Daffodil International University

General Category => Common Forum => Topic started by: khyrul on May 25, 2016, 05:30:56 PM

Title: কাজী নজরুলের "রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় দর্শন"
Post by: khyrul on May 25, 2016, 05:30:56 PM
সৈনিক জীবন ত্যাগ করে নজরুল বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে মুজফ্‌ফর আহমদের সাথে বাস করছিলেন। মুজফ্‌ফর আহমদ ছিলেন এদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত। এখান থেকেই তাই নজরুলের রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ শুরু হয়। মুজফ্‌ফর আহমদের সাথে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমিতি ও বক্তৃতায় অংশ নিতেন। এ সময় থেকেই সমাজতান্ত্রিক আদর্শের সাথে পরিচিত হন। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব তাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। তার লাঙ্গল ও গণবাণী পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেন সাম্যবাদী ও সর্বহারা কবিতাগুচ্ছ। এরই সাথে প্রকাশ করেছিলেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল-এর অনুবাদ জাগ অনশন বন্দী ওঠ রে যত- তার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় রেড ফ্ল্যাগ-এর অবলম্বনে রচিত রক্তপতাকার গান।

তখন মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন এবং মাওলানা মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলীর নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন- অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজদের বিতারণ। আর খিলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্কে মধ্যযুগীয় সামন্ত শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা, কারণ এই সমন্বিত সুলতানী শাসন ব্যবস্থার প্রধান তথা তুরস্কের সুলতানকে প্রায় সকল মুসলমানরা মুসলিম বিশ্বের খলীফা জ্ঞান করতো। নজরুল এই দুটি আন্দোলনের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা তথা স্বরাজ অর্জনে বিশ্বাস করতেন যা মহাত্মা গান্ধীর দর্শনের বিপরীত ছিল। আবার মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে তুরস্কের সালতানাত উচ্ছেদের মাধ্যমে নতুন তুরস্ক গড়ে তোলার আন্দোলনের প্রতি নজরুলের সমর্থন ছিল। তারপরও তিনি অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন যোগ দিয়েছিলেন। এর কারণ, এই সংগ্রাম দুটি ভারতীয় হিন্দু মুসলমানদের সম্মিলিত সম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল।

তবে সব দিক বিচারে নজরুল তার রাষ্ট্রীয় ধ্যান ধারণায় সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত হয়েছিলেন কামাল পাশার দ্বারা। নজরুল ভেবেছিলেন তুরস্কের মুসলমানরা তাদের দেশে যা করতে পেরেছে ভারতীয় উপমহাদেশে কেন তা সম্ভব হবেনা? গোড়ামী, রক্ষণশীলতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নজরুলের অবস্থান ছিল কঠোর। আর তার এই অবস্থানের পিছনে সবচেয়ে বড় প্রভাব ছিল কামাল পাশার। সে হিসেবে তার জীবনের নায়ক ছিলেন কামাল পাশা। নজরুলও তার বিদ্রোহী জীবনে অনুরুপ ভূমিকা পালনের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। উল্লেখ্য ১৯২১ সনের সেপ্টেম্বর মাসে মুজফ্‌ফর আহমদ ও নজরুল তালতলা লেনের যে বাসায় ছিলেন সে বাড়িতেই ভারতের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দল গঠিত হয়েছিল। ১৯১৭ সনের রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমেও নজরুল প্রভাবিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে কখনই এই দলের সদস্য হননি, যদিও কমরেড মুজফ্‌ফর তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আজীবন।

১৯২০ এর দশকের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে তিনি অংশ গ্রহণের চেষ্টা করেন। প্রথমে কংগ্রেসে সমর্থন লাভের জন্য তিনি কলকাতা যান। কিন্তু কংগ্রেসের কাছ থেকে তেমন সাড়া না পেয়ে তিনি একাই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন। নির্বাচনে তিনি তেমন সাফল্য পাননি। এরপর সাহিত্যের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক চিন্তার বহিপ্রকাশ অব্যাহত থাকলেও রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ কমে যায়।

তথ্যসূত্র: (উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে)