Daffodil International University
Health Tips => Health Tips => Psychological Disorder => Topic started by: Jannatul Ferdous on May 26, 2016, 09:45:29 AM
-
কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে
কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত শিশু কিশোরদের মাঝে নিয়ম ভাঙ্গার প্রবণতা এবং অন্য মানুষের প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখানোর প্রবণতা দেখা যায়। প্রতিদিন চলতে গিয়ে যেখানে যেমন নিয়ম কানুন বা প্রথা মেনে চলতে হয় কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে তার প্রায় অধিকাংশই নষ্ট হয়ে আসে। ঘরে-বাইরে কোথাও তারা নিয়ম মানতে চায়না। অন্যের অধিকার সম্মন্ধে শ্রদ্ধাবোধ বা সম্মান প্রদর্শন কমে আসে। বেপরোয়া, উন্নাসিকতা, উশৃঙ্খলতা, উদাসীনতা, উগ্রতা এমনকি মিথ্যা কথা বলা চরিত্রের একটি বড় অংশকে দখল করে নেয়। সাধারণত বয়সের সাথে সংগতিপূর্ণ সামাজিক আচরণগুলিও ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়।
অন্য কোনো মানুষ বা জীবজন্তুর প্রতি তাদের কোনো ধরনের মমতাবোধ থাকেনা। বরং বেশিরভাগ সময়ই তারা ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ আচরণ করে থাকে। ঘরে-বাইরে জিনিষপত্র ভাংগাভাংগি বা মারামারি প্রায়ই লেগে থাকে। প্রায়ই দেখা যায়, বাড়িতে বা স্কুলে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণামূলক আচরণের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। এদের এধরনের প্রতারণামূলক আচরণের জন্য অনেক সময় অভিভাবকরা বিভ্রান্ত হয়ে থাকে। জিনিসপত্র সরানো বা চুরি করা অভ্যাসে পরিণত হয়। সবখানে নিয়মের প্রতি উন্নাসীকতা চরমে পৌঁছে। অতিরিক্ত চাহিদা বা নিজের ইচ্ছা মতো চলা অভ্যাসে পরিণত হয়। পিতা মাতা বা শিক্ষকরা অনেক সময় এদের আচরণ বা চাহিদার কাছে অসহায় হয়ে যায়। আঠারো বছরের আগ পর্যন্ত এই সমস্যাগুলি কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারের অন্তর্ভূক্ত থাকে। পরবর্তীতে এই সমস্যাগুলিকেই এন্টিসোশাল পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার হিসেবে ধরা হয়।
কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ছেলেমেয়েদের আচরণ ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন ভিন্ন হলেও আচরণের মূল বৈশিষ্ট্য প্রায় একই থাকে। জায়গা ভেদে প্রতারণা এবং নিয়মভাংগার কৌশল ভিন্ন হয়। কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হবার পর, তাদের চরিত্রের অন্যান্য পরিবর্তনের ভিতর গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন তাদের মাঝে কোনো বিষয়েই অনুশুচনা কাজ করেনা।
এমনকি তারা পূর্বের কোনো অভিজ্ঞতা থেকেও কিছু শিখতে চায়না। সব বিষয়েই তার নিজের চিন্তাই যেন শেষ কথা।
-
স্কুলে বা পড়াশুনার স্থানে আচরণ
পড়াশুনা, নিয়মিত স্কুলে যাওয়া বা অন্যান্য বিষয়ের উপর থাকে চরম অনাগ্রহ। বিভিন্ন ছুতা বা বাহানায় তারা প্রায়ই স্কুল ফাঁকি দেয়। ক্লাসে গিয়েও পড়াশুনা না করা এবং অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। কোনো একটি কাজ সঠিকভাবে না করার যোগ্য যুক্তি যেন তাদের কাছে সবসময়ই তৈরি থাকে। সব কিছুতেই কেয়ারলেস ভাব স্পষ্ট। অন্য সহপাঠীদের সাথে সচারাচর সদভাব গড়ে উঠেনা। সাধাণরত অন্যরা এদেরকে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে। সুন্দর সম্পর্ক তৈরির ব্যাপারেও তাদের উদাসীনতা স্পষ্ট থাকে। তাদের একাডেমিক পারফরমেন্স ক্রমান্বয়ে নীচের দিকে নামতে থাকে। এমনকি, অনেকেই পড়াশুনা বন্ধও করে দেয়।
-
পরিবারে আচরণ ও অবস্থান
সাধারণত পরিবারের অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে আসে। মিথ্য বলা, টাকা পয়সা বা মূল্যবান জিনিস চুরি করা, রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়া, জিনিসপত্র ভাংগা, যখন তখন ক্ষেপে যাওয়া, দেরি করে ঘুম থেকে উঠা, সারারাত না ঘুমিয়ে পরের দিনের কাজের বা স্কুলে নিয়ম না মানা অহরহই দেখা যায়। অন্যের উপর দোষ চাপানোর একটা প্রবণতা সব সময়ই লক্ষ্য করা যায়। যখন তখন অপ্রয়োজনীয় বা অসম্ভব আবদার প্রায়ই করে থাকে। পরিবারের অর্থনৈতিক, সামাজিক বা অন্যান্য সংগতির বিষয়ে তারা থাকে চরম উদাসীন। নিজের ইচ্ছা বা চাহিদাই তাদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে।
পরিবারের অন্যরা ধীরে ধীরে তাদের উপর যেকোনো ধরনের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। পরিবারের সদস্যদের এসব বিষয়ে প্রায়ই হতাশ হতে দেখা যায়। অনেকেই আবার বয়স কম মনে করে বিষয়গুলিকে মেনে নেয় এবং কেউ কেউ প্রশ্রয়ও দিয়ে থাকে। কেউ আবার তাদের এধরনের আচরনগুলিকে অন্যদের কাছ থেকে ঢেকে রাখতে চায়। ফলে পরিণতি হয় আরো খারাপ।
-
বিশেষ বিশেষ লক্ষণ ও গুন
কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত অনেকের মাঝেই বিশেষ ধরনের কোনো একটি কাজের প্রতি দক্ষতা থাকতে দেখা যায়। নতুন নতুন প্রতারণার কৌশল হিসেবে সেই দক্ষতা বা গুনকেও তারা অনেক সময় কাজে লাগায়। কেউ হয়তো কোনো একটি খেলা ভালো পারে, কেউ হয়তো ভালো গান গাইতে বা বাজাতে পারে। অনেকে আবার অবিশ্বাস্য কিছু করেও দেখাতে পারে।
অনেক সময় দেখা যায় কোনো একটি বিশেষ কাজের দায়িত্ব ওদের হাতে ছেড়ে দিলে এবং তারা যদি নিজের নিয়ম ও ইচ্ছা অনুযায়ী করতে পারে তবে সেসবের ভালো ফলও বয়ে আনতে পারে। তারা অতিরিক্ত রিস্ক নিতেও পছন্দ করে। তবে অনেক কাজ বা দায়িত্ব হাতে নেয়ার এক ধরনের প্রবণতা কাজ করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজ অসমাপ্ত রেখে অন্য কাজে যুক্ত হয়ে যায়। ফলে সত্যিই কোনো কাজের দায়িত্ব দিয়ে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে যায়। কোনো কোনো গবেষণায় দেখা গেছে, কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত শিশু কিশোরদের অনেকেই স্বাভাবিক বুদ্ধির পরিমাণের চেয়ে কম বুদ্ধিমান হয়ে থাকে। অনেকের ভিতরই ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলার সামাজিক দক্ষতাও কম হয়। বিশেষ করে যাদের মধ্যে এসব সমস্যা আগে আগেই শুরু হয় তাদের বুদ্ধি কম হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অথবা যাদের তুলনামূলক ভাবে বুদ্ধি কম তারাই এমন সমস্যায় বেশি জড়িয়ে পড়ে।
-
কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারের কারণ কি?
অনেক ধরনের কারণ উল্লেখ করা হলেও অদক্ষ অভিভাবকত্বকেই মূল হিসেবে দায়ী করা হয়। এছাড়া পারিবারিক, সামাজিক পরিবেশও কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারের বড় কারণ। জন্মগতভাবে অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠার আশঙ্কাকেও কেউ কেউ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেছেন। লারনিং ডিজএ্যবিলিটি বা বুদ্ধির অপ্রতুলতা (মৃদু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি) এবং এডিএইচডি নামের অন্য মানসিক রোগকেও কেউ কেউ কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারের কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। জেনেটিক বা হরমোনাল কিছু কারণও পিছনে কাজ করতে পারে।
অভিভাবকত্ব বা প্যারেন্টিং এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে, শাস্তি প্রদান (পানিশম্যান্ট) ও পুরস্কৃত (রিওয়ার্ড) করার পদ্ধতির ত্রুটির উপর বেশি জোড় দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ কখন, কতটুকু, কিভাবে শাস্তি বা পুরস্কৃত করা উচিত, সেসবের উপর শিশু কিশোরদের আচরণ শিক্ষার অনেক কিছু নির্ভর করে। এসব বিষয়ে নিজের ইচ্ছা বা মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি না করে, শিশুটির বয়স ও মানসিক দিক নজর দেয়া উচিত।
-
কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারের পরিণতি
সময়মতো ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিতে পারলে শিক্ষা সামাজিক দক্ষতা সহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের পারফরমেন্স নিম্নগামী হতে থাকে । তাছাড়া সামাজিক ভাবে তারা নিগৃহিত এবং ধীরে ধীরে একা হয়ে যায়। নেশা কিংবা যেকোনো ধরনের অসামাজিক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রচুর থেকে যায়। দিন দিন অপরাধ প্রবণতা বাড়তেই থাকে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনার কথা আমরা জানি, যার পিছনে কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারের মতো সমস্যা বিদ্যমান থাকার কথা সহজেই অনুমান করা যায়।
তবে উপযুক্ত চিকিৎসা ও সহযোগিতা পেলে তারা অবশ্যই পূনরায় সঠিক পথে ফিরে আসতে পারে। সবার সমস্যা সব সময় একই রকম হবে এমন কোনো কথা নেই। সমস্যার তীব্রতাও ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সমস্যা যত কম বয়সে শুরু হয় তীব্রতা সাধারণত তত বেশি হয়।
-
চিকিৎসার অন্তরায় ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা
চিকিৎসা সময় সাপেক্ষ এবং অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি। অভিভাবকরা অনেক সময় ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন। তারা কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ছেলে মেয়েটির কথায় বিভ্রান্ত হয়ে অনেক সময় মাঝ পথেই চিকিৎসা থামিয়ে দেন। এমনকি চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কিনা সে ব্যপারেও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। আক্রান্তরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি ও বাহানা ধরে অভিভাবকদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও প্রতারণা করে। তারা এমনকি আত্মহত্যার মতো হুমকি দিয়ে থাকে। সুতুরাং চিকিৎসার শুরু থেকেই বিষয়গুলি ভালো করে বুঝে নেয়া প্রয়োজন।
-
চিকিৎসা
বেশ কিছুদিন যাবত কোনো একটি অসংগতি বা অগ্রহণযোগ্য আচরণ কোনো শিশু কিশোরের মাঝে লক্ষ্য করলে অবশ্যই সেটিকে ভালোভাবে আমলে নিতে হবে। পিছনের কারণটি বুঝার চেষ্টা করতে হবে। শারীরিক বা জেনেটিক কোনো কারণ আছে কিনা সেসব ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে। যদি জেনেটিক, এডিএইচডি, বুদ্ধির সমস্যা বা শারীরিক অন্য কোনো সমস্যা, কিংবা অন্য কোনো মানসিক রোগ থেকে থাকে তবে সেসবের দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। যদি এসব সমস্যা না থাকে তবে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলতে হবে।
পিছনের কারণগুলো দ্রুত সনাক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। আক্রন্ত মানুষটি, অভিভাবক ও চিকিৎসক তিন পক্ষকেই সমস্যার কারণের বিষয়ে একটা নির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা তৈরি করতে হবে।
চিকিৎসার টার্গেট শুধু রোগী নয় বরং অভিাভাবক এবং রোগী দুদিকেই হতে হবে। উন্নত বিশ্বে বর্তমানে এই চিকিৎসার জন্য মা-বাবা বা অভিভাবকদেরকে, অভিভাবকত্ব বিষয়ে ট্রেনিং করানো হয়। যারা এমন সমস্যাগ্রস্ত তাদেরকেও এনগার ম্যানেজমেন্ট বা রাগ নিয়ন্ত্রণ, সোশ্যাল স্কিল ট্রেনিং বা সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির ট্রেনিং এর মতো ট্রেনিং করানো হয়।
মূল চিকিসায় কিছু ওষুধের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে এন্টি ডিপ্রেসেন্ট এবং মুড স্ট্যাবিলাইজার বেশ উপকারী। তবে সাইকোথেরাপী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাইকোথেরাপীর পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীও বিভিন্ন নিয়ম কানুনের গুরুত্বও কম নয়। দেখা গেছে অভিভাবকরা যদি আক্রান্ত ছেলে কিংবা মেয়েটিকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে উৎসাহিত করে তবে সেটা কাজেই লাগে। সেসবের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
-
সতর্কতা এবং কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারের প্রতিরোধ
ছোটকাল থেকেই বয়সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করছে কিনা সেটা খেয়াল করা উচিত। অভিভাবকরা অনেক সময় সেটা লক্ষ্য করেননা। সময় কিংবা বয়সের চেয়ে বেশি কিছু আশা বা প্রত্যাশা করে ফেলেন। ছেলে কিংবা মেয়েটির বয়সের সাথে সম্পর্ক করে (এইজ এপ্রোপ্রিয়েট বিহেভিয়ার) কোন বিষয়ে কতটুকু আচরণ বা চিন্তা ভাবনা গ্রহণযোগ্য হবে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। বয়সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে, কোনো একটা আচরণ খারাপ লাগলেও সেটা ইতি বাচক হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। আবার সম্পর্কযুক্ত না হলে, ভালো লাগলেও সেটা রোটিন করে পরিবর্তনের চেষ্টা করা উচিত।
শিশু কিংবা কিশোরদের মাঝে যাতে কন্ডাক্টের সমস্যা দেখা না দেয় তার জন্য শাস্তি এবং পুরস্কার প্রদান পদ্ধতিটি জেনে রাখা উচিত। এসব বিষয়ে নিজের ইচ্ছা বা মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি না করে, শিশুটির বয়স ও মানসিক দিক নজর দেয়া উচিত।