Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Ramadan and Fasting => Topic started by: rumman on June 06, 2016, 04:00:03 PM
-
রোজা রাখার জন্য রোগব্যাধি সবসময় বাধা নয়। সাধারণভাবে রোজা শরীরের জন্য উপকারী। রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনি নিয়মিতভাবে যে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছেন, রোজা রাখার প্রস্তুতি হিসেবে প্রথমে তার সঙ্গেই কথা বলে নিন। মনে রাখবেন, রোগ অনেক সময় রোজা রাখার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে কিন্তু তা যেন অকারণ অজুহাত না হয়।
যাদের স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের অনেকেই রোজা রাখতে চান না। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান মতে, অধিকাংশ রোগব্যাধি নিয়েই রোজা রাখা যায়। তবে সেক্ষেত্রে চলতি ওষুধগুলোর ব্যবহারবিধি কিংবা ধরণ পরিবর্তন করতে হতে পারে। এবার তেমন কিছু রোগের ক্ষেত্রে কীভাবে রোজা রাখা যেতে পারে তা তুলে ধরা হলো।
অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট : রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। রোজা রাখা অবস্থায় ইনহেলার নেওয়া যাবে কি না, এ ব্যাপারে সারাবিশ্বের ইসলামী চিন্তাবিদরা যে মতামত দিয়েছেন তাতে রোজা রাখা অবস্থায় ইনহেলার নিলে রোজার ক্ষতি হওয়ার কথা বলা হয়নি। এক্ষেত্রে মনে রাখা চাই, কেবল সঠিক নিয়মে ইনহেলার নিলেই রক্তে ওষুধ মিশতে পারে না বা নগণ্য পরিমাণ মেশার সম্ভাবনা থাকে। তবে সেহরি ও ইফতারের সময় ইনহেলার ব্যবহার করাটাই সবচেয়ে নিরাপদ।
পেপটিক আলসার বা অ্যাসিডিটি : পেপটিক আলসারের রোগীদের প্রধান কাজ হলো নিয়মিত খাবার খাওয়া, ঘুমানো এবং ওষুধ গ্রহণ। রোজায় মানুষের জীবন একটা নিয়মে চলে আসে বিধায় এ সময় অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। কেউ যদি ভয় পেয়ে যান এই ভেবে যে, রোজায় তার অ্যাসিডিটির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে, তাহলে তিনি সেহরি ও ইফতারের সময় রেনিটিডিন বা ওমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ একটি করে খেয়ে নিতে পারেন। পাশাপাশি অবশ্যই ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ : উচ্চ রক্তচাপের রোগী যারা নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তারা যদি রোজা রাখার জন্য নতুন শিডিউলে ওষুধ গ্রহণ করতে চান সেক্ষেত্রে সপ্তাহখানেক আগে থেকে নতুন শিডিউলের ওষুধ গ্রহণ করে ট্রায়াল দিতে হবে। ট্রায়ালে যদি দেখা যায়, নতুন ওষুধে সহজেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তাহলে রোজা রাখা সহজ হবে। এক্ষেত্রে ওষুধ পরিবর্তন করার সময় অবশ্যই নিয়মিত চিকিতৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।
ডায়াবেটিস : যেসব ডায়াবেটিক রোগী বিশেষ খাবার এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তাদের জন্য রোজা রাখা খুব সহজ ও উপকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব রমাদান ফাস্টিং রিসার্চ’- এ প্রকাশিত নিবন্ধে। যারা মুখে ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখছেন তারাও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখতে পারবেন, তবে ব্যায়াম করার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে যাতে করে ব্যায়ামের ধকল বেশি না হয়। আর ইনস্যুলিন গ্রহণকারী রোগীরা চিকিতৎসকের পরামর্শক্রমে রোজা রাখবেন। সেহরির সময় রুটি খাওয়া বেশ ভালো। কেননা তা দীর্ঘ সময় পেটে থাকায় রক্তের গ্লুকোজ হঠাৎ করে কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তবুও রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে সুগারের মাত্রা হঠাৎ কমে গেলে বা হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক এক গ্লাস শরবত খাইয়ে দিতে হবে।
কিডনি : কিডনি রোগে রোজা রাখার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কিডনি ফেইলিউর রোগীদের সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হয়, নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, এমনকি পানি খাওয়ার ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হয়। তাই রোজা রাখার ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। এক বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অল্প থেকে মধ্যম মাত্রার কিডনি ফেইলিউর রোগীরা রোজা রাখলে কোনো ক্ষতি হয় না। সামান্য যা হয়, রোজার মাস শেষ হয়ে গেলে ১৫ দিনের মধ্যেই তা আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে যাদের কিডনি ফেইলিউরের মাত্রা একেবারে শেষ পর্যায়ে, তাদের পক্ষে রোজা রাখা সম্ভব নয়। তেমনি যারা ডায়ালাইসিসের রোগী অথবা ইতোমধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন, ঘড়ির কাঁটা দেখে ওষুধ খেতে হয় বলে তাদের পক্ষেও রোজা রাখা প্রায় অসম্ভব। তবে শারীরিক অবস্থা যা-ই থাকুক না কেন, সর্বাবস্থায় আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়াই শ্রেয়।
রোজা রাখার জন্য রোগব্যাধি সবসময় বাধা নয়। সাধারণভাবে রোজা শরীরের জন্য উপকারী। রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনি নিয়মিতভাবে যে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছেন, রোজা রাখার প্রস্তুতি হিসেবে প্রথমে তার সঙ্গেই কথা বলে নিন। মনে রাখবেন, রোগ অনেক সময় রোজা রাখার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে কিন্তু তা যেন অকারণ অজুহাত না হয়।
ফয়জুল আল আমীন
[ফয়জুল আল আমীন- ধ্রুপদী এক লেখক। পুরো নাম- সৈয়দ মুহম্মদ ফয়জুল আল আমীন। প্রবন্ধ-নিবন্ধ, কলাম, সাহিত্য সমালোচনা, গল্প, গবেষণা, কবিতা, ছড়াসহ সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় যার সুদীপ্ত বিচরণ। দেশের প্রথম শ্রেণির প্রায় সব দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও ছোটকাগজে নিয়মিত লিখছেন প্রায় ২০ বছর ধরে। ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে তাঁর গুরু হলেন বাবা। আর সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে প্রকৃতি। ইসলাম ধর্মের নানা দিক ও বিষয় নিয়ে সুদীর্ঘ গবেষণা করেছেন ফয়জুল আল আমীন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রিপোর্টার, ফিচার লেখক, সাব-এডিটর, সহযোগী সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। একাধিক প্রকাশনা সংস্থায় সিনিয়র লেখক, সম্পাদক ও আরঅ্যা-ডি’র প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে পাঠকপ্রিয় একটি সাপ্তাহিকে চিফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।]