Daffodil International University

General Category => Common Forum => Topic started by: Mohammad Nazrul Islam on May 25, 2016, 01:17:42 PM

Title: নজরুল পরশে ধন্য আমার মানিকগঞ্জের তেওতা গ্রাম
Post by: Mohammad Nazrul Islam on May 25, 2016, 01:17:42 PM
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা গ্রামটি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সহধর্মীনি আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে প্রমীলার জন্মস্থান।সেই সুবাদে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের চরণাস্পর্শে ধন্য। জানা যায় শ্বশুড়ালয়ে অবস্থান করার সময় তিনি তেওতা জমিদার বাড়ির পুকুরে তিনি সাঁতার কেটতেন, সান বাঁধানো ঘাটে বকুল তলায় বসে বাঁশি বাজাতেন। এখানে বসে তিনি অনেক গান ও কবিতা লিখেছেন।

নজরুলের আগে যমুনা নদীর কূলঘেঁষা সবুজ শ্যামল গাছ পালায় ঢাকা তেওতা গ্রামটিকে বিশিষ্টতা দিয়ে ছিলেন জমিদার শ্যামশংকর রায়। তিনি সেই সময়ে এই গ্রামটিতে একটি দৃষ্টি-নন্দিত নবরত্ন নামের মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সম্ভবত জমিদার সাহেব সুউচ্চ নবরত্ন মঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে যমুনার শীতল জলের ছোঁয়া নিতেন। প্রতি বছর এই মঠকে ঘিরে দোলপূজা আর দুর্গাপূজার রঙিন উৎসব পালিত হতো।

এই দৃষ্টি নন্দিত গ্রামের মেয়ে ছিলেন প্রমীলা। তার বাবার নাম বসন্তকুমার সেন আর মাতার নাম গিরিবালা সেন। প্রমীলার ডাক নাম ছিল দুলি। ছন্নছাড়া, ভবঘুরে প্রেমের কবি নজরুল কয়েক দফায় এসেছিলেন এই গ্রামে। ১৯২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নজরুলের লেখা আনন্দময়ীর আগমনে` কবিতাটি ধুমকেতু পত্রিকায় প্রকাশ হলে ব্রিটিশ সরকার তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করলে প্রমীলাকে নিয়ে তেওতা গ্রামে আত্মগোপন করেন নজরুল।

আত্মগোপনের বেশ কিছু সময় তিনি এখানে অবস্থান করেন। এই সময়টিকে আত্মগোপন বলা যায় না আত্ম-বিকাশও বলা যেতে পারে। তিনি এসময় যমুনার ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা সবুজ শ্যামল পাখিডাকা তেওতা গ্রামে ছুটে বেড়িয়েছেন। গান, কবিতা আর অট্টহাসিতে পুরো গ্রামের মানুষকে আনন্দে মাতিয়েছেন। কখনও বা জমিদার বাড়ির শান বাঁধানো পুকুর ঘাটে জ্যোৎস্না রাতে করুন সুরে বাঁশি বাজিয়ে বিমোহিত করেছে রাতজাগা গ্রামের মানুষকে।

নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী দাবি করছেন, বিয়ের আগেও নজরুল তেওতা গ্রামে এসেছিলেন। জমিদার কিরণশঙ্কর রায়ের আমন্ত্রণে একবার নজরুল তার অতিথি হয়ে আসেন। আর সে সময়ই নজরুল এবং প্রমীলার দেখা হয়েছিল। তখন দুলি (প্রমীলা) ছিলেন জমিদার কিরনশঙ্কর রায়ের স্নেহধন্য। বেড়াতে এসে নজরুল জমিদার বাড়িতে প্রতি রাতেই গান বাজনার আসর বসাতেন। আর সেখানে একমাত্র গায়ক ছিলেন নজরুল। দুলি তখন মাত্র কয়েক বছরের বালিকা। নজরুল গানের ফাঁকে ফাঁকে পান খেতেন। আর দুলির দায়িত্ব ছিল তার হাতে পান তুলে দেয়া। তখন প্রেম ভালোবাসার মত বয়স ছিলনা দুলির।

পরবর্তীতে কুমিল্লায় আবার দুজনের দেখা হয়। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের সাথে প্রমীলা কুমিল্লায় কাকা ইন্দ্রকুমার সেনের কাছে চলে যান নজরুলও তার এক বন্ধূ আলী আকবরের আমন্ত্রনে কুমিল্লায় বেড়াতে আসেন। আলী আকবরের ইচ্ছে ছিল তার ভাগ্নি নার্গিসের সাথে নজরুলের বিয়ে দেওয়ার। কিন্তু স্বাধীনচেতা নজরুলের উপর শর্তারোপের ফলে এই বিয়ে ভেঙ্গে যায়। পরবর্তীতে বিয়ের রাতেই নার্গিসদের বাড়ি থেকে নজরুল অসুস্থ অবস্থায় চলে আসেন ইন্দ্রকুমারের বাড়িতে। এখানে বেশ কিছুদিন থাকার সময় প্রমীলার সঙ্গে নজরুলের প্রেমের সম্পর্ক এবং পরবর্তীতে বিয়ে হয়।

বিয়ের পর তেওতার জমিদার কিরণশঙ্কর রায়ের আমন্ত্রণে নজরুল নববধূকে নিয়ে আবার তেওতায় আসেন। প্রায় দুই সপ্তাহ থাকার সময় জমিদারবাড়িতে নজরুলের গান ও কবিতার আসর বসতো। দর্শকের আসনে জমিদার পরিবারের পাশে প্রমীলাও থাকতো। আর নজরুল যখন `তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সেকি মোর অপরাধ....  অথবা, মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী দেব খোঁপায় তারার ফুল গান গাইতেন তখন লজ্জায় রক্তিম হতেন প্রমীলা।

উল্লেখ্য তেওতার স্মৃতি নিয়েও তিনি অনেক কবিতা গান সৃষ্টি করেছেন বলে রফিকুল ইসলামের গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নজরুলের `লিচু চোর কবিতা`।

ইতিহাস বিশ্লেষনে জানা যায় তেওতার জমিদারদের স্থানীয়ভাবে বলা হতো বাবু। আর তাদের বিশাল পুকুর ঘিরে তাল গাছ থাকায় বলা হতো তালপুকুর। প্রাচীর ডিঙিয়ে এই পুকুর পাড়ের গাছ থেকে একটি বালক লিচু চুরি করতে গিয়ে মালি ও কুকুরের তাড়া খাওয়ার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে নজরুল এই কবিতাটি রচনা করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন। এটি নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলামেরও দাবি।
এছাড়াও তেওতা গ্রামের পাশ দিয়ে যমুনা নদীর স্মৃতিতে বেশ কিছু গান ও কবিতা লিখেছেন। যেমন নীল শাড়ি পড়ে নীল যমুনায় কে যায়। কেন প্রেম যমুনা আজি হলো অধীর। আজি দোল ফাগুনে দোল লেগেছে...বৃন্দাবনে প্রেম যমুনায়। যমুনা কুলে মধুর মধুর মুরলী সখি বাজিল। যমুনা সিনানে চলে তন্বী মরাল। চাঁপা রঙের শাড়ি আমার যমুনা নীর ভরণে গেল ভিজে।

নজরুল তার `ছোট হিটলার` কবিতাতেও তেওতা গ্রামের কথা স্মরণ করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের মাইলাই গ্রামটি কামানের গোলায় বিরাণভূমিতে পরিণত হয়। নজরুল তাঁর দুই ছেলে সব্যসাচী (নিনি) ও অনুরুদ্ধ (সানি)র জবানিতে এই কবিতায় লিখেছেন-

মা গো! আমি যুদ্ধে যাব, নিষেধ কি মা আর মানি?
রাত্তিরে রোজ ঘুমের মাঝে ডাকে পোল্যান্ড, জার্মানি।
ভয় করি না পোলিশদেরে জার্মানির ওই ভাঁওতাকে,
কাঁপিয়ে দিতে পারি আমার মামার বাড়ি তেওতাকে।

ঝাঁকড়া চুল আর মায়াবী চোখের নজরুল এক সময় গান, কবিতা, বাঁশির সুর আর দুরন্তপনায় তেওতা গ্রাম আর তেওতার মানুষকে মাতিয়ে গিয়েছেন। সে সময়কার মানুষেরা এখন আর নেই। কথা বলেতে পারলে হয়ত ধ্বংসের গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা নবরত্ন মঠটি নজরুলকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে পারতো। কিন্তু এটাতো অসম্ভব। তারপরও পূর্ব পুরুষদের মুখের কথায় নজরুল আর প্রমীলা রূপকথার মতই তেওতাবাসীর কাছে জেগে আছেন। সেই সুবাদে ধন্য তেওতা গ্রাম। ধন্য মানিকগঞ্জবাসী। 

নজরুল-প্রমীলার স্মৃতিধন্য তেওতা গ্রামে গত বারের মত এবারও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিনব্যাপী এক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড.শামসুজ্জামান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.রফিকুল্লাহ খান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
Title: Re: নজরুল পরশে ধন্য আমার মানিকগঞ্জের তেওতা গ্রাম
Post by: khyrul on May 31, 2016, 11:33:44 AM
good information.

Title: Re: নজরুল পরশে ধন্য আমার মানিকগঞ্জের তেওতা গ্রাম
Post by: Anuz on June 01, 2016, 12:13:01 PM
Nice to know...........