Daffodil International University
Science & Information Technology => Science Discussion Forum => Geography => Topic started by: mukul Hossain on May 14, 2016, 05:30:47 PM
-
কেন বাড়ছে বজ্রপাত? কেন বাড়ছে মৃত্যু? এ প্রশ্নে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই বাড়ছে বজ্রপাত। তাপমাত্রা যত বাড়বে বজ্রপাত তত বাড়বে। তবে একটু সচেতন হলেই বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শামীম হাসান ভূঁইয়া বলেন, প্রাকৃতিক কারণেই বজ্রপাত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলে ২০ শতাংশ বজ্রপাত বৃদ্ধি পায়। এ হিসাবে বজ্রপাত প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, রেকর্ড অনুযায়ী ১৯৮১ সাল থেকে দেশে বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই এটা হচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিল
ও মে মাসের তাপমাত্রা স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে বেশি। এ কারণে এবার বজ্রপাতের সংখ্যাও বেশি।
শামীম হাসান ভূঁইয়া জানান, উচ্চ তাপমাত্রার কারণে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়ে আছে। এ কারণে জলীয়বাষ্প যখন এর সংস্পর্শে আসছে বজ্রপাতও আগের তুলনায় বেশি হচ্ছে। তিনি জানান, বজ্রমেঘ বা সিভি ক্লাউডের কারণে বজ্রপাত হয়। যখন জলীয়বাষ্পসহ গরম বাতাস উপরের দিকে ওঠে, জড়তার ভ্রামকের কারণে এ মেঘ অনেক উপরে উঠে সুপারকুল ওয়াটার ড্রপলেস কণায় পরিণত হয়। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে তা নিচে নামে। গরম বাতাসের সংস্পর্শে আবার জলীয়বাষ্পে পরিণত হয়ে উপরে উঠে যায়। এভাবে কয়েক দফায় ওঠানামা করে কণাগুলো। এতে কণাগুলো বৈদ্যুতিক চার্জসম্পন্ন আয়ন কণায় পরিণত হয়ে বিপুল শক্তির বিদ্যুৎ উৎপন্নম্ন করে। পরিভ্রমণকারী কণাগুলো নিষ্ক্রিয় (নিউট্রাল) হওয়ার চেষ্টা করে। ভূপৃষ্ঠের বিপুল পরিমাণ আয়ন ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। তাই ভূপৃষ্ঠ কণাগুলোকে আকর্ষণ করে। এতে কণাগুলো আকাশ থেকে মাটির দিকে ধাবিত হয়। একেই বজ্রপাত বলে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, বজ্র সরাসরি মাটিতে পড়ে না। বিদ্যুৎ পরিবাহীর ওপর পড়ে। এরপর পরিবহন পদ্ধতির মাধ্যমে বজ্রের বিদ্যুৎ মাটিতে চলে গিয়ে নিউট্রাল হয়ে যায়। উঁচু গাছ, ভবন, পাহাড়ের শীর্ষে বজ্র পতিত হয়। বাসাবাড়িতে লাগানো বজ্ররোধী তারের ওপর পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এইচ এম আসাদুল হক বলেন, মানুষের শরীর বিদ্যুৎ পরিবাহী। এ কারণে মানুষের ওপর বজ্র পড়ে। যদি কোনো খোলা স্থানে বজ্র পড়ার মতো কোনো বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ না থাকে আর সেখানে যদি মানুষ থাকে যার উচ্চতা অন্য বিদ্যুৎ পরিবাহীর চেয়ে বেশি তাহলে বজ্র মানুষের ওপর পড়বে।
মোবাইল ফোন ব্যবহার বজ্রপাতের কারণ_ এমন একটি গুজব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও ড. আসাদুল হক জানান, এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, ধাতব বা বিদ্যুৎ পরিবাহীর ওপরই বজ্রপাত হয়। কিন্তু মোবাইল ধাতব পদার্থ দিয়ে বানানো হয় না। এর অভ্যন্তরে যেসব বিদ্যুৎ পরিবাহী তার থাকে সেগুলো বিদ্যুৎ কুপরিবাহী পদার্থ দিয়ে ঢাকা থাকে। তারপরও মোবাইলে যতটা ধাতব পদার্থ থাকে তাতে বজ্রপাতের কোনো কারণ নেই। বরং মোবাইল ফোনের টাওয়ারের কারণে বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমেছে। ড. আসাদুল হক বলেন, খোলা মাঠে মোবাইল ফোনের টাওয়ার থাকলে বজ্র সরাসরি টাওয়ারের ওপর পড়ে। টাওয়ারে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা থাকায় বিদ্যুৎ মাটিতে চলে যায়, ক্ষয়ক্ষতি না ঘটিয়ে।
বজ্রপাতে নিহতদের অধিকাংশ আক্রান্ত হওয়ার সময় খোলা মাঠে ছিলেন কিংবা ক্ষেতে কাজ করছিলেন_ এর কারণ সম্পর্কে আসাদুল হক বলেন, খোলা মাঠে কেউ যদি ধাতব কোনো বস্তু যেমন শাবল, কাস্তে বা ধান মাড়াইয়ে কলে কাজ করেন তাহলে বজ্রস্পৃষ্ট হতে পারেন।
বজ্রপাত থেকে বাঁচতে সতর্কতার বিকল্প নেই। শামীম হাসান বলেন, বজ্রপাত থেকে বাঁচতে হলে মে মাসে যখন আকাশে বিজলি চমকাবে তখন খোলা আকাশের নিচে থাকা যাবে না। বজ্রপাতের সময় বড় গাছের নিচে দাঁড়ানো উচিত নয়। ভেজা কাঠ বিদ্যুৎ পরিবাহী। বড় গাছ এড়িয়ে বৃত্তাকারে এর ৪০ ডিগ্রি দূরে দাঁড়ানো উচিত। ফাঁকা স্থানে থাকলে বজ্রপাতের সময় উবু হয়ে বসে যেতে হবে। নৌকায় বা পানিতে থাকলে শুকনো স্থানে চলে যেতে যাবে। গাড়ির চাকা বিদ্যুৎ কুপরিবাহী রাবারের তৈরি। সে কারণে গাড়ি নিরাপদ। বাসাবাড়িতে বজ্রনিরোধক তার সংযুক্ত করতে হবে নিরাপত্তার জন্য।
গত দু'দিনে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন ৬৩ জন। আর গত ৩৮ দিনে প্রাণ গেছে ১১২ জনের। বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাত হয়। মে মাসে হয় সবচেয়ে বেশি। তবে এ বছর মৃত্যু আগের বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ২০১২ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল বজ্রপাতে।
http://bangla.samakal.net