৌঁছানো হয়। [নাসাঈ শরীফ : ১/১৪৩]
নবী আ. -এর সর্বত্র হাযির নাযির থাকা কুরআন হাদিসের কোথাও নেই।  এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা। [প্রমাণ : মিশকাত শরীফ : ১/৮৬২, জাওয়হিরুল ফিকহ : ১/২১৭, দারিমী শরীফ : ৪১৬, আহসানুল ফাতাওয়া : ১/৩৪৭